আজ আমার মন ভাল নেই। সময় আর অসময়ের আধো আলো রাত সাড়ে ৯টার দিকে ইটিভির সামনে চটপটি খেতে দাড়ালাম সহকর্মী রাহী আর আমি। এমন সময় ১০/১২ বছরের এক শিশু চটপটিওয়ালাকে পাঁচ টাকার চটপটি দিতে বললো। চটপটিওয়ালার সোজা সাপ্টা উত্তর- পাঁচ টাকার দেয়া যাবেনা। ছেলেটা আরো করুণ করে চাইলো।
চাটপটিওয়ালার একই উত্তর। ছেলেটার পড়নে ময়লা ফুলপ্যান্ট, গায়ে ময়লা গেঞ্জি। চোখেমুখে কেমন যেন অবসাদ। এসব কিছুর পরও কেমন একটা ব্যক্তিত্বও অনুভূত হলো। করুণ করে চাওয়ায় নিজের কাছে নিজেই যেন লজ্জা পাচ্ছিলো।
চলে যেতে দেখে ডাকলাম তাঁকে। চটপটি খেতে খেতে জানতে চাইলাম তাঁর সম্পর্কে। বললো- বাবা, বড় বোন আর সে মিলে তিনজনের সংসার তাঁদের। মা থাকে অন্য কোথাও, অন্যের সংসারে। বাবার সংসার করেনা।
কথাগুলো বলছিল যখন, তখনও দেখলাম তাঁর ভীষণ সতর্ক উচ্চারণ। কোথায় যেন সে আত্ম-সম্মানহানী অনুভব করছে? আর কিছু জানতে চাওয়া অন্যায় মনে হলো। তবু জানতে চাইলাম। মা কেন বাবার সংসার করছেনা? উত্তর- বাবা অসুস্থ্য। বড় বোন গার্মেন্টে কাজ করে আর সে সারা রাত কারওয়ান বাজারে তরকারি কুড়িয়ে বিক্রি করে।
থাকে বেগুন বাড়ি বস্তিতে। চটপটি খাওয়া শেষ হতেই বললো- আমার পাঁচ টাকা রাখেন। বললাম লাগবেনা, তুমি যাও। একটু হাসির মতো কিছু একটা তাঁর ঠোটের কোনে খেলে গেলো। তাতে কিছুটা ইতস্ততা, কিছুটা লজ্জা আর ছিল পূর্ণাঙ্গ ব্যক্তিত্ব।
চলে গেলো, দৃষ্টি সীমানা পেরিয়ে!!!
ছেলেটা চলে যাওয়ার পর খুব মনে পড়লো আমার এক বন্ধুর কথা। ২০০২ সালে এমএমসির আয়োজনে তিনদিনের একটা ফিচার কর্মশালায় অংশ নিতে ঢাকায় এসেছিলাম আমরা। কোন এক সময় বলছিল তাঁর মায়ের বিয়ে হয়েছে অন্য কোথাও। মাকে খুব মনে পড়লে সেই বাড়িতে যায় সে। আমি জানতে চেয়েছিলাম- মা তাঁকে বুকে ধরে কি কান্না করে? সে একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলেছিল- ওসব বাস্তবে নয়, সিনেমায় হয়।
আমার সেই বন্ধুটা এখন ভোলায় সাংবাদিকতা করে। ভালই আছে বউ, কন্যা আর নিজে মিলে তিনজনের সংসার।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।