আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ইতালি ফ্রান্সের বিদায়ের ময়না তদন্ত (ইতালি দায়ী কোচ,ফ্রান্স দায়ী জিদান)

.................।

বহুদিন হল ব্লগ লেখি না,মাসে হয়ত একবারের মত একটু খানি উকি দিয়ে চলে যাই। অফিসের চারিদিকের প্রেসারে মধ্য থেকে রীতিমত স্যান্ডউইচ হচ্ছি, ব্লগ লেখার অথবা দেখার সময় কোথায়। বিশ্বকাপ চলে আসায় একটা-দুইটা ব্লগ লিখবা না তাও মন থেকে মনে নিতে পারছিলাম না, তাই অবশেষে অতি কস্টে লিখতে বসে গেলাম। ইতালির লজ্জা জনক বিদায় (দায়ী কোচ)ঃ প্রথমেই আসা যাক ইতালির আইডেন্টিটি কি?? সবাই জানে- অসাধারণ গোলকিপার, নিশ্চিদ্র ডিফেন্স, পরিশ্রমী মিডফিল্ড এবং সবর্শেষে একজন ক্রিয়েটিভ অ্যাটাকার(হতে পারে সে অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার,সেকেন্ড স্ট্রাইকার অথবা সেন্ট্রাল ফরোয়ার্ড)।

এই ক্রিয়েটিভ প্লেয়ার ছিল ৯৪ তে ব্যাজ্জিও, ৯৮ তে কখনও ডেল-পিয়েরো কখনও ব্যাজ্জিও। ২০০০ ইউরোতে কিছু ট্যাকটিকাল চেঞ্জ দেখলাম টোট্রি দুইজন ফরোয়ার্ডের পিছনে ফ্রি প্লেয়ার, ২০০২ তে অনেকটা একইরকম,২০০৪ অনেকটা একই রকম। ২০০৬ লিপ্পি আবার ট্যাকটিক্যাল চেঞ্জ কোন ম্যাচে ডিফেন্সিভ,কোন ম্যাচে অ্যাটাকিং ফরমেশন, তার কারণ মূলতঃ পিরলোর একজন ভাল বল ডিস্ট্রিবিউটর ছিল,টোট্রি ফুল ফিটনেস ছিল না। তাই ডিপেন্ড অন ডিমান্ড & ফিটনেস ইতালির ফরমেশন ও চেঞ্জ। তারপরেও ২০০৬ এ অটুট ছিল চীনের প্রাচীরের মত ডিফেন্স এবং মাস্টার ব্লাস্টার গোলকিপিং।

এবারের ইতালির দিকে তাকানো যাক- গোলকিপিংঃ কোন অসাধারণ সেভ দেখি নাই ইতালির গোলকিপার থেকে। হয়ত সব গোল খেয়েছে ডিফেন্সের ভুলে অথবা গোলকিপারের কিছুই করার ছিল না তারপরেও টলডো,বুফনকে দেখতাম প্রায় হওয়া গোল বাচিয়ে দিতে। এবারের বুফনের রিপ্লেসমেন্টকে সেইরকম কোন সেভ করতে দেখলাম না। ডিফেন্সঃ একবারেই পুরাই ভঙ্গুর। সবাই জানে তাই কিছুই বলার নাই।

মিডফিল্ড & আক্রমণভাগঃ আগের মত পরিশ্রমী মিডফিল্ড ছিল, তিনটি খেলায় উল্লেখ করার মত বল ইতালিদের দখলেই ছিল। কিন্তু ছিল না পিরলোর মত বল ডিস্ট্রিবিউটর। এমনকি সেট পিসে প্রতিপক্ষের ডিফেন্স এলোমেলো করার মত কেউই ছিল না। মিডফিল্ড থেকে আক্রমণভাগে লিংক করার জন্য ছিল না কেউ। প্রথম দুই ম্যাচে ক্যামরোনেসিকে খেলানো হয়েছে কিন্তু ২০০৬ এর ক্যামরোনেসি এবং এই ক্যামরোনেসি অনেক পার্থক্য।

আক্রমণভাগে তিন ম্যাচেই খেলেছ ইকুইন্তা(পুরাই ইউজলেস)-না হলো সুযোগ সন্ধানি স্ট্রাইকার, না আছে ক্রিয়েটিভটি অথবা অ্যাকটিভিটি। জিলার্দিনো প্রথম ম্যাচে যা দেখলাম তাতে মনে হল ইতালির স্ট্রাইকার হওয়ার অনুপযুক্ত। ভালো লেগেছে কুয়াগিল্লারেলাকে ,কিন্তু লিপ্পি নামিয়েছে তাকে শেষ ম্যাচে পয়তাল্লিশ মিনিটের জন্য। ডি-নাটালে অনেক বেশি অ্যাকটিভ কিন্তু ব্যাজ্জিও টোট্রির ১০ং জার্সি পরার মত পুরাই অনুপযুক্ত। হায়রে কোচঃ লিপ্পির সাফল্য নিয়ে বলার কিছু নাই।

