আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ইমদাদুল হক মিলনের প্রবাস জীবন



ইমদাদুল হক মিলনের প্রবাস জীবন আবদুল্লাহ আল হারুন ১৯৮০ সালে ইমদাদুল হক মিলন যখন জার্মানে এসেছিল, সে সময় বাংলাদেশে লেখক হিসেবে তার এখনকার মতো এত সুখ্যাতি ও জনপ্রিয়তা ছিল না। আমার বলতে কোনো দ্বিধা নেই, ১৯৭৭ সালে আমি যখন দেশ ছেড়ে আসি সে সময় ওই নামে কোনো লেখককে আমি মোটেও চিনতাম না বা তার কোনো লেখাও আমার পড়ার সৌভাগ্য হয়নি। মিলন পরে আমাকে বলেছে ’৭৭-’৭৮ সালে, অধিকাংশ সম্পাদকই তার পাঠানো লেখা ফেরত দিতেন। হঠাৎ এক-আধটা লেখা প্রকাশিত হতো। নব্য লেখকদের প্রতিষ্ঠা অর্জন করতে গিয়ে প্রথম দু’এক বছর অবহেলা আর উপেক্ষার শিকার হতে হয়।

সে দুর্ভাগ্য থেকে মিলনেরও অব্যাহতি মেলেনি। শুধু প্রতিভা নয়, প্রচুর ধৈর্য আর লেগে থাকার কঠিন প্রতিজ্ঞার প্রয়োজন হয় শিল্প-সাহিত্যের জগতে স্বীকৃতি পেতে। বাংলা সাহিত্যের সৌভাগ্য, বিরল সাহিত্যিক প্রতিভার সাথে সাথে মিলনের প্রচুর ধৈর্য আর সাহসও আছে। সে বরাবর লিখেই গেছে প্রকাশের তোয়াক্কা না করে। যার দরুন বাংলাদেশে তার এখন জয়জয়কার।

যে সুনাম ও সুখ্যাতি আজ সে অর্জন করেছে, তা নিঃসন্দেহে তার অনন্য প্রতিভারই স্বাভাবিক ফলশ্রুতি। ওর সাথে আমার এখানে ব্যক্তিগতভাবে পরিচয়ের আগে আমি ওকে দুবার দূর থেকে দেখেছি। একবার ফ্রাঙ্কফুর্টে বেড়াতে গিয়ে এক সিনেমা হলে। সে সময় জার্মানে বড় বড় শহরে, যেখানে বাঙালির সংখ্যা বেশি ছিল, সেখানে ভারতীয় ব্যবসায়ীরা শনি বা রবিবারে একটি হল ভাড়া নিয়ে বাংলা ছবি দেখাত। সে ধরনেরই একটি প্রদর্শনীতে বিরতির সময় দেখলাম একটি একহারা ছিপছিপে তরুণকে ঘিরে ৬/৭ জন বাঙালি, দু’একজন মহিলাও ছিলেন মহা উৎসাহের সাথে কথাবার্তা বলছে।

মনে হলো ভিড়ের আকর্ষণ ওই শ্যামলা রঙের তরুণটিই। একজন সঙ্গী বললেন, ও ইমদাদুল হক মিলন, বাংলাদেশের একজন নামকরা গল্পলেখক। মাসখানেক হলো জার্মানে এসেছে। থাকে তো আপনাদের স্টুটগার্টেই। এখানে বেড়াতে এসেছে।

আমার প্রথম প্রতিক্রিয়া হলো, বাংলাদেশের স্বনামধন্য লেখক, জার্মানে এসেছ কেন? এখানে তার কী কাজ? মনে মনে একটু অসন্তুষ্টই হলাম যেন। নিজে যেচে পরিচয় করার কোনো আগ্রহবোধ করলাম না। আমার সৌভাগ্য, সঙ্গীও সে ধরনের কোনো ইঙ্গিত করলো না। কিছুদিন পরে, বোধ হয় জানুয়ারি মাস, স্টুটগার্টের প্রবাসী বাঙালিদের পাবলিক হলে একটি আয়োজনে আবার দেখলাম ওকে। অনুষ্ঠান শুরু হবার আগে দেখলাম, মঞ্চের সামনে যেখানে বাচ্চারা মেঝেতে বসে শোরগোল করছে সেখানে ১০/১২ জন বাঙালিকে সাথে নিয়ে মিলন মাটিতে বসে উচ্চস্বরে আড্ডা দিচ্ছে।

আমি দ্বিতীয় সারিতে বসেছিলাম। ওই সম্মেলনে নবীনকে দেখলাম। ওই সময়কার অগুনতি ভাগ্নেদের মধ্যে নবীন ছিল আমার অত্যন্ত প্রিয়। মিলনের বয়সী ঝকঝকে আর প্রাণবন্ত। সদাহাস্যময় এই তরুণটি তার নামের মতোই ছিল চিরনবীন।

