আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

জিয়া কর্তৃক তাহের হত্যাকান্ড নিয়া পি মুন্সী’র ‘অবজেবক্টিভ’ ত্যানা প্যাচাপ্যাচি প্রসঙ্গে একখান রি-অ্যাকশান পোষ্ট!



জিয়া কর্তৃক তাহের হত্যা নিয়ে রাগইমনের তোলা আইনি প্রশ্নের ইটের বিরুদ্ধে দাসত্বের ছোড়া পাটকেল এবং এই দুইয়ের মধ্যকার বিতর্ক নিরসনের নামে পি মুন্সী সাহেব তার ক্ষমতা ও আইনের সম্পর্ক: মুজিব-জিয়া অফেন্ডিং বিতর্কে (Click This Link) আইন ও ক্ষমতা নিয়ে ব্যাপক ত্যানা পেচাপেচি করলেন। তা শখ বেশি উঠলে কেউ ত্যানা প্যাচাইতেই পারেন। কিন্ত মুশকিল হলো ত্যানা দিয়ে নিজস্ব অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ প্যাচাপ্যাচি না করে তিনি নিয়ে পড়লেন বিপ্লবী কর্ণেল তাহের আর সামরিক শাসক জিয়ার ক্ষমতার লড়াইয়ের ‘অবজেকটিভ’ বিশ্লেষণ করা নিয়ে। সেই অবজেকটিভ বিশ্লেষণের বহর দেইখা আমারও একটু খায়েশ হইল ত্যানা প্যাচা-প্যাচি করতে। তাই অধমের এই রিঅ্যাকশান পোষ্ট।

(১) মুন্সী মশাইয়ের মতে “জনগণের ক্ষমতার জন্ম” দেয়ার জন্য “আবু তাহেরে সিপাই বিপ্লব” একটা প্রচেষ্টা, তবে ব্যর্থ। এই ব্যর্থতার কারণে অর্থাত প্রথম পরীক্ষায় ফেল করার কারণে দ্বিতীয়টা, আপনার ভাষায় ”আসল পরীক্ষা। জনগণের ক্ষমতা হিসাবে নিজেকে প্রমাণ করা”র পরীক্ষা পর্যন্ত যেতেই পারেন নি তাহের। ফলে সেই আসল পরীক্ষায় যাওয়ার ”আগেই জিয়ার কাছে হেরে গেছে, নিজের ক্ষমতা রক্ষা, মোকাবিলা করতে ব্যর্থ হয়েছে। ফলে সেনা কোর্ট মার্শালের আইন জিয়ার হাত ধরে তাহের ও তাঁর সঙ্গীসাথীদের বিরুদ্ধে প্রয়োগ হয়েছে।

” এখন প্রশ্ন হলো এই ঘটনাটায় তাহের এবং জিয়ার ভূমিকার বিচার কি হবে? তাহেরের ক্ষমতার লড়াই যদি জনগণের ক্ষমতার জন্ম দেয়ার ব্যার্থ প্রচেষ্টা হয়, তাহলে জিয়ার সফল প্রচেষ্টাটি কিসের জন্য? সেটা কি কোন ক্ষমতার জন্ম দিয়েছে নাকি পুরোনো ক্ষমতা সম্পর্ককে জারি রেখেছে? পুরোনো সম্পর্ক জারি রাখার জন্য যদি জিয়ার প্রচেষ্টা সফল হয়, তাহলে সেখানে জিয়ার ভূমিকাটা কি? তার সেই প্রচেষ্টা সফল করতে গিয়ে তাহের আর তার সংগী সাথীদের উপর সেনা কোর্ট মার্শালের আইনের যে প্রয়োগ হয়েছে সেখানে জিয়ার ভূমিকা কি শুধুই হাত পেতে রাখা যে হাত ধরে সেনা কোর্ট মার্শালের আইন তাহেরদের উপর প্রয়োগ হয়েছে? (২) পি মুন্সী তার ‘অবজেবটিক’ মূল্যায়নের ১ম পয়েন্টে বলেছেন: “সৈনিক সংস্হা থাকার কারণেই জিয়ার জানে বেঁচে যাওয়া ও পরবর্তীতে ক্ষমতায় উত্থান। ” আবার ৮ নং পয়েন্টে লিখেছেন: “জিয়াকে সৈনিক বিপ্লবের বিশ্বাসঘাতক বলে মনে করেন তাহের। এটা নিজের হতাশা ব্যর্থতার কথা। জিয়া তাহেরের সাথে মিলে সৈনিক সংস্হা গড়তে যান নাই। ফলে সৈনিক বিপ্লব কবুলের দায় তাঁর উপর চড়ানো, বিশ্বাসঘাতক বলার সুযোগ আমরা দেখি না।

