প্রতিদিন গাড়ির মধ্যেই দিনের অধিক সময় থাকি। কাজে আর তার ফাঁকে ঘুরতে ক্ষানিক সময় পেলেই চলে যাই এদিক ওদিক। নতুনত্বের খুঁজে। শুক্রবার দিনটা কাজের চাপ কিছু কম ছিল। দেশ থেকে আসা আত্মিয়কে ক্ষানিক সময় দিতে পারব।
তাদের টরন্টো বা আসপাশে একটু ঘুরিয়ে ফিরিয়ে নিয়ে আসব। মনে এমন বাসনা নিয়ে সকালবেলা পথে নামলাম। ছেলেকে কাজে পৌঁছে দিয়ে গাড়িটা ফ্রি করে নিতে। সুন্দর ঝকঝকে সকাল। ফুরফুরে মন কাজের চাপ নাই তাই বেশ উড়ুউড়ু।
পথে নামতেই বেতার বার্তায় জানলাম যে পথে হাইওয়েতে উঠব সেটা বন্ধ কলিসনের কারণে। খানিক এগিয়ে গিয়ে অন্য পথে হাইওয়ে ধরলাম। বেশ ফাঁকা রাস্তায় সবাই সুন্দর ভাবে চলছে। যাবো প্রায় পঞ্চাশ কিলোমিটার দূর, দশ বারো কিলোমিটার পেরিয়ে গেলাম হাইওয়ের স্বাভাবিক গতিতে। তারপরই গতি কমতে লাগল ভীড়ের জন্য তবু একশো স্পিডে চলছি।
চার লেইন পুরোটা জুড়ে চলছে গাড়ি। আমি যাচ্ছি এক্সপ্রেসের সর্ববামের লেইন ধরে। আজকাল অনেক গাড়ি সারাক্ষণ প্রায় জ্যাম লেগে থাকে । প্রতিদিন দু চারটা র্দূঘটনা আর অনেক বিরক্তি কর চালকের সাথে পথ চলতে হয়। কেউ অতি সাবধানি নড়তে চায় না আর কেউ দ্রুত চলে যেতে চায় যেন রেসের মাঠে নেমেছে।
জ্যাম প্রায় ঢাকার র্দূবিসহ অবস্থার কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। মজা পাইনা আগের মতন গাড়ি চালিয়ে। এক সময় ভাবতাম এত বড় রাস্তাটা একা আমারই অথচ এখন হাজার হাজার গাড়ির সাথে ভাগাভাগি করে খুব সর্তকতায় চলতে হয়।
হঠাৎ আমার তিন চার গাড়ি সামনে হুট করে একটা মাজদা লেইন বদল করে ডানে চলে গেলো আর পাশের জিপের সাথে ধাক্কা খেয়ে আবার আগের জায়গায়ার দিকে এলোমেলো ভাবে ফিরে গেলো। জিপ টাল সামলাতে না পেলে ধাক্কা খেলো তৃতীয় লেইনের বিশাল লরির সাথে আর লরির সামনে গিয়ে ঘুরে চলে গেলো অন্যপাশে ।
ষোল চাকার সেই বিশাল ট্রাক এলোমেলো ভাবে সরে এলো বামে। আমার সামনের দুটো গাড়ি ধাক্কা খেয়ে থামল কোন মতন। আর তাড়াতাড়ি যেতে চাওয়া মাজদা কাত হয়ে আটকালো দেয়ালে। লরিটাও থামল ধাক্কা খেয়ে। সামনের দুটো গাড়ি এলোমেলো বারি খেয়েও স্থির হলো।
আমার পাশে আরো একটা বিশাল ট্রাক সরে আসছে আমার দিকে বাম পাশে কারণ সামনে গেলে অনিবার্য ধাক্কা বড় লরির সাথে। আমি সরছি দেয়ালের দিকে লেইনের বাইরে পাশের জায়গায়। আমার পাশের ট্রাক আর আমার মাঝে পাঁচ ছয় ইঞ্চির মতন দূরত্ব। যে কোন সময় উল্টে গেলে আমি কী করে বাঁচাব আমার ছেলেকে? ওটা তো প্রথমে ওর উপর পরবে । ও আছে পেসেঞ্জার সিটে সামনে ডান পাশে।