একটু বেঁটে, ফর্সা এবং মেদহীন চেহারার নবীনকে মাঝে মাঝে আমার একটি নিষ্পাপ শিশু মনে হতো। শিশুর মতোই কথাবার্তা, সদা প্রসন্ন আর কৌতূহলী। একে নিয়ে আমার পরে একটা বিস্তারিত কাহিনী লেখার ইচ্ছা আছে। একসময় মনে হলো নবীন মিলনকে কানে কানে কী যেন বলছে, হাতের ইশারায় আমাকে দেখিয়ে। বোধহয় আমার নাম-পরিচয় ওকে বলল।

মিলন এবারে সরাসরি আমার দিকে তাকিয়ে একটু হাসল। আমিও একটা ছোট্ট হাসি দিয়ে প্রত্যুত্তর দিলাম। ব্যস ওই পর্যন্তই। আমি মনে মনে একটু আহত হলাম। ও আমার কাছে এলো না কেন কথা বলতে? পরে মিলন বলেছে, আমার কথা সে ঢাকাতে আমার ভ্রাতা আবদুল্লাহ আল-মামুন এর কাছে শুনে এসেছিল।

তার ধারণা ছিল আমি একটু অন্য ধরনের মানুষ, রাগী, যা আমি মোটেও নই এবং কাউকে নাকি একান্তভাবে কাছে টেনে নেই না। এটাও মিথ্যা। তাই সেদিন ওই অনুষ্ঠানের ভিড়ে ও আমার সাথে পরিচিত হতে চায়নি। যদিও নবীন তাকে বলেছিল। পরের শনিবারেই নবীনকে নিয়ে ও আমাদের বাসায় এলো।

আমরা তখন সিন্ডেলফিংগেনে থাকি। স্টুটগার্ট থেকে ৩০ কিলোমিটার দূরে, জগদ্বিখ্যাত মার্সিডিজ বেঞ্জের প্রধান কারখানা এই শহর। আমাদের বাসাটি ছিল বেশ বড়। মোট ৫টি কামরা। বসার ঘরটি ছিল, মিলনের ভাষায় ফুটবল খেলার মাঠ! এই ঘরে বসে আমরা ঘণ্টার পর ঘণ্টা ভিডিওতে হিন্দি ছবি দেখেছি।

ক্যাসেটে হাজার হাজার গান শুনেছি। কত শুক্র/শনিবার সারারাত আমি আর মিলন একসাথে মদপান করেছি। সপ্তাহান্তে বাইরে দেখে আগত অতিথিদের মোট সংখ্যা মাঝে মাঝে ৩০ ছাড়িয়ে যেত। আমরা মোট ১০ জন এই বাসায় থাকতাম। আমিই একমাত্র একটি ঘরে একলা থাকতাম।

বাকি তিনটি শোবার ঘরের দুটিতে দুজন ও একটিতে তিনজন থাকত। আসার দশ-পনেরো মিনিট পরেই মিলন বলে বসল, আপনার ঘরে মেঝেতে আমার থাকার ব্যবস্থা করে দিন। আপনার সাথে পরিচয় হবার পর আমার আর স্টুটগার্টে থাকার কোনো ইচ্ছা নেই। আমার বিশ্বাসই হলো না এত বড় নামকরা লেখক, আমার ঘরে মেঝেতে শুয়ে থাকতে চায়। আমি বললাম, আপনি যদি এখানে সত্যিই থাকতে আসেন সে আমার পরম সৌভাগ্য।

দুটি শর্তে আমি আপনাকে আমার ঘরের অংশ দিতে রাজি আছি। প্রথম আমি আমার খাটটি বের করে দেব এবং দুজনে মেঝেতে একসাথে শুয়ে থাকব। দ্বিতীয় শর্ত শুধু আপনি আমার সাথে মদ খাবেন আর কেউ কোনোদিন কোনো অবস্থাতেই সঙ্গ দিতে পারবে না। আমি আগেই শুনেছিলাম মিলন মদ ভীষণ ভালোবাসে এবং আমিও তখন নিয়মিত মদপান করতাম। পরবর্তীতে অনিবার্য পরিণতি- ’৯২ তে দুরারোগ্য ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হলাম।

আমি কখনও কারো সাথে মদপান করতাম না। বাইরে কারো বাসায়, বারে বা রেস্টুরেন্টে মদ খেতাম না। একাকী নিজের ঘরেই করতাম। এমনকি বসার ঘরেও নয়। নবীনের কাছে এসব মিলন আগেই বিস্তারিত শুনেছে তাই তার ধারণা হয়েছিল, আমি মিশুক লোক নই।