” তাহের জিয়াকে বিশ্বাসঘাতক কেন মনে করতো?তাহের কি জানতো না যে জিয়া তাহেরের বা তাহেরের বিপ্লবী সৈনিক সংস্থার আদর্শে বিশ্বাস করে না? তাহেরের আদর্শের সাথে বিশ্বাসঘাতকতার জন্য নয়, বরং যে বিপ্লবী সৈনিক সংস্থা জিয়াকে জানে বাচায়, ক্ষমতায় আরোহনের পর, নিজে উদ্যোগী হয়ে (মোটেই হাত পেতে রাখার মত প্যাসিভ বা নিস্ক্রিয় নয়) শাসক শ্রেণীর ক্ষমতা সুসংহত করতে, সেই ক্ষমতার প্রতিভু হিসেবে, সেই সৈনিক সংস্থার মূল নায়ক এবং অন্যান্য সদস্যদের ফাসীর দড়িতে ঝুলানোর জন্য সেনা আইন প্রয়োগ করার জন্যই তাহের এবং তাহেরের সহযোগীরা জিয়াকে বিশ্বাসঘাতক বলেছে। এর মধ্যে দিয়ে তাহরের পরিকল্পনা ও হিসেব নিকেশের দুর্বলতা প্রকাশ হলেও তাতে জিয়ার ঘৃণ্য ভূমিকার দুর্গন্ধ চাপা পড়ে না, সিপাহী বিপ্লব কে “নিষ্ঠুর” ,“নিরঙ্কৃশ” ক্ষমতা নিয়ে তাহের-জিয়ার লড়াই এর আকারে হাজির করতে গিয়ে, যে দুর্গন্ধ চাপা দেয়ার ততোধিক ঘৃণ্য প্রচেষ্টা আপনার লেখার মধ্য দিযে প্রকাশ পেয়েছে। নিশ্চিত ভাবেই “তাহের জিয়ার জান বাঁচিয়ে বলে জিয়াকে তাহেরের রাজনীতির সাথে একমত হতে হবে” এরকম কোন কথা নেই এবং সেরকম কোন দাবীও কেউ করছে না। কিন্ত জিয়ার রাজনীতির সাথে একমত না হয়েও যে তাহের জিয়ার জান বাচিয়েছে, সেই তাহেরের জান বাচানো তো দুরের কথা, ক্ষমতায় আরোহনের পর পর সেই ক্ষমতার সর্বোচ্চ ব্যাবহারের মাধ্যমে অচিরেই জিয়ার জীবন বাচানো ব্যাক্তিটিকে ফাসীতে ঝুলিয়ে জিয়া পরবর্তীতে নিষ্ঠুর ও নিরঙ্কুশ ক্ষমতা ধরে রাখতে আর যে সব ভয়াবহ হত্যাকান্ড ঘটাবে তার সঠিক পূর্বাভাসই দিয়েছে। তবে আপনার কাছে ব্যাক্তি জিয়ার ভূমিকা কিছুই নয়, কারণ “ক্ষমতা নির্মম, নিষ্ঠুর।

