আমি তখন অষ্টম শ্রেণিতে পড়ি।
আমার বাড়িতে শুধু আমি আমার মা আর
আমার ছোট বোন। তখন আমি অনেক দুষ্টু।
সারাদিন বাহিরে থাকতাম আর সন্ধায়
বাসায় ফিরতাম। বাবা বাসায় আসার
আগেই পড়তে বসতাম।
কারন আমি যখন
পরতাম তখন বাবা কিচ্ছু বলতনা।
বাবা যখন ঘুমাত ঠিক তখন
খেয়ে ঘুমিয়ে পড়তাম। রোজ এরকমই
চলত। শুধু বিকেলে মাঠে খেলতাম।
আমাদের বাড়ির সামনে একটা অনেক
পুরনো বেল গাছ ছিল।
আর বেল গাছটির
সাথেই ছিল একটি ছোটো মাঠ। তাই
প্রতিদিন ওই মাঠে বন্ধু, বড় ভাই, ছোট
ভাই সকলই টেনিস বল দিয়ে সুপারসিক্স
(ক্রিকেট) খেলতাম। সুপারসিক্স
বলতে ছয় মারা যাবে না শুধু চার
মারা যাবে, যে দল
ব্যাটিং করবে সেই দলের একজন
আম্পিয়ার থাকবে। নির্দিষ্ট কোনও
খেলোয়াড় ছিল না। কখনো দশ,
কখনো বিশ আবার কখনো দশ বিশের
মধ্যে।
অনেকদিন খেললাম। আর অনেক মজাও
করতাম। কখনো বাজি (নগদ/বাকি)
আবার কখনো বাজি ছাড়া। হই হুল্লোড়,
ঝগড়া তো আছেই।
কিন্তু হটাৎ একদিন মাঠের বেল
গাছটির পাশেই টিনের
বেড়া দিয়ে ঘেরা একটি বাড়ি হল।
আমাদের খেলার সেই ছোট মাঠটি আরও
ছোট হয়ে গেল। কিন্তু তাতে কি যায়
আসে। খেলার
পরিধি আঁকাবাঁকা করে খেলতেই
লাগলাম। কিন্তু
আরেকটি সমস্যা এসে হাজির হল।
খেলার বল রোজ ওই বাড়িটির টিনের
বেড়া ফুটো করতে লাগলো।
কতদিন আর
সহ্য করবে।
প্রত্যেকটি ক্রিয়ারি একটি প্রতিক্রিয়া থাকে
। তাই বাড়ির মহিলাটি ওত
পেতে ছিল, যে কখন আমাদের বল তার
বাসায় যাবে।
একদিন বল তার বেড়া ফুটো করে বাসায়
ঢুকল। আর
সাথে সাথে মহিলাটি বলটি কেটে দু
টুকরো করে দিল।
সকলই
তো রেগে মেগে শেষ। কিন্তু তবুও ধৈর্য
ধরে সকলই চুপ থাকলাম। বল কেনার
মতো টাকা নাই তাই সেইদিনের
মতো খেলা শেষ।
কিন্তু রাগ তো আর শেষ হয়নি।
সন্ধ্যা থেকে একাই চিন্তা করতে শুরু
করলাম কি করা যায়।
রাত নয়টার সময়
সেই পুরনো বেল গাছটিকে ঘিরে আমার
মতো দুষ্টু ছেলের দুষ্টু মাথায়
একটি দুষ্টু বুদ্দি চলে এলো।
বুদ্দি আশা মাত্রই একাই কাজ শুরু
করে দিলাম।
একটি মোম আর একটি দিয়াসলাই
(ম্যাচ) জোগাড় করলাম এবং ম্যাচ আর
দিয়াসোলাই নিয়ে রাত দশটায় সেই
পুরনো বেল গাছের
একেবারে উপরে উঠলাম। উঠেই
একেবারে মগডালে মোমটি ধরিয়ে দিয়ে নেমে এলাম।
নেমে আসার পর বাড়ির
সামনে দারালাম।
পাসেই আমার
মা দাড়িয়ে। কিন্তু কোনও কথা বলল
না। বুঝলাম মা কিছুই দেখেনি।
মায়ের কথা চিন্তা করতে করতেই হটাৎ
একটি আওয়াজ কানে ভেসে এলো,
ঐযে ভুতের আগুন বেল গাছের উপর
জ্বলছে আর নিভছে।
সাথে সাথে আশে পাশের অনেক মানুষ
দৌড়ে এলো ভুতের আগুন দেখতে।
এরই
মধ্যে সেই বেল গাছের পাশেই
থাকা বাসাটায় খবর চলে গেছে বাসার
পাঁশের বেল গাছে ভুতের আগুন জ্বলছে।
সাথে সাথে স্বামী, স্ত্রী চিৎকার
করতে করতে রাস্তায় ঠিক আমার বাড়ির
সামনে এসে হাজির। সেই কি কান্না।
সেই মহিলাকে অবাক হয়ে দেখছি আর
হাসছি ।
কিছুক্ষণ পর
সামনে তাকিয়ে দেখি আমার গ্রামের
মানুষ তো আছেই,
সাথে সাথে আশে পাশের অনেক দুরের
মানুষও এসে জড় হয়েছে ভুতের আগুন
দেখতে।
আমার বাসার
সামনে লোকেলোকারণ্য আমার বাসার
সবাই আমার সাথেই আছে। কিছুক্ষণ
পরেই মোমটি নিভে গেল। মানুষের ভিড়
তখনো বাড়ছে। কিছুতেই কমছেনা।
কি আর করা।
সবাই ভুতের আগুন দেখতেছিল, আর
আমি আমারি লাগানো আগুন দেখছিলাম
। রাত বারোটা।
তখনো বাসার সামনে মানুষের ভিড়। আর
পেছন এ ঘুরে দেখি বাসার সকলই ভেতর
এ চলে গেছে।
আমিও মনে মনে হাসতে হাসতে বাসায়
ঢুকলাম ।
বাসায় ঢুকতেই পাশ
থেকে মায়ের ডাক এই শোন এরকম
কাজটা করা তোর উচিৎ হয়নি
। বলেই
মা চলে গেলেন। আমি একাই আরও
একবার অবাক হয়ে মায়ের বসার
ইস্থানটার দিকে তাকিয়ে আছি।
আমি মনে করে ছিলাম এক মাত্র
আমি ছাড়া আর এক আল্লাহ্ বেতিত আর
কেউই এই কাজের খবর জানে না। কিন্তু
না মা আমার বিশ্বাস কে হার
মানিয়ে দিয়েছে।
আমি ভুল্বনা সেইদিনের আমার
লাগানো আগুন, ভুতের আগুন আর আমার
মায়ের সেই মন।
মা আজও হাজার বেস্ততার মাঝেও আমার
পায়ের শব্দ শুনেই আমার অস্তিত্ত
অনুমান করে।
আজ থেকে ছয় বছর আগের এই দিন
গুলো শুধু মনে জায়গা নিয়েই চলে গেছে,
বদলে গেছি আমি।
কিন্তু মায়ের সেই ভালোবাসা?
না বদলায়নি।
আজও সেই রকমই খেয়াল রাখে আমার।
আমার মনের দুঃখ, কষ্ট, ভালো, মন্দ
সবই মন থেকে অনুভব করে আজও।
আমিও ভুলিনাই মায়ের সেই অবাক
করা ভালবাসার দিন গুলো।
মা তোমাকে আমি আজও অনেক অনক
ভালোবাসি ।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।