আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মিসির আলি রিমান্ডে

'কিছু মাতাল হাওয়ার দল... শুনে ঝড়ো সময়ের গান... এখানেই শুরু হোক রোজকার রূপকথা... / কিছু বিষাদ হোক পাখি... নগরীর নোনা ধরা দেয়ালে কাঁচ পোকা সারি সারি... নির্বান নির্বান ডেকে যায়...'

১। মিসির আলী যে ঘরটাতে বসে আছেন সেটাতে মাত্র একটা জানালা। দরজাও একটা। দুটোই তালা দেওয়া। অবশ্য তালা ছাড়া থাকার কথাও না।

কারণ তিনি এখন রিমান্ডে আছে। রিমান্ডের আসামীকে নিশ্চয়ই কেউ দরজা জানালা খোলা ঘরে রেখে যাবে না!! রিমান্ড ব্যাপারটা সম্পর্কে মিসির আলীর খুব একটা ধারনা নেই। সত্য বলার জন্য নাকি এখানে মানুষকে কঠিক নির্যাতন করা হয়। অপরাধ স্বীকার করার জন্য কেনো একটা মানুষকে কেনো নির্যাতন করা হবে? অপরাধ প্রমান হবার পরে না হয় শাস্তি টাস্তি দেওয়া যেতে পারে। ব্যাপারটা দুঃখ জনক।

প্রকৃতির বেশিরভাগ ব্যাপার স্যাপারই দুঃখজনক। এই যেমন তার রিমান্ড পর্যন্ত আসাটাও একটা চরম দুঃখ জনক ব্যাপার। রুপা নামের একটা মেয়ের কিছু মানষিক সমস্যা ছিলো। রুপার হাসবেন্ড হিমু রুপাকে নিয়ে এসেছিল মিসির আলীর কাছে। রুপার সমস্যাটা ছিলো এরকম।

-- তার বয়ফ্রেন্ড হিমু হঠাৎ ভ্যাগাবন্ড লাইফের ইতি টেনে পুলিশের চাকরীতে যোগ দেয়। তারপরেই সে রুপাকে বিয়ের প্রস্তাব দেয়। রুপার বাবা আগে হিমুকে সহ্য করতে না পারলেও পুলিশ অফিসার হওয়ায় তিনি বিয়েতে রাজি হয়ে যান। বিয়ের পরে ঘটতে থাকে আসল ঘটনা। রুপা প্রতি রাতেই স্বপ্নে দেখে তার হাসবেন্ড হিমু তাকে ছুরি দিয়ে জবাই করে ফেলছে!! একদিন সকালে সত্যি সত্যি রুপা তার গলায় রক্ত দেখতে পেলো।

রুপার হাসবেন্ড রুপাকে নিয়ে এসেছিলো মিসির আলীর কাছে। তার কিছুদিন পরে রুপা সত্যি সত্যি খুন হয়ে যায়। মিসির আলি মোটামোটি নিশ্চিত যে খুনটি হিমুই করেছে। কিন্তু পরদিন পুলিশ এসে মিসির আলিকেই ধরে নিয়ে গেলো। তার অপরাধ, রুপা নামক মেয়েটির সাথে তার মেলামেশা ছিলো।

কিন্তু মেয়েটির বিয়ে হয়ে যাওয়াটা তিনি মেনে নিতে পারেন নি। তাই তাকে খুন করেছেন। প্রাথমিক প্রমান সরুপ মিসির আলীর ঘরে রুপার লেখা বেশ কয়েকটি চিঠি পাওয়া গেলো। মিসির আলি অবাক হলেন না। প্রকৃতি মাঝে মাঝে মানুষের সাথে খেলতে পছন্দ করে।

২। দরজা খোলে গেলো। ঘরে প্রবেশ করলো হিমু। মিসির আলি হিমুর দিকে তাকালেন। তার গায়ে খাকি পোষাক।

পুলিশে যোগ দেওয়ার আগে তিনি হিমুকে যতবারই দেখেছেন সে ছিলো হলুদ পাঞ্জাবি পরা আর পায়ে জুতা ছাড়া। পুলিশের পোষাকে তাকে কিছুটা অদ্ভুত লাগছে। -স্যার, ভয় পাচ্ছেন? মিসির আলি বললেন, “না, তবে আমার ধারণা তুমি ভয় পাচ্ছো" -ভুল বললেন স্যার। ভয় পাচ্ছি না। কারণ আমার ভয় পাওয়ার কথা না।

ভয় পাওয়ার কথা আপনার" -”না। ভয় পাওয়ার কথা তোমার, এবং ভয় তুমি পাচ্ছো। আমার ধারণা রুপাকে খুন করার পর থেকেই ভয়টা তোমার ভিতরে ঢুকে গেছে। " -আপনি ভিষণ ত্যাদড় লোক স্যার। তবে আমি আপনার থেকে আরো তিন চামচ বেশি ত্যাদড়।

আপনার ত্যাদড়ামী ছুটাবার ব্যাবস্তা আমি প্রায় করে ফেলেছি। মিসির আলী মুচকী হাসলেন। -আপনি বেচে থাকলে আমি ধরা খাবো। কারণ আমার আউয়াল থেকে আখের পর্যন্ত আপনি সব জানেন বলে আমার ধারণা। স্যরি, ধারনা না।

আমি নিশ্চিত। -তুমি ভুল জানো -ভুল জানি আর শুদ্ধ জানি সেটা ব্যাপার না। আসল ব্যাপার হলো আপনাকে "ক্রসফায়ার" করা হবে। আজ রাতেই। ভালো মন্দ কিছু খেতে মন চাইলে বলতে পারেন।

মিসির আলী কিছুই বললেন না। খাওয়ার প্রতি তার লোভ কোন কালেই ছিলো না। ৩। মিসির আলি হাঠছেন। তার সাথে চার জন পুলিশ।

সম্ভবত তারা যাচ্ছেন সামনের নদিটার কাছেই। নদির পাড় নাকি ক্রস্ফায়ারের জন্য অতি উত্তম যায়গা। মিসির আলীর অনেক আগে থেকেই ইচ্ছা ছিলো মৃত্যুর সময় এক সাথে আকাশ আর নদি দেখার। (এই ফাইজলামীটার জন্য মিসির আলী ও হিমু ভক্তদের কাছে করজোড়ে ক্ষমা চাচ্ছি)

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।