...ক্ষুদ্র আশা নিয়ে রয়েছে বাচিয়া,সদাই ভাবনা,
যা কিছু পায়, হারায়ে যায়, না মানে স্বান্তনা...
বাইরে প্রবল বৃষ্টি হচ্ছে। বৃষ্টি নিয়ে সবচেয়ে পুরনো যে স্মৃতিটা মনে পরে তা হলো মা আমাকে দাদুর বাসায় রেখে অফিসে গেছে। বাইরে মুষলধারে বৃষ্টি হচ্ছে। দাদুর বাসার টিনের চালে ঝপঝপ শব্দ হচ্ছে। চরম রোমান্টিক আবহাওয়া ।
কিন্তু আমার তখন বেজায় মেজাজ গরম। কারন বৃষ্টির কারনে বাইরে খেলতে যাওয়া বন্ধ। সারাদিন বসে বসে বৃষ্টির শব্দ শোনা আর আল্লাহ প্রতি চরম ক্ষোভ। কেন বৃষ্টির মতো একটা জঘন্য জিনিস তৈরী করলো।
এরপর যখন অল্প একটু বড় হয়েছি, তখন সবচেয়ে মজার ব্যাপার ছিলো বৃষ্টিতে মাছ ধরা।
আমার দাদুর বাসার সামনে বিশাল পুকুর। ছোট বলে সেই পুকুরের ধারে কাছে যাওয়া নিষেধ। কিন্তু বৃষ্টি হলে পুকুরের পানি উঁপচে বাসার সামনের ছোট রাস্তা পার হয়ে দাদুর বাসার পাশে ছোট খাড়িটাতে এসে পড়তো। পুকুরের মাছগুলো মনে হয় নতুন জগৎ দেখার জন্য সেই উঁপচে পড়া পানি বেয়ে খাড়িতে উঠে আসতো। আর সেই ফাঁকে আমি আর আমার বয়সী সব ছেলে মেয়েরা মাছ ধরায় ঝাঁপিয়ে পড়তাম।
বৃষ্টি একটু ধরে এলেই আমরা মাটি দিয়ে বাঁধ দিয়ে দিতাম খাড়ির মুখে যাতে এর মাঝে খাড়িতে চলে আসা মাছগুলো পুকুরে ফিরে যেতে না পারে। এরপর একটু একটু করে খাড়ির পানি সেঁচে ফেলা হতো। কম পানিতে মাছগুলো দাপাদাপি করতো। একদম শেষে সেখানে কেবল কাঁদা আর মাছ। তখন ঝাপিয়ে পড়ে কে কয়টা মাছ ধরতে পারে তা নিয়ে চরম প্রতিযোগীতা।
কাদায় মাখামাখি হয়ে মাছ ধরে যখন বাসায় ফিরতাম, তখন সব আনন্দ উবে যেতো দাদু আর ফুপির ঝাড়ি খেয়ে।
মফস্বল ছেড়ে যখন ঢাকায় চলে এলাম তখন এমন বর্ষার দিনগুলো কেবল কাটতো স্কুলের জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে থেকে। তবে যদি কোন ভাবে স্কুল ছুটির সময় বৃষ্টি নামতো তখন আর আমাদের পায় কে। কে কত বেশী ভিজে আর অন্যকে কে ভিজিয়ে বাসায় ফেরা যায় তার প্রতিযোগীতা শুরু হতো। যদিও কাক ভেজা হয়ে বাসায় ফেরার মাসুল পরে কড়ায় গন্ডায় দিতে হতো পিঠ পেতে।
বড়রা কেন যে বৃষ্টিতে ভেজার মতো এমন মজা একটা জিনিস পছন্দ করে না কে জানে।
এরপর একটু একটু করে বড় হই আর কেন জানি বৃষ্টি জিনিসটা এক অদ্ভুত উন্মাদনা তৈরী করে। বৃষ্টি হলেই কেন যেন মন খারাপ হয়ে যায়। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার জন্য ঢাকা ছেড়ে সিলেটে দৌড়াই। সিলেট হচ্ছে এমন এক জায়গা যেখানে বৃষ্টি আসার জন্য কোন নিয়ম কানুন লাগে না।
কথা নাই বার্তা নাই মেঘ নাই খটখটা আকাশ । দেখা যাবে কোথা থেকে একঝাক মেঘ এসে ঝুম বৃষ্টি। সেও যেমন তেমন না। তিন চারদিন দেখা যাবে কেবল বৃষ্টিই হচ্ছে। তারপরও বৃষ্টি জিনিসটা প্রতি অভক্তি আসে নি।
এমন এক বৃষ্টির দিনে হঠাৎ কি করে যেন একজনকে ভালো লেগে যায়। তারপর বৃষ্টি মানেই তো এমনো দিনে তারে বলা যায়..... কিংবা আজি ঝড়ো ঝড়ো মুখর বাদল দিনে .....রবীন্দ্রনাথ নামক বুড়ো মানুষটাকে মনে হয় কেবল বৃষ্টির গানের জন্যই গোটা তিনেক নোবেল দিয়ে দিতে ইচ্ছে করে তখন।
সিলেটে আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে একটা মেস করে থাকতাম। ক্যাম্পোসে আমার সবচেয়ে কাছের বন্ধুটি হলো লিটু। লিটু প্রায়ই বিকেল হলে আমাদের মেসে চলে আসতো।
আমার এবং লিটুর একটা রোগ ছিলো বৃষ্টি হলেই আমাদের মাথা খারাপ টাইপ হয়ে যেতো। দৌড়াদৌড়ি করে বৃষ্টিতে ভেজার জন্য ছুটতাম। মেসের আর সবাই সেটা নিয়ে যথেষ্ট ফাজলামি করলেও তারাও কখনো কখনো এই পাগলের দলে ভীড়ে যেতো। সিলেটে এই বৃষ্টি নিয়ে কত কাহিনী। কত ভালো লাগা।
প্রিয় মানুষটির কাছ থেকে কষ্ট পেয়ে বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে ঢাকার বাসে উঠে পড়া। আবার এমনই এক বৃষ্টির দিনে ঝগড়া মিটিয়ে ফিরে আসা।
এখনো বৃষ্টি দেখি। অফিসের জানালা দিয়ে। ইচ্ছে হলেও ভিজতে পারি না।
যদি ঠান্ডা লেগে যায়। অফিস কামাই হবে। কত ঝামেলা। আর কম বয়সী কাউকে বৃষ্টিতে ভিজলে দেখলে হিংসা হয়। ধমকে উঠে।
বড় হয়েছি যে। আর বড়রা যে বৃষ্টি জিনিসটাকে একদম দেখতে পারে না।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।