পরিবর্তনের জন্য লেখালেখি
ব্যাচেলর ভাই ও বোনেরা সারাটা দিন খাটাখাটনি করে ঘরে ফিরে দেখেন বিদ্যুৎ নাই, পানি নাই , গ্যাস নাই । এর ভিতরেই হয়ত বাজার করেছেন , এখন রান্না করতে হবে । যেহেতু অনেক কিছুই নাই এবং থাকলেও তার বিল অনেক বেশি , তাই যথা সম্ভব কম খরচ করে রান্না ও এর যোগাড় যন্ত্র , পরিশেষে ধোয়া পাকলার দিকে লক্ষ্য রেখে এই পোস্ট ।
------------------
রাইস কুকারে চাল - ডাল -আলু ঃ
সময় ও বিদ্যুৎ বাঁচাতে যে কোন রান্নায় চাল আগেই ধুয়ে পানিতে ভিজিয়ে রাখুন। এক গাদা পানি নয়, দুই কাপ চালে তিন কাপ পানি , এভাবে ভিজান।
রাইস কুকারে চালঃপানির অনুপাত দেওয়াই থাকে । সেভাবে চাল - পানি চড়িয়ে দিন। ১০-২০ মিনিটে ভাত হয়ে যাবে । কাপ রাইস কুকারের সাথেই দেওয়া থাকে। সুইচ অন করে দেওয়ার পরে রান্না শেষে নিজে নিজেই কুকিং পজিশন থেকে ওয়ার্ম পজিশনে চলে যাবে ।
খাবার গরম থাকবে।
খিচুড়ি ঃ ২ কাপ চাল, ১ কাপ ডাল, ৫-৬ কাপ পানি, ১ চা চামচ লবণ, ১ চিমটি হলুদ, ১ চা চামচ সরিষার তেল দিয়ে বসিয়ে দিন। এইটাই বেসিক খিচুড়ি । এইটাকে বিচিত্র করতে চাইলে চড়াবার সময় ম্যাগির চিকেন কিউব দিতে পারেন। ছোট্ট করে কাটা আলু , কপি কিংবা অন্য সবজি দিতে পারেন।
তবে সব মিলিয়ে সবজির পরিমান যেন ২ কাপের বেশি না হয় । কাটবেন ছোট করে যাতে ঐ ১০-১৫ মিনিটে রান্না হয়ে যায়। মুগ ডাল হলে সময় ও পানি সামান্য বেশি লাগবে। বিদ্যুৎ বাঁচাতে সুইচ অন করার আগে পানিতে চাল ডাল ভিজতে দিন।
পোলাউ ঃ দুই কাপ চাল, ৩ কাপ পানি , কুচি করে কাটা ১ টা পিঁয়াজ, ১ চামচ ঘি , ১ চা চামচ লবণ , ৫ টা এলাচ, ২ ইঞ্চি দারুচিনি , ১টা লবঙ্গ দিয়ে বসিয়ে দিন।
একটা পাতলা পরিষ্কার কাপড়ে আধা চা চামচ ধনে ও আধা চা চামচ জিরা (আস্ত) নিয়ে পুটলি বেন্ধে ভিতরে দিয়ে দিন। রান্না শেষ হয়ে গেলে পুটুলি তুলে আলাদা করে ফেলুন আর ২০ মিনিটের পোলাউ খান । বেশি খুঁতখুঁতে হইলে আলাদা করে পিয়াজ কুচি বাদামী করে ভেজে ( বেরেস্তা ) উপরে ছড়িয়ে দিন। সামান্য চিনি ছিটান । মুখ বন্ধ করে রাখুন ১০ মিনিট ।
ডাল ভর্তা ঃ দুই কাপ মুসুরি ডাল সামান্য লবণ সহ ৩ কাপ পানিতে বসিয়ে দিন। সিদ্ধ না হলে পানি সামান্য বাড়িয়ে দিতে পারেন। পানি শুকিয়ে গেলে নামিয়ে সরিষার তেল, কাঁচা পিয়াজ, লবণ, কাঁচা মরিচ দিয়ে মাখিয়ে নিন ।
মাছের ভর্তা ঃ যেই মাছের ভর্তা খাইবেন সেইটারে লবণ আর হলুদ সহ পানি দিয়ে বসায় দেন। মাছের পরিমাণে আন্দাজ করে পানি দিবেন।
