সমাজের প্রয়োজনকে ঘিরে যার জীবন আবর্তিত সেই তো প্রকৃত মানুষ
জীববৈচিত্র্য সম্পর্কে পর্যটক ও জনগণকে সচেতন করার উদ্দেশ্যে সৈকত শহর কক্সবাজারের প্রবেশদ্বার কলাতলী মোড়ে নির্মিত জীববৈচিত্র্য ভাস্কর্যটি গতকাল শনিবার বিশ্ব পরিবেশ দিবস উপলক্ষ্যে জনগণের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে। বিকাল সাড়ে পাঁচটার দিকে এই দৃষ্টিনন্দন ভাস্কর্যটি উন্মুক্ত করে দেওয়ার সময় শত-শত উৎসুক মানুষ ও পর্যটক সেখানে ভিড় জমায়। তবে ভাস্কর্যটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন পক্ষকাল পর হবে বলে জানিয়েছে স্পন্সর প্রতিষ্ঠান ঢাকা ব্যাংক। ব্যাংকের একজন পরিচালক বিদেশে থাকায় আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের এই বিলম্ব বলে জানায় সংশ্লিষ্ট সূত্র।
জানা যায়, বিশ্বব্যাপী পরিবেশের বিপন্নতা সম্পর্কে জনগণকে সচেতন করতে জাতিসংঘ চলতি বছরকে বিশ্ব-জীববৈচিত্র্য বছর হিসাবে ঘোষণা করেছে।
আর বঙ্গোপসাগরের জীববৈচিত্র্যের জন্য অপরিহার্য প্রাণী হাঙরের চার প্রজাতির প্রতিকৃতি নিয়ে কক্সবাজার শহরের প্রবেশদ্বারে প্রায় ৪৫ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হয় বিশাল আকারের জীববৈচিত্র্য ভাস্কর্য। 'জ ভাস্কর্য' নামের এই ব্যতিক্রমী ভাস্কর্যটি নির্মাণ করা হয় ঢাকা ব্যাংকের সৌজন্যে।
আরও জানা যায়, কক্সবাজারের জীববৈচিত্র্য পর্যটনসহ নানা কারণে বিপন্ন হয়ে পড়ছে। সাগরের তলদেশের প্রাণী সম্পর্কে পর্যটক ও জনগণকে সচেতন করে তোলার উদ্দেশ্যে ২০০৭ সালে সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তাদের নিয়ে গঠিত 'কক্সবাজার গণ পরিষদ' এবং 'কক্সবাজার বীচ ম্যানেজমেন্ট কমিটি' শহরের প্রবেশদ্বার কলাতলী মোড়ে একটি ভাস্কর্য স্থাপনের পরিকল্পনা গ্রহণ করে। এ সময় কক্সবাজারে পর্যটন শিল্পের উন্নয়নে আরও পনেরোটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়।
এর মধ্যে অন্যতম ছিল 'জ ভাস্কর্য'। চার প্রজাতির হাঙরের প্রতিকৃতি নিয়ে এই ভাস্কর্যটি স্থাপন করা হয়েছে। দেশের বিশিষ্ট জীববিজ্ঞানী রাগিব উদ্দিন আহমদ এই ভাস্কর্যের প্রধান পরিকল্পক। 'ভাস্কর্য' নামের ঢাকা ভিত্তিক পাঁচ সদস্যের একটি ভাস্কর দল এই ভাস্কর্যটি তৈরি করেছে। এই ভাস্কর দলে রয়েছেন ইনডিপেডেন্ট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ এর পরিবেশ ও পর্যটন বিষয়ের খণ্ডকালীন শিক্ষক, শিল্পী ও বিজ্ঞানী রাগিব উদ্দিন আহমদ (দলনেতা), ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের সহকারী অধ্যাপক শিল্পী মো. রবিউল ইসলাম, ইউনিভার্সিটি অব ডেভেলপমেন্ট অলটারনেটিভ এর প্রভাষক শিল্পী অব্দুল্লাহ আল মাহমুদ, ইন্টেরিয়র ডিজাইনার শিল্পী মো. নুরুল ইসলাম প্রীতম ও সহকারী হুমায়ুর কবীর (ফ্যান্টাসি কিংডমের ভাস্কর্য সংরক্ষণে টেকনিক্যাল ব্যক্তি)।
এই ভাস্কর্যের প্রধান পরিকল্পক রাগিব উদ্দিন আহমদ জানান, বঙ্গোপসাগরে বিপন্ন চার প্রজাতির হাঙর যথাক্রমে বড় হাঙর, বাঘা হাঙর, হাতুড়িমাথা হাঙর ও চিতা হাঙরের প্রতিকৃতি নিয়ে এই বিশাল ভাস্কর্যটি তৈরি করা হয়েছে। তিনি আরও জানান, হাঙর হল বঙ্গোপসাগরের রক্ষক। বাঘ না থাকলে যেমন সুন্দরবন থাকবে না, তেমনি হাঙর না থাকলে বঙ্গোপসাগরে কেনো মাছও থাকবে না।
স্থানীয় সূত্র জানায়, ২০০৭ সালের মার্চ মাসে কক্সবাজারের তৎকালীন জেলা প্রশাসক আমিনুল ইসলাম ও ডিজিএফআই-এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল (বর্তমানে কর্নেল) গোলাম মাওলা ভূঁইয়ার নেতৃত্বে কক্সবাজারের সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য ষোলোটি প্রস্তাবনা নিয়ে 'অপার সম্ভাবনার কক্সবাজার' শিরোনামে এক উপস্থাপনা তৈরি করা হয়, যা কক্সবাজার থেকে সার্ক কার র্যালির উদ্বোধনকালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ফখরুদ্দিন আহমদসহ অন্য উপদেষ্টাদের সামনে প্রদর্শন করা হলে তাঁদের অনুমোদন মেলে। এর পর বিগত তিন বছরেরও অধিককাল সময়ে এসব প্রকল্পের মধ্যে মাত্র চারটি বাস্তবায়ন হয়েছে।
কক্সবাজারের বিভিন্ন সংস্থা অবিলম্বে সকল প্রকল্পের বাস্তবায়ন দাবি করেছে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।