এই পথে আলো জ্বেলে, এই পথেই পৃথিবীর ক্রমমুক্তি হবে
গত পোস্ট ছিল একটা ভূমিকা। আমার আগ্রহের জায়গাটা ছিলো গবেষণায়। ক্রেগ ভেন্টর আর তার দলবল কিভাবে একটা কৃত্রিম জিনোম তৈরি করলেন?
যে কোন কোষের অনেকগুলো অঙ্গানু থাকে। যেমন মাইটোকন্ড্রিয়া, কোষঝিল্লী, রাইবোজোম, প্লাজমিড ইত্যাদি। কোষের পাওয়ার হাউজ হলো মাইটোকন্ড্রিয়া।
কোষঝিল্লী কোষের আবরণ। রাইবোজম প্রোটিন তৈরি করে। এদের মাঝে ডিএনএ-র গঠন অনেক সরল। ফসফেট, সুগার (খাবার চিনি নয় কিন্তু) আর চারধরণের ক্ষারক (বেস) দিয়ে তৈরি ডিএনএ।
এটা ভেন্টরের বানানো কৃত্রিম জিনোম।
মাঝখানে লেখা আছে কিভাবে এইটা তৈরি হলো।
একটা কাগজের পাতাতে হয়তো একটা চিঠি আমরা লিখতে পারি। পাতাটা কিন্তু চিঠি না। বর্ণমালার ৫০টি বর্ণ কে কিভাবে সাজানো আছে সেটাই গুরুত্বপূর্ণ। পাতাটা অক্ষরগুলোকে ধারণ করছে।
ঠিক তেমনই সুগার আর ফসফেটের শেকল ধারণ করে ক্ষারক সংকেত, যারা ডিএনএ-র বার্তা। কোষের অন্যান্য অঙ্গাণুর তুলনায় তাই ডিএনএ কৃত্রিমভাবে তৈরি করা তুলনামূলক সহজই বলা যায়। তাই বলে অবশ্য কৃত্রিম ডিএনএ-র গুরুত্ব কমে যায় না। ডিএনএ-ই তো জীবনের বার্তা!
গত প্রায় ত্রিশ বছর ধরে কৃত্রিম ডিএনএ তৈরি করা হচ্ছিল। তবে পুরোটা না, খুব ছোট অংশ হতে একটু বড় ডিএনএ-র দিকে।
বোঝাই যাচ্ছিল কোন জীবের সম্পূর্ণ জিনোম তৈরি সময়ের ব্যাপার মাত্র। আবারো বলি, কোন জীবের সম্পূর্ণ ডিএনএ-র সেটকে বলে জিনোম। নিচে এই অগ্রগতির একটা চিত্র ফুটে উঠে :
কৃত্রিম ডিএনএ গবেষণা অগ্রগতি
ক্রেইগ ভেন্টর তার দলবল নিয়ে শেষ পর্যন্ত কোন জীবের জিনোম কৃত্রিমভাবে তৈরি করলেন, হোক না সেটা কোন ক্ষুদ্র ব্যাক্টেরিয়া।
হঠাৎ করে একেবারে কিন্তু এই জিনোমটা তৈরি করা হয় নি। প্রথমে তারা একটা জিনোমের নকশা তৈরি করেছেন।
জিনব্যাঙ্ক (GenBank) বলে একটা জিনিস আছে। সেখানে আপনি বিভিন্ন জীবের জিনোমের সজ্জা (জেনেটিক সিকোয়েন্স) পাবেন। এটা হলো বিভিন্ন জীবের ডিএনএ-র ’ডিজিটাইজড ফর্ম’। সেখান থেকে প্রথমে বিজ্ঞানীরা মাইকোপ্লাজমা মাইকয়েড নামের এক ব্যাক্টেরিয়ার জিনোমের দুইটি আলাদা সজ্জা নেন। দুইটি সজ্জার মধ্যে যেটা সবচেয়ে ভালো সেটার উপরে তারা কৃত্রিম জিনোমের নকশা তৈরি করেন।
