কিচ কিচ কুচ কুচ কাচ কাচ কোচ কোচ!!! একটা মানুষ অনেকগুলো অভ্যাসের সমষ্টি। আমিও তার ব্যাতিক্রম নই। তবে আমার অভ্যাসটা একটু ভিন্নধর্মী।
আমি রুমে আন্ডারওয়ার পরে ড্রেস চেঞ্জ করি। আমি ড্রেস চেঞ্জ করার সময় আমার হুজুর রুমমেট নাউজুবিল্লাহ বলে চোখের উপর দুই পরত তোয়ালে পেঁচিয়ে ঘুমিয়ে যায়, আমার প্রেমিক রুমমেট মুচকি হেসে ফোনটা কানে করে রুমের বাইরে বেরিয়ে যায়।
করিডোর দিয়ে হেঁটে চলা জুনিয়ররা দৌড়ে পালিয়ে যায়, সিনিয়ররা সকাল বিকাল মাথা নিচু করে হেঁটে চলে যান। আর আমি মনের আনন্দে আন্ডারওয়ার পরে ড্রেস চেঞ্জ করি।
আপনি যদি জিজ্ঞেস করেন কেন আন্ডারওয়ার পরে ড্রেস চেঞ্জ করি তাহলে আমি বলব, বাতাস লাগে তাই। আর যদি উত্তর ভালো না লাগে তাহলে বলব, আমার ইচ্ছা তাই। আপনার কোন সমস্যা?
আপনার সমস্যা না হলেও, আমার প্রেমিক রুমমেটের সমস্যা।
আর সেখান থেকেই, পাঠক, আমাদের আজকের ভয়াবহ সাইকো থ্রিলার "চরম প্রতিশোধ" এর কাহিনী শুরু।
১
বরাবরের মতই আমি আন্ডারওয়ার পরে ড্রেস চেঞ্জ করছি। হুজুর রুমমেট নাউজুবিল্লাহ বলতে বলতে মুখে ফেনা তুলে ফেলেছে। প্রেমিক রুমমেট অন্যদিকে ফিরে ফোনে "জানটুস" "মনটুস" ইত্যাদি বলছে।
খেলার কারণে আমার হাফপ্যান্ট একদম ভিজে গেছে।
আমি ওটা খুলে হাতে নিলাম। আন্ডারওয়ার পরা অবস্থাতেই দেখলাম, করিডোর একদম অন্ধকার। আর এই ভর সন্ধ্যার সময় এ এলাকায় কেউ আসা যাওয়া করে না।
আমি চুপি চুপি কাউকে না বলে হাফপ্যান্ট হাতে নিয়ে বারান্দায় চলে এলাম। উদ্দেশ্য, বাইরের তারে হাফপ্যান্ট নেড়ে দিব।
নাড়লামও, এবং তার পরেই শুনলাম ধুপ ধাপ শব্দ।
কিসের শব্দ? মনে হচ্ছে কেউ দৌড়ে আসছে।
এবং আমি কিছু বোঝার আগেই আবিষ্কার করলাম, আমার দুই রুমমেট মিলে রুমের দরজা বন্ধ করে দিয়েছে। ভিতর থেকে ক্রূর অট্টহাসি ভেসে আসছে, হু হু হা হা। হা হা হু হু।
২
এই মুহূর্তে আমি বাথরুমে ঢুকে বসে আছি। ক্ষণিকের উত্তেজনায় আমার হাফপ্যান্ট তারে নাড়তে গিয়ে হাত ফসকে বাইরে নিচতলায় পড়ে গিয়েছিল, এ কারণে ওটা আর তুলে পড়তে পারি নি। আন্ডারওয়ার পরেই দৌড় দিতে হয়েছে বাথরুমে।
ঠাণ্ডায় ঠক ঠক করে কাঁপছি আমি। বাইরে দরজা ধাক্কানো হচ্ছে, "ভিতরে কে রে ভাই? বের হন, গোসল করব।
