যে জানেনা এবং জানে যে সে জানেনা সে সরল, তাকে শেখাও। যে জানেনা এবং জানেনা যে সে জানে না, সে বোকা-তাকে পরিত্যাগ কর।
থপ থপ করে পা ফেলে কেউ একজন এগিয়ে আসছে তোরণের দিকে।
কে হতে পারে? অনুমান করার চেষ্টা করি।
আমার অনুমান শক্তি তেমন একটা ভাল না।
কিংবা বলা যায় অনুমান করার শক্তি আমার নেই। কারণ এ সংক্রান্ত কোন সফটওয়্যার আমার মাথার পেছনে স্থাপিত সেই ক্রিস্টাল চিপটিতে দিয়ে দেওয়া হয়নি। অনুমান করতে না পারলেও আমার চিন্তা শক্তি খুব প্রখর। আমি শুধু বাস্তব চিন্তা-ই করতে পারি। বাইনারি ডিজিট ওয়ান এবং জিরোর সহায়তায় বাইনারি চিন্তা।
আগন্তুকের পায়ের আওয়াজ শুনে আমার অরগ্যান অব হিয়ারিং সক্রিয় হয়। পায়ের আওয়াজ শুনে মনে হচ্ছে এটি কোন মানুষের পায়ের শব্দ নয়। এর মাঝেই আগন্তুককে তোরণের সামনে দেখতে পাই।
আরে! এ যে দেখছি সেই পাপেট! মস্তিষ্কে বসানো ডিভাইসে ইউএসএ নামাঙ্কিত সেই পাপেট।
পাপেটটি কি মিশন শেষ করে ফিরে এসেছে? শায়েস্তা খাঁর তোরণ দিয়ে বের হয়ে যাবে? আমার চিন্তার সফটওয়্যারটি দ্রুত চালু হয়।
২০০৯ সালের ২৯ ডিসেম্বর গণতন্ত্রের লাইনচ্যুত ট্রেনটিকে যেদিন লক্ষ জনতা ঠেলে ঠুলে লাইনে উঠিয়ে দিয়েছিল- সেদিন থেকে পাপেটটিকে অনেকদিন দেখিনি। চলতি বছর ওয়ান ইলেভেনের চতুর্থ বর্ষপূর্তির পর পাপেটকে আবার তোরণের কাছে দেখা গিয়েছিল। প্রথম যেদিন পাপেটটি এপাশ থেকে তোরণ দিয়ে প্রবেশ করেছিল এক গাল হাসি দিয়ে ওপাশে থাকা প্রহরী পাপেটকে স্বাগত জানিয়েছিল। আজ বিদায় দেওয়ার জন্য কেউ আসেনি। তার মানে পাপেটটি গোপনে বের হয়ে যাচ্ছে।
গোপন মিশন নিয়েই এটি শায়েস্তা খাঁর তোরণ দিয়ে প্রবেশ করেছিল।
শায়েস্তা খাঁর তোরণ দিয়ে পাপেট প্রবেশের পর পর বেশ কয়েকটি ঘটনা ঘটেছে এই তোরণটি কেন্দ্র করে। বঙ্গবন্ধুর খুনিদের লাশ পরিবাহিত ছয়টি কফিন বের হয়েছে এই তোরণ দিয়ে। ফাঁসি দেওয়া পাঁচজনের লাশ আমি শনাক্ত করতে পেরেছি। কিন্তু ষষ্ঠ কফিনের রহস্য আজও ভেদ করতে পারিনি।
আমার দেয়াল ভেদ করতে পারে এমন উন্নত স্ক্যানিং বসানো সাইবর্গ আই দিয়েও কফিনের ভিতরে কি আছে তা দেখতে পাইনি।
বঙ্গবন্ধুর খুনিদের লাশ পরিবাহিত কফিন বের হওয়ার পর পরই সেই স্যুট-টাই পরা ভদ্রলোক মনের অজান্তেই তোরণ দিয়ে বের হয়ে যাচ্ছিলেন। এই তোরণ দিয়ে একবার বের হলে চিরতরেই চলে যেতে হয়। ২৯ ডিসেম্বর ২০০৯ তারিখে সামরিক উর্দিপরা ছয়জন ঘোড়সওয়ার বের হয়ে গিয়েছিল। ২৯ জানুয়ারি ২০১০বঙ্গবন্ধুর পাঁচ খুনীর লাশ বের হয়ে গিয়েছিল।
সেই স্যুট-টাই পরা ভদ্রলোক বের হতে গিয়েও কি মনে করে যেন বের হন নি। অথবা এমন হতে পারে আপন মনে ঘুরতে ঘুরতে এখানে এসেছিলেন আবার আপন মনেই অন্য কোথাও চলে গিয়েছেন। অবশ্য আমি প্রাণপণে চাচ্ছিলাম যেন ভদ্রলোক তোরণ দিয়ে বের না হন। এখন পর্যন্ত সেই ভদ্রলোককে তোরণের আশেপাশে আর দেখিনি। কিন্তু আমার মন বলছে ঘুরতে ঘুরতে ভদ্রলোক আবার এখানে চলে আসবেন।
পাপেটটি ধীর পদক্ষেপে তোরণের ভেতর পা রাখে। ইতিউতি তাকিয়ে নেয়। পাসপোর্ট, ভিসা এগুলো ঢিল মেরে তোরণের পাশের ঝোপে ফেলে দেয়। এগুলোর বোধহয় আর প্রয়োজন নেই। তারপর কেউ অনুসরণ করছে না নিশ্চিত হয়ে তোরণের এপাশে পা রাখে।
তোরণের এপাশে বটগাছের গুঁড়িতে হেলান দেয়া অবস্থায় মার্কস কে দেখে অনেকটা চমকে উঠে।
হাই মার্কস! তুমি এখানে কি করছ?
