নাগ-রাজার তপস্যা:
শেষনাগ, বাদামী গুহা, কর্ণাটক
এবার শৌনকাদি মুনিরা সৌতির কাছে কদ্রু এবং তাঁর এক সহস্র পুত্র সম্পর্কে জানতে চাইলেন।
সৌতি তখন বললেন –নাগেদের মধ্যে সবচেয়ে বড় এবং শ্রেষ্ঠ হলেন শেষনাগ। তারপর বাসুকি, ঐরাবত, তক্ষক, কর্কট, সিংহ-আঁখি, বামন, কলিয়, এলাপত্র, মহোদর, কুন্ডর, অনীল, নীল, বৃত্ত, অকর্কর, মনিনাগ, আপূরণ, আর্য্যক, উগ্রক, সুরামুখ, দধিমুখ, কলস, পোতক, কৌরব্য, কুটর, আপ্ত, কম্বল, তিত্তিরি-আরো অনেক!
সবার মধ্যে শ্রেষ্ঠ হলেন জ্যেষ্ঠ শেষ বিষধর। তিনি জিতেন্দ্রিয়, সুপন্ডিত এবং ধর্মে তৎপর। ভাইদের অসৎ ব্যবহার এবং মায়ের অন্যায় শাপদানে ব্যথিত হয়ে সকলকে ত্যাগ করে তিনি নানা তীর্থে তপস্যা করতে গেলেন।
হিমালয়ে আশ্রম করে শেষ সেখানে কঠিন তপস্যা করেন।
তার তপস্যায় প্রজাপতি তুষ্ট হলেন। ব্রহ্মা তাকে বর দিতে চাইলেন। শেষ তার দুঃখের কথা অর্থাৎ দুষ্ট ভাইদের কথা, সৎ ভাই গরুড়ের কথা, গরুড়ের বীরত্ব-সব জানিয়ে ব্রহ্মার কাছে এই বর প্রার্থনা করলেন যে দুষ্ট ভাইদের সংস্রবে যেন তাকে আসতে না হয় এবং তপস্যা করেই যেন তার প্রাণ যায়। ব্রহ্মা তাকে আশির্বাদ করলেন এবং পৃথিবী ধারণে অনুরোধ করলেন।
ব্রহ্মার আদেশে শেষনাগ পৃথিবীকে ধারণ করলেন এবং ব্রহ্মার সাহায্যেই তার গরুড়ের সাথে বন্ধুত্ব হল। ব্রহ্মার আজ্ঞায় শেষ পাতালে প্রবেশ করে পৃথিবীকে ধারণ করলেন। তুষ্ট হয়ে ব্রহ্মা তাকে নাগরাজ করলেন।
নাগলোক এবং দেবলোকে সকলে তাকে পূজা করতে লাগল। শেষে তিনি ব্রহ্মার আজ্ঞায় সব ভাইদের ত্যাগ করে পাতালেই অবস্থান করতে লাগলেন।
নাগ পঞ্চমীতে পূজিত নাগ দেবতারাঃ অনন্ত নাগ, শেষ নাগ, বাসুকি, পদ্মনাভ, শঙ্খপলা, কালিয়া, তক্ষক, কম্বাল এবং মহাপদ্ম
শেষ চলে যেতে বাসুকি চিন্তিত হলেন। মায়ের শাপে তিনিও দুঃখিত ছিলেন।
তিনি সব ভাইদের ডেকে বললেন –মায়ের শাপ থেকে নিষ্কৃতি নেই। পিতার শাপের প্রতিকার থাকলেও মায়ের শাপের হাত থেকে রক্ষা নেই। মা যখন রেগে শাপ দিলেন, পিতা এবং পিতামহও তাকে স্বীকার করলেন।
জন্মেজয়ের যজ্ঞে অবশ্যই সবাই সংহার হবে। এখন থেকেই তার প্রতিকারের চেষ্টা করতে হবে।
এত কথা শুনে এক এক ভাই এক এক রকম পরামর্শ দিতে থাকল।
একজন বললে-আমি ব্রাহ্মণ হয়ে জন্মেজয়ের কাছে যজ্ঞ ভিক্ষা চাইবো।
আর এক নাগ বললে-আমি রাজমন্ত্রী হয়ে রাজাকে যজ্ঞই করতে দেব না।
কেউ বা বললে-কে যজ্ঞ করবে! যজ্ঞের হোতাকেই মেরে ফেলবো।
কেউ বলে উঠল–সব ব্রাহ্মণদের খাব, তা হলে ব্রাহ্মণ ছাড়া আর যজ্ঞ হবে না।
