আধারে দেখা বৃত্তান্ত আলোয় প্রকাশ
দেশের একমাত্র আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় যাত্রা শুরু করে ১৯৭১ সালের ৪ জানুয়ারি। বর্তমানে এখানে ৫টি অনুষদ ও ২টি ইনস্টিটিউটটের অধীনে মোট ২৯টি বিভাগে উচ্চ শিক্ষা প্রদান করা হয়। ছাত্রদের থাকার জন্য ৭টি এবং মেয়েদের জন্য ৫টি মোট ১২টি আবাসিক হল রয়েছে। কিন্তু সম্ভাবনার এই শিক্ষায়তনে শিক্ষার্থীরা আবাসন, খাবার, বিদ্যুৎসহ নানা সমস্যার মধ্যে তীব্র সঙ্কটে দিন অতিবাহিত করছে। আবাসিক এ বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে আবাসন সমস্যা মারাত্মক আকার ধারণ করেছে।
হলগুলোতে শিক্ষার্থীরা মানবেতর জীবন যাপন করছে। প্রত্যেক হলে ধারণ ক্ষমতার তুলনায় দেড়গুন শিক্ষার্থী বরাদ্দ দেওয়া হয়। মীর মশাররফ হোসেন হলে ১ম বর্ষের শিক্ষার্থীদেরকে প্রথম ডাইনিং রুমে উঠানো হয়। এরপর দু‘জন ধারণ ক্ষমতার রুমে ৮/১০জনকে থাকতে দেয়া হয়েছে। আল বেরুনী হলে গত বছরের ভর্তি হওয়া ছাত্রদের আসন বরাদ্দ দেওয়া সম্ভব হয়নি।
আবার নতুন শিক্ষার্থীদের বরাদ্দ দিয়ে কষ্ট আরো বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে। আল বেরুনী হলের কমন রুমে একসাথে ৩০/৪০জন ছাত্রকে থাকার ব্যবস্থা করেছে। একই ভাবে বঙ্গবন্ধু হল, ভাসানী, কামালউদ্দিন ও সালাম-বরকাত হলের গেস্ট রুম ও রিডিংরুমে তিল ধরার ঠাই নেই। হলের সার্বিক অবস্থা নিয়ন্ত্রনের জন্য একজন প্রভোস্ট বেশ কয়েকজন আবাসিক শিক্ষক সার্বক্ষনিক রাখা হয়েছে। কিন্তু সবচেয়ে মজার বিষয় তাদের কোন কিছু করার ক্ষমতা নেই হলের কোন বিষয়ে।
হলের ছাত্র কোন রুমে কে থাকবে এ নিয়ন্ত্রণ তো দূরের কথা ওই ছাত্র হলে থাকবে কিনা তা নিয়ন্ত্রণ করে হলের রাজনৈতিক কর্মীরা। রাজনৈতিক প্রয়োজনে নেতারা অন্য হলের কর্মী এনে ইচ্ছামত রুম বরাদ্দ দেয় আর মাঝেমাঝে গৃহ শিক্ষকরা সাধারণ ছাত্রদের কক্ষ পরিদর্শন করতে গিয়ে ঝাড়ি দিয়ে আসে। কারণ যে রুমে ওই ছাত্র আছে দেখা যায় তার নামে অন্যরুম বরাদ্দ যে রুমে কোন নেতার বাইরের হলের কর্মীরা অবস্থান করে। সম্মানিত গৃহশিক্ষকরা নেতাদের কিছু বলতে পারেন না, ক্ষমতা প্রয়োগ করে কারো ক্ষমতার কাছে নত নিরীহ ছাত্রের উপর।
হলের ডাইনিংএর খাবার বাংলাদশের সবচেয়ে নিম্নমানের খাবার।
এক টুকরো আলু অথবা পেপে অথবা সস্তাদামের মৌসুমী সবজির দু‘টুকরো সাথে পাঙাশ অথবা সিলভার কার্প মাছ প্রতিদিনের খাবার মেনু। সাথে অবশ্য হলুদ রঙের পানিও বরাদ্দ আছে। খাবারের মান এতটাই খারাপ যে মীর মশাররফ হোসেন হলে খাতা-কলমের ৭১৬জন ছাত্রের মধ্যে খুব বেশি হলেও ৫০জন খায়। বাকী হলের গুলোর অবস্থা এর চেয়ে ভয়ানক। আর ক্যান্টিন সম্পর্কে বড় ভাইদের কাছ থেকে একটি মন্তব্য শুনেছিলাম, যারা পূর্বের জন্মে কোন পাপ করেছে তার প্রায়শ্চিত করতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যান্টিনের খাবার গ্রহণ।
বর্তমান সময়ের প্রকট সমস্যা বিদ্যুতের লোডশেডিং। দিনে একাধিকবার চলে বিদ্যুতের লুকোচুরি খেলা। এই লুকোচরি খেলার কাছে পরাজিত হয় শিক্ষার্থীদের এবং বিভিন্ন বিভাগের কম্পিউটার ও নানা ইলেকট্রিক যন্ত্রপাতি। বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ বিভাগে পুরোদমে ক্লাশ, পরীক্ষা, প্র্যাকটিক্যাল পরীক্ষা চলার এই গুরুত্বপূর্ণ সময়ে প্রতিদিন নিয়মিত বিদ্যুৎ লুকোচুরি খেলে, পরিহাস করে। প্রতিদিন প্রায় ২-৩ ঘন্টা লোডশেডিং থাকে।
বিদ্যুতের এই আসা যাওয়ায় শিক্ষার্থীদের শিক্ষা কার্যক্রম মারাত্মক ভাবে হুমকির সম্মুখিন হচ্ছে।
এসব বিষয়ে লক্ষ নেই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের। তারা নিজেদের আখের গোছাতে ব্যস্ত। কিভাবে নিজেদের প্রভাব দীর্ঘস্থায়ী করার যায় তার চিন্তা- পরিকল্পনায় সময় কাটে প্রশাসনের কর্তা ব্যক্তিদের। সব দেখে মনে হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন কলাভবনের সামনে মহুয়া গাছের বাদুড় ঝোলার অবস্থা।
রাতে অন্ধকারে বাদুড় যেমন বিভিন্ন জাতের সুস্বাদু ফল চোখে না দেখে মহুয়া গাছের ফল একমাত্র আহারের সামগ্রী বিবেচনা করে মাতালের মত খায়। তেমনি লোডশেডিং-এর কবলে পড়ে অন্ধকারে ডাইনিং-এ বসে পাতলা ডালের সাথে এক টুকরো মাছ নিয়ে আহার করেই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের সন্তুষ্ট থাকতে হয়\
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।