বাংলার মাটি বাংলার জল, বাংলার বায়ু, বাংলার ফল, পুন্য হউক, পুন্য হউক, পুন্য হউক, হে ভগবান। বাংলার ঘর, বাংলার হাট, বাংলার বন, বাংলার মাঠ, পুর্ন হউক, পূর্ন হউক, পূর্ন হ্উক, হে ভগবান। রবীন্দ্রনাথ
মামুন হাওলাদার। অন্যায়ের প্রতিবাদ করে অকালে ঝরে যাওয়া মহৎ এক প্রাণ ...
তিন দিন মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ে গত বুধবার বিকেলে পান্থপথের স্পেশাল কেয়ার হাসপাতালে মারা গেল মামুন হাওলাদার ... এখন ঢাকার যাত্রাবাড়ি এলাকা শোকে থমথম করছে ... এখন গুলিস্তানের আন্ডারপাস মোবাইল মার্কেট শোকে স্তব্দ হয়ে আছে ...
ক্লাস এইটের একটি মেয়ে, ধরা যাক মেয়েটির নাম বীথি, অন্য আর দশটি মেয়ের মতোই বীথি স্কুলে যেত, আসত ... কতই বা বয়স মেয়েটির, এই তেরো কি চৌদ্দ ...বীথি এখন ওর চাচাতো ভাই মামুনকে হারিয়ে এখন গভীর শোকে ডুবে আছে।
মাস তিনেক আগে স্কুলে যাওয়া আসার পথে বীথি কে জ্বালাতে শুরু করে স্থানীয় বখাটে সোহাগ ওরফে নীরব।
তিন মাস পর অসহ্য বোধ হলে নিরুপায় বীথি ঘটনাটি পরিবারের লোকদের জানায়। চাচাতো বোনের অপমানের কথা মামুনের কানে যায়, মামুন প্রতিবাদ করার সিদ্ধান্ত নেয় ...
মামুন ঘটনাটি উপেক্ষা করতে পারত, করেনি ... কারণ গুলিস্তানের আন্ডারপাস মার্কেটের সামান্য মোবাইল মেকানিকের প্রাণটি ছিল মহৎ। সে খুব ভালো করেই জানত যে সোহাগ একা নয়, ওর পিছনে রয়েছে বিরাজমান অশুভ রাজনীতির খল সব জনমানুষ ...
তবু সে প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে সোহাগের মুখোমুখি দাঁড়ানো সিদ্ধান্ত নেয়।
বীথিকে উত্যক্ত করা নিয়ে সোহাগের সঙ্গে কথা কাটাকাটি হয় মামুনের।
যা হোক।
এই ঘটনার ক’দিন পর সোহাগ মামুনকে ফোন করে। বলে, সামান্য ব্যাপার নিয়ে ক্যাচাল করে লাভ কি, আয়, মিটমাট করি।
মামুন যায় ... এক মহৎ প্রাণ যায় ...যাত্রাবাড়ীর এক পেট্রোল পাম্পে। রড, হকিস্টিক, লাঠি নিয়ে সেখানে সোহাগের লোকজন ওত পেতেছিল।
তারা অত্যন্ত নির্দয় ভাবে পিটিয়ে পিটিয়ে মামুনকে ক্ষতবিক্ষত করে ... রক্তাক্ত করে এক মহৎপ্রাণকে ...
মুমূর্ষ মামুনকে পান্থপথের স্পেশাল কেয়ার হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
তিন দিন মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ে গত বুধবার বিকেলে এ পৃথিবী ছেড়ে চলে যায় মামুন ...
এখন ঢাকার যাত্রাবাড়ি শোকে থমথম করছে ...
এখন গুলিস্তানের আন্ডারপাস মোবাইল মার্কেট শোকে থমথম করছে ...
মামুন এর জন্য শোকগাথা
মামুন, আজ তোমার জন্য বাংলাদেশের বিবেকবান মানুষেরা কাঁদছে।
মাতৃসমা বয়স্ক নারীরা কাঁদছে, নিস্পাপ হৃদয়ের কিশোরীরা কাঁদছে।
তুমি বেঁচে থাকতে যাদের যাদের চিনতে না-
আজ তারা তোমার জন্য কাঁদছে।
কেননা, তুমি সভ্যতার পক্ষে, আমাদের সকলের হয়ে
অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছ
মানবতার মান বাঁচাতে
বীথির জীবনে স্বস্তি ফিরিয়ে আনতে ।
এবং আমরা তোমার চেতনার মহত্ত্ব উপলব্দি করি।
এবং বুঝতে পারি যে, তোমার প্রাণে পড়েছিল বাঙালির ইতিহাসের সেই মহত্তম মুহূর্তের ছায়া
....যে ছায়ায় অনন্তকালের জন্য স্থির আত্মদানের এক হিরণময় ইতিকথা ...
সংবাদপত্র তো সব কথা লেখেনা যেহেতু সংবাদপত্র উপন্যাস নয়।
সংবাদপত্রের কোথাও পাই নি তুমি বিবাহিত কিনা, কিংবা তোমার
প্রেয়সীর কি নাম ...তা সত্ত্বেও আমরা তোমার স্ত্রী কিংবা প্রেয়সীর কান্নার দৃশ্যটি
ঠিকই অনুমান করতে পারি ...
আমরা অনুমান করতে পারি বীথির কান্নার দৃশ্যটিও,
হে বিশ্ববিধাতা, এইসব সরল নির্মল মেয়েদের চোখের জলে দ্যাখো
বাংলাদেশটা ধীরে ধীরে ডুবে যাচ্ছে ... ধীরে ধীরে ডুবে যাচ্ছে ...
মামুন, আজ তোমার জন্য বাংলাদেশের বিবেকবান মানুষেরা কাঁদছে।
মাতৃসমা বয়স্ক নারীরা কাঁদছে, নিস্পাপ হৃদয়ের কিশোরীরা কাঁদছে।
তুমি বেঁচে থাকতে যাদের যাদের চিনতে না-
আজ তারা তোমার জন্য কাঁদছে।
আসুন, আমরা মামুনের মৃত্যুর জন্য শোকার্ত হই, কয়েক মুহূর্ত নীরব থাকি,
তারপর জ্বলে উঠি প্রলয়ঙ্করী এক ক্রোধে, এবং চিৎকার করে বলি:
আমরা আরও আরও মৃত্যুর জন্য প্রস্তুত ...
অতঃপর আমরা অভিশাপ দিই সেসব বখাটেদের আর ... আর
বীথি আর সেই নামহীন মেয়েটির হৃদয়ের যন্ত্রণার কথা ভেবে বেদনার্ত হয়ে উঠি ...
মামুন, আমাদের ক্ষমা করো ...
খবরের উৎস:
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।