নিঃস্বার্থ মন্তব্যকে ধন্যবাদ, সাময়িক ভাবে আমি মন্তব্যে নেই
আমি বাসা থেকে আসার সময় মা'কে বলেছি, আমি ফ্রেন্ডের বাসায় থাকবো কিছু দিন । জরুরী কাজ । ঠিকানা বলিনি । আব্বার একটা শিক্ষা হোক ।
এভাবেই দুই মাস হয়ে গেছে ।
লাইফের সব নিয়ম কানুন বদলে গেছে । ভার্সিটিতে মিডটার্ম পরীক্ষা শুরু হচ্ছে । অথচ পড়া শুরু করি নি । বই যোগাড় হয় নি । ফটোস্ট্যাট করারও টাকা নাই ।
পরনের জামা ছিঁড়ে যাচ্ছে । চামড়ার স্যান্ডেলেরও তো একটা জান আছে!
সকালের নাস্তাটা চলে যায় ঐ মধুর ক্যান্টিনে । দুপুরে ধারের উপর কলা-পাউরুটি দিয়ে চলি । আবার বাবু, যার কাছে ধার সাধারণত ধার পাই, প্রায় সময়ই দেশ থেকে টাকা আসতে দেরী হয় ।
মা'র কথা মনে হয় মাঝে মাঝে ।
মা কি কাঁদছে? কাঁদা স্বাভাবিক । আব্বা নাকি ইউনিভার্সিটিতে দুই বার খোঁজ করেছিল । খুজুক । ক্লাসে তো যাইই না । পাবে কী করে ।
যা হোক, পয়সা উপার্জনের একটা প্ল্যান ফাইনাল করলাম । জাসদের মিলন ভাই মার্কেট জরিপ করে গোল্ডলীফ সিগারেটের । সে বললো দিনে ২০০ টাকা করে দিতে পারবে । কাজ সোজা ।
দোকানে দাড়ায়ে থাকতে হবে ।
কেউ বিড়ি কিনতে আসলে বলতে হবে, আসসালামালাইকুম । একটু বিরক্ত করবো । বলে একটা সাদাপ্যাকেটের সিগারেট ফ্রী অফার করতে হবে ... এই জিনিসটা খেয়ে দেখবেন । কেমন লাগছে? ভাল? ১০ এর মধ্যে কত দিবেন?
পড়াশোনা দরকার হলে বাদ! জুতা ব্রাস করে পেট চালাবো কিন্তু ঐ অমানুষ বাপের কাছে ফিরে যাব না ।
.........
রূমে ফিরে আসতেই ডাবলিং পার্টনার ইমদাদ বললো, চশমা পড়া একজন বয়স্ক ভদ্রলোক আপনার খোঁজে এসে বসেছিলেন অনেকক্ষণ ।
তারপর যাওয়ার সময় একটা এনভেলপ দিয়ে গেছে ।
স্নেহের ঝন্টু,
তুমি দীর্ঘদিন ধরিয়া অভিমানে বাসা হইতে নিরুদ্দেশ । আমরা খুবই চিন্তিত। তোমার বন্ধু বান্ধবের কেহই জানেনা তুমি কোথায় থাকো । কি খাও ।
কি কর । তোমার মা কাঁদিতে কাঁদিতে শয্যাশায়ী ।
বাবারে, অভাব যে কী তুমি জানো না । তোমার দাদা মারা যাইবার পর ঢাকাই আসিয়া কষ্টে ছোট একটা চাকুরী যোগার করিয়াছিলাম ।
তোমরাতো দেখিয়াছ কত কষ্টে সংসার চালাইয়াছি ।
সেই জন্য তোমাকে খাই বা না খাই পড়াশোনা করাইতে চাহিয়াছি । তোমাকে মানুষ করিতে চাহিয়াছি । মনে রাখিও বিদ্যা বিফলে যায় না ।
সুলায়মান সাহেবের ছেলের নিকট তোমার এই ঠিকানা পাইয়া ছুটিয়া আসিলাম । পত্রে সহিত তিনশত টাকা রাখিয়া গেলাম ।
ভাল করিয়া খাওয়া দাওয়া কর । দয়া করিয়া পড়াশোনা নষ্ট করিও না ।
আর যত দ্রুত সম্ভব বাড়ি ফিরিয়া আস । পিতামাতা সর্বদা সন্তানের মঙ্গল চাহে।
ইতি
তোমার পিতা
চিঠিটা পাওয়ার পর প্রথম বারের মত আমি বাবার জন্য প্রচন্ড কষ্ট অনুভব করলাম ।
সত্যিই তো আমি কখনই বাবার ভিতরের মানুষটিকে দেখতে চাইনি । অনেকক্ষণ একদৃষ্টে খোলা জানালার দিকে চেয়ে থাকলাম ।
কাপড় গোছাচ্ছিলাম দেখে ইমদাদ বললো, ঝন্টু ভাই, চলে যাচ্ছেন?
আমি বললাম, হ্যা।
(সমাপ্ত)
=
প্রথম পর্ব: Click This Link
দ্বিতীয় পর্ব: Click This Link
তৃতীয় পর্ব: Click This Link
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।