এ ব্যাপারটি আমি আগেই ওর সাথে পরিষ্কার করে নিতে চেয়েছি এজন্যই যে, ও এখানে থাকলে সবসময় আড্ডা হবে এবং ওর সাথে আমার নিয়মিত অনেক আলাপ সালাপ হবে। যা এখানে সঙ্গত কারণেই, এযাবৎ কারো সাথে হবার অবকাশ হয়নি। ওই সময়ে মদপান এড়ানো কঠিন। শিল্পী-সাহিত্যিকদের বয়স দিয়ে সঙ্গের পরিমাপ হয় না, মিলন আমার প্রায় ১০ বছরের ছোট হলেও, শিক্ষা-সংস্কৃতির সংজ্ঞায় তখন আমাদের একই মাত্রায় অবস্থান। আর এখন তো ও আমার অনেক উপরে।

এক পর্যায়ে নবীন মিলনকে বলল, দে দেখি এখন ৫০ মার্ক। ওরা দেশে থাকতেই পরস্পরের ঘনিষ্ঠ বন্ধু। আমি বললাম, টাকার প্রয়োজন হলো কেন হঠাৎ? নবীন বুক ফুলিয়ে বলল, এ বাজির জেতা টাকা। আসার আগে আমি মিলনকে বলেছিলাম, মামার সাথে পরিচয় হলে তুই আর ওখান থেকে আসতে চাইবি না। মামা সিঙ্গেল রুমে থাকে, নিশ্চয়ই তুই ওর সাথে থাকার প্রস্তাব করবি এবং মামাও সানন্দে রাজি হয়ে যাবেন।

মিলন নাকি এটা বিশ্বাস করতে চায়নি। ও মনে করত আমি অমিশুক। সিরিয়াস টাইপের লোক, আমি কোনোদিনও কারো সাথে আমার রুম শেয়ার করব না। নবীন বলেছিল, ঠিক আছে ৫০ মার্ক বাজি। নবীন আমাকে ঠিকই চিনেছিল তাই জিতেও গেল ও।

মিলন তখন স্টুটগার্টে যে কারখানায় কাজ করত ওর মোটেই পছন্দসই ছিল না। আমি আমাদের বাসার পাশেই একটা বিরাট পাঁচতলা মার্কেটে ওর জন্য একটা কাজের মধ্যস্থতা করে দিলাম। দু সপ্তাহের মধ্যেই মিলন চলে এলো আমাদের এখানে। সম্ভবত ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি। এরপর দু বছর পর ওর ফিরে যাওয়া অবধি, ২০/২১টি মাস আমার জন্য ছিল ‘আনন্দধারা বহিছে ভুবনে।

’ আজ ত্রিশ বছর যাবৎ আমার প্রবাস জীবন। এর মধ্যে ১৮টি বছর- ১৯৮৪-২০০২ সঙ্গিনীর সাথে ‘নিবিড় সুখে, মধুর দুঃখে’ ‘আহা, তোমার সঙ্গে প্রাণের খেলা, প্রিয় আমার, ওগো প্রিয়’- বাদ দিলে মিলনের সাথে একত্র বসবাসটি আমার এ দুঃখভরা আর দুঃসহ জীবনে সদা সর্বদা ‘মধুর, তোমার শেষ যে না পাই। ’ আমি আমার জার্মান আত্মকথা ‘অন্তবিহীন পথ’ মিলনের কথা বিস্তারিত বলব। আমার ধারণা অন্তত দুটি পরিচ্ছদ ওকে নিয়ে আমার লিখতে হবে। মিলন জার্মানে এসেছিল ওর ভগ্নিপতি মিন্টুকে খুঁজতে।

ও বেচারি মাস ছয়েক আগে জার্মানে এসে এ শহর ও শহরে থেকে কাজ করে শেষ পর্যন্ত মিউনিখ-অস্ট্রিয়ার বর্ডারে একটি ছোট শহরে একটা রেস্টুরেন্টে কাজ নিয়েছিল। কেন জানি না, বোধহয় এখানে ওখানে ঘোরাঘুরির চাপে দেশে সে নিয়মিত যোগাযোগ করেনি। মিলন ওর বোন মনিকে খুবই ভালোবাসত। আদরের বোনটির নিখোঁজ (!) স্বামীর খোঁজ নিতে দেশে ইত্তেফাকের ভালো চাকরি ছেড়ে দিয়ে আর লেখালেখিতে বিরতির ঝুঁকি নিয়ে ও জার্মানে চলে আসে। বোনের প্রতি তার এত টান আর স্নেহ আমি এরপর মনি যখন জার্মানে এলো, নিজের চোখে দেখেছি।

মনি আসার পর আমি আমার ঘর ওকে ছেড়ে দিয়ে, ওরা দেশে ফিরে যাওয়া অবধি মিলনসহ দুজনে বসার ঘরে মেঝেতে ঘুমিয়েছি। আমি যখন দেশ ছেড়ে আসি, আমার মেয়েরা খুবই ছোট। শিশু। বাপ-মেয়ের অপত্য স্নেহ, আদর কোনোটারই আমার কোনো ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা ছিল না। মনির জার্মানি আসার পর আমাদের নিয়মকানুন সব বদলে গেল।

