আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

পান্থ



চড়া রোদ। ঘাসগুলো শুকনো। কিছু কিছু ঘাসের জ্বলজ্বলে সবুজ রং আর নেই, ফিকে হয়ে গেছে। কোথাও কোথাও একেবারে ন্যাড়া। গাছের তলায় তিনজন মানুষ।

একজন শিশু, একজন তরুণ, একজন তরুণী। তারা কেন দাঁড়িয়েছে ঠিক জানা যায়নি, তবে খানিকটা আঁচ করা যায়। শিশুর নাম ধরে নিই সুকান্ত। হয়তো কোনো ছড়ায় পড়া দীঘির ধার, সবুজ পাতা, রঙবেরঙের ফুলের কথা শুনে এদের দেখতে মন চেয়েছে। অথবা এমনও হতে পারে কোনো ছেলেমানুষি অভিমানে ঘর ছেড়েছে, হাঁটতে হাঁটতে চলে এসেছে।

কে জানে, কোনো আজগুবি অ্যাডভেঞ্চারের গল্প থেকে কোনো প্ল¬্যান এসেছে কি না? আবার হতে পারে, তার চারপাশে ভিড় করে আছে ইমারত, বিকেলের রোদটুকুও হয়তো চুরি হয়ে গেছে। সে হাঁপিয়ে উঠেছে, পালানোর তাড়না ভর করেছে। অথবা কে বলতে পারে যে সে পালিয়ে এসেছে নইলে তাকে উটের জকি অথবা কোনো বিকৃত রুচির মানুষের অ্যাবইউসের শিকার হতে হত। ঠিক করে কোনোটাই বলা যায় না। এমনকি, হতে পারে কোনো কারণ ছাড়াই মনের খেয়ালে ঘুরতে ঘুরতে এখানে হাজির সে।

তরুণ এর নামও জানা নেই, যদি ডাকার প্রয়োজন হয় তা-ই শহীদ নামটি ব্যবহার করি। এই বয়স ওর ক্যারিয়ার গড়ার সময়, গন্তব্যহীন ঘুরে বেড়ানোর সময় এটি নয়, একথা তার না বোঝার কারণ নেই। তারপরও হয়তো বড় চাকরি, ভাল রেজাল্ট, প্রতিষ্ঠার জন্য তাড়া করা প্রতিযোগিতা আর ভাল্ল¬াগছে না। আবার উল্টোও হতে পারে, বেকার থেকে থেকে আর সহ্য করতে পারছে না। অন্যরকম কিছুও হতে যে পারে না এমনও নয়।

হয়তো কোনো এক সুরের টানে চলে এসেছে, আপন মনে। কিংবা তার মায়ের ভাষাতে যে মনীষী মানবতার সুর, বাণী ছড়িয়েছেন, তার কণ্ঠকে হয়তো রুদ্ধ করা হচ্ছে, ক্ষোভে সে ঘর ছেড়েছে। তার মনের কিনারে কী কথা, কী স্বপ্ন লুকিয়ে আছে জানি না। হয়তো ঝড় হতে ইচ্ছে করে, বিপ্ল-বের সংকল্প রক্তের মাঝে উত্তাল ঢেউ আনে। আবার, গা ঢাকা দিতে পালিয়ে বেড়াতে পারে।

কোনো ক্রাইম করেছে কি না কে জানে? চেহারাটি স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে না, তা-ই বলা যাচ্ছে না খবরের কাগজে ছাপা কোনো সন্ত্রাসী কি সে? বা হয়তো তার পকেটেই স্পষ্ট ছবিসহ আইডি কার্ড আছে, যা দেখাচ্ছে যে সে দেশের সেরা বিদ্যাপীঠের একজন ছাত্র যে-ই পরিচয়টির কারণেই তাকে ঘর থেকে টেনে বের করে বেদম মার মারতে পারে দেশপ্রেমিক বাহিনী, এমনকি তার বড়ভাইদের মতো লাইনে দাঁড় করিয়ে ব্রাশ ফায়ার করে মারাও হতে পারে। কিংবা নেহায়েতই গোবেচারা হতে পারে সে। আবার, পালিয়ে যাবার সময় কালো পোশাকে গা মাথা ঢাকা, কালো সানগ্লাসে চোখ আড়াল করা কোনো বাহিনীর হাতে ‘ক্রস ফায়ারে’র মৃত্যুর খবর হওয়া থেকে দূরে থাকতে অথবা কোনো কারণ ছাড়াই এখানে এসেছে। আগের দুইজনের নাম যখন দেয়া হয়েছে, তখন তরুণীরও নামটি দেওয়া যাক ঊষা। আগের দিনে রাজ পরিবারে বউ হলে রানী বলা হত।

