আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

রাষ্ট্রভাষা ‘বাংলা’র বাংলাদেশে অবাধে হিন্দি ভাষার প্রচলন হচ্ছে কীভাবে? একুশ উপলক্ষে সরকারের বাংলাপ্রীতি কী নামসর্বস্ব ও লোক দেখানো ভিন্ন অন্যকিছু? রাষ্ট্রভাষা ইসলাম ও শতকরা ৯৭ ভাগ মুসলমানের দেশে হিন্দি সিরিয়াল, হিন্দু সংস্কৃতি ও ভাষা বরদাশতযোগ্য নয়।

অহন থিক্কা সব শয়তানরে দৌরের উপর রাখুম। শিশুদের হিন্দি কার্টুন প্রীতি নিয়ে খবর মুদ্রিত হচ্ছে পত্রিকান্তরে। বিবিসি সূত্রে প্রকাশিত এক খবরে বলা হয়, বাংলাদেশের বেসরকারি টিভি চ্যানেলে চলছে হিন্দি কার্টুন। এসব কার্টুন দেখে শিশুরা মাতৃভাষা বাংলার পরিবর্তে হিন্দির প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠেছে। তাই বাংলাদেশে বাংলা কিংবা ইংরেজির পরিবর্তে হিন্দিতে কেন কার্টুন প্রচারিত হবে, এ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে অনেকেই।

ছয় বছর বয়সী এক শিশু হিন্দিতে ডাবিং করা ডরিমনের হিন্দি গান গেয়ে যাচ্ছে সাবলীলভাবে। শিশুটির মা বললো, এটা আমাদের জাতীয় সমস্যা। এটা সিন্দাবাদের ভূতের মতো আমাদের মাথার উপর চেপে বসেছে। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত আমরা এই সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছি। তারা বন্ধুদের সঙ্গে তো বটেই এমনকি অভিভাবকদের সঙ্গেও হিন্দিতে কথা বলছে।

ছোটবেলায়ই হিন্দির আগ্রাসনে বিপর্যস্ত বাংলাদেশের শিশুরা। ডোরেমন নামে যে কার্টুনকে ঘিরে হিন্দির এ আগ্রাসন, সেখানে কেবল ভাষা নয়, বিশ্বাসেরও বেশ পার্থক্য রয়েছে। প্রসঙ্গত এখানে উল্লেখ্য যে, ১৯৬৯ সালে জাপানে তৈরি হয় ‘ডরিমন'। বিদেশে জাপানি সংস্কৃতি প্রচারের লক্ষ্যে এটাকে ‘কার্টুনদূত’ ঘোষণা করেছে জাপানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। কিন্তু প্রশ্ন হলো, আমাদের সংস্কৃতি প্রচারের জন্য তেমন কোনো উদ্যোগ আছে কী? বাস্তবতা হলো, নিজেদের সংস্কৃতি বাইরে প্রচার তো দূরের কথা, উল্টো বাইরের সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের খদ্দের বনে গেছি আমরা।

রাজধানী ঢাকার বেশ কয়েকটি স্কুল ঘুরে দেখা চিত্র আসলেই উদ্বেগজনক। চার থেকে ১০ বছরের শিশুরা পুরো দস্তুর হিন্দিতে কথা বলতে পারে। এটি হয়েছে তাদের প্রিয় কার্টুন ডোরেমন দেখে। বাংলা ও ইংরেজি মাধ্যমের অন্তত ছয়টি স্কুল ঘুরে এ চিত্র মিলেছে। হিন্দি হয়ে যাচ্ছে শিশুর দ্বিতীয় ভাষা।

বাসায় তো ও হিন্দি বলেই, স্কুলেও অনেক সময় শিক্ষার্থীরা শিক্ষকদের সাথে হিন্দিতে কথা বলে। বাংলাদেশের চার থেকে ১২ বছর বয়সী এবং তারও উপরের দিকের শিশুরা খুব সাবলীলভাবেই হিন্দিতে ডোরেমন কার্টুনের গান গাইতে পারে। শুধু গানই নয়, শহর এবং মফস্বলের অনেক শিশুই হিন্দিতে কথা বলতে পারে সাবলীলভাবে । লালমাটিয়ার এক অভিভাবক জিনিয়া মাসুদ জানায়, ‘এটা আমাদের একটা জাতীয় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। অনেক শিশুই এখন বাসায়, বন্ধুদের সাথে এমনকি স্কুলেও হিন্দি ভাষায় কথা বলে।

ইংরেজি মাধ্যমে পড়াশোনা করা শিশুদেরও দ্বিতীয় ভাষা হয়ে উঠেছে হিন্দি। ’ দ্বিতীয় ভাষা হিসেবে শিশুরা স্কুলে ইংরেজি শিখছে। এরপর সে আবার কার্টুন দেখে হিন্দি ভাষা শিখছে । উল্লেখ্য যারা মুসলিমবিদ্বেষী, বিধর্মী তাদের অন্যতম অস্ত্র হলো, প্রচারযন্ত্র। এর নানাবিধ রূপ: পত্রিকা, পোস্টার, লিফলেট এবং হাল যামানায় তাদের টেলিভিশন সম্প্রচার।

