সারি-সরি মানুষ। খাবারের জন্য লাইনে দাড়িয়েছে। চর্মসর্বস্ব। শিশুরা চাইলে ১, ২ গুনা শিখতে পারে ওদের হাড দিয়ে। সবগুলোই যে নির্লজ্জের মতো ব্রিদ্রোহী ভঙ্গি নিয়ে চামড়া ফুড়ে বেরুতে চাইছে।
কৃষ্ণ বর্ণের মুখগুলোয় ক্লান্তি, ভয় আর আতঙ্ক ঘিরে আছে। গায়ে লেপ্টে আছে অপুষ্টি, দারিদ্র আর ক্ষুধা। আফ্রিকা বললে সবার চোখ ভাসে এ ছবিগুলোই। ইন্টারনেটে খুঁজলে পাওয়া যাবে সেখানকার মানুষের দুর্দশার খন্ড-খন্ড চিত্র। ওদের দুঃখ-কষ্টের এ চিত্রনাট্য কিছুটা মানুষের তৈরি।
কিছুটা দায় বোধ হয় ঈশ্বরেরও। কারণ জন্ম থেকেই যে ওরা জ্বলছে। বেশিরভাগ সময়ই কেটে গেছে অন্যের গোলামি করে। দাসত্বের শিকল অবশ্য খুলেছে অনেকদিন। তবে অবস্থার উন্নতি হয়নি।
দুর্ভিক্ষ-দুর্নীতি-হানাহানি করছে মরছে ওরা। দশকের পর দশক ধরে চলছে গৃহযুদ্ধ।
সেই মহাদেশে যখন ফুটবল বিশ্বকাপের আসর বসবে বলে ঘোষণা এলো তখনো অনেকের নাক কুচকে গেছে। যা বাব্বা ! পশুর দেশে বিশ্বকাপ। ওখানে নাকি দিনের বেলায় রাস্তায় বের হলেই সব ছিনতাই হয়ে যায়।
রাতে তো কথাই নেই। সব অপপ্রচারের অবসান হলো ১১ জুন। যখন দুনিয়া কাঁপিয়ে পর্দা ওঠলো আফ্রিকা বিশ্বকাপের। রং-রুপ-রস নিয়ে হাজির হলো নতুন আফ্রিকা। একটা ছোট্ট চামড়া গোলক নিয়ে এক মাসের এই মহাযজ্ঞ যেন ক্ষনিকের জন্য হলেও ভুলিয়ে দিয়েছে আফ্রিকানদের সব দুঃখ-কষ্ট।
সব ভুলে ভুভুজেলা নিয়ে ওরা হাজির দক্ষিণ আফ্রিকায়।
কিন্তু সোনার চামচ মুখে নিয়ে জন্ম নেওয়া দেশের খেলোয়াড়দের সঙ্গে ওরা পেরে ওঠবে কেন? তাই প্রথম রাউন্ডেই ঝরে গেছে ক্যামেরুন, আলজেরিয়া, নাইজেরিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা ও আইভরি কোস্ট। ঝলক দেখালেও জয়ী হতে শেষ পর্যন্ত জয় ওদের ধরা দেয়নি। কারণ ঈশ্বর আর বিজয় থাকে কেবল ভদ্রপল্লিতে। কৃষ্ণ মানুষগুলোর ভাঙা কুটিরের জন্য বরাদ্দ কেবল পরাজয়।
তবে ঈশ্বরকে ভ্রুকুটি দেখিয়ে কালো তারা ঘানা ঠিকই এগিয়ে চলছে। পুরো মহাদেশের ভার কাঁধে নিয়ে গত রাতে যুক্তরাষ্ট্রকে ধরাশায়ী করেছে তারা। যোগ্য দল হিসেবেই জয়ী হয়েছে তারা। জয় হয়েছে দাসের। বিজিতের দলে এবার মালিকপক্ষ।
একবারের জন্য হলেও মালিকরা বুঝেছে পরাজয়ের কি জ্বলা।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।