বাংলার ঐতিহ্যে লালিত
রাজধানীর মোহাম্মদপুরের কাটাসুর এলাকার ২ নম্বর গলির একটি চায়ের দোকানের আশেপাশে সন্ধ্যা ৭টা থেকে ১১টা পর্যন্ত ২০-২৫ বছরের চার-পাঁচ জন যুবককে এলোমেলোভাবে ঘুরতে দেখা যায়| এদের অনেককে কিছুক্ষণ পর পর মোবাইলে ব্যস্ত থাকতে দেখা যায় | এদেরকে দেখলে বোঝারই উপায় নেই যে এরা গোপনে ভয়াবহ মাদক ইয়বা ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে।
ইয়াবার প্রকৃত অবস্থা সম্পর্কে জানতে মোহাম্মদপুর থানায় যোগাযোগ করে জানা যায় গত চার মাসে এ থানায় ইয়াবা সংক্রান্ত মামলা হয়েছে ২৮ টি। জানুয়রি মাসে মাদক সংক্রান্ত মামলা হয়েছে ৩৪টি এর মধ্যে ইয়াবার মামলা ছিল ৮ টি। ফেব্রুয়ারি মাসে মাদক সংক্রান্তমামলা হয়েছে ৩২ টি তারমধ্যে ইয়াবার মামলা ছিল মার্চ মাসে মাদক সংক্রান্ত মামলা হয় ১৭ টি তার মধ্যে ইয়াবার মামলা ছিল ৬টি। এপ্রিল মাসে ইয়াবার মামলা হয় ৫ টি।
কাটাসুর, নূরজাহান রোড, তাজমহল রোড, শ্যামলীর বিভিন্ন এলাকার বিভিন্ন পর্যায়ের ভ্যাগা রনি(৩০), রবি(২৮), আমিনুল(২৮), ঠোঁটকাটা জুয়েল(২৭), ডিস ব্যবসায়ী জুয়েল, ডিস ব্যবসায়ী মিলন, ভাগ্নে শামীমসহ আরো কয়েকজনের সাথে বিভিন্ন সূত্রে পরিচয় এবং নিযমিত অনুসরণ করে এই সব তথ্য বেরিয়ে আসে। সেখানে মাদক ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন শ্রেণীতে বিভক্ত হয়ে গড়ে তুলেছে শক্তিশালী ইয়াবা নেটওয়ার্ক।
টেকনাফ থেকে বিভিন্ন ভাবে বাংলাদেশে প্রবেশ করে বিভিন্ন চক্রের সাহায্যে কিভাবে ইয়াবা তরুণদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ছে সে সম্পর্কে খোঁজখবর নিয়ে জানা যায়, স্থানীয় ডিলার হিসাবে পরিচিত কাটাসুরের হালিম গাজী, সোলায়মান যারা গড়ে ৫০০০-১০০০০ পিস ইয়বা ট্যাবলেট নিজেদের কাছে রেখে ব্যবসা করে। প্রতি পিস ইয়াবা ১৫০-১৮০ টাকায় কিনে ২০০-২২০ টাকায় ছোট ডিলারদের কাছে বিক্রি করে। ছোট ডিলাররা গড়ে ২০০-৭০০ পিস ইয়াবা রাখে।
মোহাম্মদপুরে এধরনের ডিলারদের মধ্যে কাটাসুরের ভ্যাগা রনি, বছিলার হাবিব, শ্যামলীর আমিনুল অন্যতম। তারা প্রতি পিস ইয়াবা ২৭০-৩০০ টাকায় ভ্রাম্যমাণ খুচরা ডিলার যেমন কাটাসুরের সরোয়ার, ঠোঁটকাটা জুয়েল, জনি, শ্যামলীর ফর্সা সজিব এদের কাছে বিক্রি করে। এই ভ্রাম্যমাণ খুচরা ডিলাররা ইয়াবা বিক্রি করে ভ্রাম্যমাণ বিক্রেতাদের কাছে। ভ্রাম্যমাণ বিক্রেতারা্ই সরাসরি কিংবা দালালদের মাধ্যমে ইয়াবা সেবীদের কাছে তা পৌছেঁ দেয়। এক্ষেত্রে ভ্রাম্যমাণ খুচরা বিক্রেতারা ২৫-৩০ পিস ইয়াবা ৮০০০-১০০০০ টাকায় কিনে দালালদের মাধ্যমে বিক্রি করলে প্রতি পিসে ৬০-৭০ টাকা আর নিজেরা বিক্রি করলে প্রতি পিসে ১০০-১২০ টাকা লাভ করে।
