হিমু একটি হুমায়ুন আহমেদ রচিত জনপ্রিয় কাল্পনিক চরিত্র। হিমু একজন বেকার যুবক যার আচরণ কিছুটা অজাগতিক। হিমুর প্রথম উপন্যাস ময়ূরাক্ষী। এর প্রাথমিক সাফল্যের পর হিমু বিচ্ছিন্নভাবে বিভিন্ন উপন্যাসে প্রকাশিত হতে থাকে। হিমু ও মিসির আলি হুমায়ুন আহমেদ সৃষ্ট সর্বাধিক জনপ্রিয় দুটি কাল্পনিক চরিত্র।
কিছু নারী-পুরুষ হিমুকে সত্যি বলে মনে করেন। আবার কোন কোন হিমুভক্ত পাঠক নিজেকে হিমু বলে দাবি করেন। হুমায়ুন আহমেদ সৃষ্ট এই চরিত্র অনুসারে হিমুর আসল নাম হিমালয়। এ নামটি রেখেছিলেন তার বাবা।
লেখক হিমুর বাবাকে বর্ণনা করেছেন একজন বিকারগ্রস্ত মানুষ হিসেবে; যার বিশ্বাস ছিল ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার যদি প্রশিক্ষণ দিয়ে তৈরি করা যায় তবে একইভাবে মহাপুরুষও তৈরি করা সম্ভব।
তার একটি মহাপুরুষ তৈরির স্কুল ছিল যার একমাত্র ছাত্র ছিল তার সন্তান হিমু। হিমুর পোশাক হল পকেট বিহীন হলুদ পাঞ্জাবী। ঢাকার পথে-পথে উদ্দেশ্যহীনভাবে ঘুরে বেড়ানো তার কর্মকাণ্ডের মধ্যে অন্যতম। মাঝে মাঝে তার মধ্যে আধ্যাত্মিক ক্ষমতার প্রকাশ দেখা যায়। যদিও হিমু নিজে তার কোন আধ্যাত্মিক ক্ষমতার কথা স্বীকার করে না।
হিমুর আচার আচরণ খুবই বিভ্রান্তিকর। বিভিন্ন পরিস্থিতিতে তার প্রতিক্রিয়া অন্যদেরকে বিভ্রান্ত করে। এবং এই বিভ্রান্ত করা হিমুর অত্যন্ত প্রিয় একটি কাজ। উপন্যাসে হিমুর কিছু ভক্তশ্রেণীর মানুষ থাকে যারা হিমুকে মহাপুরুষ মনে করে। এদের মধ্যে হিমুর খালাতো ভাই বাদল অন্যতম।
মেস ম্যানেজার বা হোটেল মালিক- এরকম আরও কিছু ভক্ত চরিত্র প্রায় সব উপন্যাসেই দেখা যায়।
হিমুর একজন বান্ধবী আছে, যার নাম রূপা; যাকে ঘিরে হিমুর উপন্যাসে অজানা রহস্যময়তা আবর্তিত হয়। হিমুর প্রকৃত নাম হিমালয়। হিমু যখন ছোট ছিল তখন তার বাবা তার নাম রেখেছিলেন হিমালয়, যা হিমালয় পর্বতের ন্যায় মহত্ব প্রকাশ করে। হিমুর বাবা তাকে একজন মহাপুরুষ হিসাবে গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন।
তাই তিনি তার ছেলের এমন নাম রেখেছিলেন। পরে ছাত্রজীবনে এই নাম নিয়ে তাকে প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়েছিল। তার দাদা (পিতামহ) তার অন্য নাম রাখতে চেয়েছিলেন, কিন্তু হিমু তার বাবার দেয়া নামই রাখে। হিমু ঢাকা কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট পাশ করে। এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এ পড়েছে এমন ই বলা হয়েছে।
পাশ করেছে কিনা কোন বিষয় তা উল্লেখ করা হয়নি। হিমুর বয়স ১৮-২৫ বছরের মধ্যে। সে দেখতে খুব সুন্দর নয়,বরং তার পোশাক ও গেট-আপ বিরক্তিকর। সে সবসময় হলুদ রঙের পাঞ্জাবী (অধিকাংশ সময়ে যেটার পকেট থাকে না) পরে। রাতের বেলায় রাস্তায় হাঁটাহাঁটি করে।
তার খালাতো ভাই/ফুপাতো ভাই বাদল তার অন্ধভক্ত। যে তার আধ্যাত্মিক শক্তির প্রতি নিঃসন্দিহান, এবং তাকে অনুসরণ করার চেষ্টা করে।
হিমু মাঝে মাঝে ভবিষ্যতবাণী করে যা প্রায় সময়েই মিলে যায়। সে তার যুক্তি-বিরোধী মতানুসারে কাজ করে, এবং মানুষকে বিভ্রান্ত করে দেয়। হিমুর জীবন যাপন অনেক অদ্ভুত।
তার জীবন অনেকটা বাউন্ডুলে ধরনের। সে মেসে তার বন্ধু-বান্ধবের সাথে থাকে। তার কোনো পেশা নেই। হিমুর বেশকিছু বিত্তবান আত্মীয় রয়েছে। হিমু প্রায়ই তার বিত্তবান আত্মীয়দের কাছ থেকে উপহার এবং অর্থসাহায্য পায়।