বয়স্ক মেয়ে বাবার যে কেমন যত্নআত্তি করে তা আমি প্রথম মনির সান্নিধ্যেই ওর কাছে থেকে উপভোগ করেছি। ওর কাছেই প্রথম শুনলাম, গেঞ্জি তিন দিনের বেশি পরতে নেই। আমি আপত্তি করলে জোর করে ও আমার গা থেকে গেঞ্জি খুলে নিত ধোবার জন্য। আমাদের শুক্র/শনির সারারাতের মদপান বহুবার মনির প্রত্যক্ষ হস্তক্ষেপে ভেস্তে গেছে! ও বোতল সোজা বাথরুমে নিয়ে গিয়ে বেসিনে ঢেলে দিত। হায় রে অমূল্য আঙ্গুরের রস, সেই সময় মনির কোপানলে প্রায়ই তার সলিল সমাধি হতো! ছ’টার কাজে যাবার জন্য মিলনকে সকাল পাঁচটায় উঠতে হতো।

আমি চিরদিনই ঘুমপাতলা লোক। ঘুমানোর চাইতে আমার পড়তে বা গান শুনতে আগ্রহ বেশি। এমনকি সে সময় ভিডিওতে হিন্দি ফিল্ম দেখে আমি প্রায়ই পর পর ৩-৪ দিন রাত একসাথে কাটিয়ে দিতাম। শুক্রবার রাত থেকে রবিবার নাগাত মাঝে মাঝে মিলনও আমার ম্যারাথন ফিল্ম দেখার চেষ্টায় আমার সঙ্গে পাল্লা দিত। কিন্তু সকাল ৪-৫টায় বেচারা ঘুমিয়ে পড়ত।

এমনিতেও ছিল ঘুমকাতুরে লোক। কাজের জন্য ওকে ঘুম থেকে ওঠাতে আমাকে মাঝে মাঝে হাই ভলিউমে ক্যাসেট বাজাতে হতো। আমার সে সময় কাজের অনুমতি নেই। আমরা রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থী হিসেবে ৬ মাস করে অস্থায়ী থাকার অনুমতি পেতাম। ৬ মাসের শেষে কাজ না থাকলে পরবর্তী ষান্মাষিক ভিসা দেবার সময় আশ্রয় প্রার্থনা মঞ্জুর না হওয়া অবধি কাজের অনুমতি বাতিল করে দেয়া হতো।

এটা ছিল আমরা যে প্রদেশে ছিলাম, তার নিজস্ব বিধান। আমি এ আইনটির সম্পূর্ণ সুযোগ নিয়েছিলাম। কাজের ইচ্ছা আমার সে সময় মোটেও ছিল না। মিলন আমার সাথে চা খেয়ে, রাজ্যের বিরক্তি মুখে নিয়ে কাজে যেত এবং পরের সপ্তাহেই সে যে এই স্ত্রীর-ভ্রাতাদের দেশ ছেড়ে বাংলাদেশে ফিরে গিয়ে, দরকার হলে ভিক্ষা করে হলেও দিনাতিপাত করবে এই প্রতিজ্ঞাটি জোরেশোরে করে গৃহত্যাগ করত। বিকেলে মুখে শুকনো হাসি আর হাতে সদ্য কেনা মদের বোতল নিয়ে কাজ থেকে ফিরত।

রাতে মদপানের সাথে সাথে সকালের প্রতিজ্ঞা ভুলে গিয়ে বলত, যাই বলুন মামা, এ দেশে থেকে সুখ আছি। এমন ভালো মদ এত কম দামে কোনোদিনও বাংলাদেশে পাওয়া যাবে না। আমার দেশে আইন-কানুনের তো কোনো চিহ্নই নেই, এ দেশটা তো আসলেই আইনের দেশ, গণতন্ত্রের দেশ। এ দেশেই থেকে যাব। বলে গান গাইত, ‘আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি না গো, আমি জার্মানিকে ভালোবাসি।

’ এ সময় সে ‘কালো ঘোড়া’ উপন্যাসটি লেখে। শব্দবিন্যাস, বাক্যচয়ন নিয়ে আমাদের আলাপ-সালাপ হতো। আমার দু-একটি সংশোধন ও মহানন্দে মেনে নিয়ে লেখা শুদ্ধ করত এবং বলত, মামা আপনি লেখেন না কেন? আপনার মতো জ্ঞান, বুদ্ধি, শব্দ ও বাক্যের প্রতি দখল আমাদের দেশের অনেক লেখকেরই নেই। আজ বুঝি ওর কথার মধ্যে কিছুটা সত্য নিহিত ছিল। পরাধীনতার কাহিনীগুলো ও বেশ কিছু গল্পের খসড়াও এসময় মিলন লিখেছিল।