পানি একটু বেশি হইলেও সমস্যা নাই , বাড়তি পানি শুকিয়ে যাবে । এইবার নামিয়ে কাঁটা থেকে ছাড়িয়ে উপরের মতন মরিচ, তেল মিশিয়ে ভর্তা করে নেন ।
সাবধানতা ঃ ব্যবহারের আগে রাইস কুকারের ব্যবহার বিধি গুলা পড়ে নিবেন।
-----------------------------------
ঝটপট মাছ , মাংস , তরকারি করতে গেলে কিছু বেসিক নিয়ম মানলেই চলে । দুইটা ভাগে মনে রাখবেন , সর্ব প্রকার সবজি , ভাজি , চচ্চড়ি ইত্যাদিতে যা লাগে ঃ
১।
তেল
২। পিয়াজ
৩। লবণ
৪। হলুদ
৫। মরিচ (কাঁচা সবুজ ) এবং শুকনা (লাল)
এর সাথে আপনি যখন মাছের তরকারি , মুরগী , গরু , খাসি ইত্যাদি করবেন , তখন নিচের মসল্লা গুলো যোগ করে নেবেন।
সবচেয়ে কম মসল্লা লাগে মাছ আর মুরগীতে । তবে ভাজি না তরকারি , চিংড়ি না ইলিশ , সবজি আছে না শুধুই আলু - এসবের উপর মসল্লা দেওয়া না দেওয়া নির্ভর করে । সাধারণ রান্নায় গরু খাসিতেই মসল্লা বেশি লাগে যদি খাস বাংলা রান্না করেন। সামান্য বিদেশী স্টাইল হলে , এত মসলা লাগে না ।
৬।
আদা
৭। রসুন
৮। ধনে
৯। জিরা
১০। গরম মসল্লা ( দারচিনি, এলাচ, লবঙ্গ , তেজপাতা ,কালো গোল মরিচ)
এই দিয়েই আপনার সারা বছরের রান্না শেষ ।
বিশেষ কোন ডিশ করতে চাইলে বাড়তি জিনিস/ মসল্লা লাগবে । এই বেসিক দশ প্রকারের মসলা রান্না ঘরে সাজিয়ে রাখুন।
যাই রান্না করেন , ফ্রেশ জিনিসের স্বাদই আলাদা । সুতরাং ক্ষেতের সবজি, সদ্য জবাই মাংস , পুকুরের মাছ কিংবা গাছ থেকে পাড়া ফলের স্বাদ শহরের তিন দিনের বাসি জিনিসে আশা করা যায় না । একই কথা মসল্লাতেও।
গুড়া কিংবা বয়ামের পেস্টের চেয়ে মাত্রই বানানো মসলায় রান্নার স্বাদ বাড়বে।
----------------------------------------
গরু -খাসি ঃ আজাইরা তেল গরম করুন, পেয়াজ ভাজুন, আলু ছুড়ে মারুন ধরনের রেসিপি মানার কোন দরকার নাই । যে কোন একটা রেসিপি ফলো করে হাড়ির ভিতর মাংস, তেল , মসল্লা সব এক সাথে মিশিয়ে চুলায় চড়ান। শুধু পিয়াজ একটু বেশি দিবেন । ঝোলের স্বাদ বাড়াতে টমেটো , লেবুর রস / ভিনেগার দিতে পারেন।
কাউকে চমকে দিতে চাইলে আচারের গুড়া মসলা দুই চামচ দিন। এখন আসল জাদু হইলো জ্বালে আর ঝোলে ।
১। মাংসে কখনোই পানি বেশি দেবেন না ।
২।
মাংস কখনোই সর্বোচ্চ জ্বালে রান্না করবেন না ।
সব কিছু ঘুটা মেরে চড়িয়ে দিয়ে মাঝারি জ্বালে ঢেকে দিন। ঢাকনা কাঁচের হইলে ভালো। মাঝে মাঝেই নাড়তে হবে যাতে তলায় ধরে না যায়। পানি বের হয়ে আসবে একটু পর ।
