আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

গল্প: আশৈশব অপছন্দের বাপজান - ৪

নিঃস্বার্থ মন্তব্যকে ধন্যবাদ, সাময়িক ভাবে আমি মন্তব্যে নেই
আমি বাসা থেকে আসার সময় মা'কে বলেছি, আমি ফ্রেন্ডের বাসায় থাকবো কিছু দিন । জরুরী কাজ । ঠিকানা বলিনি । আব্বার একটা শিক্ষা হোক । এভাবেই দুই মাস হয়ে গেছে ।

লাইফের সব নিয়ম কানুন বদলে গেছে । ভার্সিটিতে মিডটার্ম পরীক্ষা শুরু হচ্ছে । অথচ পড়া শুরু করি নি । বই যোগাড় হয় নি । ফটোস্ট্যাট করারও টাকা নাই ।

পরনের জামা ছিঁড়ে যাচ্ছে । চামড়ার স্যান্ডেলেরও তো একটা জান আছে! সকালের নাস্তাটা চলে যায় ঐ মধুর ক্যান্টিনে । দুপুরে ধারের উপর কলা-পাউরুটি দিয়ে চলি । আবার বাবু, যার কাছে ধার সাধারণত ধার পাই, প্রায় সময়ই দেশ থেকে টাকা আসতে দেরী হয় । মা'র কথা মনে হয় মাঝে মাঝে ।

মা কি কাঁদছে? কাঁদা স্বাভাবিক । আব্বা নাকি ইউনিভার্সিটিতে দুই বার খোঁজ করেছিল । খুজুক । ক্লাসে তো যাইই না । পাবে কী করে ।

যা হোক, পয়সা উপার্জনের একটা প্ল্যান ফাইনাল করলাম । জাসদের মিলন ভাই মার্কেট জরিপ করে গোল্ডলীফ সিগারেটের । সে বললো দিনে ২০০ টাকা করে দিতে পারবে । কাজ সোজা । দোকানে দাড়ায়ে থাকতে হবে ।

কেউ বিড়ি কিনতে আসলে বলতে হবে, আসসালামালাইকুম । একটু বিরক্ত করবো । বলে একটা সাদাপ্যাকেটের সিগারেট ফ্রী অফার করতে হবে ... এই জিনিসটা খেয়ে দেখবেন । কেমন লাগছে? ভাল? ১০ এর মধ্যে কত দিবেন? পড়াশোনা দরকার হলে বাদ! জুতা ব্রাস করে পেট চালাবো কিন্তু ঐ অমানুষ বাপের কাছে ফিরে যাব না । ......... রূমে ফিরে আসতেই ডাবলিং পার্টনার ইমদাদ বললো, চশমা পড়া একজন বয়স্ক ভদ্রলোক আপনার খোঁজে এসে বসেছিলেন অনেকক্ষণ ।

তারপর যাওয়ার সময় একটা এনভেলপ দিয়ে গেছে । স্নেহের ঝন্টু, তুমি দীর্ঘদিন ধরিয়া অভিমানে বাসা হইতে নিরুদ্দেশ । আমরা খুবই চিন্তিত। তোমার বন্ধু বান্ধবের কেহই জানেনা তুমি কোথায় থাকো । কি খাও ।

কি কর । তোমার মা কাঁদিতে কাঁদিতে শয্যাশায়ী । বাবারে, অভাব যে কী তুমি জানো না । তোমার দাদা মারা যাইবার পর ঢাকাই আসিয়া কষ্টে ছোট একটা চাকুরী যোগার করিয়াছিলাম । তোমরাতো দেখিয়াছ কত কষ্টে সংসার চালাইয়াছি ।

সেই জন্য তোমাকে খাই বা না খাই পড়াশোনা করাইতে চাহিয়াছি । তোমাকে মানুষ করিতে চাহিয়াছি । মনে রাখিও বিদ্যা বিফলে যায় না । সুলায়মান সাহেবের ছেলের নিকট তোমার এই ঠিকানা পাইয়া ছুটিয়া আসিলাম । পত্রে সহিত তিনশত টাকা রাখিয়া গেলাম ।

ভাল করিয়া খাওয়া দাওয়া কর । দয়া করিয়া পড়াশোনা নষ্ট করিও না । আর যত দ্রুত সম্ভব বাড়ি ফিরিয়া আস । পিতামাতা সর্বদা সন্তানের মঙ্গল চাহে। ইতি তোমার পিতা চিঠিটা পাওয়ার পর প্রথম বারের মত আমি বাবার জন্য প্রচন্ড কষ্ট অনুভব করলাম ।

সত্যিই তো আমি কখনই বাবার ভিতরের মানুষটিকে দেখতে চাইনি । অনেকক্ষণ একদৃষ্টে খোলা জানালার দিকে চেয়ে থাকলাম । কাপড় গোছাচ্ছিলাম দেখে ইমদাদ বললো, ঝন্টু ভাই, চলে যাচ্ছেন? আমি বললাম, হ্যা। (সমাপ্ত) = প্রথম পর্ব: Click This Link দ্বিতীয় পর্ব: Click This Link তৃতীয় পর্ব: Click This Link
 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

আমাদের কথায় যা দেখা হয়েছে

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.