- দেখতেই পাচ্ছ বসে আছি।
তা পাচ্ছি বটেই। কিন্তু অযথা বসে আছ কেন? তোরণের ওপাশে যাবে না?
-তুমি বের হয়ে গেলেই যাব ভাবছি।
তা-তো যাবেই।
কারণ আমি আর তুমি কখনোই একসাথে কোথাও যাই না। আমরা তো চিরশত্রু। হাঃ হাঃ হাঃ। রসিকতা করে পাপেট টি মার্কস কে খোঁচা দেয়।
-হুঁ ঠিকই ধরেছ।
এখন বিরক্ত করো না। তোমার কাজে তুমি যাও।
আহা! বিরক্ত হচ্ছ কেন? তোমার সাথে একটু গল্প করি।
-দেখ স্যাম, তুমি সর্বদা আমার পিছে লেগেই আছ। আমাকে একটু একা থাকতে দাও।
ঠিক আছে। তোমার এখন একা থাকাই মঙ্গল। বাই দ্য ওয়ে, তুমি দেখি আমাকে ঠিক ঠিক চিনে ফেলেছ!
মুচকি হাসি দিয়ে স্যাম নামের পাপেট টি তোরণ ছাড়িয়ে চলে যেতে উদ্যত হয়। আমি তাকিয়ে থাকি স্যাম নামক পাপেটের গমন পথের দিকে।
কী সর্বনাশ!
পাপেটের একটি নামও আছে!
স্যাম।
বাহ্! দারুণ তো!
আমার দ্রুত মনে পড়ে যায় আমেরিকা হচ্ছে আঙ্কল স্যামের দেশ। আমেরিকাকে কেন আঙ্কল স্যাম বলা হয় তা চট করে স্থায়ী মেমোরি থেকে দেখে নেই। অনেকগুলো কারণের মধ্যে আমার এটিকেই বেশি যুক্তিযুক্ত মনে হয়।
১৮১২ সালে ব্রিটিশদের সাথে এক যুদ্ধে স্যামুয়েল উইলসন নামক জনৈক মাংস সরবরাহকারীর স্যাম নামটি এই ঘটনাটির সাথে জড়িয়ে আছে। স্যাম যুদ্ধরত সৈনিকদের মাংস সরবরাহ কালে প্যাকেটের গায়ে যুক্তরাষ্ট্রের আদ্যক্ষর ইউএস সিল মেরে দিতেন।
ইউএস বা ইউনাইটেড স্টেটস হচ্ছে আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র। প্রায় দুই বৎসরব্যাপী যুদ্ধ শেষে বৃটেন আমেরিকার সাথে সন্ধি করতে বাধ্য হয়। যুদ্ধ শেষে সৈনিকরা অনেকটা আদর করেই আমেরিকাকে ইউ.এস বা আঙ্কেল স্যামের দেশ বলে অভিহিত করা শুরু করে।
পাপেটটি মার্কস কে পাশ কাটিয়ে চলে যাওয়ার সময় কি মনে করে যেন একটু থমকে দাঁড়ায়।
মার্কসের কোলের উপর পড়ে থাকা চকচকে টাকার বাণ্ডিলের দিকে তাকিয়ে বলে উঠে-
কি হে! এত টাকা নিয়ে কোথায় যাচ্ছ? তুমি কি পুঁজিবাদের বিশেষ কোন অ্যাসাইনমেন্ট নিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করবে নাকি!
