thanks all over
আজ ৭ জুলাই চলে যাচ্ছে। বৃক্ষ প্রেমিক ও দেশী বিদেশী পর্যটকদের জন্য শোকগাথা আজকের দিন। হারিয়ে যাওয়া এশিয়া মহাদেশের আলোচিত বিরল প্রজাতির কোরোফর্ম এক্সেলা বৃক্ষটি নিয়ে এখন আর নানা কথা আর কৌতুহল প্রকাশ করছে না। পেরিয়ে গেল হিসাবের খাতা থেকে ৪টি বছর। এখনও সেই কোরোফর্ম এক্সেলা বৃক্ষটি বৃক্ষ প্রেমিক ও দেশী বিদেশী পর্যটকদের হৃদয়ে স্থান দখল করে আছে।
কবি সাহিত্যিক ও অসংখ্য দর্শকদের আকর্ষনের বিরল প্রজাতির সেই কোরোফর্ম বৃক্ষটি এখন শুধু স্মৃতি। গত ২০০৬ সালের ৭ জুলাই ভোরে ভয়ংকর ঝড়ে কেড়ে নেয় তাকে। বৃক্ষপ্রেমিদের শোক পালনে স্মৃতি মন্থন ছাড়া আর কিছুই করার নেই।
প্রায় দেড়শো বছরের কোরোফর্ম বৃক্ষটিকে নিয়ে জনমনে ছিল নানা কৌতুহল। শ্রীমঙ্গলের লাউয়াছড়া সংরক্ষিত বনাঞ্চলে দেশী বিদেশী পর্যটকদের আকর্ষন করতো কিংবদন্তী ও কালজয়ী বৃক্ষটি।
বনবিভাগ এটিকে রেখেছিল অতি সর্তক প্রহরায়। কোরোফর্মের পাতা শুঁকলে মানুষ সংজ্ঞা হারানোর গল্প এখনও মানুষের মুখে মুখে। শতবর্ষীয়ান এবৃক্ষটি কিভাবে কখন লাউয়াছড়া বনে রোপন করা হয়েছিল, তার সঠিক তথ্য আজও রয়েছে অজানা। পর্যটকরা অপলক নেত্রে তাকিয়ে সেই কোরোফর্ম বৃক্ষশুন্য স্থানকে নিয়ে মনের আয়নায় এখনও স্মৃতি মন্থন করেন। সেই বিরল প্রজাতির প্রাচীন কোরোফর্ম বৃক্ষের ৪র্থ মৃত্যু বার্ষিকী আজ পালিত হচ্ছে।
লাউয়াছড়া বনে দেশী বিদেশী অসংখ্য পর্যটকরা সেই স্মৃতিময় গাছের মোথার কাছে শোক পালন করে। আলোচিত হয় সেই কোরোফর্ম স্মৃতি কথা নিয়ে।
বাংলাদেশ ন্যাশনাল হার্বেরিয়ানের বৃক্ষ বিশেষজ্ঞদের অনুসন্ধানী দল এ গাছের বৈশিষ্ট থেকে ধারনা করেছিল এটির আদিবাস আমেরিকা ও আফ্রিকার উষ্ণমন্ডল। বিরল প্রজাতির বৃক্ষ সিলেট বিভাগের শ্রীমঙ্গল উপজেলার লাউয়াছড়া সংরক্ষিত বনগবেষনা কেন্দ্রের প্রবেশ দ্বারের কাছাকাছি জায়গায় মাথা উচুঁ করে বেঁচে ছিল। আকষ্মিক ঝড়ে সমাপ্তি ঘটে সেই কিংবন্তী বৃক্ষের জীবন।
বিশালকার হলেও এটির কোন ছিল না প্রজনন মতা। তাই বংশ বিস্তার হয়নি। তবে পর্যটকদের আশার আলো হিসাবে আরও একটি বৃক্ষের সন্ধান পেয়েছে বনবিভাগ। ধারনা করা হচ্ছে নতুন আবি®িকৃত বৃক্ষটি বিরল প্রজাতি গোত্রের। এখনও এটি রয়েছে অনেক ছোট।
নতুন ভাবে পাওয়া বৃক্ষের বয়স কম হলেও এটির জন্ম বৃত্তান্ত জানে না বন বিভাগ।
একটি সুত্রে পাওয়া তথ্যে জানা যায়, ১৯৮৫ সালে পশ্চিম জার্মানীর এক গবেষক তার একটি বইতে কোরোফর্মের অর্থনৈতিক মুল্য সম্পর্কে উল্লেখ করেছিলেন। তার তথ্য মতে এটির বাকল দিয়ে বিভিন্ন ধরনের চুলকানী বা চর্মরোগের ওষুধ তৈরী করা হয়। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে বিরল প্রজাতির প্রজনন বৃদ্ধির চেষ্টা করেও সম্ভব হয়নি। বর্ষায় ভরা মৌসুমে বৃষ্টির পরশে ফুলে ফুলে উচ্ছল যখন অরন্যানী ঠিক সেই মুহুর্তে বৃটি বাংলাদেশের মাটি থেকে চির বিদায় নেয়।
পঞ্জিকার পাতায় পেরিয়ে গেল ৪টি বছর। বৃক্ষ প্রেমিক ও পর্যটকদের কাছে আজ শোক গাথা স্মৃতি, যা লিখে বুঝানো অসম্ভব। এশিয়ার দুর্লভ প্রজাতির কোরোফর্ম এক্সেলা বৃক্ষটি ছিল ৯ ফুট বেষ্টনী ও ৮০ ফুট লম্বা। ৭০এর দশক থেকে এটিকে নিয়ে সবচেয়ে বেশী কৌতুহলী হয়ে উঠেন বৃক্ষ বিশেষজ্ঞ ও পর্যটকরা। দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে লাউয়াছড়া শিক্ষা সফরে আসলেই কিংবদন্তী বৃক্ষটি নিয়ে হতো আলোচনা ও জল্পনা-কল্পনা।
২০০৬ সালে বৃক্ষটির জীবনাবসানের পর এটিকে সংরক্ষনের চেষ্টা চালায় বন বিভাগ। এটির বৈশিষ্ট ও কার্যকারিতা ও মৃত্যুর কারন সম্পর্কে জানার জন্য খন্ডিত কয়েকটি অংশ পাঠানো হয় বনগবেষনা কেন্দ্র ঢাকা ও চট্টগ্রামে। দীর্ঘ ৪ বছরেও জানা যায়নি বৃক্ষটির মৃত্যুর কারন। তবে প্রাথমিক ধারনায় মনে করা হচ্ছে মাটির গভীরে এটির শিকড় বেশীদুর যেতে না পারা ও গুড়াতে পর্যাপ্ত মাটি না থাকায় ঝড়ের কাছে হেরে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। বিরল প্রজাতির বৃক্ষটি পর্যটকদের শুধু স্মৃতি হয়েই বেঁেচ থাকবে যুগ থেকে যুগান্তর।
লাউয়াছড়ায় পর্যটকদের আগমন ঘটবে দেখবে, না সেই বৃক্ষটিকে। নীরবে হয়তো অনেকেই ছলছল চোখে দেখবে স্মৃতিঝরা সেই স্থানকে। যেখানে হাজার হাজার মানুষ কৌতুহলী হয়ে বিভিন্ন পোজ নিয়ে ছবি উঠাতো সেই স্থানটি এখন ফাঁকা। বনবিভাগের নতুন আবি®িকৃত বৃক্ষটি পর্যটকদের সেই অভাব মেটাতে পারবে কিনা তা এখন সময়ের ব্যাপার।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।