জুভেন্টাসের অনেক সাফল্যর মূলে রয়েছে লিপ্পি,২০০৬ বিশ্বকাপের গ্রেট ট্যাকটিশিয়ান। কিন্তু এবার জুভেন্টাস আনুগত্য এবং ইগো সমস্যা ডুবিয়েছে। যারা সিরি-এ খবর রাখেন তারা নিশ্চয়ই জানেন এবার সিরি-এ তে জুভদের করুন অবস্থা অথচ লিপ্পির টিমে আছে চিলেনি-ক্যানাভারোর মত জুভ প্লেয়ার,আছে ক্যামরোনেসি,ইকুইয়ান্তার মত সারা সিজন অফ ফর্ম এবং ইঞ্জুরিতে ভোগা প্লেয়ার। খেয়াল করে দেখুন এরা চারজন বেশ ইম্পর্ট্যান্ট পজিশনে খেলেছে। ক্যামরোনেসি বদলি প্লেয়ার হিসাবে দুই ম্যাচে অনেকক্ষণ মাঠে ছিল কিন্তু ডিফেন্সিভ মিডফিল্ড এবং অ্যাটাকিং কোন লিংক করতে পারে নাই।

ইকুইয়ান্তা আগেই বলেছি আকাইম্যা। ক্যানাভারোর কারণে প্রথম দুই ম্যাচে গোল খেল। ইগোর কারণে ইতালিতে রেখে আসল ক্যাসানোর মত প্লেয়ার, অথচ এই ক্যাসানোর কারণে নেক্সট সিজন সাম্পাদোরিয়া(ক্যাসানোর ক্লাব) চ্যাম্পিয়ন্স লীগে খেলবে। ইঞ্জুরি এবং ম্যাচ ফিটনেসে দোহাই দিয়ে রেখে এসেছে ২০০৬ এ ইতালির হয়ে সবচেয়ে বেশি গোল বানিয়ে দেওয়া টোট্রিকে। টোট্রি কিন্তু ২০০৬ এ পুরা ফিট ছিল না তারপরে ও কোয়ার্টার ফাইনাল পর্যন্ত ভালই খেলেছে।

(এই সিজনে যতক্ষণ ফিট ছিল রোমার হয়ে ভাল খেলেছে)। এতএব, পরিস্কার ইতালি টিমে ছিল ডিফেন্স সমস্যা এবং ক্রিয়েটিভিটির অভাব। অথচ এই লিপ্পির অধীনে জুভেন্টাসে ক্রিয়েটিভ প্লেয়ার হিসেবে খেলেছে জিদান,নেদভেদ,দেলপিয়োরের মত বল প্লেয়াররা অথচ এই লিপ্পি ২০১০ এ এই টাইপের প্লেয়ারদের চোখ বুজেই বাদ দিল,খোদাই জানে কেবল। তাই শেষ ম্যাচে ভিন্ন কিছুর জন্য আকুল লিপ্পি কুয়াগিল্লারেলাকে নামাল পয়তাল্লিশ মিনিট পর, কিন্তু প্রথম ম্যাচ থেকে নামাল না কেন?? খারাপ লাগে, লিপ্পির মত লিজেন্ড ট্যাকটিশিয়ান এইসব বাল্যখিল্য ভুল করবে। ফ্রান্সের বিদায় (জিদান দায়ী)ঃ প্রতিটি টিমের একটি আইডেন্টিটি থাকে,যা কোন গ্রেট প্লেয়ার অথবা গ্রুপ অফ গ্রেট প্লেয়ার দ্বারা এস্টাবিলিশড হয়ে থাকে।