অসম্ভব রবীন্দ্রসঙ্গীত ভক্ত ছিল ও। আমরা প্রতিদিনই হেমন্তের গলায় আধুনিক ও রবীন্দ্রসঙ্গীত শুনতাম এবং তর্ক করতাম হেমন্তের প্রতিভা আধুনিক না রবীন্দ্রসঙ্গীতে বেশি। আমি বলতাম আধুনিক, ও বলত রবীন্দ্রসঙ্গীত। ওর সাথে শুনে শুনে আমিও পরে রবীন্দ্রসঙ্গীতের অন্ধভক্ত হয়ে উঠি। আমার করা অনেক রবীন্দ্রসঙ্গীতের ক্যাসেট ও কপি করে সাথে নিয়ে গেছে।

এখনও কি ওসব আছে ওর কাছে? দু’টি রবীন্দ্রসঙ্গীত ওর খুবই প্রিয় ছিল। ‘প্রাঙ্গণে মোর শিরিষ শাখায় ফাগুন মাসে। ’ হেমন্তের গাওয়া এই অপূর্ব সঙ্গীতটি আমরা একসাথে যতবারই শুনেছি প্রতিবারই আবার নতুন করে এই গানটির প্রেমে পড়ে গেছি। কেন তা বলে বোঝাতে পারব না। এসব অনুভূতি ব্যাখ্যার অতীত।

এই গানটি আজও আমি একা একা প্রায়ই শুনি এবং বিষণ্ন হয়ে যাই। একবার এ গানটি শুনে উচ্ছ্বসিত হয়ে মিলন আমাকে বলেছিল, এই গানটিতে কবিগুরু যে তিনটি প্রশ্ন করেছেন, প্রেমিক-প্রেমিকার যা আবহমানকালের নিত্য জিজ্ঞাসা, ’প্রত্যহ সে ফুল্ল শিরিষ প্রশ্ন শুধায় আমায় দেখি- এসেছে কি... এসেছে কি-। ’ ‘প্রত্যহ তার মর্মরস্বর বলবে আমায় কি বিশ্বাসে, -সে কি আসে---সেকি আসে-’। ’প্রত্যহ বয় প্রাঙ্গনময় মনের বাতাস এলোমেলো--- ’সে কি এল--- সেকি এল। ’ মামা আপনি তো ইংরেজি সাহিত্যের ছাত্র, বলুন দেখি ওখানে কোথায় এরকমভাবে কোনো কবি কি অনন্তকালের প্রেমের এই তিনটি আকুল জিজ্ঞাসা এমন সাধারণ কথায় অন্তরের অন্তস্থল থেকে করতে পেরেছেন? আমি বলেছি, আমার ইংরেজি সাহিত্যের বিদ্যা তো কিছু নোট মুখস্থ করে এমএ ডিগ্রিটি কোনোমতে নেওয়া।

পরীক্ষা পাসের জন্য শেলি, ওয়ার্ডস ওয়ার্থ, কিটস, বায়রন, শেকসপিয়ার প্রমুখদের কিছু বিশেষ বিশেষ কবিতা আমাকে পড়তে হয়েছিল এবং ওসবের মধ্যে সত্যিই এধরনের প্রেমানুভূতি আমি দেখিনি। আমার মতে পৃথিবীর সামগ্র্রিক সাহিত্যের ইতিহাসে রবীন্দ্রনাথের মতো এমন একশ পার্সেন্ট খাঁটি প্রেমের কবি আর দু’টি নেই। মিলন আবেগের বশে বলে ফেলেছিল, মামা আপনি যদি মেয়ে হতেন, শুধু আপনার এই কথাটির জন্যই আমি আপনার প্রেমে পড়ে যেতাম। সাত-সমুদ্র একাকার করে, দুনিয়া উথাল-পাথাল করে আপনাকে বিয়ে করতাম। আমার উত্তর, আমার সৌভাগ্য, এ জন্মে আমি পুরুষ হয়ে আপনার সাথে আলাপ-আলোচনা করছি, নয়তো বাংলাদেশের সাহিত্যিকের বউ হয়ে সারাজীবন ‘নুন আনতে পান্তা ফুরায়’ করে দরিদ্র সংসারের ঘানি টানতে হতো! তখন কি আর জানি, সামনের ১০/১৫ বছরেই মিলন বাংলাদেশের লাখপতি, হয়তো বা কোটিপতি লেখক হয়ে যাবে।

