আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ওয়ান গোল-এডুকেশন ফর অল........ অনুগল্প!


এক. মূলতঃ ক্যাচাল-টা বাঁধিয়েছে আর্জেন্টিনার সাপোর্টাররা। অলিখিত নিয়ম অনুযায়ী সাধারণতঃ প্রতি মাসের শেষ দিন হলের ডাইনিং-এ মান্থলি ফিস্ট (মাসিক ভোজ) দেয়া হয়। হল ডাইনিং-এর এ'মাসের মেস ম্যানেজার আর্জেন্টিনার সাপোর্টার। কায়দা করে..... যেদিন আর্জেন্টিনার প্রথম ম্যাচ, নাইজেরিয়ার সাথে, সেইদিন-ই ডাইনিং-এ মাসিক ভোজ-এর আয়োজন করেছে সে.. তা-ও আবার হাফ মুরগীর রোষ্ট! ব্রাজিলের সাপোর্টারদের অভিযোগ .... ''নিজের পয়সায় ফিস্ট খাও, আর্জেন্টিনার গান গাও''.... এটা হতে পারেনা! তুমুল হৈ চৈ... প্রতিবাদ! ব্রাজিল সমর্থকদের পক্ষ থেকে হল প্রভোষ্টের বরাবরে প্রতিবাদলিপি দেয়া হয়েছে......পাল্টা প্রোগ্রাম ঘোষণা করা হয়েছে, গরু মেরে ব্রাজিলের বিশ্বকাপ বিজয় উৎযাপন করা হবে এবার। দুই. আজ ব্রাজিলের প্রথম ম্যাচ... উত্তর কোরিয়ার সাথে।

ব্রাজিল সমর্থকরা যার পর নাই ব্যস্ত। সামনে থেকে ব্রাজিল সমর্থক গোষ্ঠির নেতৃত্ব দিচ্ছেন বদরুল ভাই। থার্ড ইয়ার পর্যন্ত পাড় করতেই বদরুল ভাই ছয় বছর লাগিয়ে দিয়েছেন। প্রতি ক্লাশেই দম নিয়ে নিয়ে পাড় করছেন তিনি। হলের যে কোন অনুষ্ঠানে, সহপাঠীর বিপদে আপদে,.... কিংবা রোকেয়া হল ফ্যান ক্লাব কমিটি মনোনয়নে......সর্বাগ্রে থাকেন তিনি।

হলে অতি পরিচিত মুখ... এহেন বদরুল ভাই-কে সবাই যেমন ভালবাসেন, তেমনি তাঁকে নিয়ে ফান করতেও ছাড়েনা কেউ। ব্রাজিল সমর্থক গোষ্ঠির ব্যনারে বকশীবাজারের এক কসাই-এর কাছ থেকে ৬০০ টাকায় তিন ঘন্টার জন্য একটা গরু ভাড়া করে আনা হয়েছে। ব্রাজিল বিশ্বকাপ জিতলে গরু খাওয়ানো হবে.... সেই প্রোগ্রামের আগাম মহড়া হবে আজ... তারপর বর্ণাঢ্য রেলী শেষে থাকছে ব্রাজিলের পতাকা উত্তোলন অনুষ্ঠান। গরুর গলায় মালা দিয়ে... ব্রাজিলের পতাকা হাতে নিয়ে... ব্রাজিল ব্রাজিল ধ্বনি তুলে গরুসহ গোটা হল প্রদক্ষিণ করলো ব্রাজিল সমর্থক গোষ্ঠি। মিছিলের সর্বাগ্রে বদরুল ভাই.....তাঁরও সামনে হল ক্যান্টিনের বয়দের একটি ক্রেজি অংশ...তাঁদের সবার গায়ে ব্রাজিল সমর্থক গোষ্ঠির দেয়া হলুদ-সবুজ টি-সার্ট ! এরপর হলের কোরিডোরে কোরিডোরে ঢোল-ডাগর, ঘটি-বটি নিয়ে চলতে থাকলো ব্রাজিলীয় সাম্বা নৃত্যের বাংলা সংস্করণ।

