গুরু সিরাজ সাঁই
এই বুদ্ধির নাম হইলো গিয়া হু-খৌ
户口
হু-খৌ মানে সিটিতে বসবাসের অনুমতি পত্র. আপনি বাসা ভাড়া করতে যাবেন হু-খৌ দেখাও, বাচ্চারে স্কুলে দিবেন হু-খৌ শো করো. এই এক যাদু প্রয়োগের মাধ্যমেই ১৪০ কোটি জনসংখ্যার দেশের রাজধানীকে মানুষের চাপে ধ্বংস হওয়ার হাত থেকে রক্ষা করা হচ্ছে. এই পৃথিবীতে সম্পদের সীমাবদ্ধতার কারনেই বৃহৎ স্বার্থে কাউকে না কাউকে ছাড় দিতে হবে. অন্যথায় পানির স্তর নিচে নেমে যাবে অতিরিক্ত মানুষের চাপে, এক সময় হয়তো নান্দনিক শহরটাকে পরিত্যাক্ত ঘোষণা করতে হবে. এসব নীতিকথা আমরা মুখে সবাই বলি ! ডিসেন্ট্রালাইজ করো ব্লা ব্লা.. কিন্তু যখন বদলি করে ঢাকা থেকে বাইরে দেওয়া হয় তখন শুরু হয় দৌড়ঝাপ, কোথায় নামের নাম ট্যামের ট্যাম আত্নীয় আছে তারে ধরে বদলি রদ কর. মফস্বলে না আছে ভাল স্কুল, না আছে আধুনিক শপিং মল; বিদেশী ভাল কোন কসমেটিক / ফ্যাশনের কাপড় চোপড় পাওয়া যায় না!
অধিক সংখ্যাক জনগণের কল্যাণ সাধনের জন্য অনেককে সিটিতে স্হায়ীভাবে বসবাস করা থেকে বঞ্চিত করা হয়. আমার পরিচিত একজন সে বেইজিংয়ে বাচ্চাদের স্কুলের টিচার, তারা বলে দিছে হু-খৌ ম্যানেজ করে দিতে পারবে না একারনে সে ঐ একই কোম্পানির এই প্রদেশের রাজধানীতে যে স্কুল আছে সেখানে বদলি হয়ে আসবে. প্রাদেশিক রাজধানীতেও স্হায়ীভাবে বসবাস করতে গেলে হু-খৌ লাগে তবে বেইজিংয়ের মত অত কড়াকড়ি না. একটা ডকুমেন্টারিতে দেখছিলাম বাপ-মা রেস্টুরেন্টে কাজ করে আর তাদের বাচ্চা বাড়িতে দাদা-দাদীর কাছে মানুষ হচ্ছে. বেইজিংয়ে এরকম অনেকেই কাজ করে পয়সা কামাইয়া বাড়ি চলে যায়, হাতে কচকচা পয়সা থাকলেই লোকাল অধিবাসী হতে পারে না. সিটির ধারনক্ষমতা বিবেচনা করে মানুষরে হু-খৌ দেওয়া হয়.
পুরো দেশের সকল শহরেই এই হু-খৌ সিস্টেম যার দ্বারা স্হায়ী অধিবাসীর সংখ্যা কন্ট্রোল করা হয়. হংকং চীনের অংশ হওয়া সত্বেও সেখানে চাইলেই যে কেউ যেতে পারে না, সরকারের কাছ থেকে অনুমতি নিতে হয়. এই অত্যাধুনিক শহরে কে না যেতে চায়, কে না ওখানকার ফ্যাসিলিটি ভোগ করতে চায়! পয়সাওয়ালা লোকের তো অভাব নাই. চীন সরকার যদি এরকম আইন না করতো তাহলে ১৪০ কোটি মানুষের ঢলে ছোট্ট গোছানো শহরটার ২৪টা বেজে যেত.
একটা পরিসংখ্যানে দেখেছিলাম খুব শীঘ্রই মোট জনসংখ্যার ৫০% শহরের অধিবাসী হবে [ইন্ডাস্ট্রিয়ালাইজেশন হওয়ায়], এলক্ষ্যে সরকারী কোম্পানিগুলো প্রয়োজনীয় অবকাঠামো তৈরী করছে. বাড়ীওয়ালা কখন আকাশচুম্বী ভাড়া চায় যখন কাস্টমার বেশি অথচ সেই হিসেবে বাড়ী নাই, যাদের পকেট গরম তারা ঐ বেশি দামেই রাজী হয়ে যায়. সীমিত আয়ের লোকেরা পড়ে বিপদে. এদেরকে শুধু বাড়ীয়ালী নয় অধিকন্তু ট্যাক্সি ড্রাইভারদের গলা কাটা দাম থেকে বাঁচানোর জন্যও আছে চৈনিক বুদ্ধি!
রেলস্টেশনে লাইন ধরে ক্যাব দাঁড়াই থাকে, যাত্রীরাও রেলিংয়ের ভিতরে সিরিয়াল ধরে. অমুক জাগায় যামু না, একথা বলার সুযোগ নাই. লাইনের সামনে থেকে প্যাসেঞ্জার তুলে তার চাহিদামত স্হানে যাও আর ভাড়া লও মিটার দেইক্কা. তুমি বড়লোকের বেটা.... টাকার গরম দেখাইয়া বেশী পয়সা দিবা এটা বলে সীমিত আয়ের লোকদের বুড়া আঙুল দেখিয়ে ট্যাক্সি নিয়া চইল্যা যাবা তা হবে না, সিরিয়াল বাই আস.
