কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সর্বশেষ পরিসংখ্যানে দেখা যায়, গত ২০১২-১৩ অর্থবছরে বৈদেশিক লেনদেনের চলতি হিসাবে ২৫২ কোটি ৫০ লাখ (২ দশমিক ৫২ বিলিয়ন) ডলার উদ্বৃত্ত রয়েছে। তার আগের ২০১১-১২ অর্থবছরে ৪৪ কোটি ৭০ লাখ ডলারের ঘাটতি (ঋণাত্বক) ছিল। আর ২০১০-১১ অর্থবছরে উদ্বৃত্তের পরিমাণ ছিল ৮৮ কোটি ৫০ লাখ ডলার।
২০১২-১৩ অর্থবছরে বাণিজ্য ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৭০১ কোটি ডলার। ২০১১-১২ অর্থবছরে এই পরিমাণ ছিল ৯৩২ কোটি ডলার।
এই হিসাবে ২০১২-১৩ অর্থবছরে পণ্য বাণিজ্যে সার্বিক ঘাটতি আগের বছরের চেয়ে ২৫ শতাংশ কমেছে।
তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, রপ্তানির চেয়ে আমদানি বেশি হওয়ায় বাংলাদেশে বরাবরই পণ্য বাণিজ্যে ঘাটতি ছিল। প্রায় প্রতি বছরই এই ঘাটতির পরিমাণ বাড়ছিল।
২০০৫-০৬ অর্থবছরে বাণিজ্য ঘাটতি ছিল ২৮৭ কোটি ৯০ লাখ ডলার। ২০০৬-০৭ অর্থবছরে তা বেড়ে ৩৪৫ কোটি ৮০ লাখ ডলারে দাঁড়ায়।
বিশ্ব অর্থনীতির মন্দার কারণে খাদ্য পণ্যসহ সব ধরনের পণ্যের দাম অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ায় ২০০৭-০৮ অর্থবছরে বাণিজ্য ঘাটতি বেড়ে দাঁড়ায় ৫৩৩ কোটি ডলারে।
তবে ২০০৮-০৯ অর্থবছরে তা ৪৭১ কোটি ডলারে নেমে আসে। ২০০৯-১০ অর্থবছরে ঘাটতির পরিমাণ ছিল ৫১৫ কোটি ৫০ লাখ ডলার। এরপর থেকে প্রতি বছরই ঘাটতির পরিমাণ বাড়ছিল।
বাংলাদেশ ব্যাংকের গর্ভনর আতিউর রহমান বলছেন, বাম্পার ফলনের কারণে চালসহ অন্যান্য খাদ্যের আমদানি কমায় গত অর্থবছরে বাণিজ্য ঘাটতি কমে এসেছে।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “বাণিজ্য ঘাটতি কমায় বৈদেশিক লেনদেনের চলতি হিসাবের ভারসাম্যে (ব্যালান্স অব পেমেন্ট) বড় ধরনের উদ্বৃত্ত রয়েছে। এর ফলে অর্থনীতিতেও স্বস্তি বিরাজ করছে। ”
নিয়মিত আমদানি-রপ্তানিসহ অন্যান্য আয়-ব্যয় চলতি হিসাবের অন্তর্ভুক্ত। এই হিসাব উদ্বৃত্ত থাকার অর্থ হলো, নিয়মিত লেনদেনে দেশকে কোনো ঋণ করতে হচ্ছে না। আর ঘাটতি থাকলে সরকারকে ঋণ নিয়ে তা পূরণ করতে হয়।
২০১২-১৩ অর্থবছরে বিভিন্ন পণ্য আমদানি খাতে (এফওবিভিত্তিক, ইপিজেডসহ) মোট তিন হাজার ৩৭৫ কোটি ৬০ লাখ (৩৩ দশমিক ৫৮ বিলিয়ন) ডলার ব্যয় করেছে বাংলাদেশ। আর পণ্য রপ্তানি থেকে (এফওবিভিত্তিক, ইপিজেডসহ) আয় হয়েছে দুই হাজার ৬৫৬ কোটি ৬০ লাখ (২৬ দশমিক ৫৬ বিলিয়ন) ডলার। এই হিসাবে সামগ্রিক ঘাটতি দাঁড়াচ্ছে ৭০১ কোটি ডলার।
২০১১-১২ অর্থবছরে তিন হাজার ৩৩১ কোটি (৩৩ দশমিক ৩১ বিলিয়ন) ডলারের পণ্য আমদানির বিপরীতে দুই হাজার ৩৯৮ কোটি ৯০ লাখ (২৩ দশমিক ৯৯ বিলিয়ন) ডলারের রপ্তানি করেছিল বাংলাদেশ।
সাম্প্রতিক সময়ে অপ্রয়োজনীয় এবং বিলাসবহুল পণ্য আমদানি কমাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে নানা পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে বলে গভর্নর জানান।
অর্থনীতিবিদ জায়েদ বখত মনে করেন, প্রবাসী বাংলাদেশিদের পাঠানো অর্থের প্রবাহ ভাল থাকায় এবং পণ্য-বাণিজ্যে ঘাটতি কমে আসায় চলতি হিসাবে এই স্বস্তিদায়ক উদ্বৃত্তি।
বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা সংস্থা- বিআইডিএসের এই গবেষক বলেন, “মূলত রেমিটেন্স ও রপ্তানি আয়ের ইতিবাচক ধারার কারণেই বৈদেশিক লেনদেনে ভালো অবস্থায় রয়েছে বাংলাদেশ। ”
অবশ্য সেবা খাতের বাণিজ্য ঘাটতি ২০১১-১২ অর্থবছরের ৩০০ কোটি ১০ লাখ ডলার থেকে বেড়ে গত অর্থবছরে ৩১৫ কোটি ৯০ লাখ ডলারে পৌঁছেছে। মূলত বিমা, ভ্রমণ ইত্যাদি খাতের পরিস্থিতি বিবেচনা করে সেবা খাতের বাণিজ্য ঘাটতি পরিমাপ করা হয়।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় যে, বিদেশি বিনিয়োগ ও বিদেশি সহায়তা বাড়ায় এর ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে সরকারের আর্থিক হিসাবে।
২০১২-১৩ অর্থবছরে ১৩০ কোটি ডলারের প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) দেশে এসেছে। গত অর্থবছরের একই সময়ে এসেছিল ১১৯ কোটি ১০ লাখ ডলারের বিনিয়োগ।
পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ (পোর্টফোলিও বিনিয়োগ) এসেছে ২৮ কোটি ৭০ লাখ ডলারের। গত অর্থবছরে এসেছিল ২৪ কোটি ডলারের বিনিয়োগ।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী ২০১২-১৩ অর্থবছরে এক হাজার ৪৩৩ কোটি ৮০ লাখ (১৪ দিশমিক ৩৪ বিলিয়ন) ডলারের রেমিটেন্স দেশে পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা।
গত অর্থবছরের একই সময়ে এসেছিল এক হাজার ২৭৩ কোটি ৩৪ লাখ ডলার।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।