সুযোগ বুঝে তিন তলার বারান্দা থেকে জনৈক আর্জেন্টাইন সমর্থক এক বালটি পানি ছুঁড়ে মাড়লো ব্রাজিল সমর্থকদের মিছিলে। .... আর যায় কোথায়!?...ধর ধর... হুটোপাটা..গালাগালি!... পরিস্থিতি সামাল দেবার জন্য একটা চেয়ারের উপর দাঁড়িয়ে বক্তৃতা শুরু করে দিলেন বদরুল ভাই...'' পানি মেরে ব্রাজিলের জয়... বন্ধ করা যাবেনা...''। বদরুল ভাইয়ের নেতৃত্বের প্রতি পূর্ণ আস্থা জানিয়ে ব্রাজিলের সমর্থকরাও সমস্বরে স্লোগান দিল...'' বদরুল ভাইয়ের রক্ত... লোহার মত শক্ত!'' বদরুল ভাই-ও হাত নেড়ে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে ঘোষণা দিলেন.... রোকেয়া হলের সাথে সম্পর্ক উন্নয়নের লক্ষ্যে ব্রাজিল সমর্থক গোষ্ঠির উদ্যোগে অচিরেই সোহরাওয়ার্দী হল থেকে রোকেয়া হল পর্যন্ত ফ্লাইওভার নির্মাণ প্রকল্প হাতে নেয়া হবে!!!.... সকলেই উচ্চস্বরে ধুঁয়া তুলে এই প্রস্তাবে সমর্থন জানালো। তিন. এরপর পতাকা উত্তোলন অনুষ্ঠান। হলের ছাদের উপর পানির ট্যাংক... সেই ট্যাংকের উপর বাঁশের আগায় আর্জেন্টিনার পতাকা উড়ছে।

হলের বিভিন্ন কোনায় কোনায় ইতিমধ্যেই ব্রাজিল আর্জেন্টিনার পতাকা শোভা পাচ্ছে। কিন্তু ব্রাজিল সমর্থকদের মনবাসনা...আর্জেন্টিনার পতাকার-ও উপরে ব্রাজিলের পতাকা উড়াতে হবে। পলাশীর মোড়ে সোহরাওয়াদী হলের যে পকেট গেট-টা রয়েছে...তার পাশেই শতবর্ষী বিশাল কড়ই গাছ...ঠিক হয়েছে সেই গাছের মাথায় উড়ানো হবে ব্রাজিলের পতাকা। কড়ই গাছের মগডালে উঠে ব্রাজিলের পতাকা স্থাপনের মহান দায়িত্ব দেয়া হলো হলের ক্যান্টিন বয় জহির-কে। কিশোর জহিরেরও উৎসাহে কমতি নেই! তরতর করে গাছ বেয়ে উঠতে লাগলো জহির।

গাছের নীচে ব্রাজিল সমর্থকদের জটলা.... তখনও চলছে সাম্বা নৃত্য আর ভুভুজেলা-সম ক্যাওয়াজ!... তারপর চিৎকার...ধুপ করে একটা শব্দ!...হঠাৎ সব চুপ.... স্তব্ধ! মাই গুডনেস, হে ভগবান!.... জহির পড়ে আছে মাটিতে....রক্তাক্ত..অচেতন! চার. গোটা বিশ্ববিদ্যালয় ছেয়ে গেছে হাতে লেখা পোস্টারে... ক্যান্টিন, ডাইনিং, ক্যাফেটেরিয়া... ডিপার্টমেন্টে ডিপার্টমেন্টে...লবিতে লবিতে সব পোস্টার! ভেদাভেদ ভুলে সব এক কাতারে... 'জহিরকে বাঁচাতে এগিয়ে আসুন সাহায্যের হাত বড়িয়ে দিন' প্রচারে....ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা যৌথ সমর্থক গোষ্ঠি কেন্দ্রীয় ক্যাফেটেরিয়ার সামনে এমনি এক পোষ্টারের নীচে ছোট্ট করে লিখে গেছে কোন এক সুহৃদ.... ''ওয়ান গোল....এডুকেশন ফর ক্রেজি ফুটবল সাপোর্টার্স!'' (অফ টপিকঃ সম্প্রতি এক সড়ক দূর্ঘটনায় বুয়েট ছাত্র সম্রাট নিহত হন। ওই দূর্ঘটনার পর বিক্ষুব্ধ ছাত্ররা পলাশীর মোড়ে গাড়ী ভাঙচুর করার সময় একটি পলায়নরত বেপড়োয়া গাড়ীর ধাক্কায় মারাত্মকভাবে আহত হয় বুয়েট সেন্ট্রাল ক্যাফেটেরিয়ার বয়... জহির (১৭)। ইতিমধ্যেই ঢাকা মেডিকেলে জহিরের পায়ের অস্ত্রপচার হয়েছে। অসহায় এই ছেলেটি বর্তমানে বুয়েট ক্যাফেটেরিয়ার অংশ, ডেল-ক্যাফের মেঝেতে শুয়ে কাঁতরাচ্ছে। জহিরের চিকিৎসার জন্য সহায়তা প্রয়োজন।

যোগাযোগ করতে পারেন- প্রকৌঃ আদনান, পুরকৌশল, ব্যাচ-০৪; কন্টাক্ট নম্বর - ০১৬৭২৮২৯৯৩৩)
 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.