প্রচুর বই পড়া হয় কিন্তু কবি-সাহিত্যিকদের প্রতি আমার তেমন একটা আগ্রহ কোনকালেই ছিলো না। তবে একজনের বেলায় ব্যাপারটা সম্পূর্ণ আলাদা- তিনি হলেন পল্লীকবি জসীমউদ্দিন। নক্সীকাঁথার মাঠ, সোজন বাদিয়ার ঘাট সহ জসীমউদ্দিনের অনেক বই পড়েছি, কিন্তু কখনো বিরক্তবোধ করিনি। অনেকদিনের ইচ্ছা ছিলো ফরিদপুরের অম্বিকাপুরে কবির ভিটে-মাটি দেখতে যাওয়ার। কিন্তু মাঝখানে প্রতিবন্ধক হিসেবে ছিলো পদ্মা নদী এবং আরো অনেক অদেখা বাঁধা।
তো গত ষোলই এপ্রিল আকস্মিক ডিসিশান নিয়েই নিলাম যে করেই হোক অম্বিকাপুর ঘুরে আসব। পরিকল্পনা অনুযায়ী বাস-স্টীমার-বাস এভাবে ভেংগে ভেংগে ফরিদপুর পৌঁছালাম। স্টীমারে পদ্মা পার হওয়ার সময় খুব ভয়ে ছিলাম সাঁতার না জানার কারণে। তবে অম্বিকাপুর পৌঁছানোর পর মনে হলো কষ্ট সার্থক হয়েছে। ছবির মতো সুন্দর গ্রাম।
ঘুরে দেখলাম জসীমউদ্দিনের স্মৃতি বিজড়িত সব স্থান এবং তাঁর বইয়ে বর্ণিত জায়গাগুলো। এই ভ্রমণের কিছু ছবি আপনাদের সাথে শেয়ার করলাম---
কবি বাড়ির প্রধান ফটক
বাড়ির সামনেই কুমার নদী(খাল), যে নদীর সাথে জড়িয়ে আছে জসীমউদ্দিনের শৈশবের অনেক সোনালি মুহূর্ত
কুমার নদীর তীরেই আছে প্রশস্ত খোলা সবুজ মাঠ, যেখানে বসলে মনে হবে সারাজীবন ধরে বসেই থাকি। বসার জন্য সুন্দর কিছু পাকা ঘর বানিয়ে দেয়া হয়েছে।
মাঠ থেকে রাস্তায় ওঠার সিঁড়িটাও অপরূপ।
জসীমউদ্দিনদের আদি বাড়ি
ছেলের কাছে লেখা কবির চিঠির অংশবিশেষ
বাড়ির পেছনের অংশ।
বসার জন্য এখানে বেন্চ আছে। যতদূর চোখ যায় শুধু শূন্য ফসলের মাঠ। এখানটায় প্রাণ জুড়ানো যে চমৎকার বাতাসটা পাওয়া যায় তার দাম কোটি টাকা।
কবির বাড়ির আংগিনায় বেলগাছে বেল ধরেছে
জসীমউদ্দিনের স্মৃতিচিহ্ণ নিয়ে মিনি যাদুঘর।
কবিকন্যা হাস্না জসীমউদ্দিন, বিএনপি নেতা ব্যরিস্টার মওদুদ আহমেদের সহধর্মিণী
কবিদের পারিবারিক কবরস্থান- এখানে শুয়ে আছেন কবির পিতা আনসার উদ্দিন, মা রাঙাছুটু, বড়ছেলে, কবিপত্নী ও ভাইয়েরা।
গ্রামের ছায়া সুনিবিড় শান্ত পরিবেশে শুয়ে আছেন পল্লীকবি জসীমউদ্দিন
কবির কবরের পেছনেই আছে ডালিম গাছ যেটা মনে করিয়ে দেয় কালজয়ী কবিতার দুটি লাইন--
" এইখানে তোর দাদীর কবর ডালিম গাছের তলে,
তিরিশ বছর ভিজায়ে রেখেছি দু'নয়নের জলে। "
যারা জসীমউদ্দিনের 'সোজন-বাদিয়ার ঘাট' পড়েছেন তাঁদের কাছে এই নাম অপরিচিত নয়। পল্লীকবির অন্যতম সেরা রচনা এটি। একটি হিন্দু মেয়ে ও মুসলমান ছেলের প্রেম-বিরহ নিয়ে গড়ে উঠেছে এর কাহিনী। তো সেই সোজন-বাদিয়ার ঘাটের ছবি দেখুন--
অম্বিকাপুরের শ্মশাণ, কবির লেখায় এটির বর্ণনা এসেছে অনেকবার
বড়ু নামের হলুদ-বরণ এক মেয়েকে কবি খুব পছন্দ করতেন।
অম্বিকাপুরেই ছিলো মেয়েটির বাড়ী। কিন্তু মেয়েটির অল্প বয়সেই বিয়ে হয়ে যায়। জসীমউদ্দিন তাঁর আত্মজীবনী "জীবনকথায়" মেয়েটির কথা বলেছেন। বড়ুদের বাড়ী সোজন বাদিয়ার ঘাটের কাছেই। সবাই চেনে রহিম মল্লিকের বাড়ী নামে।
বিদায় অম্বিকাপুর!! ফরিদপুর শহরের পথে
এবার আপনাদের কাছ থেকেও বিদায় নেয়ার পালা। সবাই ভালো থাকবেন। আমার প্রিয় কয়েকটি ছত্র আবৃত্তি করে বিদায় নিচ্ছি----
(১)
মসজিদেরই পাশে আমায় কবর দিও ভাই,
যেন গোরে থেকেও মুয়ায্যিনের আযান শুনতে পাই।
আমার গোরের পাশ দিয়ে ভাই জান্নাতীরা যাবে,
পবিত্র সেই পায়ের ধ্বনি এ বান্দা শুনতে পাবে।
( কাজী নজরুল ইসলাম)
(২)
মা কথাটি ছোট্ট অতি কিন্তু জেন ভাই
এরচেয়ে মধুর ধ্বনি ত্রিভুবনে নাই।
( অজানা )
(৩)
ভেঙ্গে মোর ঘরের চাবি নিয়ে যাবি কে আমারে
ও বন্ধু আমার.........
(রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর)
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।