আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

অপরিচিতা (শেষ পর্ব)

আমি পূজারী,শুধুই তোমার প্রেমের

Click This Link অপরিচিতা (৪র্থ পর্ব) Click This Link অপরিচিতা(৩য় পর্ব) Click This Link অপরিচিতা(২য় পর্ব) Click This Link অপরিচিতা(১ম পর্ব) লঞ্চ থেকে নামার সময় দেখি পুনম ঘুমাচ্ছে। ডেকে তুলে দিলাম। ট্র্যাভেল এজেন্সির মাইক্রোতে করে আমাদেরকে আবার নিয়ে যাবার কথা। তাই করল তারা। আবার কলাতলি ফিরে এলাম।

বাসের টিকেট করলাম। এবার দশটা টিকেট। বাস রাত সোয়া দশটায়। আমরা খেয়ে নিলাম বৈশাখী রেস্টুরেন্টে। লিয়া আর পুনম ওয়েটিং রুমে বসল।

আমরা বাইরে ঘুরতে বের হলাম। সাড়ে সাতটার মত বাজে। এখনো অনেক সময় বাকি আছে। সবাই ভাবছি কি করা যায়। রাস্তার পাশ দিয়ে যে যার মত ঘুরঘুর করতে লাগলাম।

হঠাত দেখি পুনমও হাটছে আমাদের সাথে। আমি ওকে ডাকলাম। ও আসল। আমি জিজ্ঞেস করলাম, “বার্মিজ মার্কেট দেখেছো কখনো?” ওর উত্তর, “আমি তো আগে আর কখনো আসিনি তাহলে দেখব কি করে!” তাইতো,আমার বোঝা উচিত ছিল। “যাবে এখন?” আমি প্রস্তাব দিলাম।

“আপনি নিয়ে গেলে যাব”। ও সাথে সাথে জবাব দেয়। আমি তাড়াতাড়ি করে একটা রিকশা ঠিক করলাম। রওনা দিলাম বার্মিজ মার্কেটের উদ্দেশ্যে। রিকশা শহরের মাঝ দিয়ে যেতে লাগল।

যদিও শহর বললাম তবুও কেমন যানি অন্ধকার একটা ভাব। রাস্তার পাশের সবগুলো লাইট জ্বালানো হয় নি। লোকজন খুব কম। আমার একটু ভয় হতে লাগে। একটা মেয়েকে নিয়ে এইসময়ে বের হওয়াটা কি বুদ্ধিমানের কাজ হল? “কি হল কিছু বলছেন না যে?” “ও হ্যা, বল”।

“না,আপনি তো দেখি স্ট্যাচু হয়ে বসে আছেন। কিছু বলেন”। “তুমি বল। আমি আর কি বলব”! “আচ্ছা বার্মিজ মার্কেটের কি কি পাওয়া যায়?” “আমি ঠিক জানিনা। তবে যতদূর মনে পড়ে সুন্দর সুন্দর জিনিস পাওয়া যায়।

আর সবচেয়ে যেটা বেশি পাওয়া যায় তা হল আচার। হরেক রকমের আচার”। “আমাকে খাওয়াবেন?” আমার হাসি পেল। আমি যতদূর জানি মেয়েরা একটা সময় এই জিনিসটা বেশি খায়। আমার হাসি দেখে সে খুব লজ্জা পেয়ে যায়।

বলে, “আপনি একটা শয়তান। যান আমাকে খাওয়ানো লাগবে না”। আমাদের কলেজের একটা স্যার একদিন বলেছিলেন যে যদি কোন মেয়ে কোন ছেলেকে শয়তান বলে তবে বুঝতে হবে মেয়েটা ছেলের প্রেমে পড়েছে। তাহলে পুনম যে আমাকে শয়তান বলল!!! আমরা মার্কেটে পৌছে গেলাম। অনেকগুলো মার্কেট।

আমরা দ্বিতীয়টাতে ঢুকলাম। সারি সারি আচারের দোকান। আমি কিনলাম বেশ কিছু। পুনমকে খাবার জন্য দিলাম। সে খেল না।

আমার হাসি পেল। প্রত্যেকটা দোকানে মেয়েরা কাজ করে। তাদের পোশাক –পরিচ্ছেদ দেখে মনে হয় পুনম একটু লজ্জাই পেল। সবার গালে মাটি জাতীয় কিছু মাখানো। আমরা একটা কাপড়ের শোরুমে গেলাম।

