গহীন অরণ্য পথে পথহারা এক পথিক....
বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সংকট অতীতের সব মাত্রাকে ছাড়িয়ে গেছে বলে অভিযোগ উঠেছে বিভিন্ন মহলে। বিদ্যুতের অভাবে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে মানুষ। অন্যদিকে সেচ বন্ধ থাকায় আবাদ ও ফলনযোগ্য বোরো ধানে চিটা হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। বিদ্যুতের ঘন ঘন লোডশেডিং ও ভ্যাপসা গরমে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে রাজধানী শহর ঢাকায় বিদ্যুতের ঘন ঘন লোডশেডিং এর কারণে তীব্র পানি সংকট সৃষ্টি হচ্ছে, আর বিশুদ্ধ পানির অভাবে ডায়রিয়ার প্রাদুর্ভাব বাড়ছে।
তবে গ্রীষ্ম শুরুর আগেই দেশের জ্বালানী মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ও জ্বালানী উপদেষ্টা গরমে বিদ্যুতের লোডশেডিং সহ্য করতে নগরবাসীকে আগাম আহবান জানিয়েছিলেন। কিন্তু লোডশেডিং-এর মাত্রা দিন দিন সহ্যের সীমা ছাড়িয়ে গেলেও সরকারের কোন ত্বরিৎ ব্যবস্থা চোখে পড়ছে না।
আসলে নতুন বিদ্যুৎ উৎপাদন না হলে লোডশেডিং তো বাড়বেই। বিদ্যুৎ উৎপাদন না বাড়িয়ে গরম সহ্য করতে জনগণের প্রতি সরকারের আহবান যৌক্তিক নয় বলেই আমার ধারণা। শুধু তো বিদ্যুৎ সংকট নয় দেশে তো গ্যাস ও সার সংকট ও রয়েছে যার ফলে শিল্পে ও কৃষিতে আশানুরুপ প্রবৃদ্ধি হচ্ছে না।
এ ছাড়া রয়েছে যত্রতত্র ময়লা আবর্জনা ফেলা, পরিবেশ দূষণ ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনার সমস্যা। তাই এ সকল সমস্যার জন্য আমাদের সমন্বিত সমাধান প্রয়োজন। ঢাকার দিকে নজর দিলে দেখতে পাই- ঢাকায় প্রতিদিন প্রায় ৭ হাজার টন বর্জ্য ফেলা হয়। সিটি করপোরেশন ৪২% অপসারণ করে। এই আবর্জনার ৮০% জৈব যা সম্পদ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে।
আর এই আবর্জনা যত্রতত্র ডাম্পিংয়ের কারণে সৃষ্টি হয় জলাবদ্ধতা। আবার এই আবর্জনা গিয়ে পড়ে নদীতে। এতে নদী দূষিত হয়ে পড়ছে । পানির এরকম দূষণের কারণে ঢাকার চারটি নদীর পানি ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।
আবর্জনাকে সম্পদে রুপান্তর করাই সাম্প্রতিক কালের ভাবনা।
কারণ অনেক উন্নত দেশই এখনর আবর্জনা থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন করছে। অনেক দেশ তো গ্যাস ও সার উৎপাদন করছে। দেশের মাটিতে ৫% জৈব পদার্থ থাকার কথা থাকলেও বর্তমানে আছে মাত্র ১.২%। রাসায়নিক সার পরিবেশ দূষণ করে, দামও বেশি। অপরদিকে জৈব সার উন্নতমানের।
রাজধানীর প্রতিদিনের আবর্জনা হতে ২৪০ টন জৈব সার উৎপাদন সম্ভব। বছরে এতে লাভ হবে ৩৫ কোটি টাকা। ৬ হাজার লোকের মতো কর্মসংস্থান হবে। পাশাপাশি এই বর্জ্য ব্যবহার করে প্রায় ১৫ কোটি ঘনলিটার বায়োগ্যাস উৎপাদন করা সম্ভব। কারণ বাংলাদেশ শিল্প ও বিজ্ঞান গবেষণা পরিষদের এক গবেষণায় দেখা যায়, প্রতি কেজি আবর্জনা থেকে দৈনিক ০.০৬ ঘনমিটার গ্যাস এবং ০.২ কেজি উন্নতমানের জৈবসার পাওয়া যায়।
এতে দেখা যাচ্ছে, ঢাকা শহরের বর্জ্য থেকে বছরে ৫ লাখ টন জৈবসার উৎপাদনের সুযোগও থাকছে। উৎপন্ন গ্যাস রান্না করার কাজে ও বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যবহার করা সম্ভব। তেমনি উৎপাদিত জৈবসার দিয়ে ফসলের উৎপাদন করা যাচ্ছে।
আর এই সুষ্ঠু উৎপাদন ব্যবস্থাপনার ফলে শহরবাসীকে দুর্গন্ধমুক্ত ও স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশ উপহার দেওয়া সম্ভব।
একটা কথা মনে রাখতে হবে আমাদের দেশ জ্বালানীতে খুব সমৃদ্ধ নয়।
তাই জ্বালানী ভিত্তিক পাওয়ার প্লান্ট আমাদের জন্য খুব ব্যয়বহুল।
আবর্জনা থেকে রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় সৃষ্ট বাষ্প দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদিত হতে পারে। একটি মার্কিন কোম্পানি রাজধানী ঢাকায় একদিনের সৃষ্ট বর্জ্য থেকে দৈনিক ১০০-১৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ ও গ্যাস উৎপাদনের বিষয়ে কয়েক বছর আগে একটি প্রস্তাব দেয়। কোম্পানিটি বলেছিল বিচিত্র ও অপ্রচলিত উৎস থেকে উৎপাদিত বিদ্যুতের মূল্য প্রচলিত বিদ্যুৎ মূল্যের তুলনায় অনেক কম হবে।
বর্জ্য আবর্জনা এভাবে কাজে লাগাতে পারলে এর দুঃসহ দুর্গন্ধের থেকে রেহাই পাওয়া সম্ভব হবে।
জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে পাল্লা দিয়ে বর্জ্য আবর্জনার পরিমাণ বৃদ্ধি পেতে পেতে এমন এক সময় আসবে যখন বর্জ্য রাখার জায়গা পাওয়া যাবে না; পরিবেশ দূষিত হবে। বিশেষ করে কলকারখানার বর্জ্য পরিবেশকে দূষণ করছে বেশি্। একটি তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র ৪ লাখ ২০ হাজার টন শিল্প ও গৃহস্থালির বর্জ পোড়াতে পারে এবং ৩২ মেগাওয়াট পর্যন্ত বিদ্যুৎ উৎপাদনসহ ২০ হাজার টন অজৈব আবর্জনা পুনঃব্যবহারের উপযোগী করতে পারে।
পরিশেষে তাই বলতে হয় আবর্জনা এখন আর ফেলনা নয় সম্পদ। এ সম্পদের সদ্ব্যবহারের মাধ্যমে আবিষ্কৃত হোক আবর্জনার থেকে মুক্তির পন্থা- এটাই বর্তমান সময়ের প্রত্যাশা।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।