তার লেখা অনেক বইই সুপারহিট হবে। বস্তুত বাংলাদেশের মতো গরিব দেশে শুধু লিখেই যে জীবনে অসামান্য সচ্ছলতা অর্জন করা যায়, মিলনদের জেনারেশনেই কিছু প্রতিভাবান ও ভাগ্যবানও বটে, লেখকই সফলতার সাথে প্রমাণ করেছেন। এই গানটির, ‘কী আশ্বাসে ডালগুলি তার রইবে শ্রবণ পেতে, অলখ জনের চরণ-শব্দে মেতে। ’ লাইনটি শুনে একবার মিলন বলেছিল, গাছের ডালের যে কান আছে এবং তা যে এত সুন্দর শব্দচয়ন করে বলা যায়, তাতেই বোঝা যায় কবিগুরুর মতো সংবেদনশীল কবি শুধু বাংলা সাহিত্যেই নয়, সমগ্র বিশ্বেই বিরল। শিরিষ বৃক্ষের শ্রবণশক্তির উদ্ধৃতি এ গানটির অন্তর্নিহিত আবেগকে নিঃসন্দেহে অনবদ্য আর অমর করেছে।

রবীন্দ্রসঙ্গীতের এহেন মর্মস্পর্শী ব্যাখ্যা আমি খুব কমই শুনেছি। দ্বিতীয় গানটি হলো একটি বিতর্কিত রবীন্দ্রসঙ্গীত। ‘দিনের শেষে ঘুমের দেশে ঘোমটা পড়া ঐ ছায়া, ভুলালো রে ভুলালো মোর প্রাণ...’ রবীন্দ্র একাডেমি ও শান্তিনিকেতন অনুমোদিত গীতবিতানে এই গানটির কোনো উল্লেখ নেই। কেউ বলেন এটি রবীন্দ্রসঙ্গীত নয়। কারন এটা তার কোন একটি কাব্যের অন্তর্ভুক্ত।

অনেকে বলেন এটা পঙ্কজ মল্লিকের সুর। আমার কোনটাই সঠিক জানা ছিল না। মিলনের ছিল এতে মহা আপত্তি। এত সুন্দর একটি ‘মৃত্যু-আবাহনী’ স্তোত্র যে রবীন্দ্রসঙ্গীত নয়, তা মানতে সে মোটেও রাজি নয়। অবশ্য এটি রবীন্দ্রসঙ্গীত হিসেবেই একাধিক গায়কদের দ্বারা রেকর্ড করা হয়েছে।

পংকজ কুমার মল্লিক ছাড়াও হেমন্ত ও কিশোর কুমারের কণ্ঠে এ গানটির রেকর্ড উভয় বাংলার বাজারে পাওয়া যায়। বাংলাদেশে গিয়ে সম্প্রতি মহিউজ্জামন চৌধুরীর কন্ঠে শুনলাম। খুব ভালো গেছেছেন। সিডিটি সংগ্রহ করেছি। মনে হয় কোন মহিলা শিল্পি এ গানটি রেকর্ড করেন নি।

মিলনের প্রিয় লাইন ছিল, ‘গেয়ে গেল কাজ ভাঙানো গান...’। ও বলত, এখানে সবসময়ই আমি এ সত্যটির সামনাসামনি হই। এ জন্যই আমার স্টুটগার্টের কাজ বা এখানকার কাজ কোনোটাই ভালো লাগে না। ও বলত, মামা, আপনি তো মহাকবির এ অমর বাণীটি একেবার গুলে খেয়ে চিরদিনের জন্য হজম করেই ফেলেছেন। তাইতো আপনার কোনোদিনই এখানে কোনো কাজেই মন লাগেনি।

এখন তো ও পাট চুকিয়েই দিয়েছেন। অন্য একটি লাইন, ‘ওরে আয়, আমায় নিয়ে যাবি কে রে দিনের শেষে শেষ খেয়ায়...’ শুনে ওর চোখ সজল হয়ে যেত। মৃত্যু নিয়ে আমরা খুব কমই আলাপ করেছি। তবে এ লাইনে কবিগুরু মৃত্যুকে যেভাবে সহজভাবে গ্রহণ করে, শেষ খেয়ায় ওঠার প্রস্তুতি নেবার জন্য সবাইকে আহ্বান জানিয়েছেন। তা হৃদয় দিয়ে অনুভব করত ও।

উদাস হয়ে যেত। বলত, এই যে সবাই একে আরেকজনকে ডিঙিয়ে, কনুই দিয়ে আঘাত করে দৌড়ে জীবনের পার্থিব সুখ আর প্রাচুর্যের প্রাপ্তির সংগ্রামে লিপ্ত, তাতে লাভ কী? ডাক যখন আসবে, যেতে তো হবে তখন সবাইকে। কবিগুরু বলতে গেলে প্রায় চোখে আঙুল দিয়ে এই সার্বজনীন মহাসত্যটি আমাদের এই ছোট্ট লাইনে বলে গেছেন কত আগে। আমরা ক’জন এতে সাড়া দেই। আমার তো মনে হয় কেউ না।

