!!
বর্ষা এলেই প্রকৃতি সাজে নতুন সাজে। চারদিকে সজীবতার ছাপ। কবি সাহিত্যিকরা মেতে উঠে নতুন রচনায়। কিন্তু সেই শৈশব থেকে আজবধি কোনো বর্ষায় আনন্দের ছাপ বযে আনে না আমার মনে। বর্ষা মানেই ছিল অভাব হহাকার, আর এখন তার স্মৃতি!
ছোটবেলা দেখতাম আশপাশের সব ছেলেমেয়েরা বর্ষা এলে ডো্বাতে কলার ভেলা বাসিয়ে দিত।
করত আনন্দ। কিন্তু অসহায়ের মত চেয়ে থাকা ছাড়া আর কিছুই করার ছিল না তখন আমার। কিভাবে থাকবে পেটে ক্ষুধা নিয়ে আর যাই হোক নাচানাচি ত করা যায় না! দুদার্ন্ত বালকরা যখন কাদামাটিতে বল নিয়ে করত লাফালাফি তখন্ও নিশ্চুপ আমি। দুটি মাত্র হাফপ্যান্ট এগুলো যদি ছিড়ে যায় এই ভয়ে।
বর্ষা এলে অসহায় বাবার মুখের দিকে থাকাতে পারতাম না।
কেমন যেন একটা চোরের মত একটি ভাব তার। কারন তখন যে তার হাতে কাজ থাকত না। যে রাতে ঝড়ো হাওয়া বইত সাথে বৃষ্টি সে রাতে আর্ও অসহায় তিনি। আমরা তিনভাই জড়ো হয়ে বসে থাকতাম একসাথে বৃষ্টির ফোটা থেকে বাচার জন্য। বিছানা তখন ভিজছে পানিতে।
দেখতাম কাপছে বাবা। তার অসহায়ত্বে নাকি ক্ষোভে নাকি অক্ষমতায় কে জানে!
ভাঙ্গা বেড়ার ফাক গলে বৃষ্টির ছাট এসে পড়ত আমাদের শরীরে। কখন্ও একবেলা কখন্ও তা না খেয়ে শুধু কলমীলতা বা কচুর লতি তাই ছিল বর্ষার সম্বল। মাঝে মাঝে ভেবে অবাক হতাম মানুষ কচুর লতি কলমী এগুলো কিনে খায় কেন? কি মজা এতে?
তারপর হঠাৎ বদলে গেল সব। বড়ভাই ডিভি পেয়ে গেল।
নিজস্ব সামান্য জমি বেচে বিস্তর ধারদেনা করে সে চলে গেল স্বপ্নের দেশে।
ওখানে গিয়ে সে ভুলে যায় নি অতীতের কথা। বিশাল এক বাড়ি করে দিয়েছে আমাদের। দিচ্ছে না চাইতেই সবকিছু।
এখন এই বৃষ্টির কোনো সাধ্য নেই ইট লোহার এ ছাদ ভেদ করে রাত্রে আমাদের জাগানোর।
বারান্দার থাই গ্লাস ভেদ করে বৃষ্টির ছাট ছুয় না আর আমার শরীর। তবু্ও বৃষ্টি ঝরে আমার হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হয়ে।
বারান্দার ইজিচেয়ারটায় বসে আজও যখন বৃষ্টি পড়া দেখি তখন চেচিয়ে উঠি
কি দরকার আসার এই বর্ষার!
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।