বেশীর ভাগ প্রতিবন্ধতার কারণ আমাদের জানা নেই ৷সারা পৃথিবীতে ৬০ কোটি প্রতিবন্ধী মানুষ রয়েছে। বাংলাদেশের জনসংখ্যার ১০ শতাংশই প্রতিবন্ধী। জাতিসংঘের শিশু বিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফ এক প্রতিবেদনে বলেছে, প্রতিবন্ধী শিশুদের 'প্রতিবন্ধী' হিসেবে না দেখে শিশু হিসেবে দেখতে হবে। তাহলেই তারা সমাজে নানাভাবে অবদান রাখতে পারবে। বাংলাদেশে প্রতিবন্ধী শিশুদের নিয়ে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ হলেও এসব শিশুর অভিভাকরা বলছেন শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ বিভিন্ন মৌলিক ক্ষেত্রে এখনো তারা ব্যাপক হারে বৈষম্যের শিকার হচ্ছে।
সত্তরের দশকে বিশ্বে প্রতিবন্ধীদের সংখ্যা ছিল মোট জনসংখ্যার ১০ শতাংশ।
প্রতিবছর ৩ ডিসেম্বরকে বিশ্ব প্রতিবন্ধী দিবস হিসেবে পালন করা হয়। ১৯৯২ সাল থেকে এই দিবসটি পালিত হয়ে আসছে জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে। শারীরিকভাবে অসম্পূর্ন মানুষদের প্রতি সহমর্মিতা ও সযোগীতা প্রদর্শন ও তাদের কর্মকন্ডের প্রতি সম্মান জানানোর উদ্দেশ্যেই এই দিবসটির সূচনা। প্রতিবন্ধিতা সৃষ্টিকর্তার অভিশাপ নয়।
মহান আল্লাহ পবিত্র কোরআন শরিফে ইরশাদ করেছেন- আমি মানুষকে সুন্দরতম আকৃতিতে সৃষ্টি করেছি। পবিত্র হাদিস শরিফে হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) বলেছেন- ধর্ম ভিরু নাক কাটা গোলাম দেশের আমীর বা বাদশাহ হলে তাকে মান্য করতে বলা হয়েছে। এখান থেকে স্পষ্ট প্রমাণিত হয় যে, সৃষ্টিকর্তার কাছে অপ্রতিবন্ধী ও প্রতিবন্ধী উভয় সমান। একই দৃষ্টিতে তাদের দেখে থাকেন। আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) যুদ্ধে আহত হয়ে শারীরিক প্রতিবন্ধিতার শিকার হযরত সাদ বিন মাআযকে (রা.) গোত্রের নেতা বানিয়েছিলেন।
মৃদু বাক প্রতিবন্ধী সাহাবি হযরত বেলালকে (রা.) ইসলামের প্রথম মুয়াজ্জিন বানিয়েছিলেন। এ ধরনের বহু দৃষ্টান্ত রয়েছে ইসলামসহ অন্য ধর্মে।
প্রতিবন্ধী ব্যক্তি বলতে অসুখে, দুর্ঘটনায়, চিকিত্সা ত্রুটি বা জন্মগতভাবে যদি কোন ব্যক্তির শারীরিক বা মানসিক অবস্থা ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার মাধ্যমে কর্মক্ষমতা আংশিক বা সম্পূর্ণভাবে লোপ পায় অথবা তুলনামূলকভাবে কম হয় তা হলে সেই ব্যক্তিকে বুঝায়। বাংলাদেশের মোট জনগোষ্ঠীর একটি উল্লেখ যোগ্য অংশ প্রতিবন্ধী। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাবমতে, বাংলাদেশে প্রতিবন্ধী ব্যক্তির সংখ্যা শতকরা ১০ ভাগ।
বাংলাদেশের সংবিধানের ১৫,১৭, ২০ এবং ২৯ অনুচ্ছেদে অন্যান্য নাগরিকদের সাথে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সম-সুযোগ ও অধিকার প্রদান করার কথা বলা হয়েছে। পৃথিবীতে প্রতিবন্ধী মানুষের সংখ্যা ৬৫ কোটি ছাড়িয়ে গেছে। আর এই ৬৫ কোটি মানুষের মধ্যে ২০ কোটিই শিশু যারা কোন না কোন প্রতিবন্ধীতা নিয়ে পৃথিবীতে জন্ম নিয়েছে।