গান গাই, ‘জন্মিলে মরিতে হবে, অমর কে কোথা কবে’। কিন্তু বাস্তবে এমনভাবে চলি যে অন্য সবাই মরলেও মরতে পারে, আমি কখনও নয়! আধুনিক বাংলা-হিন্দি গানের শিল্পী হিসেবে মান্না দে, সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়, লতা মুঙ্গেশকর, আশা ভোঁসলে বা কিশোর কুমারকে ও খুবই পছন্দ করত। কিন্তু এদের রবীন্দ্রসঙ্গীত শুনে ও মহা চটে উঠত। তার কথা ছিল, ‘যার কাজ তার সাজে, অন্যলোকের লাঠি বাজে...’। এদের কারো গলাতেই রবীন্দ্রসঙ্গীত যে মোটেই ভালো শোনায় না, তাতে শুধু আমি নই অধিকাংশ রবীন্দ্রসঙ্গীতভক্ত একমত।

শুধুমাত্র বাণিজ্যিক কারণেই যে এইসব আধুনিক গানের শিল্পীদের দিয়ে রেকর্ড-ব্যবসায়ীরা রবীন্দ্রসঙ্গীত রেকর্ড করেছেন তাতে কোনো সন্দেহ নেই। একমাত্র হেমন্ত ছাড়া ও এখন শ্রদ্ধেয়া সুচিত্রা মিত্রের পুত্রবধূ ইন্দ্রাণী সেন, যিনি পরম দাপটের সাথে আধুনিক, রবীন্দ্রসঙ্গীত ও নজরুলগীতি একই উচ্চমাত্রায় ও শুদ্ধভাবে গেয়ে বর্তমানে অসম্ভব জনপ্রিয়তা অর্জন করেছেন, যুগপৎভাবে রবীন্দ্র ও আধুনিক গানে আর কেউ সমান দক্ষ নন। । তালাতের গজলও ভালোবাসত মিলন। একবার এক রাতে যথারীতি মদপানের পর দুজনেই তখন সপ্ত আসমানে।

মিলন বলল, মামা তালাতের ‘বেরহম আঁসমা’ গজলটি এখন শুনব। আমার সে সময় তালাতের ১০/১২টি ক্যাসেট ছিল। আমি কিছুতেই আর সঠিক ক্যাসেটটি খুঁজে পাই না। মদের নেশায় খোঁজায় বিপত্তিও ঘটছিল। কাটা রেকর্ডের মতো মিলন একটাই কথা বার বার বলছিল, মামা, বেরহম আঁসমা শুনব।

শিগগির খুঁজে বের করুন, কোথায় আছে। আমি পর পর ৭/৮টি ক্যাসেট দ্রুত ঘুরিয়ে, বাজিয়ে কিছুতেই ’বেরহম আঁসমা’ বের করতে পারছিলাম না। অধৈর্য হয়ে মিলন এক সময় বলল, মামা আপনি গুড ফর নাথিং। কোনো কাজ করেন না, সারাদিন গান শোনেন, বই পড়েন, হিন্দি ফিল্ম দেখেন, সিগারেট টানেন আর রাতে মাল খান। একটা গান শুনতে চাই, আপনার কাছে আছে অথচ এখন ওটা বেরই করতে পারছেন না।

আমার বাড়ি হলে, আজ আপনাকে ঘাড় ধরে বের করে দিতাম। বাংলাদেশে সাবধান আমার সাথে দেখা করতে আসবেন না। তখন ওদের পরের মাসে ফিরে যাওয়া নির্ধারিত হয়ে গেছে। আপনার ঠ্যাংএ ল্যাং মেরে দেব। এটা ছিল মিলনের প্রিয় প্রহার-বাসনা।

আমি রেগে বলেছিলাম, আমারও ঠ্যাং আছে, ল্যাং আমিও মারতে পারি। মহা রেগে মিলন বলল, আমি ঢাকার মস্তান, সারাদেশে আমার লেখার ভক্তরা আমার ফিরে যাবার অপেক্ষায় আছে। আসুন একবার ঢাকায়, কে কাকে ল্যাং মারে দেখিয়ে দেব। আমাদের জোর ডায়ালগের ক্রমশ উচ্চতায় মনির ঘুম ভেঙে গেল। ও এসে আমাদের দু’জনকেই ধমকিয়ে বিছানায় শুতে যেতে বাধ্য করল।

সকালে উঠে আমি আর এ ব্যাপারে ওকে কিছু বললাম না। তবে এটা ঠিক মিলন ছাড়া আমার সাথে অন্য কেউ এরকম বেয়াদবি করলে, তা মদপানের প্রভাবেই হোক না কেন আমি তার সাথে আর কোনো সম্পর্ক রাখতাম না। ওর প্রতি আমার একটা অন্যরকম টান ছিল, যা এখনও আছে। খুবই ভালোবাসতাম তাকে। তাই রাতের ঘটনাটি আমি এড়িয়ে গেছি।

