অগণতান্ত্রিক শক্তি প্রসঙ্গে জেমস স্টেইনবার্গ
দুদিনের সফরে এসে মার্কিন উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী জেমস স্টেইনবার্গ বলেছেন, বাংলাদেশে অগণতান্ত্রিক শক্তির ক্ষমতায় আসার পথ বন্ধ করতে হলে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া শক্তিশালী করতে হবে। এ জন্য যে সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক পরিবেশ নিশ্চিত করা দরকার সে কথাও স্মরণ করে দিয়েছেন তিনি। রীতিমত নসিহত করার স্টাইলে বলেছেন, রাজনৈতিক দলগুলোকে সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক আচরণ প্রদর্শনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। সব দলের অংশগ্রহণের মাধ্যমে গণতন্ত্র বিকশিত হবে বলে তিনি মনে করেন। বৃহস্পতিবারের সংবাদ সম্মেলনে স্টেইনবার্গ আরও বলেছেন, ২০০৮ সালে অনুষ্ঠিত ‘গ্রহণযোগ্য’ নির্বাচনের মাধ্যমে বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক উত্তরণ ঘটেছে।
বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক অভিযাত্রায় যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে বলেও আশ্বাস দিয়েছেন তিনি।
যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা জরুরি বলে মত প্রকাশ করার আগে ও পরে অন্য কিছু বিষয়েও বলেছেন মার্কিন উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তবে বেশি গুরুত্ব পেয়েছে তার গণতন্ত্র সম্পর্কিত পরামর্শগুলো। যথেষ্ট বাস্তবসম্মত হলেও তার কথা জনগণের মধ্যে আস্থা সৃষ্টি করতে পারেনি। এর কারণও পরিষ্কার হয়েছে সংবাদ সম্মেলনে।
যেমন কুখ্যাত ১/১১ সম্পর্কিত প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে জেমস স্টেইনবার্গ সত্য এড়িয়ে গেছেন। জানতে চাওয়া হয়েছিল, ‘ভবিষ্যতে’ কোনো অগণতান্ত্রিক সরকারের ক্ষমতায় আসাকে যুক্তরাষ্ট্র সমর্থন করবে কি না। ‘ভবিষ্যতে’ কথাটার তাত্পর্য না বোঝার মতো কম বুদ্ধি নিয়ে নিশ্চয়ই মার্কিন উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্বে আসীন হননি স্টেইনবার্গ। তিনি সুকৌশলে বিষয়টি এড়িয়ে গেছেন। গতানুগতিক ভাষায় শুধু বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে ‘শক্তিশালী গণতন্ত্র’ দেখতে চায়!
অমন এক মহত্ ইচ্ছার জন্য যুক্তরাষ্ট্র অবশ্য ধন্যবাদ আশা করতে পারে।
অন্যদিকে বাংলাদেশের জনগণের অভিজ্ঞতা কিন্তু মোটেও মধুর নয়। কারণ, এ অভিযোগ সত্য হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে যে, ২০০৭ সালের ২২ জানুয়ারি অনুষ্ঠেয় গণতান্ত্রিক নির্বাচনকে বানচাল করা থেকে অঘোষিত অভ্যুত্থান ঘটানো এবং অসাংবিধানিক সরকারকে ‘নিয়ে আসা’ পর্যন্ত ঘটনাপ্রবাহে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অনস্বীকার্য ভূমিকা ছিল। চারদলীয় জোট সরকারের শেষ দিনগুলোয় ব্রিটেনের হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরী, ভারতের হাইকমিশনার বীণা সিক্রি, জাতিসংঘের প্রতিনিধি রেনেটা লক ডেসালিয়ান প্রমুখের পাশাপাশি মার্কিন রাষ্ট্রদূত প্যাট্রিসিয়া এ বিউটেনিসও অগণতান্ত্রিক শক্তিকে ক্ষমতায় আনার ব্যাপারে ‘ফলপ্রসূ’ ভূমিকা পালন করেছিলেন। তারও আগে এ ব্যাপারে জানান দিয়ে গিয়েছিলেন আরেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত হ্যারি কে টমাস। ২০০৫ সালের জুন মাসে তিনি বলেছিলেন, ‘প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো যদি সমঝোতায় না আসে তাহলে জনগণ বিকল্প খুঁজবে।
’ এই ‘বিকল্প শক্তি’ সম্পর্কিত প্রশ্নের উত্তরে মার্কিন রাষ্ট্রদূত বলেছিলেন, ‘আপনারা তা দেখতে পাবেন। ’ উদ্দিন সাহেবদের অসাংবিধানিক সরকারের মাধ্যমে ওই ‘তা’-টাই আসলে দেখানো হয়েছিল।
সে জন্য শুধু নয়, নির্বাচনে ৯৩ শতাংশ পর্যন্ত ভোট পড়ার এবং প্রতি মিনিটে চার-পাঁচজনকে দিয়ে ভোট দেয়ানোর পরও যুক্তরাষ্ট্রসহ বিদেশি শক্তিগুলো নির্বাচনকে ‘গ্রহণযোগ্য’ করে তোলার জন্য ন্যক্কারজনক তত্পরতা চালিয়েছে। নির্বাচন ‘সুষ্ঠু’ হয়েছে বলে সাফাই গেয়েছে। এতদিন পর স্টেইনবার্গও নির্বাচনটিকে ‘গ্রহণযোগ্য’ হিসেবেই উল্লেখ করেছেন।
বলেছেন, ওই নির্বাচনের মাধ্যমে বাংলাদেশে নাকি গণতান্ত্রিক উত্তরণ ঘটেছে! স্টেইনবার্গ সম্ভবত লক্ষ্যই করেননি যে বাংলাদেশের রাজনৈতিক দল ও জনগণকে গণতন্ত্রের প্রশ্নে ‘নসিহত’ করার কোনো প্রয়োজন পড়ে না। কারণ, এসব দল এবং জনগণই দশকের পর দশক ধরে গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করেছে, সামরিক ও স্বৈরশাসনের পতন ঘটিয়ে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করেছে এবং ১৯৯১ থেকে ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত পাঁচ-পাঁচটি সংসদ নির্বাচনে অংশ নিয়েছে, ভোট দিয়েছে। শুধু তা-ই নয়, এ দেশের জনগণ ভোট দিয়ে আসছে ১৯৩৭ সাল থেকে।
সব জানা সত্ত্বেও মার্কিন উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী যখন বাংলাদেশের রাজনৈতিক দল ও জনগণকে গণতন্ত্র সম্পর্কে সবক দেন এবং নসিহত করেন তখন নতুন করে সংশয়ে আচ্ছন্ন হওয়া ছাড়া উপায় থাকে না।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।