আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মনজুর মেয়র নির্বাচিত



ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সমর্থিত নাগরিক কমিটির প্রার্থী এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীকে বিশাল ব্যবধানে হারিয়ে বন্দরনগরীর মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন বিরোধী দল বিএনপি সমর্থিত চট্টগ্রাম উন্নয়ন আন্দোলনের প্রার্থী এম মনজুর আলম। বৃহস্পতিবারের এ নির্বাচনে পরপর তিনবার মেয়র পদে বিজয়ী মহিউদ্দিনকে এক লাখ ৫ হাজার ৫১৮ ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করেছেন উত্তর কাট্টলি ওয়ার্ডের তিনবারের কাউন্সিলর মনজুর। শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ঘোষণা করা বেসরকারি ফলাফলে আনারস প্রতীক নিয়ে নগর সংস্থার সাবেক ভারপ্রাপ্ত মেয়র মনজুর আলম পেয়েছেন ৪ লাখ ৮৯ হাজার ১৪৫ ভোট। বিরোধী দলের প্রার্থী হিসেবে এর আগে দুইবার মেয়র হওয়া মহিউদ্দিন জাহাজ প্রতীকে ৩ লাখ ৮৩ হাজার ৬১৭ ভোট পেয়েছেন। চট্টগ্রাম এম এ আজিজ স্টেডিয়ামের জিমনেসিয়ামে স্থাপিত নির্বাচন কমিশনের অস্থায়ী কার্যালয় থেকে প্রার্থীদের এজেন্ট ও সাংবাদিকদের উপস্থিতিতে ফলাফল ঘোষণা করেন রিটার্নিং কর্মকর্তা জেসমিন টুলী।

তিনি জানান, সিসিসি নির্বাচনে ৫৪ দশমিক ৫০ শতাংশ ভোট পড়েছে। নির্বাচনে বৈধ ভোট পড়েছে ৮ লাখ ৮৫ হাজার ৬৪টি। বাতিল ও অবৈধ ভোটের সংখ্যা ৩৫ হাজার ৫০৬টি। নাগরিক কমিটির প্রার্থী মহিউদ্দিনের পক্ষে নির্বাচনী ফলাফল নিতে সেখানে উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেতা এসহাক মিয়া। মনজুরের পক্ষে ছিলেন তার প্রধান নির্বাচনী সমন্বয়ক বিএনপি নেতা আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী।

বৃহস্পতিবার রাতে ফলাফল ঘোষণার সময় মহিউদ্দিন ও মনজুর বিপুল সংখ্যক সমর্থক স্টেডিয়ামের বাইরে অবস্থান নেয়। তারা নিজেদের প্রার্থীর পক্ষে স্লোগান দিতে থাকে। এক পর্যায়ে মহিউদ্দিন ও মনজুর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ সময় পুলিশের দুটি মটরসাইকেল ও দুটি চায়ের দোকানে আগুন দেয় সংঘর্ষকারীরা। তারা ব্যালট ও পুলিশবাহী গাড়িসহ অন্তত ২০ গাড়ি ভাংচুর।

এতে একজন পুলিশ কর্মকর্তাসহ বেশ কয়েকজন আহত হয়। পরে রিটার্নিং কর্মকর্তার আহ্বান এবং পুলিশ, র‌্যাব ও সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। রাত সোয়া ১২টার দিকে মহিউদ্দিন কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে মিছিল সহকারে স্টেডিয়ামে প্রবেশ করেন। সেখানে তিনি সমাবেশ করে ভোট ডাকাতি হতে পারে আশঙ্কা করে এ ধরনের অপতৎপরতা ঠেকাতে কর্মী-সমর্থকদের প্রস্তুত থাকতে বলেন। ভোট ডাকাতি হলে পুরো চট্টগ্রাম ঘেরাও করে রাখার জন্য প্রস্তুত থাকার জন্য কর্মী-সমর্থকদের নির্দেশ দিয়ে ১টা ২০ মিনিটে স্টেডিয়াম ত্যাগ করেন মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মহিউদ্দিন।

এর আগে মনজুরের প্রধান নির্বাচনী সমন্বয়ক বিএনপি নেতা আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী দাবি করেন, বিপুল ভোটের ব্যবধানে মনজুর জিততে চলেছে। ভোটের ফলাফল বদলে দেওয়ার চেষ্টা চলছে। এ জন্য ভোটের ফলাফল ঘোষণা করতে দেরি করছে কমিশন। তবে তার এই অভিযোগকে 'ভিত্তিহীন' বলে নাকচ করে দেন নির্বাচন কমিশনার মুহাম্মদ ছহুল হোসাইন। বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায় শুরু হয় বন্দর নগরীর এই নির্বাচন।