এভাবে তারা প্রতিদিন গড়ে ১৫০০-২০০০ টাকা লাভ করে। লাভের এই টাকা দিয়েই তারা নিজেদের ইয়াবা খরচ চালিয়ে থাকে। অন্যদিকে যারা দালাল হিসাবে কাজ করে তারা এই ধরণের বিক্রেতা এবং ইয়াবাসেবী উভয় পক্ষের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রেখে চলে। ইয়াবাসেবীরা যখন তাদের কাছে ফোন দেয় এবং তাদের নির্দিষ্ট স্থানে আসতে বলে। এরপর্ ইয়াবাসেবীদের কাছে থেকে টাকা নিয়ে তাদেরকে নির্দিষ্ট জায়গায় অপেক্ষা করতে বলে।
কিছুক্ষণ পর ভ্রাম্যমাণ বিক্রেতাদের কাছ থেকে ইয়াবা নিয়ে তাদের হাতে পৌছেঁ দেয়। এক্ষেত্রে এরা ইয়াবার ক্রেতা ও বিক্রেতা উভয়ের কাছ খেকে গড়ে ৮০-১০০ লাভ করে। দালালরা এভাবে লাভ করা টাকা দিয়ে নিজেরা ইয়াবা সেবন করে।
গত ২৭ মার্চ ৮০ পিস ইয়াবা নিয়ে র্যা। বের হাতে ধরা পড়ে ভ্রাম্যমাণ খুচরা বিক্রেতা মোহাম্মদপুর কাটাসুর এলাকার সারোয়ার।
সে র্যারবের কাছে দেয়া তথ্যে জানিয়েছে, তারা ছোট ডিলারদের কাছ থেকে প্রতি পিস ইয়াবা ২০০-২৫০ টাকায় কিনে নেয়। এক্ষেত্রে তাদের পর্যায়ের ব্যবসায়ীরা ২০-২৫ হাজার টাকা বিানিয়োগ করে ৮০-১০০ টা ইয়াবা কেনে। তার মত যারা এরকম ৫০/৯০ টা অর্থাৎ ১০০ পিসের নিচের ব্যবসায়ী তাদের মধ্যে রয়েছে কাটাসুরের ঠোঁটকাটা জুয়েল, তার ভাই জনি, নূরজাহান রোডের লুক ভিডিও-র রাজু, শ্যামলীর ফর্সা সজিব। তারা কাদের কাছ থেকে ইয়াবা কেনে এমন প্রশ্নের জবাবে সারোয়ার র্যা বের কাছে জানায় কাটাসুরের ভ্যাগা রনির কাছ থেকে সে সব সময় ইয়াবা কেনে। তবে বাইরের থেকেও মাঝে মাঝে কিনতে হয়।
এলাকায় সাপ্লাই না থকলে বাধ্য হয়ে বাইরে থেকে কিনতে হয় এবাং এক্ষেত্রে প্রায় দুই-তিন হাজার টাকা বেশে খরচ হয়। বাইরে থেকে যাদের কাছ থেকে কেনে তাদের মধ্যে রয়েছে বছিলার হাবিব, শ্যমলীর আমিনুল, ভাগ্নে শামীম।
পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে সে আরো জানিয়েছে, ইয়াবা ব্যবসায়ীরা তাদের ব্যবসাকে লোকচক্ষুর আড়ালে রাখতে এবং রাস্তাঘাটে পুলিশের ঝামেলা এড়াতে নানা কৌশল নেয়। ক্যারাম বোর্ড ঘরের ব্যবসা খোলায় সেখনে অবাধে ব্যবসার কথা বলে পুলিশের ঝামেলা এড়ানো সম্ভব হয়। খোঁজ নিযে কাটাসুরের নামার বাজারের আশেপাশে কয়েকটি বোর্ড ঘর নজরে পড়ে।