ক্ষমতার এসব অনুষঙ্গ কে এড়াতে পারা কঠিন। ” আহা! আমার তো আপনার এই লেখা পড়ে জিয়ার জন্য মায়াই হচ্ছে। বেচারা! ক্ষমতায় থাকার জন্য অনিচ্ছা স্বত্ত্বেও তাকে কত নিষ্ঠুরতাই না করতে হলো! সন্দেহ নেই ব্যাক্তির ভূমিকার উপর বিদ্যমান ক্ষমতা কাঠামো ও আর্থ সামাজিক ব্যাবস্থার ভূমিকা ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ্। কিন্ত একই ক্ষমতা কাঠামোর মধ্যে কোন ব্যাক্তি/গোষ্ঠী ক্ষমতা কাঠামোর ধারক বাহক হয়ে উঠে সে ক্ষমতাকে আরও শক্তিশালী করে তোলে অন্যদিকে অন্যকোন ব্যাক্তি/গোষ্ঠী সেই ক্ষমতা কাঠামো পাল্টানোর সংগ্রামের ধারক বাহক হয়ে উঠে। বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর কাছে সেই ক্ষমতা কাঠামো ধরে রাখা বনাম পাল্টানোর লড়াই সংগ্রামের তাতপর্য অপরিসীম, জনগণের পয়েন্ট অব ভিউ থেকে দেখলে, পাল্টানোর সংগ্রামের পক্ষের শক্তি এবং বিপক্ষের শক্তির ভূমিকাকে “অবজেকটিভলি” দেখার কোন সুযোগ নেই।

জনগণ পাল্টানোর পক্ষের শক্তিকে যদি ভালোবাসে তবে বিপক্ষের শক্তিকে ঘৃণা করতে শিখে- এর মধ্যে অবজেকটিবিটি মারানোর কোন সুযোগ কোথায়? (৩)এই প্রেক্ষাপটটিকে মাথায় রেখে এবার দেখা যাক, রাগইমনের আইনমূলক চোখে তোলা প্রশ্নটি পিমুন্সীর দাবি মত আসলেই অবান্তর কি-না কিংবা পিমুন্সী কথিত সেনা কোর্ট মার্শালের আইন জিয়ার হাত ধরে তাহের ও তাঁর সঙ্গীসাথীদের বিরুদ্ধে প্রয়োগ হয়েছে নাকি বিশেষ ভাবে তাহেরদের বিচারের জন্য জিয়ার নিজের ক্ষমতায় জরি করা সামরিক ফরামানে তাহেরদের বিচার হয়েছে? প্রথমত: মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান নিজস্ব এবং গোষ্ঠীগত ইচ্ছা ও স্বেচ্ছ্বাচারিতা চরিতার্থ করার জন্য ৭ই নভেম্বরের পর থেকে অনেকগুলো সামরিকা ফরমান ও আদেশ জারি করেছেন। এমনি একটি অধ্যাদেশ ছিল ৸Special Martial Law Tribunal Regulation 1976৹৷ রাষ্ট্রপতি ও প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক বিচারপতি সায়েম ১৯৭৫ এর ১৫ আগষ্টের ঠিক ১০মাস পর ১৯৭৬-এর ১৪ জুন এ অধ্য্যাদেশটি জারি করেন। এই অধ্যাদেশ জারির ধান্দা একটিই- ইতোমধ্যে গ্রেফতারকৃত ৭ নভেম্বরের সিপাহি বিপ্লবের নেতা কর্ণেল তাহের ও জাসদ নেতৃবৃন্দের বিচার করা। জেনারেল জিয়ার ইচ্ছা ও নির্দেশেই সায়েম এ অধ্যাদেশটি জারি করেছিলেন। কারণ সায়েম রাষ্ট্রপতি হলেও দেশের সর্বময় ক্ষমতা তখন প্রকৃত অর্থে সেনাপ্রধান জিয়ার হাতেই কেন্দ্রীভূত ছিল।

