যা এখনও জানিনা তা বলতে চাই না
বিশ্বের সবচেয়ে শ্রম বাজার বাংলাদেশ। এই সস্তা শ্রমের উপর ভর করেই বাংলাদেশে ফুলে ফেঁপে উঠেছে রপ্তানীমুখী গার্মেন্টস শিল্প। যে শিল্পের বাজার ও কাঁচামাল সবই আসে বিদেশ হতে। দেশের লাভ শুধু মজুরী। অনেকে একে দর্জিগিরি হিসেবেও আখ্যায়িত করেন।
দেশের রপ্তানী আয়ের সিংহভাগ গার্মেন্টস শিল্প থেকে আসে। যাদের শ্রমে এই আয় হয় তারাই সবচেয়ে বেশী নির্যাতিত হচ্ছেন। দীর্ঘ ১২ বছর পর ২০০৬ সালে গার্মেন্টস শ্রমিকদের ন্যুনতম বেতন ৯০০ টাকা থেকে ১৬০০ টাকাতে বৃদ্ধি করা হয় যদিও তখন শ্রমিকদের দাবী ছিল ৩০০০ টাকা।
উন্নত বিশ্বের প্রেক্ষিত বিবেচনা বাদ দিয়ে আমাদের দেশের প্রেক্ষিতেই যদি বিচার করি তাহলে এই ন্যুনতম বেতন কাঠামো কত অমানবিক এবং গার্মেন্টস মালিকরা কিভাবে শ্রমিকদের শোষন করছে তা বুঝতে অসুবিধা হওয়ার কথা নয়।
বাংলাদেশের জেল আইন ১৯২০ মোতাবেক জেলের বন্দীদের বেঁচে থাকার মত ন্যুনতম খাবার সরবরাহ করা হয়।
ঢাকা শহরের জেল বন্দীদের যে খাবার দেওয়া হয় তাতে একজন বন্দীকে দৈনিক ৪৯ টাকার মত খাবার দেওয়া হয়। প্রতিদিন ৪৯ টাকা হলে একজন বন্দীকে মাসে ১৪৭০ টাকার ন্যুনতম খাবার পরিবেশন করা হয়। এই হিসাবে একটি ৪.৮ সদস্যের একটি পরিবারের বেঁচে থাকার খাবারের জন্য প্রয়োজন পড়বে ৭০৫৬ টাকা। যখন একটি পরিবারের ন্যুনতম খাবারের জন্যই প্রয়োজন হয় ৭০৫৬ টাকা সেখানে একজন গার্মেন্টস কর্মী সারা মাস প্রতিদিন ৮-১০ ঘন্টা পরিশ্রম করে পায় ১৬০০ টাকা।
সরকারের কাবিটা কর্মসূচীতে একজন গ্রামীন মজুর পায় দৈনিক ১৫০ টাকা।
মাসে পায় ৪৫০০ টাকা।
সরকারী কর্মচারীদের ন্যুনতম বেতন কাঠামো অনুসারে বর্তমানে প্রায় ৬০০০ টাকা একজন চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী।
এই হচ্ছে আমাদের দেশের সবচেয়ে বেশী রপ্তানী আয়কারী শিল্পের শ্রমিকদের অবস্থা। দেশের সরকারের যেখানে শ্রমিকদের অধিকার রক্ষা করার কথা সেখানে তারা মালিকদের স্বার্থ রক্ষা করে চলেছে। এরকম অবস্থা চলতে থাকলে গার্মেন্টস শ্রমিকরা বাধ্য হয়েই তাদের মজুরী বৃদ্ধির জন্য রাস্তায় নামবে।
যদিও সরকার এবং মালিকপক্ষের শ্রমিকরা এতে তৃতীয় পক্ষের ইন্ধন খুঁজে পাবে।
শোষণ বেশীদিন টিকিয়ে রাখা যায় না। একদিন শোষিতরা উঠে দাঁড়াবেই। সেদিন বেশী দূরে নয় যেদিন দেশের প্রায় ৩০ লক্ষ গার্মেন্টস কর্মী নিজেদের অধিকার রক্ষায়, বেঁচে থাকার মত মজুরীর দাবীতে এক হয়ে আন্দোলন করবে। সেদিন এই সরকার এবং মালিকপক্ষের তা না মেনে কোনো উপায় থাকবে না।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।