আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

‘ঝিনুকের ভিতরে বিষের বালি, মুখ বুজিয়া মুক্তা ফলাও’



ইত্তেফাক পত্রিকার চিঠি পত্র কলামে এই লেখাটি দেখালম। ভাল লাগল তাই শেয়ার করলাম। মুস্তাফা দুলারী গত মাসের একত্রিশ তারিখে দৈনিক ইত্তেফাকের দৃষ্টিকোণ পাতায় নুর কামরুন নাহারের একটা লেখা প্রকাশিত হয়েছে। লেখাটির শিরোনাম ‘ঝিনুক নীরবে সহো’। লেখিকার এক ভাবীকে নিয়ে লেখা।

যতোই পড়েছি ততোই বিবেকের কাছে প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছি। তিনি তাঁর ভাবীর ব্যক্তিগত জীবনের দুঃখ-দুর্দশা, পারিবারিক জীবন, তিনটি ছেলেমেয়ের দুঃখ-কষ্টের করুণ চিত্র, স্বামীর বহুগামিতা, সংসারের প্রতি বৈরাগ্য, দায়বদ্ধতা ইত্যাদি তুলে ধরেছেন। লেখাটা আমার কাছে মনে হয়েছে পক্ষপাতিত্বমূলক, একরোখা ও একপেশে। একতরফাভাবে লেখাটি পুরুষবিদ্বেষী হয়ে পড়েছে। অত্যাচারিত ভাবীর দুঃখ-দুর্দশার কাহিনী তুলে ধরতে গিয়ে সমস্ত দোষ, দায়ভার পুরুষের ঘাড়ে চাপিয়েছেন লেখিকা।

ভাবীর কোনো দোষ-ত্রুটি ছিল কি না, লেখায় তা পাওয়া যায়নি। আমরা তা জানতেও চাই না। তবে অনুমান করতে পারি, তিনি শুধু ভাবীর খবর নিয়েছেন, ভাইয়ের খবর নেননি। ভাবীর দোষ-ত্রুটিগুলোকে কৌশলে পাশ কাটিয়ে গেছেন। তাঁর দৃষ্টিতে ভাবীর কোনো অসঙ্গতি ধরা পড়েনি।

ভারবাহী গাধা পুরুষরা সর্বদাই একটা অসামাজিক প্রাণী। সমাজে সংগঠিত বিশেষ করে নারীর ক্ষেত্রে অধিকাংশ অপরাধ পুরুষরাই করে থাকে। এই ধরনের একটা উপসংহার এই লেখা থেকে পেয়েছি। আমার প্রশ্ন হচ্ছে, ভাই-ভাবীর সংসারে ১০০টা অসঙ্গতি ঘটলে, তার মধ্যে কয়েকটি কি ভাবীর কারণে হতে পারে না? প্রসঙ্গত, আমার এক সতীর্থের কথা বলি। আমার বন্ধুটি অনেক ধুমধাম করে নিছক একটা পরিচ্ছন্ন সাংসারিক জীবনের আশায় বৈবাহিক বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিল সাদা ফকফকা ত্বকের অধিকারীণি এক শিক্ষিত (!) ললনার সঙ্গে।

প্রথম ছয়মাস তাদের মধ্যে প্রেম-ভালোবাসা, রাগ-অনুরাগ, অনুভূতি, সহমর্মিতা, বন্ধুত্ব আমাদের বন্ধু মহলের সবাইকে তাক্ লাগিয়ে দিয়েছিল। আমার বন্ধুটি মাঝে মাঝে গর্ব করে বলতো, জান্নাত থেকে ভাগ্যদেবী তার ভাগ্যকে সমস্ত সুখের ঐশ্বর্য দিয়ে সুপ্রসন্ন করেছে। তার পরের ছয় মাসের খতিয়ান বড়োই দুর্বিষহ, বেদনার্ত আর কষ্টদায়ক। আমার সেই ভাবীজান সকলের অগোচরে শ্বশুরবাড়ি থেকে মূল্যবান অলঙ্কার, সোনাদানা পাচার করে বাপের বাড়ি নিয়ে যায়। আর এই পাচার পর্বটি সংগঠিত হয় অত্যন্ত সুকৌশলে, যা পাখি-পক্ষীও টের পায়নি।