অর্থ, স্বরাষ্ট্র ও তথ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব ছাড়াও তিনি তখন অন্যতম ডিসিএমএল(উপ-প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক) ও ছিলেন। ঐ সামরিক আইনের আর্টিক্যাল ৩(D) তে বলা হয়েছিল: ট্রাইব্যুনাল এ বিধি বলবত হবার আগে সংঘটিত হোক বা পর সংঘটিত হোক ক) দন্ডবিধির(১৮৬০ সালের ৪৫নং) ষষ্ঠ ও সপ্তম অনুচ্ছেদের অধীনে শাস্তিযোগ্য যে কোন অপরাধ; খ) ১৯৫২ সালের সেনাবাহিনী(১৯৫২ সালের ৩৯ নং) আইন, ১৯৫৩ সালের বিমান বাহিনী(১৯৫৩ সালের ৬ নং) আইন অথবা ১৯৬১ সালের নৌবাহিনী(১৯৬১ সালের ৩৫ নং) অধ্যাদেশ কিংবা এসব আইন ও অধ্যাদেশের অধীনে জারিকৃত যে কোন বিধি অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য অপরাধ; গ) ১৯৭৫ সালের সামরিক আইন বিধির ১৩ বা ১৭ নং বিধির(১৯৭৫ সালের ১নং বিধিসমূহ) অধীনে শাস্তিযোগ্য অপরাধ; কিংবা ঘ) এ ধরনের কোন অপরাধ সংঘটন বা তাতে সহায়তা দানের চেষ্টা বা ষড়যন্ত্র অথবা অপরাধ সংঘটনের প্রস্তুতি হিসেবে শাস্তিযোগ্য যে কোন অপরাধের বিচার করতে পারবেন। আটিক্যাল ৪(জ) এ ট্রাইবুনালের ক্ষমতা ও কার্যপদ্ধতি সম্পর্কে বলা হয়েছে: ট্রাইবুনালের কোন সিদ্ধান্ত বা রায়ের ব্যাপারে কোন কর্তৃপক্ষের কাছেই আপিল করা যাবে না। দ্বিতীয়ত: ৫সদস্য বিশিষ্ট এ ট্রাইব্যুনালে চেয়ারম্যানসহ সংখ্যাগরিষ্ঠ ছিলেন সশস্ত্র বাহিনী থেকে আগত যাদের আইনগত অভিজ্ঞতা বা চর্চা প্রশ্নের উর্দ্ধে ছিল না। তদুপরি এরা সবাই ছিলেন সামরিক প্রশাসনের অংশ।

প্রচলিত রীতিতে সাধারণত মার্শাল ল কোর্টে বিচার বিভাগ থেকে বিচারক নেয়া হয়। এটি হলো বিচারের নূন্যতম নিরপেক্ষতা অক্ষুন্ন রাখার প্রাথমিক শর্তের একটি। কিন্তু আমাদের আলোচ্য ট্রাইবুনালে প্রচলিত ঐ রীতিকে উপেক্ষা করা হয়েছিল। তৃতীয়ত: এ ট্রাইব্যুনালকে তাবত দুনিয়ার আইন শাস্ত্রের ইতিহাসে একটি বিরল আলোচ্য বিষয় হিসেবেই চিহ্রিত করা যাবে। কারণ ট্রাইবুনালকে দেয়া ক্ষমতার পরিধি।

মোট ৩ ধরণের অপরাধের শাস্তি বিধানের এখতিয়ার দেয়া হয়েছিল একই ট্রাইবুনালকে- ক) সাধারণ আইনের অপরাধ খ) সশস্ত্র বাহিনীর বিরুদ্ধে অপরাধ গ) সামরিক আইন বিরুদ্ধ অপরাধ। সম্ভবত বিভিন্ন সশস্ত্র বাহিনীর সদস্য ও বেসামরিক ব্যাক্তিদের বিচারকার্য একই সঙ্গে সম্পন্ন করার লক্ষেই ততকালীন কর্তৃপক্ষ এই কাজটা করেছিল। চতুর্থত: ট্রাইবুনালের চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ করা হয় কর্নেল ইউসুফ হায়দার কে যে মুক্তিযুদ্ধের সময় দেশে থেকেও মুক্তিযুদ্ধে যোগ দান করেনি। শুধু মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে নয়, মুক্তিযুদ্ধের পর ১৯৭৪ সাল পর্যন্ত পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে কর্মরত ছিল। অথচ যাদের বিচারের জন্য তাকে চেয়ারম্যান করা হয়েছিল তারা সবাই ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা।