ব্রেইলের মাধ্যমে লেখা-পড়া করে চ্যালেঞ্জিং পেশায় এগিয়ে আসছে। ব্রেইল হচ্ছে দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের শিক্ষার হাতিয়ার।
কিন্তু কে বা কিভাবে এই ব্রেইল আবিষ্কার হয়েছে তা অনেকের কাছে অজানা। ব্রেইল পদ্ধতি যিনি আবিষ্কার করেন তিনি হচ্ছে- লুই ব্রেইল নামের এক দৃষ্টি প্রতিবন্ধী। সারা দুনিয়ার দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের আলোর পথ দেখিয়েছে। প্রতিবন্ধীদের বিশেষ চাহিদা আছে। তাদের বিশেষ চাহিদা পূরণে সবাইকে আন্তরিক হতে হবে।
তাদের অধিকার রক্ষায় সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। প্রতিবন্ধীতা হচ্ছে দারিদ্র্যের মুল কারণ ও চুড়ান্ত পরিণতি। বিশ্বের শতকরা ৮০ ভাগ প্রতিবন্ধী মানুষ বসবাস করেন দারিদ্রপীড়িত দেশগুলোতে। তারা অর্থনৈতিক ও সামাজিকসহ সব ধরনের সমস্যার মুখোমুখি এবং নাগরিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত।
চীনের কুয়াংতং প্রদেশের কুয়াংচৌ শহরের প্রতিবন্ধী ক্লাবের সদস্য মাদাম ফেংসি সাংবাদিকদের জানান, যে কোনো দম্পতির সন্তানের হাত-পা ভেঙ্গে গেলে তা তাদের কাছে ভূমিকম্পের মত এক ভয়ংকর ব্যাপার হয় ।
সন্তান বিকলাংগ হওয়ায় তাদের কেউ কেউ একেবারে জীবনের হাল ছেড়ে দেন। কিন্তু প্রতিবন্ধী সন্তানকে মানুষ করার প্রক্রিয়ায় অধিকাংশ দম্পতি অপূরর্ব ধৈর্যের ও সাহসিকতার পরিচয় দেয়। সমাজের বহু হিতৈষী সাধারণত তাদের টাকা দান করে সাহায্যের দায়িত্ব পালন করছেন বলে মনে করেন। প্রতিবন্ধীতা নিয়ে পৃথিবীতে বেঁচে থাকা যে কি কষ্টের, একমাত্র প্রতিবন্ধী ব্যক্তি ও তার স্বজনরা ছাড়া অন্য কেউ ততটা উপলব্ধি করতে পারেন না।
প্রতিবন্ধীরা আজ সমাজ বা পরিবারের বোঝা নয়।
সাধারন মানুষের মতোই পড়া শোনার পাশাপাশি নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য দিনরাত পরিশ্রম করে যাচ্ছে ময়মনসিংহের শারীরিক ও মানসিক প্রতিবন্ধীরা। কারও করুনার পাত্র হয়ে থাকতে চান না এইসব প্রতিবন্ধীরা। নিজগুনে তারা আজ হচ্ছে স্বাবলম্বী। জীবিকার নির্বাহের তাগিদে তৈরি করছে নকশী কাথা, জামাকাপর, চাদর, ব্যানেটি ব্যাগ, পাপুস, নাক ফুল, কান ফুল, মালাসহ নানা সরঞ্জামাধী। প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা সমাজের অবিচ্ছেদ্য অংশ।
মানুষ হিসেবে তাদের রয়েছে মর্যাদা। সেজন্য এ ব্যাপারে সর্বস্তরের মানুষের সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলা প্রয়োজন। যাতে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের নির্দিষ্ট নামে সম্বোধন করার রীতি সমাজে সহজেই প্রচলন ঘটে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।