আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

নামহীন কৈশোর ( গল্প )

অচেনার মাঝেও নিজেকে চেনার নিঁখুত অভিনয় করি

ডয়েরীটার দিকে বিরক্ত হয়ে তাকাচ্ছে আনিকা। কাল রাতে ডায়েরী লিখেছিল। নিজের লেখাগুলো পড়ে নিজেরই বিরক্ত লাগছে। আবার পড়ল। মনে হচ্ছে না কথাগুলো নিজে লিখেছে।

অন্য কোন মেয়ে যেন লিখেছে। কিন্তু লেখাগুলো যে ওর নিজেরই এটাই সমস্যা। গুটানো অক্ষরে লেখা। ইচ্ছা হচ্ছে ডায়েরীর পাতাটা ছিড়ে ফেলতে। তারপর কুচিকুচি করে ছিড়ে ফেলে দিতে।

ওদের ক্লাসে রুবি কাগজ ছিড়ার ব্যাপারে ওস্তাদ। কাগজ ছিড়তে খুব মজা পায়। ওর কাজই যেন কাগজ ছিড়া। কাগজ ছিড়ে সেগুলো কারো মাথার উপর ছিটিয়ে দিয়ে বলে কি মজা কি মজা তোর বিয়া। এই পর্যন্ত আনিকারও বেশ কয়েকবার বিয়ে দিয়ে দিয়েছে রুবি।

মানুষের বিয়ে সাধারণত একবার হয়। কিন্তু আনিকা একইজনের বিয়ে বার বার দেয়। সেদিন বলেছিল ব্যাপারটা। রুবি কাগজ ছিড়ছে টের পায় আনিকা। কার মাথায় দেবে কে জানে।

আচ্ছা রুবি মানুষের তো বিয়ে হয় একবার তুই এতবার বিয়ে দিস কেন? রুবি কুচি কুচি কাগজ গুলো আরো কুচি কুচি করে। বলে, আরে আমি এতজনকে কোথায় পাবো? কিন্তু আমার যে প্রতিদিন বিয়ে দিতে ইচ্ছা হয়। বাহিরে গিয়ে তো অপরিচিত কারো মাথায় কাগজ ঢেলে বিয়ে দিতে পারি না। না কি সেটা করতে বলিস? গণধোলাই দিবে তাহলে। আমাকে বাঁচাতে গিয়ে তোরাও মাইর খাবি।

লীনা বলে উঠে, আমাদের বয়ে গেছে তোকে বাঁচাতে। আমরা তোকে রেখে পালিয়ে যাবো। কেউ যদি জিজ্ঞেস করে এই কে? বলব, চিনি না। ওরে জীবনেও আমরা দেখি নাই। বলে হেসে ফেলে।

রুবির লীনার মাথার উপর কাগজের টুকরা গুলো ছড়িয়ে দিয়ে বলে, আমি তো জানি তোরা পালাবি। এজন্যই তো সাহস করি না। না হলে কতজনের মাথায় কাগজ ঢেলে দিতাম। যা আজ অন্যজনের মাথায় ঢালার কথা ছিল। তুই সত্য কথা বলছিস তাই তোকে বিয়ে দিয়ে দিলাম।

হে হে করে হেসে দেয় রুবি। রুবি সাথে অন্যরাও হেসে উঠে। লীনা উঠে গিয়ে রুবিকে আক্রমণ করতে যায়। রুবি পিছনের দরজা দিয়ে বের হয়ে যায়। ক্লাস রুমে দুইটি দরজা।

লীনা এক দরজায় গেলে রুবি অন্য দরজায় চলে যায়। লুকোচুরি চলে ওদের মাঝে। রুবিকে ধরতে পারলে খবর আছে। লীনা যে হারে চিমটি মারতে পারে একেবারে টন টন করে। লীনা বান্ধবীদের মাঝে প্রকাশ্যে ঘোষণা দিয়ে দিয়েছে, আমি আমার হাসবেন্ডকে বিয়ের প্রথম দিন থেকে চিমটি খাওয়ায় অভ্যস্ত করে ফেলবো।

আমার স্বামী হওয়ার জন্য অত্যাবশ্যক হয়ে যে গুণ থাকতে হবে তা হচ্ছে নীরবে নিরীহ চিমটি খেতে পারা। রুবি আঁতকে উঠে। কি বলিস, বেচারা চিমটি খাবে। আর তোর চিমটি গুলো কি ভয়ংকর। সে চিমটি খেয়ে ব্যথা পেয়ে চিল্লাইতেও পারবে না? চিল্লাতে অল্প পারবে।

আস্তে আস্তে। অন্যরা যাতে না শুনে। আমি শুধু শুনব। -তুই শুনে লাভ কি? - আরে আদর করে দিবো না! আহারে জামাইকে আদর করার কি শখ। কবিতা চুক চুক করে বলে।

মেয়েটা এম্নে চুপচাপ থাকে। হঠাৎ করে এমন কিছু বলে যে সবাই হেসে উঠে। শেষ পর্যন্ত লীনার কাছে রুবিকে ধরা দিতেই হয়। যা হওয়ার তাই হয়। একটা চিমটি খেয়ে উহ করে উঠা।

লীনার সাথে কারো ঝামেলা হলে এই জিনিষটা অত্যাবশ্যক। সামনে এসএস সি দিবে। রাতে ডায়েরী নিয়ে বসা। প্রতিদিন লেখা হয় না। মাঝে মাঝে ইচ্ছা হলে লিখে।

তা আনিকা বসল। বান্ধবীদের সাথে আর স্কুলে ক্লাস করা হবে না। বান্ধবীদের নিয়ে কিছু লিখবে ভেবেই লিখতে বসা। কিন্তু লেখার পর দেখে বান্ধবীদের কোন নাম পর্যন্ত নাই। সব শাহাদাৎ স্যারকে নিয়ে লেখা।

শাহাদাৎ স্যার বাংলা পড়ান। খুব সুন্দর করে পড়ান। পড়ার মাঝে মাঝে গল্প বলেন। কেউ দুষ্টামি করলে মানা তো করেনই না। পারলে নিজেই যোগ দেন।

শাহাদাৎ স্যারকে অনেক ভাল লাগে। এই ক্লাসটা কেউ মিস করতে চায় না। যেদিন কোন অনুষ্ঠানের জন্য স্যারের ক্লাস মিস হয় খুব খারাপ লাগে। যত সুন্দর অনুষ্ঠানই হোক না কেন একটু ভাল লাগে না। দুই পৃষ্ঠা লিখেছে।

দেখে সব শাহাদাৎ স্যারকে নিয়ে। স্যারকে ভাল লাগতেই পারে। তাই বলে বান্ধবীদের বাদ দিয়ে স্যারকে নিয়ে লিখবে কেন? ব্যাপারটা যত চিন্তা করছে তত বিরক্ত বাড়ছে আনিকার। আজ কোচিং ক্লাস আছে। শাহাদাৎ স্যারের ক্লাস আছে একটা।

কিন্তু যেতে ইচ্ছা করছে না। কারন কি?

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।