আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আলেয়া -২

© তারেক আনোয়ার
আলেয়া-১ এক বছর পর । বিধাতার অদৃশ্য খেলায় নিশান ও টুম্পা আজ দুজন দুই শহরে । একজন ঢাকা ও আরেকজন চট্টগ্রাম । চট্টগ্রামে আসার পর থেকে নিশানের জীবনটা এলোমেলো হয়ে যায় । সে কখনও চিন্তা করেনি টুম্পাকে ছেড়ে তাকে অন্যকোথাও থাকতে হবে ।

সপ্তাহে অন্তত পাঁচ-ছয়বার টুম্পাকে না দেখলে তার দুনিয়াটা অসহ্য লাগত । অথচ আজ তাকে না দেখে থাকতে হচ্ছে । যদিও দিনে অন্তত ছয়-সাত ঘণ্টা কথা হয়ই , তবুও মন মানেনা । মনটা শুধু চায় টুম্পাকে দেখতে । তার টুম্পাকে, তার ভালবাসার দেবীকে ।

কিন্তু এতেই সন্তুষ্ট থাকতে হচ্ছে তাকে । তবে প্রতি দুই মাস পর পর একবার দেখা করে তারা । কিন্তু প্রতিদিন ছয়-সাত ঘণ্টা কথা বলার খরচ বহন করা আস্তে আস্তে নিশানের জন্য কঠিন থেকে কঠিনতর হয়ে পড়ে । পিতার কাছ খরচের জন্য যা পায় তা দিয়ে সব খরচ বহন করা সম্ভব হয়না । কিন্তু সে টুম্পাকে কিছুই জানায়না ।

আস্তে আস্তে খরচ বহন করার জন্য ধার করা শুরু করে সে । কথা বলা না কমানোর কারণে ধার শুধু বাড়তেই থাকে , শোধ করা হয়ে উঠেনা । এবং একসময় তা নিশানের জন্য মানসিক সমস্যা হয়ে দাঁড়ায় । পাওনাদারদেরর চাপ , প্রাত্যহিক খরচ ও প্রাত্যহিক মোবাইল বিল জোগাড়ের চাপ তার কাঁধে বিরাট এক বোঝা হয়ে উঠে । মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়তে থাকে সে ।

ফলে টুম্পাকে আগের মত সময় দিতে পারেনা এবং শত চেষ্টা সত্ত্বেও আগের মত ব্যবহার করতে পারেনা সে টুম্পার সাথে । নিশানের এই পরিবর্তন টুম্পার চোখে তাদের প্রেমাকাশে কালমেঘের লক্ষণ হিসেবে ধরা দেয় । এক অজানা ভয় এসে ঘিরে ধরে তাকে । সে নিশানকে কল করার হার বাড়িয়ে দেয় । কিন্তু নিশান যে তার সাথে আগের মত করে কথা বলেনা তা ভীষণ পীড়া দেয় তাকে ।

সে কিছুই বুঝতে পারেনা । শত জিজ্ঞেস করেও নিশানের কাছ থেকে কোন সদুত্তর পায়না সে । এতে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হতে থাকে সে । এরমধ্যে তার সাথে একটি ছেলের পরিচয় হয় । নাম দুর্জয় ।

সে টুম্পার বন্ধু হতে চায় । মানসিক বিপর্যস্ত টুম্পা তার কষ্ট শেয়ার করার একজন মানুষ পেয়ে রাজি হয়ে যায় সে প্রস্তাবে । অন্যদিকে নিশান তার ভুল বুঝতে পারে । আগে যদি মনকে বুঝাতে পারত । ছয়-সাত ঘন্টা করে কথা না বলত , তাহলে তাকে আজ এই কঠিন সমস্যায় পড়তে হতনা ।

সে বুঝতে পারে টুম্পার সাথে তার এই কথা বলা কমানো টুম্পাকে পীড়া দেয় । কিন্তু কি করবে সে ? সে যে এখন নিরুপায় । শত চেষ্টা করেও সে যে সব কিছু আগের মত করতে পারছেনা । এভাবে দিন যায় । ছাত্র পড়িয়ে , টুম্পার সাথে কথা বলা কমিয়ে এক সময় সে সমস্ত ধার শোধ করে এবং চাপ থেকে নিজেকে মুক্ত করে ।

ছাত্র পড়ানোর কারণে টুম্পার সাথে কথা বলার খরচ বহন করা তার কাছে এখন কোন ব্যাপারইনা । কিন্তু ততদিনে অনেক দেরি হয়ে যায় । টুম্পার মনে নিশানের জায়গায় স্থলাভিষিক্ত হয়ে যায় দুর্জয় নামের টুম্পার সে বন্ধুটি । সময় না দেওয়া , সবকিছু খুলে না বলা ও দুর্জয়ের দেওয়া মানসিক সাপোর্টের কারণে টুম্পার মন থেকে নিশান হারিয়ে যায় , জায়গাটি দখল করে নেয় দুর্জয় । কিন্তু বিষয়টি কিছুতেই মেনে নিতে পারেনা নিশান ।

সে কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারেনা টুম্পা তাকে ভুলতে পারে । সে যে কিছুতেই ভুলতে পারবেনা টুম্পাকে । মাঝের কিছু সময় তার কাছ থেকে তার টুম্পাকে ছিনিয়ে নিয়ে গেছে । ভুল হয়েছে , টুম্পা আজ আর তার নয় , অন্য কারও । টুম্পার স্মৃতিগুলিই শুধু তার ।

তার এখনো টুম্পাকে মনে পড়ে । খোলা মাঠে বসে এখনো সে টুম্পাকে ভাবে আকাশের দিকে তাকিয়ে । আচ্ছা টুম্পারও কি একই ভাবে তাকে মনে পড়ে না ? হয়ত পড়ে , হয়ত পড়েনা । কিন্তু তা আর কখনই জানা হবেনা নিশানের । পাদটিকাঃ “কঠিনতম কষ্ট হচ্ছে সেটি , যা তুমি কাউকে বলতে পারনা ।

” সমাপ্ত
 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।