-সেটা তোমার না জানলেও চলবে।
না...ইয়ে...মানে বলছিলাম কি, এখন তো আর সমাজতন্ত্রের দিন নেই। পুঁজিবাদ জিন্দাবাদের দিন। আমি যতটুকু জানি এ টাকাও তোমার নয়। অ্যাঙ্গেলস এর টাকা। তা তোমার সেই বন্ধুবর টি কোথায়?
মার্কসের চেহারায় স্পষ্ট বিরক্তির চিহ্ন দেখতে পাই।
বেচারা এমনিতেই খানিকটা রেগে আছে। তোরণের ও পাশটায় কি গণ্ডগোল বেধেছে কে জানে! জ্বালো জ্বালো...আগুন জ্বালো...হরতাল হরতাল...সারাদিন হরতাল-এখনও এরকম শ্লোগান ভেসে আসছে। কতগুলো বিক্ষুব্ধ মানুষের গগণবিদারী চিৎকারে কান ঝালাপালা। কি সব দাবি-দাওয়া নিয়ে হৈ-চৈ করছে। আচ্ছা, এরা কি প্রলেতারিয়েত?
মার্কস পাপেটকে পাল্টা প্রশ্ন করে।
আচ্ছা স্যাম, তুমি তো ওপাশ থেকে এলে। ভিতরে কি হচ্ছে?
-প্রলেতারিয়েতদের বিক্ষোভ হচ্ছে। পাপেটের সংক্ষিপ্ত জবাব।
এরা কি নির্দিষ্ট কোন শ্রমিক বা বঞ্চিত গোষ্ঠী?
-নাহ্। এরা রাজনৈতিক কর্মী।
এরা নিজেদেরকে কেন প্রলেতারিয়েত মনে করছে?
-কারণ ক্ষমতায় যেতে না পেরে এরা নিজেদের প্রলেতারিয়েত মনে করছে।
আমি তো প্রলেতারিয়েত বলতে এরকম বুঝাই নি। প্রলেতারিয়েত হচ্ছে শোষিত শ্রেণী। শ্রমিক, মজুর এই শ্রেণীর লোক যাদেরকে বুর্জোয়ারা শোষণ করে।
-হাঃ হাঃ হাঃ।
তুমি হাসালে মার্কস। এখন আর সেই শোষিত-শোষক শ্রেণী নেই। এখন শ্রমিক নিজেই শোষক, আবার শ্রমিক নিজেই শোষিত। কর্পোরেট যুগে শ্রমিকরা পয়সা উপার্জনের জন্য এতই ব্যস্ত থাকে যে তাদেরকে আর চাবুক মেরে কাজ করাতে হয় না। টাকার কাছে এমনিই দাস হয়ে থাকে।
শুধু জ্ঞান আর বলপ্রয়োগের মাধ্যমে কর্পোরেট শক্তি চাপিয়ে দাও। প্রলেতারিয়েত বলে কোন শব্দ আর অভিধানে থাকবে না।
প্রলেতারিয়েত?
প্রলেতারিয়েত??
