তবু বিহঙ্গ, ওরে বিহঙ্গ মোর/ এখনি, অন্ধ, বন্ধ কোরো না পাখা। ।
অবশেষে এলো রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ঘোষনা। রবীন্দ্রনাথের ১৪৯তম জন্মদিনের এক অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই ঘোষনা দিয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হবে কবির স্মৃতি বিজড়িত শিলাইদহ ও পতিসরে।
বাংলাদেশে এখন ৩১ টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। এর মধ্যে ৯টি বিশ্ববিদ্যালয়ের নামকরণ করা হয়েছে ব্যক্তির নামে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামে রয়েছে সর্বোচ্চ দুটি বিশ্ববিদ্যালয় । একটি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় ও অন্যটি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়।
অন্যদের নামে প্রতিষ্ঠিতগুলো হলোঃ
* হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
* শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
* শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়
* মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
* জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়
* জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়
* বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়
অর্থাৎ তিনজন রাজনীতিকের নামে ৪টি।
২ জন কবি-সাহিত্যিকের নামে ২টি। ধর্মীয় ব্যক্তিত্বের নামে ১টি। ২জন স্থানীয় সমাজ সেবক ও দানবীরের নামে ২টি।
কিন্তু খুবই হতাশার বিষয় এতগুলো বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হলেও বাদ পড়েছে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাম। তার নামের প্রতি এলার্জি আছে অনেকেরই।
হাতে গ্রহনযোগ্য যুক্তি না থাকায় তারা রবীন্দ্রনাথের নামে নামকরণের বিরোধীতা করে এই বলে যে রবি ঠাকুর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় বিরোধীতা করেছিলেন। কিন্তু উহ্য থেকে যায় এই সত্য যে রবি ঠাকুর একাই আধুনিক বাঙ্গালী সংস্কৃতির প্রতিষ্ঠাতা। রবি ঠাকুর একাই বিংশ শতকে বাংলা ভাষাকে আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে পরিচিত করে তুলেছিলেন। রবি ঠাকুর আমাদের সংস্কৃতির প্রধানতম প্রতিষ্ঠাতা।
প্রধানত ধর্মীয় কারণেই রবি ঠাকুরের নামের প্রতি এই বিদ্বেষ।
এটা প্রমানিত হয় কারণ বাংলাদেশে জগদীষ চন্দ্র বসু’র নামেও কোন বিশ্ববিদ্যালয় নেই। অথচ তিনি বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ একজন বিজ্ঞানী। তার নামে এমনকি কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি আবাসিক হলেরও নামকরণ করা হয়েছে বলে শুনিনি।
আরেকজন বঞ্চিত বিখ্যাত মনীষী হলেন সত্যেন্দ্রনাথ বসু যিনি বোস-আইনস্টাইন কন্ডেনশেসনের জনক হিসেবে বিশ্বব্যাপী বহুল পরিচিত। তার তত্ত্ব বিশ্বের সব বিশ্ববিদ্যালয়ে বিজ্ঞানের পাঠ্য।
সত্যেন বোস ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ বিজ্ঞানের অধ্যাপক। পরিহাস এই যে, সেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েও তার নামে কোন হলের নামকরণ করা হয়নি।
রাজনীতিকদের মধ্যে সবচেয়ে অভাগা মানুষটি হলেন তাজউদ্দীন আহমেদ। তার নিজ জেলা গাজীপুরে চারটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হলেও একটিরও নামকরণ হয়নি মুক্তিযুদ্ধের এই মহানায়কের নামে।
রবীন্দ্রনাথের নামে বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘোষনা এসেছে।
সাম্প্রদায়িকতা ও রাজনৈতিক কূপমন্ডুকতা ঝেড়ে ফেলে এবার অন্য সব বঞ্চিত মনীষীর নামেও নামকরণ করা হবে আমাদের নতুন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর নাম- এই স্বপ্ন দেখি।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।