বিকাল ৪টা পর্যন্ত একটানা ভোটগ্রহণ চলে। দু-একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া শান্তিপূর্ণভাবেই ভোটগ্রহণ শেষ হয়। এরপর শুরু হয় ভোট গণনা। তবে নির্বাচন কমিশনের অস্থায়ী কার্যালয় থেকে ভোটের ফলাফল ঘোষণা শুরু হয় সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার পর। রিটার্নিং কর্মকর্তা শুক্রবার বিকালে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে ফলাফল ঘোষণার কথা জানালেও মনজুরের এজেন্টরা তাতে রাজি না হয়ে ফলাফলের জন্য নির্বাচন কমিশনের অস্থায়ী কার্যালয়ে অপেক্ষা করতে থাকেন।

এবারই প্রথম চট্টগ্রাম নগরীর জামাল খান ওয়ার্ডের ১৪টি কেন্দ্রে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে ভোট নেওয়া হয়। ভোটগ্রহণের সময় পোলিং এজেন্টদের বের করে দেওয়ার অভিযোগ করেন মহানগর বিএনপির সভাপতি ও দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য আমীর খসরু। তার এই অভিযোগ নাকচ করে দিয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এটিএম শামসুল হুদা বলেন, নির্বাচন শান্তিপূর্ণ হয়েছে। ভিডিও ফুটেজ দেখে কেন্দ্র থেকে মনজুর পোলিং এজেন্টদের বের করে দেওয়ার সত্যতা পাওয়া যায়নি। তিনি বলেন, তারা ছয়টি অভিযোগ পেয়েছেন।

তাৎক্ষণিকভাবে সেগুলোর বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। মেয়র পদের অপর পাঁচ প্রার্থী ছিলেন- সৈয়দ সাজ্জাদ জোহা, মোহাম্মদ ইব্রাহীম, জানে আলম, মোফাজ্জল হোসেন ভূইয়া ও রফিকুল আলম। মহাজোটের অন্যতম শরীক জাতীয় পার্টির (এরশাদ) মেয়র প্রার্থী আওয়ামী লীগ নেতা মহিউদ্দিনের পক্ষে সমর্থন ঘোষণা করলেও প্রার্থিতা প্রত্যাহার না করায় ব্যালটে থেকে যায় সোলায়মান আলম শেঠ-এর নাম। ২০০৫ সালের ৯ মে সর্বশেষ সিসিসি নির্বাচনে বিএনপি নেতা মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দিনকে হারিয়ে মেয়র নির্বাচিত হন মহিউদ্দিন। তিনি এর আগে ১৯৯৯ সালে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় মেয়র নির্বাচিত হন।

আর ১৯৯৪ সালে ক্ষমতাসীন দল বিএনপি সমর্থিত মীর নাছিরকে হারিয়ে প্রথমবারের মতো বন্দরনগরীর মেয়র নির্বাচিত হন। মহিউদ্দিনের এক সময়ের ঘনিষ্ঠজন মনজুর আলম ১৯৯৪ সাল থেকে তিনবার নগরীর উত্তর কাট্টলী ওয়ার্ড থেকে কাউন্সিলর নির্বাচিত হন। এ নির্বাচনে বিএনপি ছাড়াও মনজুর আলমকে সমর্থন দেয় জামায়াতে ইসলামী। মনজুরের সমর্থনে প্রার্থী প্রত্যাহার করে দলটি। এছাড়া আরো আটটি দল ও সংগঠন মনজুরকে আনুষ্ঠানিকভাবে সমর্থন জানায়।

নির্বাচন উপলক্ষে চট্টগ্রাম মহানগরীতে বৃহস্পতিবার ছিলো সরকারি ছুটি। ভোটকেন্দ্রসহ নির্বাচনী এলাকায় সেনাবাহিনীসহ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রায় ২০ হাজার সদস্য নিয়োজিত আছে। চট্টগ্রাম নগরীর সর্বশেষ তালিকায় মোট ভোটার সংখ্যা ১৬ লাখ ৯৪ হাজার ৯৫৫। নির্বাচনে একটি অস্থায়ী কেন্দ্রসহ মোট ভোট কেন্দ্র ছিলো ৬৭৪টি; ভোট কক্ষ ৪ হাজার ৭৪৮টি। ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা ছিলেন ১৪ হাজার ৯১৮ জন।

এর মধ্যে প্রিসাইডিং কর্মকর্তা ৬৭৪ জন, সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তা ৪৭৪৮ জন এবং পোলিং কর্মকর্তা ৯৪৯৬ জন। ১৫ জুন মধ্যরাতে এ নির্বাচনের প্রচারণা শেষ হয়। ১৬ জুন মধ্যরাত থেকে অনুমোদিত ছাড়া সব ধরনের যান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। এর আগে ১৪ জুন থেকে মটরসাইকেল চলাচলেও নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হয়।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.