হল্যান্ড ক্রুইফের নেতৃত্বে স্থাপিত হয়েছিল টোটাল ফুটবল এবং এই বিশ্বকাপের আগ পর্যন্ত হল্যান্ড এই ধারার ফুটবল খেলত। ব্রাজিল পেলের সহকারি (পেলে না কিন্তু ,পেলে ছিল সেন্ট্রাল ফরোয়ার্ড) ভাভা,গারিঞ্ছা,জর্জিনহো কতৃক স্থাপিত শর্ট পাসিং জাদুকরি ফুটবল, যা পরে সাদা পেলে জিকোর নেতৃত্বে সক্রেটিসরা খেলত বলে জানতাম(দুঃখ ব্রাজিল আর সাম্বা খেলে না, ব্রাজিলের খেলা দেখার থেকে গ্যালারির দিকে তাকাতে বেশি মন চায়)। জার্মানির জাতিগত মেকানিক্যাল ফুটবল। ইতালির অফুরন্ত ভাল ডিফেন্ডার,ভাল অ্যাটাকার এবং ক্রিয়েটিভ মিডফিল্ডারের অভাব থাকায় কাউন্টার অ্যাটাকিং ফুটবল। আর্জেন্টিনার আছে দুই স্ট্রাইকারের পিছনে একজন জাদুকরি অথবা জাদুকর হওয়ার চেস্টায় রত একজন ফুটবলারের মুভমেন্ট।

আর্জেন্টিনার এই ধারার প্রতিষ্ঠাতা ম্যারাডোনা, চাইলে গোল করতে পারে, চাইলে ডিফেন্স চেরা পাস দিতে পারে, এমনকি একাই ম্যাচ টানতে পারে। তাই হয়ত আর্জেন্টিনা সবসময় খুজে ফিরেছে একজন ম্যারাডোনা, আড়ালে একজন পারফেক্ট টেন। শিল্প সাহিত্যর দেশ ফ্রান্সের ফুটবল ধারা প্রতিষ্ঠিত করেছিল রিসেন্ট জিদান (খানিকটা ম্যারাডোনা টাইপ), জাদুকরি বল ডিস্টিবিউশন, নিজের সাথে সাথে সবাইকে খেলানো, বড় ম্যাচে বিশেষনের ভাষা খুজে না পাওয়ার মত পারফরমেন্স দিয়ে একটি স্বতন্ত্র ধারার প্রতিষ্ঠাতা। তাই দেখেছি জিদানের প্রথম অবসরের(২০০৪ ) এর পরে ফ্রান্সে বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে খাবি খাওয়া, অতঃপর জিদানের রাজসিক ফিরে আসা এবং আবারো ইতিহাসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যাওয়া। ২০১০ বিশ্বকাপের বাছাইতে ফ্রান্স ডুবে ডুবে তীরে উঠেছিল, তাই ডমেনেখ ভাল কিছু করার আসায় গোয়ারকয়েফ(৮ নং জার্সি)কে মিডফিল্ডের চাবি কাঠি দেয়, কিন্তু মজার ব্যাপার হল গোয়ারকয়েফের ইন্ট্যারন্যাশনাল এক্সপিরিয়েন্স খুব বেশি না, অভিজ্বতা নেই চ্যাম্পিয়ন্স লীগের মত টুনামেন্টে বিগ ফাইট দেওয়া বড় ক্লাবের হয়ে।

তারপরেও প্রথম ম্যাচে গোয়ারকয়েফ খেলেছিল পুরো এবং ফ্রান্স কোন গোল খায় নাই এবং দেয়ও নাই। দ্বিতীয় ম্যাচে ডমেনেখ আবার উল্টা পথে হেটে মালুদাকে দিল প্লে-মেকারের দায়িত্ব,ফ্রান্স হারল মেক্সিকোর কাছে। তৃতীয় জীবন-মরণ ম্যাচে ফিরিয়ে আনল গোয়ারকয়েফকে কিন্তু উনি পেলেন রেড কার্ড এবং ফ্রান্সের পতন (এ যেন ২০০২ ইতালি, টোট্রির রেড কার্ড এবং কোরিয়ার কাছে বিদায়)। আমি বাজি ধরে বলতে পারি একজন জিদান থাকলে অ্যানেলকার মত রাম ভোদাইও গোল দিতে পারত। মনে করে দেখুন আর্সেনালের অরি কখনো ফ্রান্সের অরি ছিল না,ত্রেজেগে ছিল শুধু জুভের।

তারপরেও জিদান ফ্রান্সকে লাস্ট দশ বছর অন্য উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছে একক চেস্টায়। রিবেরি,মালুদা ভাল প্লেয়ার কিন্তু উইংয়ে। মধ্য খেলা তৈরি করার মত কেউ যে ছিল না ফ্রান্সের। আমার কস্ট লাগছে না ইতালি বা ফ্রান্সের জন্য। কস্ট লাগছে ব্যাজ্জিও,জিদানের মত ১০ং জার্সিধারি ম্যাজিশিয়ানদের জন্য।

কারণ এদের মত খেলোয়াড়দের টানে রাত জেগে ঢুলু ঢুলু চোখে ফুটবল দেখি,এদের জন্য ফ্রান্স,ইতালির প্রতি সফট কর্ণার।


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.