মিসির আলী কাহিনীগুলো রহস্যমাত্রিক। মিসির আলির কাহিনীগুলো ঠিক গোয়েন্দা কাহিনী নয়, কিংবা 'ক্রাইম ফিকশন' বা 'থ্রিলার'-এর মতো খুনি-পুলিশের ধাওয়া-পাল্টা-ধাওয়া নয়, কিংবা বরং মনস্তাত্ত্বিক, বিজ্ঞাননির্ভর এবং প্রচন্ড যুক্তিনির্ভর কাহিনীর বুনটে বাঁধা। বরং অনেক ক্ষেত্রে একে রহস্যগল্প বলা চলে। চারিত্রিক দিক দিয়ে মিসির আলি চরিত্রটি হুমায়ূন আহমেদের আরেক অনবদ্য সৃষ্টি হিমু চরিত্রটির পুরোপুরি বিপরীত। তরুণ হিমু চলে প্রতি-যুক্তির (anti-logic) তাড়নায় ; অপরপক্ষে বয়োজ্যেষ্ঠ মিসির আলি অনুসরণ করেন বিশুদ্ধ যুক্তি (pure logic)।
এই যুক্তিই মিসির আলিকে রহস্যময় জগতের প্রকৃত স্বরূপ উদঘাটনে সাহায্য করে। সেসব কাহিনীর প্রতিফলন ঘটেছে মিসির আলি সম্পর্কিত প্রতিটি উপন্যাসে।
ঔপন্যাসিক হুমায়ূন আহমেদ মিসির আলি চরিত্রটির ধারণা প্রথম পেয়ে যান যুক্তরাষ্ট্রের নর্থ ডাকোটার ফার্গো শহরে, স্ত্রীর সাথে গাড়িতে ভ্রমণের সময়। চরিত্রটির ধারণা মাথায় চলে এলেও তিনি মিসির আলি চরিত্রের প্রথম উপন্যাস "দেবী" লিখেন এই ঘটনার অনেকদিন পর। উপন্যাসের কাহিনী অনুসারে মিসির আলি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের "মনোবিজ্ঞান" (Psychology) বিভাগের একজন সহযোগী অধ্যাপক (খন্ডকালীন)।
শুধুমাত্র একজন শিক্ষক হিসেবেই নন, তাঁর অনুসারীদের কাছেও তিনি বেশ মর্যাদাবান একজন চরিত্র হিসেবে উল্লিখিত। মিসির আলির বয়স ৪০-৫০-এর মধ্যে। তাঁর মুখ লম্বাটে। সেই লম্বাটে মুখে এলোমেলো দাড়ি, লম্বা উসখো-খুসকো কাঁচা পাকা চুল। প্রথম দেখায় তাঁকে ভবঘূরে বলে মনে হতে পারে; কিছুটা আত্মভোলা।
তাঁর হাসি খুব সুন্দর, শিশুসুলভ। মিসির আলির স্মৃতিশক্তি বেশ ভালো ।
মিসির আলি একজন ধূমপায়ী। তিনি 'ফিফটি ফাইভ' ব্র্যান্ডের সিগারেট খান। তবে তিনি প্রায়ই সিগারেট ছেড়ে দেবার চেষ্টা করেন।
তাঁর শরীর বেশ রোগাটে আর রোগাক্রান্ত। মিসির আলির অনেকগুলো পারঙ্গমতার মধ্যে অন্যতম হলো তিনি যে কাউকে, বিশেষ করে ঠিকানাওয়ালা মানুষকে, খুব সহজে অজানা স্থানেও খুঁজে বের করতে পারেন। মিসির আলি মূলত নিঃসঙ্গ একজন মানুষ, মোটামুটি সব উপন্যাসে তাঁকে এভাবেই রূপায়িত করা হয়। কিন্তু "অন্য ভূবন" উপন্যাসে মিসির আলি বিয়ে করে ফেলেন বলে উল্লেখ আছে। কিন্তু পরবর্তি উপন্যাসগুলিতে আবার তাঁকে নিঃসঙ্গ একজন মানুষ হিসেবে উপস্থাপন করা হয়।
এপ্রসঙ্গে লেখক নিজেই স্বীকার করেন যে, "এটি বড় ধরণের ভুল" ছিলো। মিসির আলির মতো চরিত্র বিবাহিত পুরুষ হিসেবে গ্রহণযোগ্য নয়। আর সেই ভুল শুধরে পরবর্তি উপন্যাসগুলোতে আবার মিসির আলিকে নিঃসঙ্গ হিসেবে উপস্থাপন করেন লেখক।
মিসির আলি ভালোবাসার গভীর সমুদ্র হৃদয়ে লালন করেন, কিন্তু সেই ভালোবাসাকে ছড়িয়ে দেবার মতো কাউকেই কখনও কাছে পান না। ভালোবাসার একাকীত্বে জর্জরিত মিসির আলির নিঃসঙ্গতা ঘোচাতে বিভিন্ন সময় কিশোরবয়সী কাজের লোকের উল্লেখ পাওয়া যায়।
যেমন: "আমি এবং আমরা" উপন্যাসে "বদু" নামের একটি, ১৫-১৬ বছরের কাজের ছেলের উল্লেখ রয়েছে। এরকম কাজের লোককে মিসির আলি লেখাপড়া শেখানোর চেষ্টা করেন। আবার "অন্য ভূবন" উপন্যাসে "রেবা" নামের একটি কাজের মেয়ের উল্লেখ পাওয়া যায়। হুমায়ূন আহমেদের এই জনপ্রিয় চরিত্রটিকে বিটিভির পর্দায় বেশ কয়েকবার নিয়ে আসা হয়েছে।
( উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে ।
)
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।