কৃত্রিম জিনোমের নকশা আসলে ঐ ব্যাক্টেরিয়ার জিনোমের সজ্জাতে কিছু পরিবর্তন আনা।
বিজ্ঞানীরা ঐ নকশার চার জায়গায় ‘জলছাপ’-এর ব্যবস্থা করেন। জলছাপটা একরকমের প্রমাণ হিসেবে পরে ব্যবহার করা হবে। এছাড়াও মূল জিনোম সজ্জার সাথে কৃত্রিম জিনোমের নকশার উনিশটি জায়গায় ক্ষতিবিহীন পরিবর্তন রেখে দেয়া হয়। এভাবেই তৈরি হলো কৃত্রিম জিনোমের (ডিজিটাইজড) সজ্জা নকশা।
এই নকশাটা আবার বিজ্ঞানীরা জিনব্যাঙ্কে সংরক্ষণ করেন।
একটা ডিএনএ কত বড় সেটা মাপা হয় ক্ষারক-জোড় (বেস-পেয়ার বা বিপি) হিসেবে। ডিএনএ-র দুইটি বিপরীত সূত্রে বিপরীত দুইটি ক্ষারক কে একত্রে বলে এক বিপি। এই তথ্যটা মনে রাখতে হবে।
বিজ্ঞানীরা চারটি বোতলে ধরণের ক্ষারক নেন (এ, টি, জি, সি)।
কম্পিউটারে ডিজিটাইজড কৃত্রিম জিনোমের সজ্জা নকশা অনুযায়ী খুব ছোট ছোট, ৩ থেকে ৮টি ক্ষারকজোড়ের ডিএনএ-র খন্ড (অলিগো-নিউক্লিওটাইড) তারা তৈরি করেন। তারপর এই ছোট ছোট ডিএনএ খন্ড জোড়া লাগানোর ব্যবস্থা করেন তারা। এই জোড়া লাগানো হয় ই. কলি নামক ব্যাক্টেরিয়া আর স্যাকারোমাইসিস নমের ছত্রাকের মধ্যখানে। এভাবে জোড়া লাগিয়ে তারা ১ কিলো বেসপেয়ারের অনেকগুলো জিন ক্যাসেট তৈরি করেন। এই ক্যাসেটগুলো তারা আবার ছত্রাক ব্যবহার করে জোড়া লাগিয়ে তৈরি করেন 10 কিলো বেসের অংশ।
একই ভাবে আবার এদেরকে ছত্রাক কোষের মাঝে জোড়া লাগান। তৈরি হয় 100 কিলো বেসে অংশ। তারপর আসে সেই মাহেন্দ্র্ক্ষণ! 100 কিলো বেসের অংশগুলো জোড়া লাগিয়ে তৈরি হয় কৃত্রিম জিনোম।
এই কৃত্রিম জিনোমকে তারা প্রতিস্থাপন করেন কাছাকাছি প্রজাতির মাইকোব্যাকটেরিয়াম ক্যাপ্রিকোলামের গ্রাহক কোষে। এটা যেন ঠিক একটা কম্পিউটারে পুরাতন “অপারেটিং সিস্টেম”-এর জায়গায় নতুন অপারেটিং সিস্টম প্রতিস্থাপন করা (উইন্ডোজের জায়গায় লিনাক্স :-) )।
দেখা গেল, নতুন কোষটা “রিবুট” করে নতুন ডিএনএ-র নির্দেশ মতো কাজ করছে!
আজ এখানে থামি। সামনে আরো একটা পোস্ট দেয়ার ইচ্ছে রইলো।
[পোস্টটা চেক করতে হবে। কিছু তথ্য ভূল থাকতে পারে। ]
পূর্বে চতুর্মাত্রিকে প্রকাশিত
গত পোস্ট : কৃত্রিম জীবনের পথে :: ভূমিকার কথা
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।