এমন দেশটি কোথাও খুঁজে পাবে নাকো তুমি, সকল দেশের রাণী সে যে আমার জন্মভূমি
মেইড ইন বাংলাদেশ লেখা পোশাক বিশ্বকাপের মাঠে। ১৩ লাখ খেলাপ্রেমী মানুষের গায়ে উঠবে ওই পোশাক। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে দক্ষিণ আফ্রিকায় খেলা দেখতে আসা ও বিভিন্ন দলের সমর্থকসহ অন্যরা পরবেন বাংলাদেশের তৈরী পোশাক।
ফিফার অনুমোদিত ফ্যাক্টরি বাংলাদেশের ইপিলিয়ন গ্রুপ ওই সব জার্সি, গেঞ্জি, ট্র্যাকস্যুট তৈরি করে পাঠিয়েছে সে দেশে। ফিফা কর্তৃপক্ষ তাদেরকে অর্ডার দিয়ে তৈরি করিয়েছে ওই সব পোশাক।
ওগুলোতে বাংলাদেশ লেখার পাশাপাশি ফিফার লেবেল লাগানো আছে। বিশ্বকাপে অংশ নেয়া ৩২টি দেশের জার্সির অনুকরণে ভক্ত-সমর্থকদের জন্য জার্সি তৈরি করা হয়েছে। প্রথম দিনে দক্ষিণ আফ্রিকা ও মেক্সিকোর সমর্থকরা ওই পোশাক পরবেন। এর পাশাপাশি অন্য দেশের সমর্থকরাও পরবেন ওই পোশাক। এছাড়া বাংলাদেশ থেকে টুপি, মোজাসহ অন্যান্য স্পোর্টস সামগ্রীও গেছে বিশ্বকাপে।
গত দুই বিশ্বকাপেও বাংলাদেশের গার্মেন্টস শিল্প প্রতিষ্ঠানের মালিকরা জার্সিসহ বিভিন্ন পোশাক তৈরি করে পাঠিয়েছে। ইপিলিয়ন গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রিয়াজ উদ্দিন আল মামুন বলেন, আমরা বিপুল সংখ্যক পোশাক বিশ্বকাপের জন্য তৈরি করতে পেরেছি- এতে ভীষণ আনন্দ হচ্ছে। আমরা যে মানের পোশাক তৈরি করছি তাতে ফিফা কর্তৃপক্ষ খুশি। তারা ভবিষ্যতে আমাদেরকে আরও কাজ দেবে বলে আমরা আশাবাদী। বিজিএমইএ জানায়, বিশ্বকাপে পোশাক তৈরি করে পাঠানোর ঘটনায় বাংলাদেশের সুনাম বৃদ্ধি পেয়েছে।
আমাদের গার্মেন্টস শিল্প ব্যাপক প্রশংসা পেয়েছে। পাশাপাশি আয় হয়েছে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা। কেবল বিশ্বকাপ নয়, অন্যান্য খেলার জন্যও বাংলাদেশ জার্সিসহ খেলার যাবতীয় পোশাক রপ্তানি করতে সক্ষম।
বিজিএমইএ’র প্রেসিডেন্ট সালাম মুর্শিদী বলেন, বাংলাদেশ থেকে বিশ্বকাপের জন্য বিপুল পরিমাণ পোশাক সরবরাহ করা হয়েছে। এতে আমরা একদিকে যেমন ব্যবসা পেয়েছি অন্যদিকে বাংলাদেশের পোশাক শিল্পে এর ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে।
আমাদের ভাল লাগছে এ কারণে, বিভিন্ন দেশের সমর্থক, দর্শকরা বাংলাদেশের তৈরী পোশাক পরবেন। ফিফা কর্তৃপক্ষসহ বিশ্বকাপের সঙ্গে জড়িতরা জানলেন বাংলাদেশের পোশাকের কথা। তারা ভবিষ্যতে আরও অর্ডার দেবেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশ থেকে পোশাক নিলে খরচ পড়ে কম। আমাদের এখানে শ্রমের মজুরি কম।
এছাড়া বিশ্বের যেসব দেশ উন্নত মানের পোশাক তৈরী ও রপ্তানি করে বাংলাদেশ সেগুলোর একটি। এ কারণে অন্যান্য দেশের তুলনায় কম খরচে ভাল মানের পোশাক আমাদের এখানকার প্রতিষ্ঠানগুলো তৈরি এবং সরবরাহ করেছে। অর্ডার বেশি হলে ভবিষ্যতে আরও কম খরচে তৈরি করার চেষ্টা করবে। তিনি বলেন, বিশ্বকাপের মতো আন্তর্জাতিক আসরের কাজে ব্যবসা বা লাভ করার চেয়ে কাজ করাটাই বড়। এতে দেশের পোশাক শিল্পের সুনাম বাড়ানোর পাশাপাশি দেশের জন্য নাম অর্জন করারও একটি সুযোগ থাকে।
