আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ভারতীয় ছবি আমদানী বিতর্ক: হিন্দী ছবি কি বাংলাদেশে নয়া কুটুম?



বিতর্ক চলছে হিন্দী ছবি সিনেমা হলে প্রদর্শনের জন্য আমদানীর অনুমতি নিয়ে। দেখে শুনে মনে হচ্ছে দেশের মানুষ হিন্দী ছবি এই প্রথম দেখবে। সিনেমা হলে হিন্দী ছবি দেখানো হলেই তার সাথে প্রতিযোগীতায় বাধ্য হয়ে দেশীয় ছবির মান উন্নয়ন ঘটবে। বাংলাছবি কি এখনই হিন্দী ও ইংরেজী ছবির সাথে প্রতিযোগীতা করছে না? আর সেই প্রতিযোগীতার ফলাফল কি আমরা এখনই দেখছি না? তাহলে নুতুন করে, "প্রতিযোগীতার মাধ্যমে উন্নয়ণের" বাজারী দর্শন নিয়ে লাফালাফির মাজেজা কি? ৯০ এর দশক থেকেই কারিগরী এবং অর্থকরী উভয় দিক দিয়েই ইতিমধ্যেই ভীষণ দুর্বল বাংলা সিনেমাকে হলিউড বলিউডের সাথে অসম প্রতিযোগীতা করতে হয়েছে। এবং গোটা সময়টাতেই বাঙলা সিনেমার উন্নয়নের জন্য কোন পদক্ষেপই রাস্ট্রের পক্ষ থেকে নেয়া হয়নি।

যার প্রমাণ আজকে বাঙলাদেশের কোন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে চলিচ্চত্র শিক্ষা দেয়া হয় না, বাঙলা দেশে কেউ যে চলচ্চিত্র শিখবে তার জন্য কোন ফিল্ম ইন্সিটিউট ও নাই। ফলে কেউ ভাল চলচ্চিত্র বানাতে চাইলে কারগরী এবং অর্থকরী উভয় দিক থেকেই চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে হয়। এই অবস্থায় যখন বাঙলা সিনেমাকে স্যাটেলাইট-হলিউড-বলিউডের সাথে প্রতিযোগীতার সম্মুখীন হতে হলো তখন স্বাভাবিক ভাবেই তাকে অস্বাভাবিক রাস্তা ধরতে হলো- হলিউড-বলিউডের টেকনো, সাইফাই ভায়োলেন্স এবং সফিস্টেকেটেড সেক্সের সাথে সে মোটা দাগের/স্থুল মাপের সেক্স এবং ভায়োলেন্স নিয়ে প্রতিযোগীতায় নামলো- যার ফলাফল আমরাতো দেখছিই। এখন যদি তাকে স্যাটেলাইটের পাশাপাশি এখন সিনেমা হলেও সরাসরি বলিউডি ছবির সাথে প্রতিযোগীতা করতে হয়, কিন্ত আর্থিক ও কারীগরি বাস্তবতা একই থাকে, তাহলে বাংলাসিনেমাকে হয় আরও বিকৃতির রাস্তা ধরতে হবে, নতুবা একেবারে ধ্বংস হয়ে যেতে হবে। অনেকে প্রশ্নতুলেছেন মুক্তবাজার অর্থনীতিতে চলচ্চিত্র আমদানী আইনকরে বন্ধকরে রাখার ভন্ডামি নিয়ে।