আপনি তো দুই ঘণ্টা ধরে ভিতরে বসে আছেন"।
এই রে! সেরেছে! এখন কি হবে? এই ছেলের বোন আমার ক্লাসমেট, ঐ মেয়ের লাইন পাবার জন্য এই ছেলেকে কত কিই না খাইয়েছি সেই থার্ড ইয়ার থেকে। সম্পর্কে সে আমার শালা, মানে হবু শালা আর কি।
আর এখন! প্রেস্টিজের পুরা পাঙ্কচারময় অবস্থা।
ওদিকে আমার দুই রুমমেটের গলা শুনতে পাওয়া যাচ্ছে।
তারা বলছে, "ভিতরে মনে হয় চোর ঢুকছে। চলেন উপর দিয়ে উঠে দেখি"।
আমার তখন হাত পা কাপাকাপি শুরু হয়ে গেছে। দরজা ধাক্কানোর শব্দ আরও জোরালো হচ্ছে। বাইরে হায়েনার হাসির মত হু হু হা হা শব্দ বাড়ছে তো বাড়ছেই।
৩
ছয় মাস পরের ঘটনা।
আমি এখন ভালো হয়ে গেছি। এখন লুঙ্গি ছাড়া ড্রেস চেঞ্জ করি না। সেদিন টানা আট ঘণ্টা বাথরুমে থেকে আমার শিক্ষা হয়ে গেছে।
কিন্তু মানুষের স্বভাবে প্রতিশোধ নামের একটা শব্দ আছে।
মানুষ মাত্রই প্রতিশোধলিপ্সু।
আমার প্রেমিক রুমমেটের ভয়াবহ জ্বর। জ্বরের ঠেলায় তাকে হলে রাখা সম্ভব হয় নি। আজিমপুরে তার চাচার বাসা, আমরা বর্তমানে ওখানেই অবস্থান করছি।
আমার প্রেমিক রুমমেট মাঝে মাঝেই উহু আহা করে শব্দ করছে।
তার মাথায় পট্টি দেয়া হচ্ছে, গা মুছিয়ে দেয়া হচ্ছে। প্যারাসিটামল খাওয়ানো হয়েছে, কিন্তু কিছুতেই কিছু হচ্ছে না। জ্বর সেই ১০৪ এর আশেপাশেই ঘুরঘুর করছে টানা এক দিন ধরে।
এই ফাঁকে রুমমেটের মা ফোন দিলেন।
"হ্যালো স্লামালিকুম আন্টি!"
"হ্যাঁ বাবা ভালো আছো?...তুমি আমার ছেলেটাকে একটু দেখে রেখ...আমার ছেলেটা অল্পতেই অসুস্থ হয়ে যায়...কতবার বললাম বাইরের খাবার খাইস না...বৃষ্টিতে ভিজিস না...একদম শোনে না...তুমি ওর রুমমেট...ভাইয়ের মত..." ইত্যাদি।
হ্যাঁ, যত্ন আমি করবই। কিন্তু সাথে সাথে প্রতিশোধও নিব। চরম প্রতিশোধ!
হ্যাঁ, আমার স্পষ্ট মনে পড়ছে ছয় মাস আগের সেই ভয়াল রাতের কথা। আমি অনেক ডাকাডাকি করেছি, কেঁদে কেঁদে বলেছি, "ভাইরে, কেউ আমায় একটা লুঙ্গি দে। "
কেউ আমার কথা শোনে নি।
অবশেষে বধির পৃথিবীকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে গভীর রাতে কাঁপতে কাঁপতে আমি বেরিয়ে এসেছিলাম বাথরুম হতে। এদিক ওদিক তাকিয়ে রুমে যাচ্ছি, হঠাৎ দেখি দুই তিনটা ক্যান্টিনবয় টয়লেট করতে এদিকে এগিয়ে আসছে।
তারপর...
