আমি জানিনা কোন সুখের গল্প, কোন ভালোবাসার গল্প!
যখন আবারো দেখা হল, চেনাটা খুব সহজ ছিলো না, আবার একেবারে ভুলে যাওয়ার মতোও না! শেষ দেখা হয়েছিলো নূহের নৌকায়, তারা বিশ্বাসী বা অবিশ্বাসীদের দলে ছিলো কি না, সেই প্রশ্ন অমুলক। তারা ছিলো 'নমুনা!' প্রেমিক যুগল! জগৎ সংসার ঘেটে সংগ্রহে রাখার মতো এক প্রেমময় নমুনা! মেয়েটা ছিলো দূরন্ত, ছেলেটা ঘুমন্ত! তবুও তারা তারাই!
প্লাবনের পর যখন প্রথম কোন সমতলে পা রাখলো সবাই, নিজেদেরকে সামলাতে একটু সময় লেগেছিলো, সবাই আবেগতাড়িত ছিলো, সবচেয়ে বেশি লাফাচ্ছিলো মেয়েটা... ওর 'সী সিকনেস' আছে। চল্লিশদিন সমুদ্রে থাকার চেয়ে ও পানিতে ভেসে যেতে বেশি পছন্দ করতো, যদি না ছেলে টা, মাঝে মাঝে ওর দিয়ে তাকিয়ে হাসতো! ছেলেটার হাসি, বদ ছেলেটার হাসিই ওকে ভেসে যেতে দেয়নি... আর তাই-ই হাসিটা ওর মাথায় ছিলো!
সব কিছু ভুলে গেলেও, মেয়েটার স্মৃতিতে ছিলো একটা ছেলের হাসি। হাজার বছর পরেও তাই যখন দেখা হয়, আবারো মেয়েটা ঐ মুহূর্তে বুঝতে পারে, 'এই সে!'
ছেলেটার ভালো লাগতো মেয়েটার অসম্ভব রকমের সব বাঁদরামি! এমনকি নৌকায় থাকা অবস্থায়ও মেয়েটার সবচেয়ে ভালো বন্ধু ছিলো বাঁদরজোড়া! কিভাবে যে মেয়েটা পারে! আর মনে ছিলো মেয়েটার শরীরে একটা অন্যরকম ঘ্রাণ ছিলো! অবশ্য ছেলেটা তখনো অন্যকোন শরীরের ঘ্রাণ জানতো না। তবুও মেয়েটার খুব কাছাকাছি থাকলে সে অনুভব করতো, এই মেয়েটা একান্তই তার!
একারণেই মেয়েটা যত সহজে ছেলেটাকে চিনতে পেরেছে, ছেলেটা অতো সহজে চেনেনি! হাসি যতদূর থেকে দেখা যায়, শরীরের নিজস্ব ঘ্রাণ অতো সহজে নেয়া যায়না! যদিও একদিন তারা লিফটের ভীড়ে খুব কাছাকাছি চলে এসেছিলো, ছেলেটা মেয়েটার শরীর থেকে আসা একটা মৃদু সুবাসও পাচ্ছিলো, তবুও সেটা তার চেতনায় জমে জমে বাড়তে থাকা প্রাচীন প্রেমিকাকে খুঁজে পাওয়ার অনুভুতি দেয়নি।
মেয়েটা সেদিন পারফিউম
লাগিয়েছিলো!
ওরা একই অফিসে কাজ করে, প্রায় দেড় বছর ধরে আছে, পাশাপাশি, তবুও হাজার বছর আগের পূর্ব অথবা প্রেমিক জন্মের কথা তাদের একেবারেই মনে নেই! (শুধু মাঝে মাঝে তারা দুইজনই স্বপ্নে দেখে এক ভয়াবহ প্লাবণ, একটা বিশাল নৌকা, আলখাল্লা, দাড়ি, একটা মানুষ, অনেক গুলা মানুয, অনেক পশু পাখি.... কিছু গাছ, কোন মাছ নেই! কিন্তু ওরা দুইজনই জানে না, ওরা একই স্বপ্ন দেখে!) ছেলেটা দেখে ছুটির পর মেয়েটা অফিসের নিচে দাড়িয়ে থাকে, অপেক্ষা করে, তার প্রেমিকের জন্য! ছেলেটা কারো জন্য অপেক্ষা করে না, কেও ওর জন্যও করে না... ছেলেটা কখনোই হাসে না! মেয়েটা সারাক্ষণই হাসে, আর মেয়েটার অসম্ভব পারফিউম প্রীতি!