সামনে গেলে অন্য গাড়িকে ধাক্কা দিব। কী করি আজ আর একটু পরে কী হবে আমাদের? এই ভাবতে ভাবতে সামনের গাড়ি থেকে বেশ কিছুটা দূরত্বে থামাতে পারি আমার গাড়ি কোন কিছুর সাথেই না লাগিয়ে। পাশে বড় ট্রাকটাও একি সময়ে থেমে যায়। যাক আমি ছেলেকে এবং নিজেকে সেইফ করতে পেরেছি গাড়িরও কোন ক্ষতি হয়নি। ভাবনা শেষ হওয়ার আগেই বিশাল এক ধাক্কা ...মনে হলো আমার গাড়ির পিছনটা কেউ খুলে নিয়ে গেলো এমনি শব্দ।
বাম পাশে তাকিয়ে আমি বুঝে উঠতে পারছিলাম না গাড়ির ছাদ কীভাবে খুলে এলে? আমার বাম পাশে কিছু কাপড়ের মতন ঝুলছে জানালার পাশে । এগুলো কেমন করে এলো? উপরে তাকিয়ে দেখলাম না ছাদ ঠিক আছে। আমি থেমে আছি। ব্রেক চেপে আছি ভীষণ ভাবে গাড়ি সামনে গিয়ে অন্য গাড়িকে এখনো ধাক্কা দেয়নি। গাড়ির ভিতর সানগ্লাস, সেল ফোন, সিডি, কাগজ পত্র সব এলোমেলো পরে আছে।
আমার বাম পাশে বিশাল এক পিকাপ ট্রাক ডিভাইডার ওয়াল আর আমার গাড়ির বামপাশে থেমে আছে। সে ধাক্কায় খুলে এসেছে এয়ার ব্যাগ সাইড থেকে। ছেলে ৯১১ কল করল। ব্লু টুথে কথা হচ্ছে তাই আমি র্স্টাট বন্ধ করতে পারছি না। ওরা নানান প্রশ্ন করছে কোথায়, কি অবস্থা, হতাহতো, ধূঁয়া হচ্ছে কিনা তক্ষুনি সামনের কাত হয়ে থাকা মাজদা থেকে ধূঁয়া বেড়ুতে শুরু করল।
অনেক ধূয়া হায় হায় আগুন লেগে যাবে আমরা গাড়ি থেকে বেরুব কীভাবে? বামপাশের দরজায় পিকাপ অন্যপাশে চেপে আছে ট্রাক। কিছু ভাবার আগেই দেখলাম ট্রাকটা পিছনে যাচ্ছে আমাদের দরজা খুলার জায়গা হলো বেড়িয়ে এলাম ডানপাশ দিয়ে আর তখনি টের পেলাম বামপাশে কান মাথা হাতে অস্বস্থি কর অনুভুতি দুচার মিনিট চারপাশ দেখলাম পিকাপের পিছনে আরো তিন চারটা ধাক্কা খেয়ে এলোমেলো। যাদের এই ধাক্ক না খাওযার জন্য যথেষ্ট সময় ছিল অথচ ওরা সর্তক ছিল না। এই সব দেখেতে না দেখতে এম্বুলেন্স এসে পরল আর আমাকে বেঁধে ছেদে হাসপাতালে নিয়ে গেলো।
সে আরেক বিশাল পর্ব পারি দিয়ে মাঝ রাতে বাড়ি পৌঁছালাম।
যদিও কিছু ব্যথা বেদনার সাথে বসবাস করছি তবু সব ঠিক আছে এই সান্তনা।
ব্ল্যাকবেরিতে তাতক্ষনিক ভাবে ছেলের তোলা ছবি দিলাম-
বড় লরি আর ধাক্কা খেয়ে উল্টো মুখো হয়ে যাওয়া জীপ
অঘটনের খল নায়ক মাজদা
তিন লেইন জুড়ে থাকা লরির পিছন আর আমার সামনে ধাক্কা খাওয়া দুটো গাড়ি
তিনটা গাড়ির অনেক পিছনে আমি
আমার গাড়ি আর পাশে উঠে পড়া পিকাপ
পিকাপের পিছনে ধাক্কা খাওয়া গাড়িগুলো
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।