আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

Common Face



শুরুতেই বাংলা ব্লগে ইংরেজী শিরোনাম দেয়ার জন্য ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। কমন ফেস এর বাংলা করলে দাঁড়ায় সাধারণ চেহারা। সাধারণ চেহারা কথাটার মধ্যে ঠিক ঐ ভাবটা প্রকাশ পায় না যেটা কমন ফেস কথাটার মধ্যে আসে। আমার চেহারাটা খুব কমন। এটা প্রথম টের পাই ক্লাস সিক্সে থাকতে।

আম্মার এক বান্ধবীর বাসায় সবাই মিলে বেড়াতে গিয়েছিলাম। ওখানে খালার এক ভাতিজী ছিল আমার বয়সী। সে প্রথম থেকেই আমার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে, কিছু বলছে না। খালার মেয়েদের (ওরা আমার চেয়ে ছোট) সাথে গল্প-গুজব করছি, এক সময় সেও এসে গল্পে যোগ দিল। একটু সহজ হবার পর বলল, আচ্ছা তুমি কোন স্কুলে পড়।

আমি স্কুলের নাম বলার পর একটু যেন হতাশ হল। পরে বলল, জানো আমাদের স্কুলে আমার এক ক্লাস উপরে একটা মেয়ে পড়ে, একদম তোমার মত চেহারা। একদম আমার মত চেহারার মেয়েটাকে দেখতে খুব ইচ্ছা হল, কিন্তু আফসোস দেখা হল না। ক্লাস নাইনে থাকতে খবরের কাগজে কিছু কুইজে অংশ নিয়েছিলাম। ওখানে বেশ কয়েকবার আমার ছবিও দেয়া হয়েছিল।

একদিন একটা চিঠি আসল। একজন লিখেছে যে খবরের কাগজে আমার ছবি দেখে সে আর তার মা চোখের পানি ধরে রাখতে পারেনি, কারণ আমার চেহারা একদম তার ছোট বোনের মত, যে কয়েক বছর আগে সবাইকে ছেড়ে চলে গেছে। একেও দেখতে পেলাম না। মেডিকেলে থাকতে বায়োকেমিস্ট্রি ল্যাবের এক মামা একবার আমার দেশ কোথায় জানতে চেয়েছিল। পরে বলল, জানেন আমার একটা ফুফাত বোন আছে একদম আপনার মত দেখতে, উনি অবশ্য আপনার চেয়ে বয়সে অনেক বড়, বাচ্চা-কাচ্চা আছে, আপনাকে দেখলে আমার ঐ আপার কথা মনে হয়।

এই আপার সাথেও (নাকি খালা বলব) আমার দেখা হল না। ইন্টার্নশিপের সময় বেশ কিছু রোগী বা রোগীর আত্মীয়ের কাছে এমন শুনতে হয়েছে যে আমার চেহারা তাদের অমুক আত্মীয়ের মত, আশ্চর্য মিল নাকি। অবশ্যই কারুর সাথেই আমার দেখা হয়নি। এখনও মাঝে মাঝে কিছু রোগীর কাছে এমন কথা শুনতে হয়। নাহ, দেখা হয়না কারুর সাথেই।

আমার মত চেহারার এত মানুষ আছে পৃথিবীতে, কাউকেই কি দেখব না? লেখাটা এখানেই শেষ করা যেত, কিন্তু একটু বাকী থেকে গেল যে। একবার আমার এক বান্ধবীর এক আত্মীয়া অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। বান্ধবীর সাথে আমিও তাকে দেখতে গেলাম। তার সাথে কথাবার্তা বলছি, একটু পর তার হাজব্যান্ড এলেন। এসেই বললেন, কি রে তুই কখন আসলি? বুঝলাম না, কাকে বললেন উনি কথাটা।

পরে তার স্ত্রী বললেন, তুমি কাকে কী বল, ও তো তোমার ভাগ্নী না। ভদ্রলোক খুব অবাক হয়ে তাকালেন আমার দিকে। পরে হেসে দিয়ে সরি বললেন। আরেকদিন এই বান্ধবীরই আরেক আত্মীয়ের বাসায় গিয়েছি, দরজায় নক করার সময় সেই ভদ্রলোকও আসলেন। আমাকে দেখেই উনার মুখ দিয়ে বের হয়ে গেল, কি রে তোর ক্লাস নেই? এত তাড়াতাড়ি বাসায় আসলি যে? আমি এবারও বোকার মত তাকিয়ে রইলাম।

আমার বান্ধবী বলল, ভাইয়া এটা আমার বান্ধবী যাকে এর আগে একদিন হাসপাতালে দেখেছিলেন। উনি আবারও অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলেন আমার দিকে, এবার সরি বলতেও ভুলে গেলেন। জ্বী, এই ভাগ্নীটার সাথে আমার দেখা হয়েছে, বেশ কয়েকবারই হয়েছে । হুবহু না হলেও আমাদের চেহারার মিল তো আছেই। শুধু একটা বড় পার্থক্য হল, ভাগ্নীটা তালগাছ আর আমি বেগুন গাছ।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।