রানীর সাজে সেজে থাকতে হত সারাক্ষণ। আজ আর সেই রাজা রানীর দিন নাই। কিন্তু হয়তো কোনো বড় আমলা, ব্যবসায়ী, সামরিক অফিসার, বিজনেস এক্সিকিউটিভের মিসেস, ভাবী এই পরিচয় দিয়ে বিউটি পার্লারে সেজে, গহনা, পোশাক পরে পার্টিতে এ্যাটেন্ড করার জীবন তার পছন্দ নয়। অথবা হয়তো ধর্ষণের ভয়ে তার পরিবার সারাক্ষণ আতঙ্কিত। কেননা, এই রকম ধর্ষণ পরদিন ‘সংখ্যালঘু নির্যাতন’ হিসেবে চিহ্নিত হয়, যন্ত্রণাকাতর মাকে হাতজোড় করে বলতে হয় ‘‘আমার মেয়েকে একসাথে সবাই ধর্ষণ করো না, একে একে করো” ব্যাস এর বেশি কিছু নয়।

এসিডে জ্বলে জ্বলে মুখ পুড়ে যাবার আশঙ্কা থাকতে পারে, তাই ভয়ে পালিয়ে বেড়াতে হচ্ছে। কিংবা সে হয়তো সর্বোচ্চ শিক্ষালয়ের শিক্ষার্থী, সে শিক্ষালয়কে কলুষিত করছে যে শিক্ষক, তার কাছ থেকে নিপীড়িত হয়ে তার প্রতিবাদ করে কেবল লজ্জা ছাড়া কিছুই জোটেনি ঊষার- সে তা-ই আজ বহুদূরে যেতে চায়। ভিন্ন রকম কিছুও হতে পারে। কে জানে, ঊষা ছবি আঁকতে পারতেও পারে, তাই ছবি আঁকার সাবজেক্ট এর খোঁজে এখানে এসেছে। বা, যে শহরে সে বেড়ে উঠেছে সেখানে প্রকাশ্যে ঘোষণা দিয়ে ভাস্কর্যগুলো ভেঙে ফেলছে এক অপশক্তি আর রাষ্ট্র তাদের মদতও দিচ্ছে; নিষ্ক্রিয় থেকে সে যাতনা সয়ে যাওয়া তার পক্ষে আর সম্ভব হচ্ছে না, প্রচণ্ড অভিমান তাকে ঘর ছাড়া করেছে।

অথবা এখানে কেন এসেছে এর উত্তর হয়তো সে নিজেই জানে না। তবে তারা তিনজনই জানে ঢালের ওধারে আছে দীঘি। দীঘির ঐপারে অনেক সবুজ গাছের মাঝে একটি লাল কৃষ্ণচূড়া গাছ আছে। পাখিরা গাছে বসে বোঁটা থেকে ফুল খুঁটে ফেলে। গাছ থেকে খসে পড়ে ফুলগুলি।

কৃষ্ণচূড়া গাছের তলা লাল ফুলে ছেয়ে যায়। হয়তো তিনজনেরই আপাতত গন্তব্য ঐ পার। কিন্তু পথ জানা নেই। এখানে কোনো পথ আঁকা নেই, যে পথ ধরে তারা চলবে। তবু তিনজনে থামছে না।

ঢাল বেয়ে বেয়ে উঠছে। ঘাসগুলো বেশ বড় হয়েছে। ঘাসের মাঝে চোরাকাটা। তিনজনে উঠছে ঝুঁকে ঝুঁকে। একটা শক্তি শরীরকে নিচের দিকে টানছে, তারা তার উল্টোপাশে উঠছে সোজা হয়ে উপরে ওঠা সম্ভব হচ্ছে না, সবাই কুঁজো হয়ে গেছে।

সুকান্তের পায়ে, শহীদ আর ঊষার প্যান্টে চোরাকাটা বিঁধেছে। কেমন খচখচ করছে। হাঁটুর নিচ থেকে আরম্ভ করে গোড়ালি পর্যন্ত চুলকাচ্ছে। ঢালের উপরে তিনজনে হাঁটছে, হাঁটছে। কোথাও ঘাস, কোথাও ন্যাড়া।

