আমি পূজারী,শুধুই তোমার প্রেমের
Click This Link অপরিচিতা(১ম পর্ব)
Click This Link অপরিচিতা(২য় পর্ব)
Click This Link অপরিচিতা(৩য় পর্ব)
খুব সকাল বেলা সবার চেচামেচিতে ঘুম ভেঙ্গে গেল। আমার আরো ঘুমের দরকার ছিল। পাশ ফিরে শুয়ে পড়লাম। না,ঘুম ধরে না আর। এত সরোগোলের মাঝে কি আর ঘুমানো যায় শান্তিমত!
সবার কথা হল- সূর্যডোবা দেখতে পারিনাই তো কি হয়েছে,সূর্যোদয় দেখবে।
আমি বললাম যে আমি দেখব না। কিন্তু কে শোনে কার কথা। আমাকে যেতেই হবে তাদের সাথে।
“আমি যাব” বলে বালিশ মাথার উপর দিয়ে উপুড় হয়ে শুয়ে পড়ি। দেখি কে যেন পিঠে টোকা দিচ্ছে।
আমি তার হাত ধরে সরিয়ে দেই। না,আবার টোকা দেয় দেখি। ঝাড়ি দেবার জন্য তাড়াতাড়ি উঠে বসি।
দেখি পুনম।
মুচকি হাসি উপহার দিয়ে বলল, “যাবেন না আমাদের সাথে সূর্যোদয় দেখতে”?
এমনভাবে বলল যে আমি আর না করতে পারলাম না।
আমি বাধ্য ছেলের মত মাথা নেড়ে বলি, “যাব”।
উঠে জুতা পড়লাম। সবাই চলে গেছে। পুনম আমাকে না নিয়ে যাবে না। আমিও তাকে দেরি করানোর জন্য আস্তে আস্তে বের হই।
কাছেই সী বিচ। দুজনে পাশাপাশি হাটছি। কারো মুখে কোন কথা নেই। আমি মনে মনে ভাবি-আমার মনে যা তার মনেও কি তাই?পরে আবার ভাবি-আচ্ছা আমার মনে কি?হা হা হা।
বীচে গিয়ে দেখি মাসুদ সবাইকে দাড় করিয়ে ছবি তুলছে।
আমিও গিয়ে দাড়ালাম। পুনম গেল না। ঐ যে একটাই কারণ!
ছবি তোলা শেষ হলে আমি একটা চৌকিতে বসে পড়ি। ঘুম ঘুম ভাবটা এখনো যায় নি। হেলান দিয়ে বসলাম।
একটু পরে শুয়ে পড়লাম। চাদরটা বিছিয়ে দিলাম আমার উপড়ে।
ঘুমের ঘোরেই বুঝতে পারলাম কে যেন এসে বসল আমার পাশে। জানি কে হবে। তারপরেও কৌতুহল মেটানোর জন্য মাথা বের করে দেখি আসলেই সে।
“কি ব্যাপার এসে পড়লেন যে”!
“না,এমনি। এখান থেকেও তো সুর্য দেখা যায়”।
“হ্যা,তা অবশ্য ঠিক”।
পুনম উঠে যায় আমার পাশ থেকে। আবার ফিরে আসে।
জিজ্ঞেস করে, “আচ্ছা একটা সত্যি কথা বলবেন”?
“কি”?
“আপনি কি আমার উপরে কোন কারনে বিরক্ত?আমি কি আপনাদেরকে খুব ডিস্টার্ব করে ফেলেছি”?
“আরে না না। তা হবে কেন। আমার এমনিতেই ভাল লাগছে না। তাই বললাম আরকি। চল ,তোমার সাথে সূর্যোদয় দেখব”।
পুনমের সাথে আমি সাগরের পাড়ে দাড়াই যেখানে এসে ঢেউ থামে। আমার জুতা ভিজে যায়। তারপরেও পিছু আসতে ইচ্ছে করল না। কেন জানি একটা কষ্ট এসে ভর করল আমার উপরে। এই মেয়েটিকে কাল থেকে আর দেখতে পাব না ভাবতেই মনটা আরো খারাপ হয়ে গেল।
সবাই চলে গেছে। পুনম বলল, “যাবেন না?”
“তুমি যাও,আমি একটু পরে আসছি”।
“তাহলে আমিও থাকি আপনার সাথে আরো কিছুক্ষণ”?
