বেশ কিছুদিন ব্লগ/নেট জগত থেকে ছুটিতে ছিলাম, ফেরত এসে অভ্র-বিজয় টপিকটা যে জায়গায় গিয়েছে দেখলাম তা দেখে আমি ওই বিষয়ের ধারেকাছেও যাচ্ছি না। আমি এখানে এই টপিকের পুরো ১৮০ ডিগ্রী টার্ন নিয়ে এই টপিক থেকে কিছু কাজের জিনিস কিভাবে বের করে আনা যায় সেটা নিয়ে লিখবো।
সচলায়তনে শহীদ ভাইয়ার সাক্ষাৎকারের পোস্টে একটা লিংকে দেখলাম জব্বার কাগু'র সাক্ষাৎকার। ওখানে একটা লাইন পড়েই মূলত ব্যাপারটা মাথায় আসলো। ওখানে লিখা: "বর্তমানে কম্পিউটারে বাংলা ব্যবহারকারীদের মধ্যে প্রায় ৯৯ শতাংশ বিজয় দিয়েই কাজ করছেন।
বিজয়ের এই ব্যাপক ব্যবহার শুরু হলেও বাংলায় বানান শুদ্ধকরণ, অভিধান ব্যবহার সহ আরো অনেক সুবিধা নেই। এগুলির উন্নয়নে মূল ভূমিকা পালন করতে হবে সরকারকে কারণ এর জন্য পৃষ্ঠপোষকতা না পেলে উদ্ভাবকরা উৎসাহ হারিয়ে ফেলবেন"
উপরের কথাগুলি না জেনেই অনেকেই বিশ্বাস করেন, সামারাইজ করে পয়েন্টগুলি হল:
(১) কম্পু ব্যবহারকারীর ৯৯ শতাংশ বিজয় ব্যবহার করে
(২) বাংলায় অভিধান নেই
(৩) বানান শুদ্ধকরণ করার উপায় নেই
(৪) সরকার এগিয়ে না আসলে হবেও না এসব কারণ দিনের শেষে অর্থই সব
আমি এখন এগুলি নিয়েই কিছু বলতে চাই কারণ এই মিথ্যাচারগুলি আমাদের ভবিষ্যত ডেভেলপমেন্টের জন্য ভুল মেসেজ দিচ্ছে, এর সংশোধনী প্রয়োজন.......
সাম্প্রতিক সময়ে অভ্রের একটা বিরাট ইউজার বেজ দেখেছি আমরা, বিভিন্ন ব্লগে সেই ব্লগের কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকেও সমর্থন জানানো হয়েছে অভ্রকে। এতে মনে হতে পারে অভ্রের বেজ বিশাল কিন্তু একটা ব্যাপার ভুলে গেলে চলবে না বিজয় ব্যবহার করেন যারা তারা মূলত এর উপরেই জীবিকা নির্বাহ করেন, মানে অফিস টাইপিস্ট বা এরকম পেশার মানুষজন। এরকম মানুষ দিয়েই টোটাল ৯৯% হয়ে যায় এটা ভ্রান্ত ধারণা তবে ৬০% হয় বলেই মনে করি। ব্লগাররা সংখ্যায় অতটা বেশী না যতটা অফিস ক্লার্ক রয়েছেন বাংলাদেশে।
অর্থাৎ উপরের প্রথম পয়েন্টটা ভুল।
বাংলায় অভিধান নেই কথাটা পুরোপুরি ভুল নয়। তবে কাজ চালানোর জন্যেhttp://www.bengalinux.org/english-to-bengali-dictionary/ সাইটে গেলে একটা পাওয়া যায়। আশা করি সচলায়তনের উদ্যোগে নেয়া ডিকশনারীটা তাড়াতাড়ি আলোর মুখ দেখবে।
সবশেষে থাকে (৩) ও (৪) নাম্বার পয়েন্ট।
এগুলিকে ডেভেলপ করার জন্যে সময় প্রয়োজন মাত্র ২ মাস (বড়সড় সফটওয়ার তৈরীর পূর্ব অভিজ্ঞতা নেই এমন স্টুডেন্টদের জন্যে)। কি করতে হবে ?? খুব সহজ, প্রথমেই বের করতে হবে কিভাবে একটা ডিকশনারী হাতে থাকলে ভুল বানানগুলি সনাক্ত করা যায়। যেমন: কেউ যদি লিখে "ভূল" কিন্তু ডিকশনারীতে আমরা পাই ভুল তাহলে এটা সহজে সনাক্ত করা সম্ভব যদি আমাদের জানা থাকে ু এবং ূ অদল-বদল হয়ে ভুল বানানের জন্ম হয়।
তাহলে আবার নতুন সমস্যা: এরকম কি কি ক্ষেত্রে অদল-বদল হতে পারে সেটা জানার জন্যেও তো গবেষণা প্রয়োজন, কে করবে সেটা ???