মুক্তবাজার অর্থনীতি জিনসিটাই একটা ভন্ডামি কিনা,মুক্তবাজার অর্থনীতিই সবার কাম্য কিনা, মুক্তবাজার অর্থনীতি সবমুশকিলের সমাধান করতে পারে কি-না সে বিতর্কে না গিয়েও বলা যায় মুক্তবাজার তত্ত্বগত ভাবে যতটা মুক্ত বাস্তবে কিন্তু ততটা মুক্ত নয়। মুক্তবাজার অর্থনীতিতে সাধারণ অর্থে কোন আমদানী রপ্তানীর ক্ষেত্রে বাধা থাকার কথা না। কিন্ত বাস্তবে মুক্তবাজার অর্থনীতির ধ্বজ্জাধারী সকল দেশই তাদের দেশীয় শিল্পের এবং কৃষির স্বার্থে নানান শুল্ক ও অশুল্ক বাধা জারি রাখে। একই ভাবে চলচ্চিত্র শিল্পের যদি উন্নতি করতে হয় তাহলে তাকে মুক্তবাজার অর্থনীতির দোহাই পেরে আর্থিক কারগরী, নন্দন তাত্তিক সব দিকে থেকেই দুর্বল রাখার সব ম্যাকানিজম চালু রাখলে চলচ্চিত্রকে আর প্রতিযোগীতামূলক হতে হবে না। হলিউডের নোংরামির সাথে প্রতিযোগীতা করতে গিয়ে ভারতীয় হিন্দি ছবিও কম নোংরা হয়ে উঠেনি।

আর অন্য দিকে ইরানি ছবির দিকে তাকান- একদিকে হলিউডি প্রতিযোগীতা থেকে মুক্ত থাকা এবং অন্যদিকে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতার ফলে কড়া সেন্সরশিপ স্বত্ত্বেও যে কোন বিচারে ইরানি ছবি বিশ্বের অন্যতম সেরা ছবি হয়ে উঠেছে। শেষ কথা হলো, স্রেফ ভারতীয় ছবি আমদানী বন্ধকরলেই যেমন চলচ্চিত্র শিল্পের উন্নতি হবে না, তেমনি ভারতীয় ছবি বাণিজ্যিক ভিত্তিতে প্রদশর্ন করলে ভারতীয় চলচ্চিত্রের সাথে প্রতিযোগীতার ভয়ে দেশীয় চলচ্চিত্র উন্নত হয়ে উঠবে না। চলচ্চিত্র শিল্পের উন্নয়নের জন্য চাই রাষ্ট্রীয় প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগ, আর্থিক দায়িত্ব নেয়া, চলচ্চিত্র শিক্ষার প্রাতিষ্ঠানিক ব্যাবস্থা এবং দেশের বড় বড় সিনেমা হলে রাষ্ট্রীয় ভাবে শুধু ভারতীয় নয় বরং সারা দুনিয়ার ভালো ভালো চলচ্চিত্র প্রদর্শনের ব্যাবস্থা করা। আর কাজ বাজারের হাতে ছেড়ে দিলে চলবে না। কারণ এই বাজারি অর্থনীতি এবং তার সাথে সম্পর্কযুক্ত সংস্কৃতির কারণেই কিন্তু আজকে চলচ্চিত্রের এই অবস্থা।

বাজারের নিয়মেই স্যাটেলাইট/ডিভিডির মাধ্যমে লোকজন হালিউডি/বলিউডি ছবি দেখছে- কই তাতে কি দেশীয় চলচ্চিত্রের কোন উন্নতি হয়েছে! তাহলে কেন ভাবা হচ্ছে বাজারকে সম্প্রসারিত করেলেই অর্থাত স্যটেলাইট/ডিভিডির মতো সিনেমা হলে হিন্দী ছবি চালানোর দ্বায়িত্ব দিলেই সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে? বাস্তবে বাজার চলে মুনাফার লোভে, মুনাফার লোভে সে যত সব বাজারি নোংরা ছবিই আমাদনী করবে, (দেশের সিনেমা হলগুলোতে ইংরেজি ছবি আমদানী তো নিষিদ্ধ না, কয়টা ভালো ইংরেজী ছবি আমদানী হয়?)- তাতে হলমালিকদের লাভ হলও হতে পারে, কিন্তু দেশীয় চলচ্চিত্রের তাতে কোন উন্নতি হবে না।


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.