“আচ্ছা থাক”। আমি তো মনে মনে এটাই আশা করছিলাম।
***
রেজা আর আসিব মিলে বজরা ঠিক করতে গেছে।
সুমন আর লিয়া গেছে কেনাকাটা করতে। বাকিরা এদিক সেদিক ঘুরতেছে। আমি আর পুনম চুপচাপ বসে আছি সাগর পাড়ে।
সকাল অনেক হয়েছে। খিদে লাগছে বেশ।
খাবার কেনা হয়েছে,বজরা ছাড়লে দেয়া হবে।
কিছুই বলার নেই আমাদের যেন। মাঝে মাঝে আমি তার দিকে একবার তাকাই,সে আমার দিকে আরেকবার তাকায়। দুজনেই লজ্জা পাই্,তাওপরেও আবার তাকাই।
“এই যে নবজুটি,আমাদের নৌকা ঘাটে আছে,চলুন তাড়াতাড়ি”।
ইমরান এসে বলে যায়।
“চল,যাওয়া যাক”। আমি বলি।
রুমে গিয়ে কিছু টাকা নিয়ে নেই। বিশাল বড় বজড়া,আমরা মাত্র দশ জন।
ভাড়া চড়া নিয়েছে আমাদের কাছ থেকে।
যাচ্ছি নিঝুম দ্বীপ। সমুদ্রের উপরে নৌকায় যাচ্ছি,ভাবতেই গা শিউরে উঠলো আমার। আমার খুব ভয় লাগতে থাকে। আমাদের মত অনেক নৌকা দেখা যায় দেখি।
সবাই নিঝুম দ্বীপে যাচ্ছে মনে হয়।
নৌকা পাড়ের কাছ দিয়ে যেতে থাকে। দূরে সেন্ট মার্টিন দেখা যাচ্ছে। ঝাউ গাছের বাগানের মাঝে লাল লাল সুন্দর বাড়ি দেখা যাচ্ছে। মাঝি বলল,এখানেই নাকি “দারূচিনি দ্বীপ” সিনেমার শ্যুটিং হয়েছিল।
নৌকার ভ্রমনটা ভয় লাগলেও খারাপ হল না। নৌবাহিনীর জাহাজ টহল দিচ্ছে দেখলাম। ঝাক ঝাক পাখি মাছ ধরায় ব্যস্ত। মাঝে মাঝে শুশুক দেখা গেল ভেসে বেরাচ্ছে পানির উপরে।
আমি নৌকার গলুইয়ে গিয়ে বসলাম।
মাঝে যখন বসে ছিলাম তখন বুঝতে পারি নাই কত বড় বড় আর উচু উচু ঢেউয়ের উপর দিয়ে আমরা যাচ্ছিলাম। প্রত্যেক ঢেউয়ের তালে তালে আমাদের নৌকা একবার উপরে উঠছিল আর একবার নামছিল। সবাই শক্ত করে ধরে বসে থাকলাম।
পুনমের শখ জাগল আমার পাশে গলুইয়ে বসবে। কিন্তু সেখানে দুজন বসার মত জায়গা আছে বলে আমার মনে হল না।
তার পরেও তার শখ মেটানোর জন্য তুলতে হল। চাপাচাপি করে বসলাম। এবার আর নিরাপদ দুরত্ব বজায় রাখা গেল না;আমার ইচ্ছাও ছিল না।
একটা করে উচু ঢেউ আসে,নৌকা দুলে ওঠে আর পুনম আমার হাত শক্ত করে ধরে। ভয় পেয়ে চিতকার করে ওঠে।
আমার তখন আর ভয় লাগে নি। মনে হচ্ছিল আমি নিজেই যদি ভয় পাই তবে আমকে আশ্রয় করে যে থাকবে তার ভয় দূর করবে কে!মজা না!!হা হা হা।
কিছুক্ষণ পর ও নেমে গেল গলুই থেকে। কবির এসে বসল আমার কাছে। ফোড়ন কাটল, “মামা,কাহিনী কি তাহলে ফাইনাল?”
আমি লজ্জা পেলাম।
কিছু না বলে পানির দিকে তাকিয়ে থাকলাম। মুচকি একটা হাসি দিলাম।
কাছেই দেখলাম একটা জেলে নৌকা মাছ ধরছে। আমরা আমাদের মাঝিকে বললাম সেদিক দিয়ে যেতে। আমরা কাছ দিয়ে গেলাম।
আমাদের নৌকা থেকে জেলে নৌকার ভেতরটা দেখা যাচ্ছিল। এত পরিমান মাছ আমি জীবনে কখনো দেখিনি।
ঘণ্টা খানিকের মাঝেই পৌছে গেলাম নিঝুম দ্বীপে। নামার সময় দেখলাম স্বচ্ছ পানি,নিচ পর্যন্ত দেখা যায়। পানির নিচে প্রবাল,তার মাঝে রঙ বেরং এর মাছের ঝাক।
অত্যন্ত চমতকার জায়গা।
নেমে হাটা দিলাম আমরা। রোদ উঠেছে বেশ। পাথরের উপর দিয়ে হেটে গেলাম কেয়া বনের দিকে। কেয়া বনের শুরুর দিকে কয়েকটা দোকান।
বিড়ি সিগারেট পাওয়া যায়। কোল্ড ড্রিঙ্কসও দেখলাম,বালতির পানিতে ডুবিয়ে রাখা। আমরা সবাই চিপস কিনলাম।
