লিখতে তো দেখি ভালোই লাগে....... পর্ব-১
কিছু দূর যেতেই বুঝতে পারলাম কপালে দু্ঃখ আছে আজ। দু্ঃখ যে আছে তার প্রমাণ পেতে লাগলাম গাড়ি চলার গতি থেকে। শ্লথ গতিতে চলতে চলতে গাড়ি এক পর্যায়ে গিয়ে থেমেই গেল। থামা মানে পুরোপুরিই থামা...একদম গাড়ির স্টার্ট বন্ধ করে গেড়ে বসা। সামনে দেখলাম বিশাল গাড়ির বহর।
পেট ধূ ধূ মরুভূমি। বের হওয়ার সময় আসলে তাড়াহুড়ো করে তেমন কিছু খাওয়া হয়নি। হ্যান্ডব্যাগে রাখা টিফিন বক্স বের করে পিচ্চিকে আর মাকে খাওয়ালাম। পিচ্চির বাবাকে বললাম ক্ষুধা লাগলে উপর থেকে খাবারের বক্সটা বের করে খাও। সে খেতে চাইল না।
আমারও ইচ্ছে হল না, বাসে বসে খাওয়াটা কেমন যেন অপ্রীতিকর। ভাবলাম কুমিল্লা গিয়ে যাত্রাবিরতিতে খাব। কিন্তু কোথায় কুমিল্লা! শেষের ল্লা বাদ দিয়ে রা লাগাতে হল । অর্থাৎ এখনও কুমিরা পর্যন্ত আসতে পেরেছি। ঘড়ির দিকে তাকালাম সময় ঠিকই ৩ ঘন্টা পার হয়ে গেছে বটে।
কি আর করা! চোখ বন্ধ করে ঘুমানোর চেষ্টা করলাম। কিন্তু কোথায় ঘুম কোথায় কি? আমার মায়ের ৬ ছেলে-মেয়ে কিছুক্ষণ পর পর ফোন করেই যাচ্ছে কি অবস্থা জানার জন্য। ৭ জনের মাকে আমি একা নিয়ে এই বৈরী আবহাওয়ায় পথে বের হয়েছি কিছুটাতো অনুশোচনা হচ্ছেই।
যাক অবশেষে গাড়ি আবার চলতে শুরু করল। এই দিকে আমার মায়ের আবার ওয়াশ রুমে যাওয়া খুব প্রয়োজন।
মুখে কিছু বলছেনা বটে কিন্তু আমি জানি দূরপাল্লার যাত্রায় মায়ের এই সমস্যাটাকেই বড় ভয়। এই ভয়ে উনি হাই ব্লাড প্রেসারের ঔষুধও খান না। আর সময়ও তো কিছু কম হয়নি। ইতোমধ্যেই ৬ ঘন্টা অতিক্রান্ত হয়ে গেছে বাসা ছেড়ে এসেছি। স্বামীকে বললাম সমস্যার কথা।
সে বহু কষ্টে সুপারভাইজার কে রাজি করালো একটি পেট্রোল পাম্পে দাঁড়াতে কিন্তু ড্রাইভার কিছুতেই রাজি হয়না। তার ভয় আবার জ্যামে আটকে পড়ার। সুপারভাইজার বলল আপনি গিয়ে সিটে বসেন আমি ব্যবস্থা করছি। ধন্যবাদ সুপারভাইজারকে সে কিছু সময় পর ড্রাইভারকে রাজি করাল এবং একটি পেট্রোল পাম্পে দাঁড়িয়ে হাঁক ছাড়ল। আমি মাকে নিয়ে তাড়াতাড়ি ছুটলাম সমস্যার সমাধানে।
ফেরার পথে সুপারভাইজারের কাছে জানতে চাইলাম - ভাই আর কতদূর আছে কুমিল্লা পৌঁছাতে? সে বলল - আপা কেবল তো মিরেশ্বরাই আসলাম, রাস্তা ক্লিয়ার থাকলে আরো দুই ঘন্টা লাগবে। কি বলে! এখনই তো দুইটা বাজে তাও মাত্র মিরেশ্বরাই!!! তার থেকে জানতে পারলাম আজ চার পাঁচটা অ্যাক্সিডেন্ট হয়েছে এই রোডে তাই এতো জ্যাম।
একসময় যাত্রাবিরতি হল আমাদের। ঘড়িতে তখন আনুমানিক ৪ ঘটিকা। সুপারভাইজার বলল- ভাই ২০ মিনিটের মধ্যে সবাই একটু দয়া করে চলে আসবেন...এখনই ফেরিঘাট বন্ধ , আপনারা দেরি করলে আপনারায় বিপদে পড়বেন।
প্রয়োজনীয় কাজ শেষ করে দৌড়াতে দৌড়াতে গাড়িতে উঠে বসলাম। আবার শুরু হল ২য় পর্যায়ের যাত্রা । আর এদিক ওদিক তাকালাম না। চোখ বন্ধ করে ঘুমানোর চেষ্টা করতে লাগলাম মাকেও বললাম সেই চেষ্টাই করতে, আর বাপ-ছেলে তো গাড়িতে উঠেই ঘুম দিয়েছে। জানি বৃথাই চেষ্টা করছি কিন্তু না করেও তো আর কোন উপায় নেই।
সকালের আলো ফুটে উঠল ধীরে ধীরে। সূর্যটাও হাসতে লাগল কিছুক্ষণের মধ্যেই। আর আমাদের যাত্রা! সেতো চলছেই...
(চলবে...) ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।