এবড়ো খেবড়ো লম্বা পথ। সুকান্তের মুখ থেকে টপটপ করে ঘাম ঝরছে। কপাল ঘামে ভেজা, ভুরুর উপরে ঘাম, সেই ঘাম গড়িয়ে চোখের পাতায় পড়ল। চোখের পাপড়ি ভিজল। সে ঘাম আরও গড়িয়ে নাক বেয়ে ঠোঁট ঘেঁষে মুখের ভিতর পড়ল, এর স্বাদ নোনতা নোনতা ।

শরীর থেকে ঘামভেজা গন্ধ বের হচ্ছে। শহীদের তীব্র মাথা ধরেছে। কপালের দু’পাশ হাত দিয়ে চেপে ধরল, জোরে চেপে হাত ঝাঁকাচ্ছে। কিন্তু যন্ত্রণা কমছে না। ঊষার জিভ শুকিয়ে গেছে।

গলার ভিতর কেমন খসখস করছে। পানি পান খুব দরকার। কিন্তু এখানে পানি নেই। তিনজনে হাঁটছে। একটু একটু করে এলোমেলো পা ফেলছে।

সুকান্ত খেয়াল করেনি, একটা কাঁটা ওর পায়ের তালুতে প্রায় ইঞ্চিখানেক ঢুকে গেছে। সুতীব্র যন্ত্রণা হচ্ছে। হাত দিয়ে টেনে কাঁটাটি বের করল। কাঁটাটির সাথে একটু মাংস আর ছোপ ছোপ রক্ত বেরুল। পথে ফোঁটা ফোঁটা রক্ত পড়ছে।

এক চিলতে মাংস পায়ের চাপে মাটিতে লেপ্টে গেল। তিনজন হেঁটেই চলেছে। তিনজনে ঢালুর একধারে এসেছে। এখন পথটা একটু নিচু। মাঝের জায়গাটা একটু জঙ্গলা।

তারপর আবার উঁচু। সুকান্তের মাথা ঘুরছে। কানের পাশে কেমন বনবন আওয়াজ শুনছে। চারপাশ নড়বড়ে মনে হচ্ছে। শহীদের তলপেটে ব্যথা করছে।

নাড়িভুঁড়ি মোচড় দেয়া একটা প্রচণ্ড চাপ অনুভব করছে। ঊষার পিঠ পুরো ঘামে ভিজে গেছে। কেমন ছপছপ লাগছে। জঙ্গলার ধারে তিনজনে হাঁটছে। উঁচু থেকে নিচু, নিচু থেকে উঁচু।

হাত দিয়ে ডালাপালা, কাঁটা সরিয়ে তিনজনে হাঁটছে। নিচু থেকে আবার উপরে উঠতে যাচ্ছে। উঠার সময় হঠাৎই এক মুহূর্তে শহীদের ডান চোখের এক চুল উপরে চোখের পাতা আর ভুরুর মাঝখানে কাঁটার খোঁচা লাগল। ভুরুর একটু উপরে কপাল ছড়ে গেছে প্রায় ইঞ্চিখানেক। রক্ত গড়িয়ে চোখের পাতা, পলক বেয়ে নাক আর কপালের মাঝখানটা ভিজে গেল।

তিনজনে ঝুঁকে, ঝুঁকে হেঁটে আরেকটা উঁচু জায়গায় পৌঁছাল। হেঁটে চলেছে তিনজন। সুকান্তের খুব পিপাসা পেয়েছে। শরীর কেমন যেন অবশ হয়ে যাচ্ছে। নির্জীব লাগছে নিজেকে।

শহীদের চোখের নিচে রক্ত জমে গিয়েছিল। আবার কপাল, থুঁতনি ভিজে গেছে ঘামে। রক্তের সাথে ঘাম মিশে এর রং হালকা লালচে হয়ে গেছে। ঘামমেশারক্ত থুঁতনি বেয়ে ঝরল। ঊষার কাছে চারপাশটা কেমন ঝাপসা লাগছে।

মাথা ঘুরছে বনবন করে। সেন্সগুলো কেমন ভোঁতা ভোঁতা লাগছে। মনে হচ্ছে এখনি মাথা ঘুরে পড়ে যাবে। তিনজনই ঘুরছে। হাঁটতে হাঁটতে উপরে তাকাল।

