বহুদিন পরে আবারো মনে হচ্ছে বাংলা ভাষাকে কিছু মানুষ এখনো ভালোবাসে। তবে আমার ব্যক্তিগত ধারনা মতে আমি এক অশনী সংকেত দেখতে পাচ্ছি। ভায়েরা আপনাদের কেউকি বুঝতে পারছেন, এত ত্যাগের বিনিময়ে আমরা যে প্রিয় ভাষা পেয়েছি, তা বিকলাঙ্গ হতে চলেছে? গত ৫/৬ বছর ধরে আমরা নিজের হাতে প্রমিত বাংলার চর্চা নষ্ট করেছি। আমি ইলেকট্রনিক মিডিয়া আর তরুন প্রজন্মের আচরনে শঙ্কিত। আমার নিজস্ব পর্যবেক্ষন এখানে তুলে ধরছি, ভূল কিছু বললে দয়া করে শুধরে দিবেন।
মার্জিত বাংলার উপরে প্রথম আঘাতটি আসে ... ৫১ বর্তী'র মাধ্যমে।
খুব-ই জনপ্রিয় এ নাটকের প্রধান আকর্ষণ ছিল বাংলা নাটকের শুদ্ধ-রূপটিকে বর্জন করে অশুদ্ধ বাংলা বলার বাস্তব প্রবনতাকে উস্কে দেয়া।
মাদকের যেমন আসক্তি থাকে, তরুনদের মধ্যে বিকৃত বাংলা বলার একটি আসক্তি লক্ষ করা যায়। They think it makes them cool. এরপর একের পর এক এই ধংসলীলা চলতে চলতে এখন বলতে গেলে তেমন আর অবশিষ্ট নেই। ৬/৭ বছর আগে যে বাংলা অক্রিতীম বিনোদন দিত, এখন বাংলার সেই শুদ্ধরূপ নতুন প্রজন্মের কাছে অস্বাভাবিক ও লেকচার বলে মনে হয়।
একটা কথা আমরা ভূলে যাই, তা হল ভাষাকে সুন্দর-রূপে ধরে রাখতে বা সমৃদ্ধ করতে প্রচেষ্টার প্রয়োজন। আর তা নষ্ট করা খুবই সহজ। যা আমরা প্রায়-ই করে ফেলেছি। মাদক থেকে দুরে থাকার জন্য যেমন বাবা-মায়ের ভুমিকা আছে, তেমনি দেশের সংস্কৃতিকে লালন করার জন্য আমাদের-ই টাকায় এক মন্ত্রনালয় চলছে, উচ্চ বেতনে রাখা হয়েছে মন্ত্রী। তারা সবাই আজ চরমভাবে ব্যার্থ।
বাংলার যেটুকু নতুন প্রজন্মের মধ্যে আজও অবশিষ্ট আছে, সেটাকেও পঙ্গু করার যোগাড়যন্ত্র শেষ। আর তা হল হিন্দি গান, বলিউড ছবি, হিন্দি টিভি চ্যানেল আর হিন্দি সিডি/ডিভিডি। অনেকেই হয়তো বলবেন english -ওতো বাংলাকে ক্ষতি করে, সত্যি বলতে কি, এটা শুধু তর্কের খাতিরেই তর্ক। এদেশের মানুষের ইংরেজী দক্ষতা কম থাকাতেই, তারা উন্নত আন্তর্জাতিক মানের বিনোদন গ্রহন করতে শিখেনি। সেই সুযোগে নিন্মরুচীর হিন্দি সংস্কৃতি আমাদের ইংরেজির দক্ষতা ও বাংলার গভীরতা-কে প্রায় মুছে দিতে চলেছে।
বাংলা ও হিন্দির মধ্যে কিছু সাধারন শব্দ রয়েছে। অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যায়নরত ছাত্র ছাত্রীরাও শব্দগুলোকে (মহল, সুবাস ইত্যাদি) হিন্দি হিসেবে জানে এবং হিন্দি টানে (মাহাল, ছুবাছ ইত্যাদি)বলতে পেরে বর্তে যায়।
নতুন প্রজন্মের জাতীয়তাবোধ কোথায় এসেছে তার একটা উদাহরন দেই..
দেশের বাইরে যারা থাকেন তাঁরা অনেকেই হয়তো ব্যাপারটি লক্ষ করেছেন: হিন্দি/উর্দু-ভাষীরা ধরেই নেয়, বাংলাদেশীরা তাদের চাকর এবং ওদের সাথে হিন্দি/উর্দুতে কথা বলতে আমরা বাধ্য। আর এ দেশের অনেকেই মনিবকে খুশী করার জন্য এমনভাবে হিন্দি বলে যেন তা মাতৃভাষা। অথচ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ইংরেজী ছাড়া অন্য ভাষায় কথা বলার অনুমতি চাওয়া একটি সাধারন ভদ্রতা।
নতুন প্রজন্মের সবকিছু যারা হালকা করে দেখছেন, তারা অনেকটাই আজকের অবস্থার জন্য দায়ী। আর হয়তো ভবিষ্যতে জৌলুস হারানো বাংলার দিকে আঙ্গুল তুলে বলবেন...ওটাতো খ্যাত লোকের ভাষা।
আমার স্বল্পবুদ্ধিতে বাংলাকে বাঁচানোর জন্য কিছু পরামর্শ (বিশেষ করে সংস্কৃতি মন্ত্রীর প্রতি...
---২১ শে ফেব্রুয়ারীতে শহীদমিনারে যাওয়া কয়েক বছরের জন্য বন্ধ করা হোক। এটা (বাসায় এসে স্বপরিবারে হিন্দি সিরিয়াল আর হলিউড ছবির নকল করা বলিউড দেখা) ভন্ডামী ও শহীদদের অপমান।
---এই মুহুর্তে সকল হিন্দি চ্যানেল, সিডি/ডিভিডি, ক্যাবল টিভির নিজস্ব হিন্দি চ্যানেল অবৈধ ঘোষনা করা, অন্যথায় মোটা জরিমানা ও সন্ধানদাতাকে পুরস্কারের ব্যবস্হা করা।
---stardust সহ সকল বলিউডঘেঁসা ম্যাগাজিনে উচ্চশুল্ক আরোপ করা
----এরশাদ প্রস্তাবিত সর্বস্তরে বাংলা উঠিয়ে দেয়া। এটা বাংলার জন্যই ক্ষতিকর।
---দেশে এলাকাভিত্তিক পাবলিক লাইব্রেরী'র সংস্কৃতি আবার চালু করা।
---আপনাদের মধ্যে যাদের ব্রেইনওয়াস হয়ে গিয়েছে, ব্যাপারটি হালকাভাবে নিচ্ছেন এবং মাদকাসক্তের মতো হিন্দি উপভোগ করছেন, তারা একবার ভেবে দেখুন, কোন শেনীর বিনোদন আপনি ও আপনার পরিবার গ্রহন করছে এবং ভবিষ্যতে মনস্তাত্বিক কি প্রভাব পড়তে পারে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।