থাক, আর বলতে চাই না। এখন আমি শুধু প্রতিশোধ নিতে চাই।
ভয়াবহ প্রতিশোধ।
এবং প্রতিশোধ নেবার ভয়াবহ অত্যাধুনিক অস্ত্রও এই মুহূর্তে আমার সাথে আছে। ভয়াবহ একটা অস্ত্র!
৪
রুমমেটের চাচা আমার দিকে অবাক দৃষ্টিতে চেয়ে আছেন। "কি? কি বললে তুমি?"
"জি আঙ্কেল ঠিকই বলেছি। এভাবে জ্বর সারবে না। সাপোজিটরি লাগবে"।
"সেটা আবার কি?"
"সেটা একটা ওষুধ। প্যারাসিটামল"।
"প্যারাসিটামল তো দিলামই"।
"না আঙ্কেল, আপনি যেটা দিয়েছেন সেটা ওরাল প্রিপারেশন। ওর লাগবে রেকটাল প্রিপারেশন"।
"মানে?"
"মানে ওষুধটা ওখান দিয়ে ঢুকাতে হবে"।
"ওখান মানে? কোনখান?"
"ওখান মানে ওখান। এখন যান আন্টিকে ডেকে নিয়ে আসুন। আর হ্যাঁ, আপনাদের কাজের ছেলেটাকেও ডাকবেন। এগুলো সবারই শেখার দরকার আছে"।
৫
কাজের ছেলে মাথা নিচু করে মুখ টিপে হাসছে। রুমমেটের চাচীর মুখ লজ্জায় লাল হয়ে গেছে।
চাচা একবার বললেন, "ওরা না দেখলে হয় না?"
আমি বললাম, "আহা, লজ্জা পাচ্ছেন কেন? দেখুন না। শেখার জিনিস। আপনারও একদিন প্রয়োজন হতে পারে।
তখন তো আমি থাকব না। কে করে দেবে?"
চাচা একদম চুপ হয়ে গেলেন। একটা চি চি শব্দ আসছে। আমি শব্দের উৎসের দিকে কান আগিয়ে দিলাম।
"দোস্ত আমারে মাইরা ফেলা তাও সাপোজিটরি দিস না...দোস্ত পায়ে পড়ি"।
চাচা বললেন, "কি বলল? কি বলল ও?"
আমি বললাম, "আমাকে থ্যাংকস জানাইছে আঙ্কেল। আমি যে বুদ্ধি করে সাথে করে সাপোজিটরি নিয়ে আসছি এইজন্যে আমাকে থ্যাংকস জানাইছে"।
"ও"।
আমি হাতে রকেটের মত জিনিসটা নিয়ে পঞ্চমবারের মত বললাম, "এই দেখেন, এইটার চোখা মাথা ভিতরে রাখবেন, তারপর বিসমিল্লাহ বলে এইভাবে ঢুকাবেন" তারপর জিনিসটা রুমমেটের গুহ্যদ্বারের মধ্যে অর্ধেক ঢুকিয়ে দিলাম।
রুমমেট আর্তচিৎকার করে উঠল।
চাচীর মুখে পুরো দেহের রক্ত জমা হয়েছে বোঝা যাচ্ছে।
কিছুক্ষণ কসরত করার পর "নাহ ঢুকল না" বলে আবার জিনিসটা বের করে আনলাম আমি। চাচাকে বললাম, "অনেক জোরে ঢুকাইতে হয় আঙ্কেল। আপনি একবার ট্রাই করবেন?"
"না"
চাচীর দিকে তাকিয়ে বললাম, "আপনি একবার ট্রাই করেন?"
চাচী লজ্জায় দৌড়ে পালিয়ে গেলেন। আমি কাজের ছেলেকে বললাম, "অ্যাই তুই ট্রাই করবি?"
কাজের ছেলে হাসি হাসি মুখে এগিয়ে আসছে।
হাসিতে তার হলুদ দাঁত বেরিয়ে পড়েছে। আমি হাসছি। হা হা করে হাসছি আমি।
আজ আমার প্রতিশোধ সম্পূর্ণ হয়েছে। চরম প্রতিশোধ।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।