সরেজমিনে কাটাসুরের ঠোঁটকাটা জুয়েলের বোর্ড ঘরে গিয়ে ঘটনার সত্যতা জানা যায়|
র্যব -২ এর কর্মকর্তা মোহাম্মদ আজাদ জানান, ২০ থেকে ৩৫ বছরের লোকজন এ ইয়াবা ব্যবসার সাথে যুক্ত। বিক্রেতারা নিত্যনতুন পদ্ধতি অবলম্বন করায় তাদের ধরতে যথেষ্ট বেগ পেতে হয়। নিজস্ব সোর্সের থেকে তথ্য পেয়ে এবং মোবাইলে গোপনে অভিযোগের ভিত্তেতে তারা অভিযান চালিয়ে ইয়াবা ব্যবসার সাথে জড়িতদের গ্রেফতার করা হয়।
মোহাম্মদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ভূইয়া মাহবুব হাসান জানান, ইয়াবা আগে ধনিক শ্রেণীর মাদক হিসাবে পরিচিত থাকলেও বর্তমানে নিম্নবিত্ত থেকে শুরু করে ছাত্র ব্যবসায়ী, সন্ত্রাসী সব শ্রেণীর মানুষই ইয়াবাতে আসক্ত হয়ে পড়ছে। তিনি জানালেন, ইয়াবা ব্যবসার সাথে এক শ্র্রেণীর দালাল যুক্ত থাকে।
তারা মোবাইলে ক্রেতা এবং বিক্রেতাদের সাথে যোগাযোগ রাখে। এ কারণে তাদের ধরা খুব কঠিন হয়ে যায়।
ইয়াবাসেবীরা ইয়াবাকে বাবা নামে ডাকে। তবে ইয়াবার নানা ধরনের প্রচলিত নাম ও এর বিভিন্ন রকম দাম রয়েছে। যেমন- জিপি-১ এর দাম প্রতি পিস ৪৫০ টাকা, জিপি-২ এর দাম প্রতি পিস ৪০০ টাকা, আর-৭০ এর দাম প্রতি পিস ৩৫০ টাকা, আর-৩০ এর দাম প্রতি পিস ৩০০-৩২০ টাকা, জবা/চম্পাকলি এর দাম প্রতি পিস ৩০০-৩৫০ টাকা।
অনেক সময় নগদ টাকা না থাকলে তারা যাদের কাছ থেকে নিয়মিত ইয়াবা নেয় তাদের কাছে মোবাইল, স্বর্ণ্বের চেইন, আংটি বন্ধক রেখে ২-৫ টি পর্যন্ত ইয়াবা নেয়। এক্ষেত্রে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে জিনিস ফেরত নিতে হয়। বিনিময়ে ২০০-৩০০ টাকা বেশি দিতে হয়।
ক্রেতার চাহিদা মত বিক্রেতারা তাদের বাসা কিংবা এলাকায় ইয়াবা পৌঁছে দিয়ে থকে। এক্ষেত্রে প্রতি পিসে ২০-২৫ টাকা বেশি দিতে হয়।
মোহাম্মদপুর এলাকায় ইয়াবা নেটওয়ার্ক দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার ব্যাপারে প্রশাসনের অবহেলা আছে কিনা তা জানতে চাইলে মোহাম্মদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বিদ্যমান আইন এবং শাস্তির ব্যবস্থাকেই দোষারোপ করলেন। তিনি বলেন, ইয়াবা সংক্রান্ত মামলায় শাস্তির বিধান ৬ মাস থেকে ৩ বছর পর্যন্ত হওয়ায় আনেককে গ্রেপ্তার করা হলেও তারা দ্রুত বরিয়ে আসে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।