শব্দটি আমার মস্তিষ্কের নিউরনে আলোড়ন তুলে। পাপেট ব্যাটা বলে কি? প্রলেতারিয়েত শব্দটি ডিকশনারিতে থাকবে না! মনে মনে শব্দটি আউড়ে নেই। দ্রুত আমার স্থায়ী মেমোরিতে স্থাপিত বাংলা অভিধান দেখে নেই।
সাধারণ মানুষের বোঝার পক্ষে কঠিন একটি শব্দ। এর বাংলা অর্থ হতে পারে সর্বহারা। আচ্ছা প্রলেতারিয়েত এর বিপরীত শব্দটি কি হবে? বুর্জোয়া?? অভিধান ব্যতীত স্থায়ী মেমোরির আরও দু'চার জায়গা থেকে প্রলেতারিয়েত এবং বুর্জোয়া সম্পর্কে সব তথ্য যোগাড় করি। ঊনবিংশ শতাব্দীতে মার্কসের যুগে প্রলেতারিয়েত এবং বুর্জোয়ার সংজ্ঞা ছিল একরকম। আর একবিংশ শতাব্দীতে তা অন্যরকম।
শায়েস্তা খাঁর তোরণের এপাশে থেকে আমি প্রলেতারিয়েত এবং বুর্জোয়ার চরিত্র নিয়ে ভাবতে থাকি।
যাদের নিজস্ব কোন সম্পত্তি নেই এবং শ্রম ব্যতীত অর্থ উপার্জনের কোন উপায় নেই তারাই প্রলেতারিয়েত। এই সর্বহারা শ্রেণী শ্রম বিক্রিলব্ধ অর্থ দিয়ে কোনরকমে দিন গুজরান করতে পারে কিন্তু কোন সঞ্চয় বা সম্পদ গড়তে পারে না। যেমন- গার্মেন্টস কর্মী, ফেরিওয়ালা, মুদি দোকানি, বর্গা চাষী, দৈনিক মজুর, রিক্সা চালক, সরকারী-বেসরকারী চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী ইত্যাদি শ্রেণী গোষ্ঠী।
আর বুর্জোয়া তারাই যারা সমাজকে শোষণ করে অন্যায়ের মাধ্যমে, অসৎ পথে, দুর্নীতির মাধ্যমে।
তারা দেশের শত্রু, সমাজের শত্রু। আজকের যুগে আমার কাছে বুর্জোয়া বলতে মনে হয় দুর্নীতিগ্রস্ত রাজনীতিবিদ, দুর্নীতিগ্রস্ত আমলা, দুর্নীতিগ্রস্ত পেশাজীবী, অসৎ ব্যবসায়ী, ঋণখেলাপী ব্যবসায়ী, কালোবাজারি ব্যবসায়ী, ভূমি দস্যু ইত্যাদি।
প্রলেতারিয়েত নামক শব্দটি অভিধানে থাকবে না শুনে মার্কস কে কেমন চিন্তিত মনে হয়। উদাস দৃষ্টিতে তোরণের ভিতর দিয়ে সুদূরে চেয়ে থাকে। মিছিল থেকে ক্রমশঃ আওয়াজ বাড়ছে।
দশ টাকা সের চাল খাব
শায়েস্তা খাঁর আমলে ফিরে যাব।
গ্যাস বিদ্যুৎ পানি চাই
নইলে শাসন দরকার নাই।
মার্কসবাদ পুঁজিবাদ
সব তন্ত্র নিপাত যাক।
শিক্ষা চাই কাজ চাই
শিক্ষার কোন বিকল্প নাই।
শ্লোগান শুনে পাপেট এবং মার্কস দুজনেই চমকে উঠে।
পাপেটটি বিশ্বাসই করতে পারছে না যে শ্লোগানে এ আওয়াজ ভেসে আসছে। পাপেটটি যখন তোরণের ভিতরে ছিল তখন শ্লোগানের ভাষা ছিল একরকম। সেরকম ভাবেই সাজিয়ে দেওয়া ছিল শ্লোগানের ভাষা-
জ্বালো...জ্বালো...
আগুন জ্বালো...
স্বৈরাচারের গদিতে
আগুন জ্বালো একসাথে।
এই মুহূর্তে গদি ছাড়
গদি কি তার বাপদাদার?
আমরা যাব ক্ষমতায়
দেখি মোদের কে আটকায়?
হরতাল হরতাল
গদি না ছাড়া পর্যন্ত হরতাল।
নাহ্।
কোথাও ভুল হচ্ছে না তো! পাপেটকে চিন্তিত মনে হয়। সারা বিশ্বের দুর্বল দেশগুলোতে আমেরিকা যেভাবে পুঁজিবাদের ফর্মুলা সাজিয়ে দিয়েছে তাতে বাংলাদেশে তার ব্যতিক্রম হবার কথা নয়। বাংলাদেশকে দুর্বল রাখতে হলে সেই ফর্মুলাটি অবশ্য পালনীয়-“Bengal United is a power; Bengal divided will pull in several different ways….one of our main objective is to split up and thereby weaken a solid body of opponents to our rule” ।
পাপেটটি চিন্তিত মনে মার্কস কে জিজ্ঞেস করে- আচ্ছা তুমি কি ডিভাইড অ্যান্ড রুল গেম সম্পর্কে জান?