অনেক বাছাবাছি করে একটা শাড়ি কিনলাম। এরপর আর কিছু কিনলাম না। সবগুলো মার্কেটের ঘুরলাম দুজনে। আমার খুবই অবাক লাগছিল এই ভেবে যে কোন মেয়েকে নিয়ে মার্কেটে ঘুরব এটা আমার কল্পনায় ছিল কিন্তু তা যে বাস্তবে এত তাড়াতাড়ি আসবে কখনো ভাবিনি। সাড়ে নয়টা পর্যন্ত শুধুই ঘুরলাম।

তারপর ফিরে এলাম কলাতলিতে। সবাই ক্লান্ত। বসে আছে কাউন্টারে। আমি ভেবেছিলাম আমাদের দুজনকে না পেয়ে মনেহয় চিল্লাচিল্লি করবে। কিন্তু না ,তেমন কোন ভাবান্তর দেখা গেল না তাদের মাঝে।

তারা মনে হয় ধরেই নিয়েছে আমরা প্রেম করি। বাস ছাড়ল ঠিক সময়েই। এখন আর বসা নিয়ে কোন ঝামেলা হল না। বুঝতেই পারছেন কে কার সাথে বসল। গত দুই দিন সবারই খুব খাটুনি গেছে।

বাসের ঝাকুনিতে ঘুমিয়ে পড়ি সবাই। ঘুম ভাঙ্গে কুমিল্লায় এসে। হালকা খাবার খেয়ে নেই সবাই। খেয়ে আসার পর আর ঘুম ধরে না আমার। খেয়াল করলাম পুনমও জেগে আছে।

কেন জানি জানিনা আমার খারাপ লাগতে থাকে। অল্প সময়ের ব্যাবধানে কেমন একটা টান এসে গেছে তার প্রতি আমার। কাল সকাল হলেই আর দেখা হবে না তার সাথে। কি আজব এই নিয়তি। পুনম জানালা খুলে দেয়।

আমার ঠান্ডা লাগছিল। কিন্তু বন্ধ করতে ইচ্ছে করল না। যদি তার চুল উড়ে এসে মুখে পড়ে,খারাপ হবে না তাহলে!! বাস চলতে থাকে আপন গতিতে। ফজরের আযান শুনতে পাই। ঢাকার কাছেই এসে পড়েছি মনে হয়।

“আপনার ফোনটা দেবেন একটু”? পুনম আমাকে জিজ্ঞেস করে। আমি দেই। সে ফোন নিয়ে নাড়াচাড়া করে। “আমার জীবনের অত্যন্ত কিছু ভাল সময় আপনাদের সাথে কেটেছে আপনার কারণে। আপনাকে থ্যাংকস”।

আমি কি বলব বুঝে উঠতে পারিনা। তাকে বুঝতে দেই না আমার কতটা খারাপ লাগছে। বাস সায়েদাবাদ এসে থামে। পুনম নেমে যাবে এখানে। সে আমাদের অন্য সবাইকে ধন্যবাদ দেয়।

নেমে যাবার সময় আমার হাতে ফোন দিয়ে বলে, “আমার নাম্বার সেভ করে দিয়েছি। অপেক্ষা করব”। আমি কিছু বলি না। শুধু পাশ থেকে একটা প্যাকেট আর ব্যাগ তার হাতে ধরিয়ে দেই। তার জন্যই তো শাড়ি আর আচার গুলো কিনেছিলাম।

মনটা সহসাই ভাল হয়ে যায় আমার। বাস ছাড়ে সায়েদাবাদ থেকে, কিন্তু আমার মন পরে থাকে সেখানেই। আমরা নেমে যাই শাহবাগে। তারপর হলে ফিরে আসি। সুমন তার বৌকে দিয়ে আসে।

আমি বাড়ির জন্য কিছু কেনাকাটা করেছিলাম। আমার ছোটভাই বাড়ি যাবে বলেছিল। ওর হাতে সেগুলো দিয়ে দিলে ভালই হবে। দুপুরে বের হলাম ছোট ভাইয়ের কাছে যাব বলে। হল থেকে বের হয়ে কল দিলাম পুনমের নাম্বারে।

বন্ধ। হয়ত এখনো অন করেনি। আজিমপুর থেকে বাসে উঠব,যাব কলাবাগান। ৭ নং বাস আসে। প্রচন্ড ভিড়।