স্বামীর দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে ভালোবাসার ভান করে ছলছাতুরি আর কূটকৌশল করে আমার বন্ধুর কাছে থেকে স্বাক্ষর করা একটা ফাঁকা চেক (ব্লাংক চেক) হাতিয়ে নেয় বুদ্ধিমত্তা ভাবী। যে চেকে টাকার অঙ্কের পরিমাণ লেখা ছিল না। ব্যাংকে গিয়ে বন্ধুটির ব্যক্তিগত হিসাবের স্থিতি জেনে সারা জীবনের সঞ্চিত জমাকৃত অর্থের পুরোটাই তুলে নেয় সেই চেকের মাধ্যমে। টাকা তুলে নেয়ার পর ভাবীজানের আসল চেহারা উšে§াচিত হয়। প্রতারণা করে টাকা হাতিয়ে নিয়ে সে সোজা চলে যায় আদালতে।

তার পরের ইতিহাস আরো করুণ। স্বামীর বিরুদ্ধে স্ত্রী-নির্যাতন আর চরিত্রহীনতার অভিযোগ তোলে। ঠুকে দেয় নারী নির্যাতনের শক্তিশালী আইনি মামলা। এই মামলায় বাদ যায়নি বন্ধুর বয়োজ্যেষ্ঠ বৃদ্ধ পিতামাতাও। ছেলের কল্যাণের কথা চিন্তা করে আমার বন্ধুর পিতামাতা আদরের পুত্রবধূকে মামলা তুলে নেয়ার অনুরোধ জানান।

সুযোগ বুঝে ভাবীজান বড় একটা কোপ মারে। দাবি করে বসে বিরাট অঙ্কের মোটা টাকা। কয়েক দফা দেন-দরবার করে অগত্যা বন্ধুর পিতামাতা চড়া মাশুল দিয়ে মামলা থেকে নিস্তার পান। পরে জানতে পেরেছি, ভাবীজান তার এক সাবেক প্রেমিকের সঙ্গে ঘর বেঁধেছে। আমার বন্ধটি অর্থ, সংসার, স্ত্রী হারিয়ে এখন মানসিক রোগী।

ইতিমধ্যে বন্ধুটির চাকরিও খোয়া গেছে। বর্তমানে সে একটা মানসিক হাসপাতালের বিছানায় মড়ার মতো পড়ে আছে। আবোল-তাবোল বকে। চিল্লাচিল্লি করে। অতিমাত্রার ঘুমের ওষুধ দিয়ে তাকে ঘুম পাড়িয়ে রাখা হয়।

ঘুম ভাঙলেই সে প্রচণ্ড চিৎকার করে অপ্রকৃতিস্থের মতো। এই বন্ধুটির আত্মচিৎকার লেখিকা নুর কামরুন নাহারের কানে কখনোই পৌঁছবে না। তিনি পুরুষকে দেখেছেন নিছক একজন পুরুষ হিসেবে, মানুষ হিসেবে নয়। সমাজের দুয়েকটা অসঙ্গতি, অঘটন, দুর্ঘটনা দিয়ে একচোখা মন্তব্য করা যায় না। করা ঠিকও নয়।

এদেশের সমস্ত আইনের ধারা, উপধারা সব নারীর পক্ষে। নারী যে কোনো মুহূর্তে একজন পুরুষকে জেলহাজতের ভাত খাওয়াতে পারে, হেনস্তা করতে পারে আইনের মার-প্যাঁচে অনায়াসে। ছাত্রাবস্থায় প্রয়াত লেখক হুমায়ুন আজাদের অনবদ্য সৃষ্টি ‘নারী’ নামের বইটি পড়েছি বেশ কয়েকবার। তিনি লিখেছেন, “নারী জাতি এক বড়োই বিচিত্র প্রজাতি। এই প্রজাতির বেড়াজালে আটকে কুৎসিত আচরণ করতে থাকে পুরুষ প্রজাতি।

একটি সংসারে যে সমস্ত অসঙ্গতি ঘটে, তার দায়ভার কোনো অংশেই নারীর কম নয়। ” নুর কামরুন নাহার লেখাটি শেষ করেছেন একটি সুন্দর উক্তি দিয়ে। আর তা হলো, “ঝিনুকের ভিতর বিষের বালি, মুখ বুজিয়া মুক্তা ফলাও”। সর্বশেষ লাইনটি আমার ভীষণ ভালো লেগেছে। তাই আমিও আমার লেখার শিরোনাম দিয়েছি লাইনটি দিয়ে।

তবে ঝিনুকের ভেতর নয়, মানুষের ভেতরে বিষের নহর বইছে। মুক্তা আহরণ করতে সুকৌশলী হতে হবে। পরিশেষে, আমার একটা বড় কষ্টের কথা না বলে পারছি না। আমার মা, তিনিও একজন নারী, তিনি হয়তো জীবনে কখনোই আমার বাড়িতে পা ফেলবেন না, আসবেন না, তা শুধুমাত্র একজন নারীর কারণে। উত্তরা, ঢাকা


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।