ঝাঁজাল রোদ। নীল আকাশের মাঝে সূর্য। তার চারপাশে সাদা সাদা মেঘ। অতি পরিষ্কার আকাশ। তিনজনেই উপরে তাকিয়ে দেখছে আর হাঁটছে।

শরীর থেকে টপটপ করে ঘাম ঝরছে, জিভ গলা শুকিয়ে গেছে। একটু পানি দরকার। পরিষ্কার মেঘলা আকাশ হঠাৎ কেমন নিভু নিভু হয়ে যাচ্ছে। সাদা মেঘগুলো কালো হচ্ছে আর জমছে। ঝরঝর করে বৃষ্টি নামল।

ঝরা পানিতে ভিজতে ভিজতে তিনজন হাঁটছে। হঠাৎ তারা ছুটল। পথে অল্প একটু গভীর গর্ত পানিতে ভরে গেছে। গর্তের পানিতে আঁজলা পেতে পানি খাচ্ছে ইচ্ছামতো। চুল, মুখ, হাত, পা সব ভিজছে।

কী এক মহা উল্ল¬াসে তিনজনে দৌড়াচ্ছে। ঝিমিয়ে পড়া ভাবটি তিনজনেরই কেটে গেল। গরম কমছে। আলোও কমে আসছে। চারপাশটা কেমন অন্ধকার হয়ে যাচ্ছে।

তিনজনে ভিজছে। সুকান্তের মনে পড়ছে ঝম্ ঝম্ বিষ্টি পড়ে, ভাইবোন খেলা করে। বেহালার সুর শুনতে পাচ্ছে শহীদ। ঝম ঝম বৃষ্টির মাঝে একটু আলো, একটু আঁধার, দূরে ঝাপসা ঝাপসা সবুজ গাছপালা, ডালপালা পাতা ঊষার চোখে একটি ল্যান্ডস্কেপ ধরা পড়ছে। হঠাৎ তিনজনে ছুটছে।

কেমন করে যেন এক পাহাড় প্রাণশক্তি শরীরে, রক্তে, ধমনীতে সঞ্চারিত হয়েছে। সুকান্ত ডিগবাজি দিচ্ছে। এই পা উপরে তো এই মাথা উপরে। শহীদকে কী ভর করেছে জানি না। হাত মুঠো করে লাফিয়ে লাফিয়ে হাসছে।

দুই হাত দুই পাশে মেলে ঊষা ঘুরছে। থেমে যায় নি কেউ। ডিগবাজি দিতে দিতে একটু বেকায়দা হয়ে গেছে। সুকান্তের কোমর খুব ব্যথা করছে। শহীদ কাদাতে স্লিপ কেটে, ঢালু বেয়ে গড়িয়ে পড়ছে।

পিঠের চামড়া ছিলে গেছে। হাঁটুর উপরের চামড়া এবড়ো খেবড়ো হয়েছে। প্যান্টে রক্তের ছোপ ছোপ পড়েছে। শার্টের পিছনটা লালচে হয়েছে। ঊষার মাথা ঘুরাচ্ছে।

ঘুরতে ঘুরতে পড়ে গেল। গড়িয়ে যাচ্ছে। গা ভরে উঠছে পিঁপড়ার ঝাঁক। লাল পিঁপড়া, বিষ পিঁপড়া কামড়াচ্ছে। কোমর, উরু, পা জ্বলে যাচ্ছে।

চুলকাচ্ছে প্রচণ্ড। কেউ থামেনি। হেঁটে চলেছে। ঢালু বেয়ে নামছে। সুকান্ত সোজা হাঁটতে পারছে না।

পুরো কুঁজো হয়ে চার হাত পায়ে প্রায় হামাগুড়ির ভঙ্গিতে এগুচ্ছে। শহীদ খোঁড়াচ্ছে। মাঝে মাঝে পিঠে প্রচণ্ড জ্বালা হচ্ছে। ঊষার বমি পাচ্ছে। চারপাশটা কেমন ঝাপসা ঝাপসা লাগছে।

চুলকাতে চুলকাতে শরীরে নখের আঁচড় পড়ে গেছে। এমনি করে এক সময় তারা দীঘির কাছে এল। তিনজনে ঝাঁপ দিল। দাপাদাপি, ঝাঁপাঝাঁপি করছে। পানির ছপ্ছপ্ শব্দ হচ্ছে।