উত্তর: কারোরই দরকার নাই কারণ অ্যাডাপ্টিভ প্রসেসে প্রোগ্রাম নিজেই জেনে নিতে পারে কার কার মাঝে অদল-বদল হলে ভুল হতে পারে। যেমন: মনে করুন প্রোগ্রামটা জানে না ঊ-কার ও উ-কার মূলত অদল-বদল হয় তাই ও যখন দেখবে "ভূল" বানানটা ও সাজেস্ট করবে সবগুলি স্বরবর্ণ মিলিয়ে যা দিয়ে ভ্যালিড কোন শব্দ হয় কারণ ঊ-কার একটি স্বরবর্ণ তাই রিপ্লেসমেন্টটাও কোন একটা স্বরবর্ণ দিয়েই আসবে।
ফলে সকল স্বরবর্ণ দিয়ে ট্রাই করে ভ্যালিড শব্দ খুঁজে এনে ও সাজেস্ট করবে: "ভাল, ভুল, ভোল"। এখন আপনি সিলেক্ট করলেন "ভুল"। ও এটা রেকর্ড করে রাখবে এবং ভবিষ্যতে ঊ-কারের জন্যে কোন ভুল পেলে সেই জায়গায় উ-কার বসিয়ে দেখবে সঠিক কোন শব্দ হয় নাকি, হলে সেটা দিয়ে রিপ্লেস করবে। এভাবে ও নিজেই নিজেকে আপডেট করবে।
তাহলে এটা নিয়ে গবেষণা প্রয়োজন, তাইনা ??? কোন সমস্যা নাই।
IEEE-EXPLORE বা গুগল-স্কলারে এমন প্রচুর গবেষণা'র খোঁজ পাওয়া যাবে। চাকা নতুন করে আবিস্কারের প্রয়োজন নেই, এখন প্রয়োজন চাকা দিয়ে গাড়ি তৈরীর। অর্থাৎ পেপারগুলির অ্যালগরিদমটিকে সফটওয়ারে ট্রান্সফর্ম করলেই হবে। সুতরাং (৩) নাম্বার পয়েন্টটা ভুল এবং বানান সংশোধন সফটওয়ার তৈরী তেমন কোন কঠিন কাজ না এখন। আজকে না হলেও আশা করি ২০১১ এরমাঝেই দাঁড়িয়ে যাবে এটা।
সবশেষ পয়েন্ট হল, সরকার টাকা দিবে কি দিবে না তারউপর। আমি বলব, সরকারকে একটা টাকাও দেয়া উচিত না। আমেরিকান গর্ভমেন্টের অবদান কত ওদের ভাষার স্পেল চেকার তৈরীতে ??
সরকারের কাছে শুধু নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ চাই আমরা যাতে পিসি-গুলিতে কাজ করা যায়। বাকি ডেভেলপমেন্ট কাজগুলি স্টুডেন্টদের দিয়েই সম্ভব। স্টুডেন্ট আলাদা করে বলছি কারণ চাকুরীজীবি একজনের পক্ষে হয়তোবা সময় বের করা অত সহজ না সদিচ্ছা থাকার পরেও কিন্তু একজন স্টুডেন্টের পক্ষে অনেক সহজ (টার্ম ফাইনালের পরের গ্যাপ যেমন একটা উদারহরণ)।
প্রয়োজন উদ্বুদ্ধ করা শুধু। অথবা কেউ যদি বানিয়ে ফেলে তাহলে সেটাকে উৎসাহ দেয়া, সেটাকে টেস্ট করা। সুতরাং সরকারের টাকা'র জন্যে বসে থাকতে হবে এটা পুরো ভুল কথা যেটি ৪ নাম্বার পয়েন্টে বলা হয়েছে।
কথাগুলি অনেকটা বিক্ষিপ্তভাবেই বলা.........আসলে উন্মুক্ত বাংলা কম্পিউটিং নিয়ে সবার যেই আবেগের উচ্ছ্বাস দেখছি আমি চাই সেটা সর্বোচ্চ পরিমাণে কাজে লাগুক। কিন্তু একই সাথে যেন কোন ভুল তথ্য পৌছে না যায় তাই এসব পয়েন্ট লিখা।
সবাইকে ধন্যবাদ, ভাল থাকবেন।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।