ছেলেটা কিছুদিন ধরেই লক্ষ্য করছে, মেয়েটা কোন কারণে সব সময়ই মন খারাপ করে রাখে, আগের মতো আর উচ্ছল নেই! আগে অফিসে এসেই ছেলেটার সাথে গল্প জুঁড়ে দিতো, এখন শুধু হাই-হ্যালো! একদিন মেয়েটাকে একা একা রিকশায় করে যেতেও দেখেছে। ওর প্রেমিকের হয়তো কোন অসুখ, তাই সে এখন আর নিতে আসতে পারে না। আর একারণেই হয়তো মেয়েটার মন খারাপ, ছেলেটা ভাবে!
কাজ শেষ করতে করতে ছেলেটার অনেক দেরী হয়ে যায়। যখন সব কাজ শেষ হয়, সে বুঝতে পারে সে ছাড়া অফিসে আর কেও নেই। অনেকক্ষণ ধরেই বৃষ্টি হচ্ছে, তাই সবাই আগে আগে বাসায় চলে গেছে।
ছেলেটা নিচে নেমে দেখে তুমুল বৃষ্টি! মেয়েটা একা দাঁড়িয়ে। ছেলেটার পায়ের আওয়াজে মেয়েটা পেছনে ফেরে....
: দেখসেন কি অবস্থা? আমি বুঝতেই পারি নাই এই রকম বৃষ্টি নামসে! আজকেই লেইট হয়ে গেলাম, আজকেই ছাতা আনি নাই!
:: আমার কাছে ছাতা আছে। আপনি নিয়ে যান।
ছেলেটা ছাতাটা মেয়েটার হাতে দেয়ার সময় খেয়াল করে, মেয়েটার চোখের নিচে কালি, চেহারা আগের চেয়ে অনেক মলিন, শাড়ীটাও আগের মতো পরিপাটি করে পড়া না...
: আসলে হইসে কি, আমার টনসিলের সমস্যা, তাই বৃষ্টিতে ভেজা নিষেধ! আমি একেবারেই বুঝতেসিলাম না কি করবো, আর এই রাস্তায় কোন রিকশাও তো দেখতেসি না! মেইনরোড পর্যন্ত যাওয়া লাগবে মনে হইতেসে!
:: হুমমম, আমারো তাই-ই মনে হয়।
: আপনি যাবেন কিভাবে? বৃষ্টিতে ভিজে?
:: না, কোন সমস্যা নাই, বৃষ্টিতে ভিজতে আমার ভালোই লাগে!
: আজব তো! ছাতার নিচে আসেন, আপনার যেই বিশালাকার ছাতা, আরো দুই তিনজন ইজিলি এর নিচে জায়গা পাবে!
:: না, না, অসুবিধা নাই!
: আরে! এই বয়সে এইসব প্রেযুডিস মানায়? আসেন তো!
ছেলেটা মেয়েটার ছাতার নিচে আসে।
আশ পাশ থেকে বৃষ্টির ছাঁট আসে। মেয়েটা আগে থেকেই একটু বাঁচাল, সে তার স্বভাব সুলভ ভঙ্গিতে বকবক করতে থাকে। কথায় কথায় বলে, "আমার বয়ফ্রেন্ড শালা তো ভেগে গেসে!"
ছেলেটা একটু অবাক হয়। মেয়েটা আগেও ওর প্রেমিকের কথা বলেছে, কিন্তু এইভাবে? বোঝাই যাচ্ছে অনেক ক্ষেপে আছে! ছেলেটা বলে, "বুঝলাম না, কি হইসে?"
: আমার বয়ফ্রেন্ড, আরেক মেয়ের সাথে ভেগে গেসে, শুনসেন জীবনে এইসব কথা?
মেয়েটা এমনভাবে কথাটা বলে, ছেলেটার হাসি পেয়ে যায়, সে এতে আরো অবাক হয়, তার তো এত সহজে হাসি পায়না!
আর ঠিক তখনই, একটা গর্ত পাড় হতে গিয়ে ছেলেটা মেয়েটার খুব কাছে চলে আসে, আর তার নাকে যায় সেই ঘ্রাণ! মেয়েটার মন খারাপ ছিলো, তাই আজ তার সব কিছু এলোমেলো! সে পারফিউম লাগাতে ভুলে গিয়েছিলো!
ছেলেটার সব মনে পড়ে যায়! সব! তাদের পূর্বজন্ম, প্রেম, ইতিহাস! ছেলেটা অনেক জন্ম পর হেসে ওঠে! মেয়েটা সোডিয়ামের ভেজা আলোয় অবাক হয়ে দেখতে থাকে সেই হাসি! তারা পরস্পরকে চিনতে পারার উল্লাসে মাথার উপর থেকে ছুড়ে ফেলে দেয় ছাতাটা! মেয়েটা ভুলে যায় তার টনসিলের কথা, ছেলেটাও তার সাইনাসের কথা! হাজার বছরের দীর্ঘ চুম্বন তাদের না বলা সব কথা বলে দেয়....!!!
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।