নতুন নতুন বাজার তৈরিরও সম্ভাবনা থাকে।
বিজিএমইএ সূত্র জানায়, বাংলাদেশ থেকে এবার প্রচুরসংখ্যক জার্সি, টুপি, হাফপ্যান্ট, ট্র্যাকস্যুট, গেঞ্জি রপ্তানি হয়েছে বিশ্বকাপের জন্য। এর জন্য বেশি কাজ করেছে ইপিলিয়ন গ্রুপ। তারা জার্সি, গেঞ্জি, ট্র্যাকস্যুট তৈরির কাজ করে। অ্যারো এ্যাপারেলস তৈরি করেছে টুপি।
কেবল বিশ্বকাপ উপলক্ষেই নয় বিভিন্ন সময়েই স্পোর্টসের আইটেম বাংলাদেশ থেকে পাঠানো হয়। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি যায় নাইক, রিবোক, ফোমা, এডিডাসসহ বিভিন্ন ব্র্যান্ডের গেঞ্জি, মোজাসহ বিভিন্ন স্পোর্টসের পোশাক। ওই সব কোম্পানির কাছ থেকে অর্ডার পেয়ে তারা আমাদের দেশেই তৈরি করে বিদেশে রপ্তানি করছে। চলতি বিশ্বকাপে বাংলাদেশ থেকে প্রায় ৫ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়েছে বলে জানান বিজিএমইএ’র প্রেসিডেন্ট। তিনি বলেন, আমাদের মোট পোশাক রপ্তানির ৫ শতাংশ হয়ে থাকে স্পোর্টস আইটেমে।
আমরা বাংলাদেশ ফুটবলপ্রেমিক জাতি। কিন্তু বিশ্বকাপে খেলতে পারছি না। তারপরও পোশাক সরবরাহের মাধ্যমে সেখানে আমাদের অংশগ্রহণ থাকছে এটা ভাল লাগছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ থেকে খ্যাতনামা স্প্যানিশ কোম্পানি জারা, ইউরোপিয়ান কোম্পানি কারফোর, টেসকো, এইচএলএম, প্রাইমার্কসহ বিভিন্ন কোম্পানি পোশাক আমদানি করে থাকে। আগামী বিশ্বকাপে আমাদের টার্গেট থাকবে আরও বেশি পরিমাণ পোশাক ও খেলাধুলার প্রয়োজনীয় সব ধরনের সামগ্রী সরবরাহ করার।
এবার অফ্রিকাতে শীত বেশি। তাপমাত্রা মাত্র পাঁচ ডিগ্রি। এজন্য প্রচুর ট্র্যাকস্যুটও গেছে। এটা আরও বাড়বে। মোজারও চাহিদা আছে, তা-ও আমরা আরও বাড়াবো।
এছাড়া গেঞ্জি, ট্র্যাকস্যুট, হাফপ্যান্ট তো আছেই। তিনি বলেন, এবার আমরা দশ বছরের ছেলেদের জন্য ফুটবল খেলার আয়োজন করছি। দিন যত যাবে সব খানে আমাদের অংশগ্রহণ বাড়াতে হবে। একদিন বাংলাদেশও বিশ্বকাপে খেলতে পারবে। সেই যোগ্যতা আমাদের অর্জন করতে হবে।
তিনি বলেন, বিশ্বকাপের জন্য কেবল দক্ষিণ আফ্রিকায় নয়, অন্যান্য দেশেও আমাদের স্পোর্টসের পোশাক রপ্তানি হয়েছে। সেখানে সাপোর্টাররা ওই সব পোশাক পরবেন। বাংলাদেশ থেকে প্রতি বছর ১২৩৫ মিলিয়ন ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়ে থাকে। এর মধ্যে কমপক্ষে পাঁচ শতাংশ থাকে স্পোর্টসের পোশাক। তিনি বলেন, এখন যারা আমাদের দেশে বিশ্বকাপের জন্য পোশাক তৈরির সুযোগ পাচ্ছেন তারা ব্যক্তিগত যোগাযোগের মাধ্যমেই পাচ্ছেন।
আগামী দিনে সম্মিলিতভাবে কোন উদ্যোগ নেয়া যায় কিনা বিজিএমইএ থেকে সে ব্যাপারে চেষ্টা করা হবে। পোশাক তৈরি করবে প্রতিষ্ঠানগুলো। কিন্তু বিজিএমইএ’র টিম এ ব্যাপারে বাজার প্রসারের উদ্যোগ নেবে। তখন আমাদের এ খাতে রপ্তানি আরও বাড়বে। Click This Link
বিশ্বকাপে আমরা খেলতে পারছি না, কিন্তু আমাদের জার্সি গায়ে দিয়ে অনেক বাঘা বাঘা খেলোয়াড় খেলবে-আপাতত এ খুশীতেই মশগুল থাকি।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।