-হ্যাঁ জানি। তোমাদের মত বুর্জোয়া ধনী দেশ কর্তৃক গরীব দেশকে দুর্বল করে শাসন করার একটি অপকৌশল।
আর এও জানি এ গরীব দেশগুলোকে দুর্বল করে রাখতে হয় রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ দ্বারা। যদি একটু মাথা উঁচু করে তো রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে উসকে দিতে হবে যাতে সরকারের আসন সবসময় টালমাটাল থাকে।
হাঃ হাঃ হাঃ। পাপেটটি অট্টহাসিতে ফেটে পড়ে।
তুমি ঠিক ধরেছ।
দেখ আমেরিকা একটি মাত্র নীতিতে বিশ্বাস করে। পুঁজি এবং একমাত্র পুঁজিই হচ্ছে ব্যক্তি থেকে আরম্ভ করে সবকিছুকে দমিয়ে রাখার একমাত্র কৌশল। পুঁজির লোভ সর্বত্র ছড়িয়ে দাও। সবাই পুঁজির পেছনে ছুটবে। দম ফেলার ফুরসত পাবে না।
কর্পোরেট চেইন এর মাধ্যমে এ কাজটি করতে হবে। এভাবেই তাদের আধুনিক দাস বানিয়ে ফেলতে হবে।
-হুঁ। তাহলে প্রলেতারিয়েতরা আর মাথা তুলে দাঁড়াবার সুযোগ পাবে না। মার্কস ফোঁড়ন কাটে।
তুমিতো দেখছি যথেষ্ঠ স্মার্ট হয়েছ। তোমার মার্কসবাদের ভুলটি কি তোমার চোখে পড়েছে?
মার্কস মনে মনে এক দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে। মার্কসের আমলে সমাজ ব্যবস্থা ছিল একরকম। এখন সমাজ ব্যবস্থা অনেক পরিবর্তন হয়ে গেছে। সে যুগে আক্ষরিক অর্থেই দাসপ্রথা ছিল।
দাসদের দিয়ে অবর্ণনীয় পরিশ্রম করিয়ে বুর্জোয়ারা সম্পদের পাহাড় গড়ে তোলে। কিন্তু আধুনিক পুঁজিবাদী ব্যবস্থায় অবস্থাটা ভিন্নরকম। নানান ধরনের সমস্যার শিকার হয়েও সমাজের একটি নির্দিষ্ট শ্রেণীর ক্রয় ক্ষমতা ও দৈনন্দিন জীবনের মান উন্নত থেকে উন্নততর হচ্ছে। কর্পোরেট মালিক এবং শ্রমিক শ্রেণীর মধ্যে মধ্যবর্তী শ্রেণীভুক্ত মানুষের সংখ্যা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশেষত আধুনিক বিশ্বের সফটওয়্যার ইন্ডাস্ট্রি সনাতন শ্রমিক এবং কাঁচামালের সংজ্ঞা এবং মালিক-শ্রমিক সম্পর্কই পাল্টে দিয়েছে।
ঠিক আছে মার্কস। তুমি বসে বসে ভাব। আমি চললাম। ওহ্, আরেকটা কথা বলে যাই। তুমি তো কখনো রাজনীতিবিদ ছিলে না।
তুমি ছিলে একজন রাজনীতি বিশ্লেষক। যেহেতু শাসন সম্পর্কিত তোমার কোন অভিজ্ঞতা ছিল না, তাই তোমার নিরঙ্কুশ মতবাদ নিয়ে কোন রাষ্ট্র গড়ে উঠেনি। এখানেই তোমার ব্যর্থতা। তোমার মতবাদ থেকে ধার নিয়ে যে যার মত করে দেশ চালিয়েছে। কখনো এটা হয়েছে লেলিনবাদ, কখনো হয়েছে স্ট্যালিনবাদ, কখনো হয়েছে মাওবাদ।
যাক্। বাংলাদেশে তোমার নতুন অ্যাসাইনমেন্ট সুন্দর হোক। তোমার জন্য শুভকামনা।
এই বলে পাপেটটি মার্কস এর উদ্দেশ্যে ইঙ্গিতপূর্ণ চোখ টিপে দিয়ে সামনে পা বাড়ায়।
আর ভূত দেখার মত চমকে উঠে এক পা পিছিয়ে আসে।
এ কী! তুমি এখানে কী করছ? তোমাকে খুঁজে খুঁজে আমাদের সমস্ত নিরাপত্তা বাহিনী হয়রান। আর তুমি এখানে চুপি চুপি দাঁড়িয়ে আমাদের কথা শুনছ।
পাপেটের ধমকের সুরে কথা শুনে আমি আগন্তুকের দিকে দৃষ্টি দেই। সাথে সাথে আমার মস্তিষ্কের নিউরনগুলো অস্থিরভাবে ছোটাছুটি আরম্ভ করে। অবিশ্বাস্য মনে হয় আমার কাছে আগন্তুককে দেখে।
ওসামা বিন লাদেন!
এখানে!! শায়েস্তা খাঁর এই তোরণের কাছে!!
চলবে...
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।