আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

গ্রিসের নেতিবচক খেলাও রুখতে পারেনি আর্জেন্টিনাকে



সূত্রঃ বিডিস্পোর্টসনিউজডটকম শতভাগ সাফল্য নিয়েই শেষ ষোলতে পা রাখল ম্যারাডোনা-মেসির আর্জেন্টিনা। পুরো ৭৭ মিনিট অভেদ্য রক্ষাপ্রাচির গড়ে তুলে বারবার আর্জেন্টিনার অদম্য আক্রমনভাগকে রুখে দিয়েও শেষ পর্যন্ত ২-০ গোলে হারলো গ্রিস। আর্জেন্টিনার পক্ষে গোল করেছেন মার্টিন ডেমিকেলিস এবং মার্টিন পালের্মো। গ্রিসের দরকার ছিল একটা ড্র। গ্রুপের অপর দুই দল দক্ষিণ কোরিয়া আর নাইজেরিয়া ম্যাচটাও শেষ হয়েছে ড্র দিয়েই।

অটো রেহেগেলের বাজিটা তাই ভুল ছিলোনা মোটেই। আর্জেন্টিনাকে রুখে দিতে পারলেই দ্বিতীয় রাউন্ডে চলে যেতো গ্রিস। রেহেগেল তাই শুরু থেকেই গ্রিসকে খেলিয়েছেন পুরোপুরি রক্ষনাত্বক ভাবে। মাত্র একজন ফরোয়ার্ড রেখে প্রায় পুরো গ্রীক শিবিরই শিকড় গজিয়েছিলো রক্ষনভাগে, প্রাচীর গড়ে তুলেছিলো আর্জেন্টিনার আক্রমণের সামনে। প্রায় ৮/৯ জন্য খেলোয়াড়ের এই রক্ষনভাগ ভেদ করতে গিয়ে বারবার ব্যর্থ হয় আর্জেন্টিনা।

দ্বিতীয় রাউন্ড প্রায় নিশ্চিত হয়ে যাওয়ায় দক্ষিণ কোরিয়াকে গোল বন্যায় ভাসানো কম্বিনেশনও মাঠে নামাননি ম্যারাডোনা, সাইড ব্যাঞ্চে বসিয়ে রাখা অনেককেই দিয়েছেন সুযোগ। খেলাননি হিগুয়েনে, তেভেজকে। প্রথম ম্যাচে ব্যর্থ ভেরন’কে নামিয়েছেন, প্রথমবারের মতো খেলার সুযোগ পেয়েছেন প্রতিভাবান দিয়াগো মিলিতো। তবে গ্রিকদের রক্ষনাত্বক এবং গায়ের জোরের নেতিবাচক খেলায় প্রথমার্ধের খেলাতেই হতাশা দেখা দেয় আর্জেন্টাইন শিবিরে। ম্যাচে রেফারীংও ছিলোনা সন্তোষজনক।

এই বিশ্বকাপে যেখানে রেফারিরা কার্ড দেখানোতে রেকর্ড গড়তে যাচ্ছেন, এই ম্যাচের রেফারীকে ফাউল দিতেও দেখা গেছে কার্পণ্য করতে। প্রথমার্ধেই যেখনে গ্রিসের খেলোয়াড়রা করেছেন ১১টি ফাউল, সেখানে হলুদ কার্ডের সংখ্যা মাত্র ১টি। গ্রিসের রক্ষনভাগ খেলেছে পুরোপুরি মার্কিং করে, যেখানে ট্যাকলিং করে কাজ হয় নি সেখানে করেছেন ফাউল। আর্জেন্টিনার মূল খেলোয়াড় লিওনেল মেসিকে বারবার আছড়ে পরতে দেখা গেছে গ্রিসের সিমানায়। তার ওপর হঠাৎ হঠাৎ গ্রিসের কিছু বিচ্ছিন্ন আক্রমণ পাল্টা গোল খাওয়ার সম্ভাবনা জাগালে বেশ আগোছালোই মনে হতে থাকে আর্জেন্টাইন শিবিরকে।