আমি এর আগে কেয়া বন দেখিনি। অন্য কেউ দেখেছে বলে মনে হয় না।
গাছগুলো ১০/১২ ফুট লম্বা। গাছে আবার কাটা আছে।
কেয়া বনের পাশে দেখি রেজা আর আসিব কি যেন খাচ্ছে। কাছে গিয়ে দেখি কাকড়া । আমারও খেতে ইচ্ছে করল।
নিলাম একটা। টেস্ট করা দরকার কেমন লাগে। অন্তত মানুষকে যেন বলতে পারি একবারের জন্য হলেও কাকড়া খাইছি।
প্লেটে একটা কাকড়া হলুদ দিয়ে মাখনো। তেল দিয়ে ভেজে দিল আমাকে।
হাতে নিয়ে কেমন জানি গা গুলিয়ে গেল আমার। তারপরেও খাব ঠিক করলাম। কিন্তু পুনমের জন্য আর খাওয়া হল না।
তার এক কথা,আমি কাকড়া খেলে সে আমার সাথে আর কথা বলবে না। কি আর করা,তাকে খুশি করার জন্য খেলাম না।
সত্যি কথা বলতে কি,নিজেরও খেতে ঘেন্না লাগছিল।
সবাই ছড়িয়ে ছিটিয়ে গেছে ইতিমধ্যে। মিলু দেখলাম খালি দৌড়াইতেছে। ব্যাটার আবার ফিলিংস বাতিক আছে কন কিছু ভাল লাগলেই তার ফিলিংস ওঠে।
কেয়াবনের পাশ কাটিয়ে আমি,পুনম আর মাসুদ প্রবাল দেখার জন্য ঘাটের উলটা দিকে গেলাম।
জুতা খুলে সবাই নেমে গেলাম পানিতে। পরে বুঝতে পারলাম জুতা পরেই নামতে হবে। তা না হলে পা কেটে যাবার চান্স আছে।
জুতা পরতে এসে মাসুদ বলল যে সে আর নামবে না। জুতা ছিড়ে গেলে পরে আবার সমস্যা হবে তাই সে চলে গেল।
আমার বাংলা সিনেমার কথা মনে পড়ে গেল। ‘তোরা বসে গল্প কর আমি নাস্তা নিয়ে আসি। ’আমার খুব হাসি পেল।
মাসুদ চলে গেলে আমরাও সিদ্ধান্ত নিলাম আমরাও নামব না। আমরা দুজনে কিছু শুকনো পাতা জোগাড় করে একটা পাথরের উপর বসলাম পানিতে পা ভিজিয়ে।
পুনম পানিতে পা দিয়ে ঢেউ খেলাচ্ছিল। প্রথম প্রথম ভেবেছিলাম অনেক কথা বলব। কিন্তু মুখ থেকে কোন শব্দই বের হচ্ছিল না।
তারপরেও আমি নির্লজ্জের মত জিজ্ঞেস করলাম, “আচ্ছা পুনম,এখান থেকে যাবার পরে আমার কথা মনে পড়বে না?”
ও আমার দিকে না তাকিয়ে বলল, “কেন, আপনাকে মনে পরবে কেন?” আমি খুবই হতাশ হলাম।
তারপর সে আমার দিকে তাকিয়ে বলল, “অনেক বেশি মনে পড়বে।
সবসময় মনে পড়বে”।
আমার তখন কেমন যে লাগল তা বলে বোঝাতে পারব না।
আমি ওর দিকে পাশ ফিরে বসলাম। ইচ্ছে হল তার চোখে দিকে তাকাব। পারলাম না।
অজানা সংকোচে।
সে তার হাতের ভেতর থেকে একটা ব্রেসলেট বের করে আমার হাতে পরিয়ে দিল। আমি খুবই অবাক হলাম। পরালো দেখে নয়, কই পেল তাই ভেবে।
জিজ্ঞেস করলাম, “কই পেলে এটা?”
ও উত্তর দিল, “কাল আপনারা যখন বের হয়েছিলেন সন্ধ্যার পর তখন আমি হোটেলের পাশে দোকান থেকে কিনেছি।
”
“টাকা পেলে কই?”
“লিয়া আপুর কাছ থেকে ধার নিয়েছি”।
ধমক দিতে যাব এমন সময় আমার ফোনে মেসেজ আসল। ইমরানের মেসেজ। নৌকায় যেতে বলেছে।
পুরো দ্বীপ ঘুরে দেখা হল না আর।
আমাদের আবার আজ রাতেই ফিরতে হবে। তাই তাড়াতাড়ি নৌকায় ফিরে এলাম সবাই।
এরপর কেমন করে যে দুপুর পার করলাম মনে নেই। গোসল-খাওয়া-রেডি হওয়া-লঞ্চে ওঠা সবকিছু যেন চোখের পলকেই পার হয়ে গেল।
লঞ্চে উঠেই আমাকে একপাশে ডেকে নিয়ে গেল আসিব।
“দোস্ত,মামুনের কথা মনে আছে তো। অর্পিতা কিন্তু এখনো রাজী হয় নি!”না আমি এখন আর কিছু মনে করতে চাই না।
খুব ক্লান্ত লাগছে। লঞ্চে দিলাম এক ঘুম। এক ঘুমে টেকনাফ।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।