নিজের বিষয়ে কিছুই বলিবার নাই
আসসালামু আলাইকুম,
প্রতিবাদের ভাষা লিখিবার কতোই না পদ্ধতি মানুষ নিজের গরজে আবিষ্কার করিয়াছে!!!
আমার মুখ বন্ধ রাখিবার হুকুম জারী হইয়াছে। আমার হাতে কোনো প্রেস নাই প্রেসে যাইবার অর্থ নাই। কিন্তু অন্যায়ের প্রতিবাদ করিতেই হইবে। মানুষকে অন্যায়ের বিষয়ে জানাইতে হইবে আবার জাগাইতেও হইবে। তখন উপায়? উপায় বাহির হইলো।
কী সেই উপায়? উপায় হইলো : দেয়াল লিখন।
আমাদের দেশে ষাটের দশকে কতিপয় বামপন্থী ছাত্রনেতাগণ এই দেয়াল-লিখনের একটা ছদ্মবেশি নাম দিয়াছিলেন। তাহা হইতেছে: চিকা মারা। এক সময় এই চিকা মারিয়া হাত দূর্গন্ধ করিয়া ফেলিয়াছিলেন বলিয়াই সম্ভবত ষাটের দশকের সেইসব ছাত্র নেতাগণ দেশ আজ সমাজের মাথায় চড়িয়া কাঠাল ভাঙিয়া খাইতেছেন। তাহাদের খাইতে দিন।
উহারা বহুদিন অভুক্ত ছিলেন।
আশির দশকের শুরুতে পিতামাতার সহিত ঘুরিবার সময় দেখিতাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ভবনের দেয়ালে লেখা রহিয়াছে : তাজুল হত্যার পরিণাম/ বাংলা হবে ভিয়েতনাম।
ভিয়েতনামের কাহিনী শুনিয়াছি কিন্তু তাজুলকে চিনিতাম না। পরে জানিয়াছি : তিনি ছিলেন মস্কো-মার্কা কমিউনিষ্ট পার্টির শ্রমিক নেতা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র।
বাংলাদেশ ভিয়েতনাম হয় নাই। মাঝখান হইতে তাজুলের কমিউনিষ্ট পার্টি ডিগবাজি খাইয়াছে। তাহাদের ভিতর একতার প্রাক্তন সম্পাদক সাহেবও রহিয়াছেন।
দেয়ালে কখনো দেখিতাম চেয়ারম্যান (!?) মাওয়ের বাণী খোদাই করা : 'কোনো কোনো মৃত্যু বালিহাসের পাখার চাইতেও পলকা কোনো মৃত্যু থাই পাহাড়ের চেয়েও ভারী। '
আমার এক চাচা কহিয়াছিলেন উহা পিকিং-পন্থীদের কাজ-কারবার।
এই দেয়াল লিখনটি মনে দাগ কাটিয়া রহিয়াছে। চিনাপন্থীদের ডিগবাজী খাইবার কথা বলিয়া শেষ করা যাইবে না। আমার উদ্দেশ্যও তাহা নয়।
কখনো দেখিতাম ''এক নেতা এক দেশ বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ'' নামক ফাসীবাদী দেয়াল লিখন।
আবার জিয়াপন্থীরা লিখিতেন: ' টেকনাফ থেকে তেতুলিয়া সবাই বলে শহীদ জিয়া।
' সেই জিয়াপন্থীরা হাওয়া-ভবন বানাইয়া শহীদ জিয়ার ভাবমূর্তিকে বিনা আয়াসে হাওয়ায় ভাসাইয়া দিয়া ছাড়িলো।
আবার স্বৈরাচারী এরশাদের প্রতি ঘৃনাও দেখিয়াছি : এক দফা এক দাবী এরশাদ তুই কবে যাবি?" জল্লাদ এরশাদ ক্ষমতার বাইরে থাকিয়াও আজ ক্ষমতার কেন্দ্রে।
এই হইতেছে আমাদের নিয়তি।
নব্বই দশকের শেষে সম্ভবত ১৯৯৮ সালের দিকে একটা দেয়াল লিখন পাঠ করিয়া চমকাইয়া উঠিয়াছিলাম। কলা বাগানের দিকে একটা রাস্তায় হঠাৎ চোখে পড়িলো : ''কষ্টে আছি.....আইজুদ্দিন।
''
তাহার পর অনেকগুলি বছর পাড় হইয়া গিয়াছে। কে এই আইজুদ্দিন কী তার কষ্ট কিছুই জানিতে পারি নাই। কিন্তু সময়ে-অসময়ে দীর্ঘশ্বাসের সহিত বাহির হইয়া পড়ে : কষ্টে আছি, আইজুদ্দিন।
আমাদের সকলের মনের কথা এইভাবে আর কেহ বলিতে পারে নাই। আইজুদ্দিন কোনো মতবাদের দাসত্ব করিতো না।
বামপন্থীদের তো নয়ই। সেই কারণেই সে এইভাবে লিখিতে পারিয়াছিলো।
ভ্রাতা আইজুদ্দিন যেখানেই থাকো ছহি-ছালামতে থাকিও।
তোমার কষ্টের কথা অনেকেই ভুলিয়াছে কিন্তু সকলে ভোলে নাই।
সকলে ছহি-ছালামতে থাকিবেন।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।