বাসা চেঞ্চ করা মানেই তো আমাদের কাছে এক বিরাট আতঙ্ক! তয় চীনে এটা কোন বিষয়ই না
নূতন ভাড়া বাসায় উঠছেন, এ ব্যাপারটা অনেকটা যেন আবাসিক হোটেলে উঠার মত. বাড়ীওয়ালা খাট থেকে শুরু করে ডাইনিং টেবিল, সোফা সব দিবে. এমনকি কপালের টিপ ঠিক মাঝখানে আছে কিনা সেটা দেখার ব্যবস্হাও আছে ড্রেসিং টেবিল. আপনাকে কষ্ট করে কোন কিছুই টানতে হবে না. চাবি দিয়ে খাটের নাট-বল্টু খুলন লাইগতো ন তয় তোষক দিলেও বেড সিট আন্নের কেনা লাইগবো.
উঠার সময় মালিক যেমন আন্নেরে মেয়ে জামাই হিসেবে বরণ করে নেয় তেমনি বাড়ী ছাড়ার সময় হোটেল মালিকদের মত সব কিছু বুঝে নেয়. প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও নানা ধরনের ড্রিংকস্ আগে থেকেই রুমের মধ্যে রেখে দেয়, ফ্রি মনে করে যত পারো খাও! চেক আউটের সময় টের পাবা বাছাধন, অনেক জায়গায় ডুরেক্সের প্যাকেটও রেখে দেয়.
হোটেলওয়ালারা ডিপোজিট থেকে যেমন এসবের পয়সা পই পই করে কেটে রাখে তেমনি চীনা বাড়ীওয়ালারা দেয়ালের পেইন্টিং নষ্ট হলে কিংবা যাতাযাতিতে খাটের তক্তা ভাঙ্গলে কড়ায় গন্ডায় আদায় করে.
শহরে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের মতই হাইওয়েতে গাড়ী কন্ট্রোলেও আছে চৈনিক বুদ্ধি!
পুরো দেশেই সকল হাইওয়েতে টোল প্লাজা বসানো আছে, তুমি একা একজন মানুষ কোথাও যাবা ভাল কথা.... ট্রেন আছে, বাস আছে; তা না করে নিজের প্রাইভেট কার মানুষের সামনে শো করতে চাও ওকে টোল পরিশোধ কর [শুনেছি বেইজিংয়ের ব্যস্ততম জায়গাগুলোতে Car parking এর জায়গার ভাড়া ঘন্টা প্রতি ১২ ইউয়ান]
তুমি কাছেই কোথাও যাবা এজন্য লোকাল রাস্তা ব্যবহার না করি হাইওয়েত গিয়া জ্যাম লাগাবা তা হইত ন ! মানুষও যেন এলোমেলো রাস্তা পার হয়ে বিঘ্ন না ঘটাতে পারে এজন্য হাইওয়ের দু'পাশে আছে কাটা তারের বেড়া. একদিন দেখেছিলাম বেড়ার এপাশে এক ছেলে আর ওপাশে এক মেয়ে. মেয়েটার বেশভূষা দেখে মনে হচ্ছিল সে কৃষক, সে যে জায়গায় দাঁড়িয়ে ছিল সেই ফসলের মাঠটা যেন দিগন্ত বিস্তৃত. চোখ যতদূর যায় ভূট্টা আর ভূট্টা. এই কপোত-কপোতী পরস্পরকে ছুঁয়ে দিতে পারলেও জড়িয়ে ধরতে পারবে না সেক্ষেত্রে ভিলেন কাঁটা তাঁর.
আমি যখন ওদের বলি বাংলাদেশে বনপাড়া-হার্টিকুমড়ুল এই একটা হইওয়ে ছাড়া আর কোথাও টোল প্লাজা মোর চোখে পড়ে নি তখন আফসুস করে আবার যখন সীতাকুন্ডের জ্যামের কথা বলি তখন বলে ওদের সরকারী নিয়মই ভাল. গত ড্রাগন বোট ফেস্টিভ্যালে সরকার ৩ দিনের জন্য হাইওয়ে ফ্রি ঘোষণা করছিল, প্রত্যেকটা জায়গায় বিশাল জ্যাম লেগে গেছিল টোলমুক্ত ঘোষণায়. চীন সরকার এই টোলের টাকা হাইওয়ের উন্নয়নে কাজে লাগায়; কোথাও কোন ঝাঁকি নাই, U লুপ সহ যত ধরনের সিস্টেম আছে সবগুলাই এমনভাবে কাজে লাগাইছে যে মহাসড়কে সিগন্যাল নাই বললেই চলে.
ফিরে আসি হু-খৌ প্রসঙ্গে, শুনেছি এই অমূ্ল্য রত্ন পাওয়ার সবচেয়ে শটকাট সিস্টেম হইলো গিয়া হু-খৌ আছে ইরাম কাউরে বিয়ে করলে সেও নাকি বিনা বাঁধায় হুখৌয়ের মালিক বনে যায়. একটা জিনিস চিন্তা করে দেখলাম সারা দুনিয়ার বেবাকখানেই কমন রুলস্ হইলো বৌয়ের ক্ষেত্রে ছাড় পাওয়া যায় যেমন- মানুষ অফিস থন সহজেই ছুটি লইতারে/ছুটি কাটাইয়া পরাণ পাখির কথা কইয়া পার পাওয়া যায় যা কিনা বাপ-মায়ের অসুখের কথা কইয়াও কাম হয় না.
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।