এতকিছুর পরও ৭৭ মিনিট পর্যন্ত আর্জেন্টিনাকে ঠেকিয়ে রাখার পুরো কৃতিত্বটা আসলে প্রাপ্য গ্রিসের গোলরক্ষক আলেক্সান্দ্রোস যোর্ভাসের। গ্রিসের জমাট রক্ষনভাগ ভেদ করেও আর্জেন্টিনার খেলোয়াড়রা বেশ কয়েকবারই গোলের সম্ভাবনা জাগিয়েছেন, কিন্তু প্রতিবারই অসাধারণ সব সেইভ করে তাদের ব্যর্থ করে দেন যোভার্স। এক মেসিকেই তিনি গোল বঞ্চিত করেছেন তিনবার। এই সময়গুলোতে ভালোমতোই হিগুয়েনের অভাব অনুভূত হয়েছে। প্রথমবারের মতো সুযোগ পেয়ে একেবারেই ব্যর্থ হয়েছেন দিয়াগো মিলিতো, করেননি তার নামের প্রতি সুবিচার।

মেসি, ভেরনদের তৈরি করা সুযোগ গুলোতে ফিনিশিং টাচ দিতে বারবার ব্যর্থ হন তিনি। দক্ষিণ কোরিয়ার সাথে আগের ম্যাচে মেসির শট কোনমতে রুখে দিয়েও গোল হজম করতে হয়েছে কোরিয়ার গোলকিপারকে, কারণ মেসিকে রুখতে পারলেও যায়গা মতো দাঁড়িয়ে থাকা হিগুয়েনে দিয়েছেন ডেথ টাচ, এরকম কিছু সুযোগ এ ম্যাচেও তৈরি হলেও যায়গা মতো ছিলেনইনা মিলিতো। তবে ইংল্যান্ড-আলজেরিয়া ম্যাচে গোল করতে না পেরে শেষ পনেরো মিনিটে যে আগোছালো ফুটবল খেলে সমালোচিত হয়েছে ইংল্যান্ড, সেখানেই এগিয়ে রইলো আর্জেন্টিনা। গোল দিতে মরিয়া আর্জন্টিনা শেষের দিকে খেলা শুরু করে পরিকল্পনায় খানিকটা পরিবর্তন এনে। মেসি খেলতে থাকেন খানিকটা ওপরে উঠে।

রক্ষনভাগ প্রায় খালি রেখে সবাই উঠে আসেন ওপরে। মূহুর্মুহু আক্রমনের ফল আসে ৭৭ মিনিটে। আক্রমনভাগের সবাই যখন ব্যর্থ, গোল করে তখন আর্জেন্টিনাকে এগিয়ে দেন রক্ষনভাগের খেলোয়াড় মার্টিন ডেমিকেলিস। গোলের পরপরই মিলিতোকে তুলে নিয়ে নামানো হয় মার্টিন পালের্মোকে। গোল আর্জেন্টিনার খেলার প্রেরণা, তার প্রমান পাওয়া গেলো আবারো।

পুরো মাত্রায় উজ্জীবিত আর্জেন্টাইন শিবির গোল করার পর থেমে না গিয়ে আক্রমন চালাতে থাকে নতুন মাত্রায়। ৮৯ মিনিটে পালের্মো তাকে মাঠে নামানোর স্বিদ্ধান্তের সঠিকতা প্রমান করেন। গ্রিসের রক্ষনভাগের তিন জন খেলোয়াড়কে কাটিয়ে গোলমুখে করা তীব্র গতির শট ফিরিয়ে দিয়ে আরেকটা অসাধারণ সেইভ করেন যোভার্স, কিন্তু এবার মাঠে ছিলেন পালের্মো, মিলিতোর মতো ভুল করেননি তিনি, যোভার্সের ঠেকানো বল ঠেলে দেন গ্রিসের গোলমুখে। নিশ্চিত করেন প্রথম রাউন্ডে আর্জেন্টিনার শতভাগ সাফল্য। গ্রীক শিবিরে আলো ছড়িয়েছেন একমাত্র ঐ গোলকিপার যোভার্স।

একমাত্র ফরোয়ার্ড সামারাস গোল করার হাতেগোনা কিছু সুযোগ পেলেও মিস করেন সবগুলোই। ২ গোলে পিছিয়ে পরার পর শেষ কয়েক মিনিট পালটা আক্রমনের চেষ্টা করে গ্রিস। কিন্তু ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গেছে, রেহেগেলের আপাত সফল পরিকল্পনাই তখন গ্রিকদের জন্য মৃত্যুফাঁদ। হলোও তাই। গ্রুপের অপর ম্যাচে নাইজেরিয়ার সাথে ২-২ গোলে ড্র করে এবারের বিশ্বকাপে এশিয়ার প্রথম দল হিসাবে দক্ষিণ কোরিয়া চলে গেলো দ্বিতীয় রাউন্ডে।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.