কেউ আবার বললো-ব্রাহ্মণকে রাগিয়ে লাভ নেই। লোকে বিপদে পড়লে তাদের দান করে। তারা তুষ্ট থাকলে সবাই রক্ষা পায়।
কোন নাগ আবার বললো সে জলধর হয়ে যজ্ঞ নিভিয়ে দেবে।
কেউ বা বললো সব যজ্ঞের শষ্য চুরি করবে।
আবার কেউ পরামর্শ করলো-সব নাগ বেড়ার মত যজ্ঞস্থান ঘিরে রাখবে এবং যে কাছে আসবে তাকেই ভক্ষণ করবে। এতে রাজা ভয় পেয়ে যজ্ঞ বন্ধ করে দেবে।
কিন্তু বাসুকির এসবে মন ভরল না।
তিনি বললেন –দৈব শক্তি নিবারণ ক্ষমতা আমাদের নেই। অবশ্যই সাপের বংশ ধ্বংস হবে।
এলাপত্র নামে এক নাগ সব শুনে বললেন –মায়ের বচন কখনও লঙ্ঘণ করা যায় না। সব যুক্তিই অকারণ। মায়ের বচন আর দৈবের লিখন, খন্ডিত হয় না।
যজ্ঞ অবশ্যই হবে। পান্ডুবংশে জন্মেজয়ের জন্ম হবে। তার যজ্ঞ বন্ধ করার শক্তি কারো নেই। একটাই উপায় আছে, সবাই ব্রহ্মার কথা মন দিয়ে শুন।
যখন মা সন্তানদের অভিশাপ দিলেন তখন দেবতারা ব্রহ্মাকে জিজ্ঞাসা করলেন, কোন মা কি তাঁর সন্তানদের এমন শাপ দিতে পারেন!
ব্রহ্মা তখন তাদের মন দিয়ে শুনতে বলেন।
সর্পরা সকলের ক্ষতি করছে। তাদের শেষ না করলে বিষে সংসার ভরে যাবে। তবে যে নাগ ধর্মে অনুগত হবে, তারাই জন্মেজয়ের যজ্ঞে রক্ষা পারে। তার একটা উপায় আছে।
যখন দেবাসুর সমুদ্রমন্থন করলো, বাসুকি তখন মন্থন দড়ি হলেন।
দেবতারা তুষ্ট হয়ে ব্রহ্মাকে বললেন বাসুকি সমুদ্রমন্থনে সাহায্য করেছেন। মার ভয়ে বাসুকি ভীত তার এই ভয় যেন দুর হয়।
ব্রহ্মা বলেন বোন জরৎকারীর সন্তানই তাদের রক্ষা করবে।
মনসা/জরৎকারী ও পুত্র আস্তিক
যাযাবর বংশে জরৎকারু নামে এক জ্ঞানী জন্মগ্রহণ করবেন। তার বিবাহ হবে জরৎকারীর সাথে।
জরৎকারী বাসুকী অর্থাৎ নাগেদের বোন। তার গর্ভে জন্মাবে আস্তিক নামে এক পুত্র। সেই আস্তিকই নাগদের রক্ষা করবে।
এই একমাত্র পথ। এছাড়া নাগেদের আর কোন পথ নেই।
বোন জরৎকারীর বিবাহ যাযাবর জরৎকারুর সাথে দিলে তবেই সবাই নিস্তার পাবে।
এলাপত্রের একথা শ্রবণ করে সকলে সাধুবাদ দিতে লাগল।
সব শুনে বাসুকি আনন্দিত হলেন এবং জরৎকারুকে খোঁজার জন্য চর নিযুক্ত করলেন।
চরদের আদেশ দিলেন –তোমরা লুকিয়ে থাকবে এবং জরৎকারুকে দেখলেই আমাকে খবর দেবে।
এভাবে বাসুকি তার বোনকে জরৎকারুকে দান করতে প্রস্তুত হতে লাগলেন।
...........................
উৎসর্গ: সকল ব্লগার বন্ধুকে
..................................
আগের পর্ব:
কথাচ্ছলে মহাভারত - ৯
Click This Link
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।