পরে মনির কাছে শুনে, মিলন আমার কাছে মাফ চেয়েছে। আমি হেসে উড়িয়ে দিয়েছি এবং পরে অনেকবার তালাতের ‘বেরহম আঁসমা’ শুনে দুজনে ওই রাতের কথা মনে করে প্রানখুলে হেসেছি। ডিসেম্বরের এক কুয়াশাঘেরা বিষণ্ন আর মলিন সকালে মিলন, মনি, ওর সদ্যভূমিষ্ঠ কন্যাসন্তান, মিন্টু এবং আরেকজন বাঙালি ট্যাক্সিতে উঠে এয়ারপোর্টে রওনা হলো। আগেই ও আমার কাছ থেকে কথা আদায় করেছিল যে আমি এয়ারপোর্টে ওদের বিদায় দিতে যাব না। ওর ভয়, মামাকে পিছে দাঁড়ানো রেখে ও প্লেনে উঠতে পারবে না।

আমিও রাজি হলাম এ ভেবে যে বন্ধু ও পুত্রসম এই প্রিয়জনকে আমিও চোখের সামনে উড়ে গিয়ে অদৃশ্য হতে দেখতে পারব না। এরপর বেশ কিছু দিন অপরাহ্নের দিবানিদ্রা সেরে মনে হয়েছে এখনি মিলন কাজ থেকে ফিরবে এবং চেঁচিয়ে বলবে, আজ দু’বোতল ডাইনহার্টের বিখ্যাত লাল মদ এনেছি মামা। আজ তো শুক্রবার, সারারাত মাল খাব আর শুধু বেগম আখতারের গজল শুনব। আজ হেমন্ত বাবুর ছুটি। আপনি কিন্তু রামায়ণের অযোধ্যা পর্বের বাকি কাহিনীটা আজ অবশ্যই বলবেন।

এর ওর কাছে শুনেছি ১৯৯৭ সালে এ ফ্রাঙ্কফুর্টের বইমেলায় এসে মিলন আমাদের পুরনো শহরে আমাকে খুঁজে গেছে। ওর একজন ফ্রাঙ্কফুর্টের পরিচিত বন্ধু তার গাড়িতে করে তাকে সিন্ডেলফিংগেনে নিয়ে এসেছিল। ওই শহর ও বাসা আমি ১৯৮৩ সালে ত্যাগ করেছি। ওর ‘খুঁজে বেড়াই তারে’ বইটিতে ২/৩টি লাইনে তার এই অনুসন্ধানের একটা ক্ষুদ্র উদ্ধৃতি আছে। আমার নাতী মামুন তার সংগ্রহ থেকে বইটি বের করে আমাকে দেখিয়েছে।

শিল্পী-সাহিত্যিকরা উদাসীন। ভক্তদের কাছে দেবতার মতো শুধু তারা আবাহন আর আহূতি আশা করেন। ভক্তের প্রতি দেবতার অবহেলা সর্বজনবিদিত। কিন্তু আমি তো ওর আন্তরিক পরমাত্বীয়। কিছুটা ভক্তও বটে।

ওর লেখার। কাজেই তার এই অবহেলা আর উদাসীনতা আজও আমায় আঘাত করে। আমি জানি শুধু মিলন কেন, আরও অনেক আপনজনের সাথে আমার আর এ জীবনে সাক্ষাৎ হবে না। প্রিয় জন্মভূমি বাংলাদেশেও আর কোনোদিন যাওয়া হবে কিনা জানি না। আমার স্মৃতিতে তাই আমার প্রবাসে আপনজনেরা, যাদের একান্তভাবে কাছে থেকে দেখেছি তারা আমৃত্যু আমার হৃদয়পটে সমুজ্জ্বল হয়ে রইবেন।

* ফ্রয়েডেনস্টাড, জার্মানি, মার্চ ২০০৭ এ লেখাটির সময় পরের বছরই যে আমি দুবার দেশে যাবো, তা জানতাম না। তিরিশ বছর পরে দেশে গিয়ে দুবারই মিলনের সাথে আমার দেখা হয়েছে। এ লেখার সমাপ্তিতে লেখা আশংকাগুলি ভুল। ওর সাথে আমার সম্পর্ক আগের মতই নিবিড়। ও পৃরোনো স্মৃতি কিছুই ভুলে নি।

অন্য কয়েকজন স্বজনসহ তার নিকট সান্নিধ্যে তাই জীবনের বাকি সময়টি দেশে গিয়ে থাকার ইচ্ছাটি জেগেছে। ’আবার আসিব ফিরে এই বাঙলার সাগরতীরে---- লিংক: http://www.notundesh.com/shukhdukkho.html

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.