বর্তমান যামানায় টেলিভিশন হলো তাদের মোক্ষম অস্ত্র। আর ভারতবর্ষে হিন্দুদের সাধারণ ভাষা হিন্দি। ফলে হিন্দি সিরিয়াল হয়ে উঠেছে হিন্দুত্ববাদ তথা মুসলিমবিদ্বেষী প্রচারযন্ত্রের প্রধান হাতিয়ার। হিন্দি সিরিয়াল প্রযোজকরা যেসব সিরিয়াল তৈরি করে, তাদের মধ্যে অন্যতম হলো ঐতিহাসিক তথা মিথ্যা ইতিহাসে ভরপুর কিছু সাম্প্রদায়িক নাটক। এ ভারতবর্ষে পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার সবচেয়ে বড় শত্রু ছিল পৃথ্বীরাজ, শিবাজী, মারাঠা, রাজপুতরা।

তারা হলো হিন্দুদের নায়ক। তাদের নামানুসারে তারা পৃথ্বীরাজ, চৌহান, ছত্রপতি শিবাজী, মারাঠা দ্য গ্রেট- এ ধরনের টাইটেলধারী টিভি সিরিয়াল তৈরি করে। সে সবের নায়ক যদি পৃথ্বীরাজ শিবাজীর ন্যায় চরিত্ররা হয়, খলনায়ক তথা ভিলেনটা কে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। “পৃথ্বীরাজ চৌহান” সিরিয়ালের ভিলেন হিসেবে দাঁড় করানো হয়েছে খোদ হযরত শিহাবুদ্দীন ঘোরী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে! নাঊযুবিল্লাহ এবং “ছত্রপতি শিবাজী” সিরিয়ালে বুযূর্গ ওলী এবং গোটা ভারতের বাদশাহ হযরত আলমগীর রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে। নাঊযুবিল্লাহ হিন্দুরা তাদের জন্ম থেকে উনাদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করে।

কিন্তু মুসলমানদের ঘরে যেসব শিশুরা আছে, তারা যদি এসব দেখে, শিশুদের কথা বাদই দিলাম, মুসলমানরাই যেখানে ইতিহাস জানে না, সেখানে এসব দেখে তারা কি শিখবে? তারা তাদের অস্তিত্বের শত্রুকে ভালোবাসতে শিখবে। নাঊযুবিল্লাহ! বিপরীতে তারা যাদের কারণে মুসলমান হতে পেরেছে, উনাদের ঘৃণা করবে। নাঊযুবিল্লাহ এটাই হিন্দুত্ববাদীদের কাম্য। কারণ তারা চায়, কোনো মুসলমান যেন ভারতবর্ষের মাটিতে টিকে না থাকে। যদি মুসলমানদেরকে তাদের মূল থেকে বিচ্যুত করা যায়, তাহলে তাদের এ উদ্দেশ্য সাধন করাটা কঠিন কিছু হবে না।

এখন মুসলমানদেরকেই ঠিক করতে হবে যে, তারা ভারতের বুকে টিকে থাকবে, না স্পেনের মুসলমানদের ন্যায় ধ্বংস হয়ে যাবে। হিন্দি সিরিয়ালের মূল দর্শক আমাদের দেশের গৃহিণীরা এবং তাদের সাথে তাদের সন্তানরা। যদিও হিন্দুধর্মে বিবাহ বিচ্ছেদ নেই, তবুও হিন্দি সিরিয়ালে দেখানো হয় হিন্দু মেয়েরা কিভাবে পোশাক বদলানোর ন্যায় স্বামী বদলিয়ে থাকে। যেমন- এ রকম দেখানো হয়, এক মহিলা প্রথমে একজন স্বামী গ্রহণ করে, তারপর তাকে তালাক দিয়ে অন্য স্বামী গ্রহণ করে, আবার দ্বিতীয় স্বামীকে তালাক দিয়ে প্রথম যে ছিল তাকে ফের বিয়ে করে। এই একই কাজ সে কয়েকবার করে! উদাহরণস্বরূপ কারো দুটো গাড়ি আছে, যখন যেটাতে খুশি সেটাতে চড়ল।

এর প্রভাব আমাদের দেশেও পড়েছে। গুলশান বনানী এলাকায় তালাকের মামলাগুলোর তিন চতুর্থাংশ করে থাকে মেয়েরা। হিন্দু সমাজের একটি সাধারণ বদ রসম হলো তাদের লম্পট অস্পৃশ্য দেবতা ছিঃ কৃষ্ণের অনুকরণে নিকটাত্মীয়দের সাথে দৈহিক সম্পর্ক রাখা। যেমন- দেবর ভাসুর জ্ঞাতি সম্পর্কিত (চাচাতো মামাতো) গোষ্ঠী। হিন্দি সিরিয়াল যাই প্রচার করুক না কেন, তাদের মূল উদ্দেশ্য হলো হিন্দুত্ববাদী চেতনাকে হিন্দু তো বটেই, মুসলমানদের মন-মগজেও গ্রথিত করা।