এ বিবেচনা থেকেও বিষয়টি যথেষ্ট আপত্তিকর। পঞ্চমত: সামরিক অধ্যাদেশেই বলে দেয়া হয়েছে ট্রাইবুনালের রায়ের বিরুদ্ধে কোন আপিল করা যাবে না, বিচার কার্য চলবে রুদ্ধদার কক্ষে এবং বিচার প্রকৃয়া সম্পর্কে তথ্যপ্রকাশ শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এ থেকে শুরু থেকেই বিচার নিয়ে জনমনে যে সংশয় সৃষ্টি হয়, পরবর্তী মাত্র ৩০দিনে তার সত্যতা প্রমাণিত হয়। ষষ্ঠত: বিচার শুরুর দিন অভিযোগগুলো উত্থাপিত হবার পর ট্রাইবুনাল ৮ দিনের জন্য মুলতবি হয়। এই আটদিন ই কেবল আসামি পক্ষের উকিলদের মামলার কাগজপত্র ও আত্মপক্ষ সমর্থনের প্রয়োজনীয় প্রস্তুতির সময় দেয়া হয়।

অথচ সরকার পক্ষ মামলা সাজাতে সময় নিয়েছিল ছয় মাস। আত্মপক্ষ সমর্থনের জন্য এত কম সময় প্রদান ইতিহাসে বিরল। অভিযুক্তরা আইনজীবিদের সাথে কথা বলতে পারতেন কেবল কোর্টে থাকার সময়টুকুতেই! সপ্তমত: সাধারণত সাক্ষীদের বক্তব্যের সত্যতা যাচাই করার জন্য নিরপেক্ষ প্রত্যক্ষদর্শী থাকে। এ মামলায় এ বিধানটিও অগ্রাহ্য হয়। ৩ জুলাই আসামি পক্ষের আইনজীবীরা রাজসাক্ষী ফখরুল আলমকে বিস্তারিত জেরা করার অনুমতি চাইলে সেটা প্রত্যাখ্যান করা হয়।

অষ্টমত: যারা এ মামলা সাজিয়েছিল তাদের কথা মতোই সাক্ষীরা মামলা চলাকালে সাক্ষ্য দিচ্ছিল। আর এই বানানো সাক্ষ্য দিতে গিযে মিথ্যাচার আর ভুলের ছড়াছড়ি ছিলো। যেমন রাজসাক্ষী ফখরুল এক পর্যায়ে বলেন, ড. আখলাকুর রহমানের মোহাম্মদপুরুস্থ বাসায় সে কর্ণেল তাহের কে দেখেছে ভারতীয় সেনা কর্মকর্তা কর্ণেল ভোরার সাথে টেলিফোনে কথা বলতে। অথচ ড. আখলাকের বাসায় কোন ফোনই ছিল না। নবমত: তাহের ও জাসদের আহবানে এবং নেতৃত্বে সিপাহীরা খালেদ মোশাররফ ও তার সহযোগী শক্তিকে উতখাত করেছে।