ঠেলাঠেলি করে উঠলাম। ওঠার সময় টের পেলাম কে যেন আমকে জোরে একটা ধাক্কা দিল। বুঝতে বাকি থাকল না আমার। তাড়াতাড়ি পকেটে হাত দিয়ে দেখি ফোন নাই। হায়রে ভাগ্য।

ফোনের জন্য আমার একটুও কষ্ট হচ্ছে না,কষ্ট হচ্ছে নাম্বারটা জন্য। অন্য কোথাও তো লেখা নেই সেটা। তাহলে …… তাহলে আর কি হবে! কিছুই হবে না। অপরিচিতা আমার অগোচরেই থেকে যাবে,ভাবলাম। আসলেই তাই হল।

এরপর আর কখনো কথা হল না তার সাথে। অপরিচিতাকে পুরোপুরি আবিস্কার করার আগেই আবার হারিয়ে ফেললাম। সে অপরিচিতাই থেকে গেল। আচ্ছা,সে কি আসলেই আমার কাছে অপরিচিতা?নাকি ক্ষণিকের পরিচয়ে আমার অনেক পরিচিতা!! আমিও হাল ছাড়ার পাত্র নই। নাম্বার হারিয়ে ফেলেছি তো কি হয়েছে।

সে তো ঢাকা ভার্সিটিতেই ভর্তি হবে বলে ঠিক করছে। তাহলে আমি খুজে বের করবই তাকে। পরদিন ভার্সিটিতে যাব বলে ঠিক করলাম। তখনি মনে হল ওদের তো ভর্তিই শুরু হয়নি তাহলে? তাহলে আর কি –অপেক্ষা আমাকেই করতে হবে। আচ্ছা,পুনম তো আমার নাম্বার থেকে ওর মাকে কল দিয়েছিল ।

সেখান থেকে যদি নাম্বার টা বের করে আমাকে কল দিত!আমিতো সেদিনই আবার সিমটা তুলেছি। না, সে আর কল দিল না। আসলে আমার উচিত ছিল তাকে আমার নাম্বারটা লিখে দেয়া। আমি অপেক্ষায় থাকলাম কবে ওদের ভর্তি শুরু হয়। নিয়মিত খোজ নিতে থাকলাম।

অবশেষে আমার অপেক্ষার পালা শেষ হল। শুনেছি ওদের ভর্তি শেষ। ওর রোল নাবার দিয়ে খোজ নিয়েছি যে সে পিওর ফিজিক্সে ভর্তি হয়েছে। আমি একদিন সময় করে ওদের ডিপার্টমেন্টের সামনে গেলাম যদি দেখা পাই। সেদিন পাইনি।

তার দুদিন পরেই নবীন বরণ হবার কথা শুনে আসি। আমার যেন আর এই দুদিন সময় কাটেনা। আমি ওদের নবীন বরণের ঠিকানা আর সময় জোগাড় করে গেলাম। না কাউকে তো দেখিনা পুনমের মত। সত্যি বলতে কি ওর চেহারাটাও ঠিক মনে করতে পারিনা এখন।

ঝাপ্সা হয়ে আসে সব। খুব কষ্ট হয়, খারাপ লাগে মেয়েটার জন্য। আমি বসে আছি। সামনে দিয়ে অনেকে আসে যায়। কাউকে তার মত দেখিনা।

হঠাত সিড়িতে খেয়াল করি একদল মেয়ে। শাড়ি পরা। আমার আর চিনতে ভুল হল না শাড়িটাকে। উঠে দাড়ালাম। মনে হল ডাক দিই, “পুনম”।

ঠিক তখন কি যেন মনে হল আমার। ডাক দিলাম না। পিছন ফিরে ঘুড়ে দাড়ালাম যেন সে আমাকে দেখতে না পারে। তখন মনে হল ভালই তো কিছু সময় কেটেছে তার সাথে। তার সেই ভালোলাগা মুহূর্তগুলো ভালোলাগা হয়েই থাকনা সারাজীবন।

আমি ফিরে আসি। তারপর আর যোগাযোগ করার চেষ্টা করিনি। সামনাসামনি দেখাও হয়নি কোনদিন আমাদের। অবশ্য আমি একদিন দেখেছিলাম তাকে টি.এস.সি. তে। অনেকের সাথে।

আগের চেয়ে মনে হল সুন্দর হয়েছে! এখন আমি ভাল আছি। ভাল আছি আমার পরিচিত অপরিচিতার স্মৃতির সাথে।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।