হিন্দি সিরিয়ালগুলো শুরু এবং শেষ হয় আবহসঙ্গীতে শঙ্খধ্বনি, মন্দিরের ঘণ্টাবাদ্য এবং ব্যাকগ্রাউন্ডে মঙ্গল প্রদীপ জ্বালানো দ্বারা। সিরিয়ালগুলো আধা ঘণ্টা করে হয়, এর পনেরো মিনিটই তারা মূর্তির চেহারার সামনে ক্যামেরা ধরে রাখে। এর প্রভাব আমাদের দেশে পড়ছে। প্রতিবছরই ব্যাঙের ছাতার মতো এদেশে ম-প-মন্দির বেড়েই চলেছে। কারণ আমাদের আশেপাশের লোকেরাই এগুলোর পৃষ্ঠপোষকতা করছে।

খোদ কুষ্টিয়ার ইসলামী ভার্সিটিতে এখন প্রশাসনের অর্থায়নে পূজা হচ্ছে। বিশেষ করে এদেশে এখন ম-পে লোক আকৃষ্ট হয় বলিউডের হিন্দি গান বাজিয়ে। তাছাড়া হিন্দু সমাজে একটি ঘরে নতুন বউকে বরণ করার কিছু আচারপ্রথা রয়েছে, যা একান্তই হিন্দুধর্মের নিজস্ব। যেমন- সদর দরজার নিচে রাখা একটি চালের ঘড়াকে লাথি দিয়ে মাটিতে চাল ফেলে নতুন ঘরে প্রবেশ করে। হিন্দি সিরিয়ালের অনুকরণে এসব পালন করছে আমাদের দেশের সিরিয়ালপাগল নারীরা।

(নাঊযুবিল্লাহ) তাছাড়া আরেকটি বিষয় হলো- এর ফলে মূর্তিপূজার প্রতি, শিরকের প্রতি মুসলমানদের যে সহজাত ঘৃণা থাকা উচিত, তা এখন উধাও হয়ে গিয়েছে! কিন্তু এগুলো দেখার ফলে যা হচ্ছে, আমাদের দেশের মেয়েদের কথা এবং পোশাক ভারতের মালউন নারীদের মতো হয়ে যাচ্ছে। কোনো খারাপ কিছু ঘটলে “হায় আল্লাহ পাক” না বলে “হায় ভগবান” বলাটা এখন ডাল-ভাত হয়ে দাঁড়িয়েছে। সিরিয়ালগুলোতে দেখানো হয়, একজন হিন্দু হাতজোড় করে আরেকজনকে সম্ভাষণ জানায় “জয় ছিঃ কৃষ্ণ” বলে। এখন মায়েদের সাথে তাদের শিশুরা এসব দেখে এবং তার অনুকরণ করে। এভাবেই কিন্তু স্পেনে মুসলমানদের পতন সূচিত হয়েছিল।

পাক ভারতের মুসলমানদের এখনো পায়ের তলায় মাটি আছে। সুতরাং তাদের এক্ষুনি সাবধান হওয়া উচিত। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, হিন্দিতে প্রচারিত জাপানি কার্টুন ডোরেমনের কুফল সম্পর্কে উদ্বেগ প্রকাশ করছেন ক্ষমতাসীন দলের সংসদ সদস্য শাহরিয়ার আলম। সংসদে তিনি স্পিকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে সিরিয়ালটি বন্ধের দাবি জানিয়েছেন। শিশুদের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে এর সম্প্রচার বন্ধ করা উচিত বলে তিনি মনে করেন।

তিনি বলেন, এই কার্টুন বাচ্চাদের হিন্দি আর মিথ্যা বলা ছাড়া কিছুই শেখাতে পারবে না। তার মতে এই কার্টুন বন্ধ না হলে বাংলা ভাষার চেয়ে হিন্দি বলা বেড়ে যাবে। যেসব চ্যানেল এই কার্টুন দেখাচ্ছে, সেগুলোর অনুমোদনও বন্ধ করার পক্ষে মত দেন তিনি। ওই সাংসদ আরও বলেন, এমন কার্টুন দেখাতে হবে যেগুলো বাচ্চাদের নৈতিক শিক্ষা দেয়। গত ৩ ফেব্রুয়ারি জাতীয় সংসদে এ বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে এই দাবি জানান।

তবে তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করে স্পিকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করলেও বিষয়টি জরুরি জনগুরুত্বপূর্ণ নোটিস হিসেবে গৃহীত হয়নি। অর্থাৎ হিন্দু আগ্রাসন এখন হচ্ছে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায়। এটা বন্ধ করতে হলে শতকরা ৯৭ ভাগ মুসলমানের পবিত্র ঈমানী জজবায় জেগে উঠার বিকল্প নেই। ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১৫ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.