তিনজনেই পানির মধ্য দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে। একটু ভিতরেই কাশবন। তিনজনে সেখানে উঠল। কাশবনের মাঝ দিয়ে তিনজনে হেঁটে যাচ্ছে। নরম নরম কাশফুল তাদের শরীরে পরশ বুলাচ্ছে।

ধীরে ধীরে সব জ্বালা যেন কেটে যাচ্ছে। একটু একটু শীত করছে। শরীরের মধ্যে আরাম বোধ হচ্ছে। তারা কাশবন পেরিয়ে আবার দীঘির পানিতে পা রাখল। তারপর পুরো শরীরটুকুই ডুবিয়ে দিল।

পানিতে তিনটি শরীর ভাসছে। তিনজনে চোখ খুলল। শরীর ভেসে ভেসে যাচ্ছে আর তারা আকাশের মেঘের ভেলা দেখছে। আকাশে তারা ভেসে বেড়াচ্ছে। আকাশের আলো নিভে যাচ্ছে।

চাঁদের আলো পানিতে পড়ছে আর কেটে কেটে যাচ্ছে। তিনজনেই তাকে ছোঁয়ার চেষ্টা করছে। ভেসে এসে পারে উঠল। আবার হাঁটার পালা। গাছের ফাঁকে ফাঁকে একটু আলো, একটু অন্ধকার।

ঠাণ্ডা ঠাণ্ডা হাওয়া। শরীর জুড়িয়ে দিচ্ছে তিনজনেরই। ঘাসগুলো কেমন নরম নরম ভেজা ভেজা। ঘাসের উপর পায়ে পায়ে হেঁটে যাচ্ছে। যখন কৃষ্ণচূড়া গাছের নিচে পৌঁছল তখন আকাশে লালিমা।

আকাশ রং বদলাচ্ছে। পাতার ফাঁকে, ডালের মাঝে একটু একটু করে আলোর ঝিকমিক বাড়ছে। মৃদু, শীতল বাতাস বইছে। তিনজনে থামল। পাখিরা ডালে ডালে, শাখায় শাখায় বসছে, কিচ্মিচ্ করছে।

চারিপাশে সুরের বন্যা। পাখিদের কুটখুঁটানিতে কৃষ্ণচূড়া বোঁটা থেকে আলগা হচ্ছে। একটু হাওয়াতেই তারা ঝরে পড়ছে। কৃষ্ণচূড়ার তলা লালময় হয়ে উঠছে। তিনজনে দাঁড়িয়ে দেখছে, শাখায় শাখায় পাতা আর ফুল এর ফাঁক দিয়ে নীল আকাশ আর মেঘের মেলা।

আকাশে মেঘের সাথে মেঘ জমছে। ডালের ফাঁক দিয়ে, পাতা বেয়ে বেয়ে টপটপ করে পানি পড়ছে। তিনজনে সেই পানিতে ভিজছে। একটু পর মেঘ কেটে গেল। মাথার ঠিক উপরে সূর্য।

তাতানো শরীর শুকিয়ে দিচ্ছে। চারপাশ খুব উজ্জ্বল, বর্ণময়। চারিপাশের প্রতিটি রং স্পষ্ট হয়ে দেখা দিচ্ছে। ধীরে ধীরে আলো ফিকে হয়ে আসছে। সূর্য হেলে পড়েছে।

আকাশ হালকা লালচে হয়ে গেছে। তারপর আলো আঁধারি। ডালপালা, ফুলের ফাঁক দিয়ে জ্যোৎস্না ছড়িয়ে যাচ্ছে। চাঁদটিকে দেখলে কেমন যেন হাসছে হাসছে মনে হচ্ছে। ধীরে ধীরে আকাশ ঘন কালো হয়ে গেল।

আবার লালিমা উঠছে। তিনজনে আবার সেই পথ ধরে হাঁটা আরম্ভ করল। এই আলো আঁধারির খেলা, পাখির কলকাকলি আর পাতাঝরার শব্দের মাঝেই সুকান্ত পেয়ে গেছে ছড়ার ছন্দ, শহীদ শুনতে পেয়েছে তার মনচাওয়া সুর, ঊষা মনে মনে এঁকেছে তার দৃশ্যপট। পথের মাঝে একটু রক্তের ছোপ আর অসংখ্য পায়ের ছাপ। এরা মিলে পথ এঁকে ফেলেছে।

হঠাৎ তীব্র উল্লাসে সুকান্ত বলে উঠল, “মানুষ পায়ে হেঁটে হেঁটে পথ বানায় ফেলে। ”

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।