সুতরাং একে তো বৈধ সরকার উতখাতের প্রচেস্টা হিসেবেই গণ্য করা যায় না। আবার ৭ ই নভেম্বরের বিপ্লবী প্রচেষ্টা যদি অবৈধ হয়েই থাকে তাহলে জিয়া সরকার সে দিনকে বিপ্লব দিবস হিসেবে ছুটি ঘোষণা করেছিল কেন? আবার দিনটি যদি জাতীয় গৌরবেরই হয়ে থাকে তাহলে কর্ণেল তাহের ও সহযোগীদের তো পরস্কৃতই হবার কথা। এর আগে ৫ নভেম্বর খালেদ মোশাররফ ও শাফায়াত জামিললা যাকে রাষ্ট্রপতি পদে বসালেন- সেই বিচারপতি সায়েম সিপাহি অভ্যুত্থানে খালেদ মোশারফ উতখাত হবার পরও বহালই রইলেন এবং তা জিয়া ও তাহেরর সম্মতিতেই। সুতরাং ৭ নভেম্বরের মধ্য দিয়ে সত্যিকার অর্থে কোন সরকার উতখাত হয়েছে এমনটি বলা যায় না। অন্যাদিকে বৈধসরকার উতখাতের পাশাপাশি সামরিক বাহিনীতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির যে অভিযোগ উত্থাপিত হয়, তাও যথার্থ ছিল না।

বাংলাদেশ সেনাবাহীনিতে শৃঙ্খলা ভংগের প্রথম ঘটনা হলো ১৫ আগষ্টের ঘটনা। তার ফলে ক্ষমতায় আসা মোশতাক ও তার মেজরাই জিয়াকে এক পর্যায়ে সেনাপ্রধান নিয়োগ করে এবং বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারী অফিসারদের শায়েস্তা করার কোন চেষ্টাই নতুন সেনাপ্রধান জিয়া করে নি। ১৫ আগষ্ট থেকে ৬ নভেম্বর পর্যন্ত নৈরাজ্য ও শৃংখলা ভংগের কোন ঘটনার সংগে তাহের ও তার সহযোগীরা কোনভাবেই জড়িত ছিলেন না বরং সেনাপ্রধান হিসেবে ঐসবের দায় প্রকারান্তরে জিয়ার উপরই বর্তায়। দশমত: সরকারী পিপি এটিএম আফজাল আসামিদের আইনজীবিদের জানান যে, প্রসিকিউটর হিসেবে তিনি কখনও মৃত্যূদন্ড দাবী করেন নি। তার মতে এরকম সিদ্ধান্ত ছিল সর্ম্পূর্ণ অবাস্তব।

কারণ তাহের কে যে অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়, তার জন্য মৃত্যদন্ড দেয়া সম্ভব ছিল না- দেশে সে ধরণের কোন আইন ই ছিল না। অবশ্য ফাসির আদেশ কার্যকর করার দশদিন পর আইন মন্ত্রণালয় এই আইনগত অসংগতি দূর করে। ৩১ জুলাই ১৯৭৬ এ আইন মন্ত্রণালয় সামরিক আইনের ২০তম সংশোধন জারি করে যেখানে বলা হয় “বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা বাহিনীতে কোন ধরণের মতাদর্শ প্রচারের অপরাধের শাস্তি মৃত্যূদন্ড। “ কথা আছে, ততকালীন আইন সচিব তাহেরের মৃত্যদন্ড সংক্রান্ত রায়ের ব্যাপারে আইনি অসংগতি জিয়ার কাছে তুলে ধরলে জিয়া সেই ফাইলটি ছুড়ে ফেলে দেন। তিনি নির্দেশ দেন অবিলম্বে আইন মন্ত্রণালয় থেকে অবিলম্বে এ রায় অনুমোদন দেয়ার।

আমার জানার বড় খায়েশ, এরপরও কি, আইনি দিক নিয়া তাহেরের বিচারের বৈধতা নিয়া প্রশ্ন তুললে মুন্সী মশাই সে প্রশ্নতুলাটাকে অবান্তর বইলা উড়ায়া দিবেন আর অন্যদিকে অবজেকটিভিটির দোহাই দিয়া তাহের হত্যার পেছনে জিয়ার ভূমিকাকে passive হিসেবে হাজির করার জন্য বলবেন:”সেনা কোর্ট মার্শালের আইন জিয়ার হাত ধরে তাহের ও তাঁর সঙ্গীসাথীদের বিরুদ্ধে প্রয়োগ হয়েছে”!!! তথ্যসুত্র: http://www.col-taher.com/gopon.html

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.