কতো কী করার আছে বাকি..................
জন্ম ১৯২৪। ১৩ বছর বয়স থেকেই ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের সাথে যুক্ত। কমিউনস্ট পার্টির সাথে যুক্ত ছিলেন। দলের নির্দেশেই নাকি পড়াশোনা ছেড়ে দেন। যদিও ১৯৪৭ সালে তিনি ডিগ্রী পশি করেন।
বিদ্যালয় থেকেই তার সংগ্রামী জীবনের শুরু। বিয়ে করেন কৃষক নেতা রোহিনি দাসকে। মহিলা আত্মরক্ষা সমিতি গঠন-সিলেটের চা বাগানের নারী শ্রমিকদের ট্রেড ইউনিয়ন অধিকার নিয়ে আন্দোলন করেছেন। নানকার বিদ্রোহেও ছিলেন সংগঠক হিসেবে।
১৯৭১-এ তিনি ছিলেন নারায়রগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়েন প্রধাণ শিক্ষিকা।
যুদ্ধের সময় ভারত চলে যান-রিফিউজি ক্যাম্পে। সেখানে তিনি দলের সিদ্ধান্ত অনুযায়ি গঠিত স্কুল ক্যাম্পে মুক্তিযুদ্ধের যৌক্তিকতা বিষয়ে ধারণা দিতেন-জনবল গঠন করতেন। মোট ৫০টি স্কুল ক্যাম্প গড়ে ওঠে সেই সময়। হেনা দাস পুরো যুদ্ধের সময়েই ছুটে বেড়িয়ছেন হন্যে হয়ে। তার আরকেটি দায়িত্ব ছিল উদ্বাস্তুদের জন্য কম্বল-কাপড় সংগ্রহ।
নারায়ণগঞ্জে যখন ছিলেন তখনও দলের কর্মী হিসেবেই ছিলেন। মে ৭১ থেকেই পালিয়ে বেড়িয়েছেন। স্কুলের বিজ্ঞান ভবনে পালিয়ে ছিলেন তার অসুস্থ বর আর কন্যাকে নিয়ে। এই সময়েই তিনি দেখেছেন তার শিক্ষক নুরুল আমিন ছাত্র মমতাজের মৃত্য। ভারত যাওযার পথে পথেও কিনি সরব ছিলেন।
মানুষকে বুঝিয়েছেন-উদ্বুদ্ধ করেছেন।
ভাষা আন্দোলনের সময় তার সক্রিয়তা নিয়ে এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন
উদিসাঃ ২১ ফেব্রুয়ারী সকাল থেকে কি করেছিলেন সেটা কি মনে আছে?
হেনা দাসঃ অতোকিছু মনে নাই। শুধু মনে আছে আমরা ১৪৪ ধারা ভাঙবই ঠিক করেছিলাম। তবে আমরা পারব কিনা সেই দ্বিধা ছিলো। কিন্তু জিদও ছিলো সবার মধ্যে।
কেনো যেনো মনে হয়েছিলো এটা করতে না পারলে চলবে না।
উদিসাঃ মেয়ে কতোজন ছিলো?
হেনা দাসঃ মুসলিম মহিলা লীগের কয়েকজন ছিলো। জোবেদা রহমান চৌধুরী ছিলো।
এরপর নিজের মনেই কথা বলতে থাকেন হেনা দাস। জোবেদা রহমানের গল্প।
জানো, একটা কর্মসূচিতে জোবেদা রহমান চৌধুরী মহিলাদের নিয়ে গেছেন। মঞ্চে সেদিন কাজী নজরুল ইসলাম ছিলেন। সেখানে তিনি মঞ্চে উঠে জোবেদা রহমান চৌধুরীকে ডাকলেন। এবং বললেন, 'আপনি মেয়েদের নিয়ে কাজ করবেন কিভাবে, বোরখা পরে তো সব মেয়েদের আপনি আগ্রহী করতে বা টানতে পারবেন না। আপনি সেক্ষেত্রে কি করবেন?' জোবেদা রহমান ছিলেন তেজী।
তিনি কাজী নজরুল ইসলামকে জিজ্ঞেস করলেন,'আপনি কি করতে বলেন আমাকে?' নজরুল বললেন, 'বোরখা খুলে ফেলতে হবে। ' সেইদিন সেইসময় জোবেদা রহমান মঞ্চে দাঁড়িয়েই বোরখা খুলে ফেলেন, আর পরেননি।
এরপর হেনা দাস ক্লান্ত হয়ে পড়েন। সারাদিন জন্মদিনের শুভেচ্ছার ধকলের পর বিশ্রামের সময় হয়ে আসে তাঁর।
২০০৫ সালে পেয়েছেন জাহানারা ইমাম পদক।
আজকের এই পন্যসর্বস্বতা আর পুরুষতান্ত্রিকতার যুগে নিশ্চিতভাবেই আমাদের ঋদ্ধ-সমৃদ্ধ হেনা দাসদের প্রয়োজন। হেনা দাসের একটি মন্তব্য উল্লেখ করে তার প্রতি শ্রদ্ধা জানাচ্ছি।
'আমি সারা জীবন সংগ্রাম করেছি। আমি যে সমাজের স্বপ্ন দেখি এই সমাজ তেমন নয়। মাঝে মাঝে আমরা কিছু যুদ্ধে জয়ি হই মাত্র।
কিন্তু আমাদের এখনো অনেক কিছু জয় করবার বাকি আছে'।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।