খেয়াল করুন কতটুকু পানি বেরোয় । এবার আন্দাজ করে (এক কেজি মাংসে এক কাপ পানি) ঐটুকু পানি দিন যাতে মাংস সিদ্ধ হতে হতে পানি শুকিয়ে আসে বা যতটুকু ঝোল রাখতে চান ততটুকু থাকে । পানি বেশি দিলে বা লম্বা আ আ আ ঝোল রাখলে মাংসের স্বাদ কমে যায় ।
মুরগী ঃ
এইটা রান্না করা সবচাইতে সোজা । মনে করেন কিছুই করতে ইচ্ছা হচ্ছে না ।
মেজাজ বিলা । মুরগীর বুকের মাংস কয়টা ১ সেঃ মিঃ কিউব করে কেটে নেন । (হাড্ডিছাড়া, ১ কেজি) । নন স্টিক প্যানে এক টেবিল চামচ তেল দিয়ে মাংস ছাড়েন । নাড়তে নাড়তে উপরে ১ চা চামচ লবণ , ১ চিমটি টেস্টিং সল্ট , আধা চামচ কালো গোল মরিচের গুড়া আর ১ চা চামচ সয়াসস দিয়ে ১০ মিনিট ভাজুন।
ব্যাস হয়ে গেলো ।
এখন এইটারে শুধু খান । কিংবা আলু, কপি, গাজর, বরবটি , মটরশুটি ইত্যাদি ছোট করে কেটে এক সাথে ভেজে নেন । হয়ে গেলো চাইনিজ চিকেন । ( প্রচন্ড জ্বালে দ্রুত এবং অনেক তেলে ভাজতে হবে , নাইলে সবজি থেকে পানি বেরিয়ে প্যাত প্যাতা হয়ে যাবে) ।
এখন এইটাইরেই ডিম ভাজ়া , চিংড়ি ভাজা , মাংসের কিমা ভাজা - যা ইচ্ছা দিয়ে মিশাইয়া , আধা সিদ্ধ ভাতের সঙ্গে ভেজে খান। হয়ে গেলো ফ্রাইড রাইস ।
যত বেশি জিনিস দিবেন তত বেশি লবণ, টেস্টিং সল্ট , মরিচের গুড়া ছিটাবেন। অল্প অল্প করে যোগ করে মিক্স করতে হবে । ফ্রায়েড রাইসে সাথে ভিনেগার যোগ হবে ।
চালটাকে আধা সিদ্ধ করে পানি ঝরিয়ে নিতে হবে । এরপর চিকেন ও সবজির সাথে ভাজতে হবে । ফ্রায়েড রাইসের সবজির সাইজ ১ সেঃ মিঃ নয়, বরং কুচি কুচি করতে হয় । আমি এইটা পছন্দ করি না , কারণ অনেক বেশি তেল খায় ।
তার চেয়ে যেইটা পছন্দ করি , মুরগীর টুকরা গুলাকে পানিতে সিদ্ধ করে , সবজি ঢেলে দিলাম।
যেইটা সিদ্ধ হতে সময় লাগে ( গাজর ) তা আগে , আর যেইটা সহজেই সিদ্ধ হয়ে যায় ( বাধাকপি) পরে দিতে হবে । ম্যাগি চিকেন কিউব ১-২টা । সামান্য লবণ ও গোল মরিচ গুড়া । হয়ে গেলো মজাদার স্যুপ ।
অথবা খুব অল্প পানিতে সিদ্ধ করে পানি শুকিয়ে এলে তাতে সিদ্ধ করা পাস্তা / ম্যাকারনি ঢেলে হয়ে গেলো রাতের খাবার।
ভাত ও দেই মাঝে মাঝে ।
মুরগীর তরকারি ঃ এখানেও সব মসল্লা মিশিয়ে মাঝারি আঁচে বসিয়ে দিন। ১ কেজি মাংসে ১ কাপ পানি । সময় ৩০-৪৫ মিনিট । মাঝে মাঝে নেড়ে দিবেন।
ঘটনা শেষ ।
-------------------
মাছ ঃ মাছ রান্নার মূল কথা হইলো মাছের সঙ্গে এমন ব্যবহার করতে হবে যেন সে আপনার জীবনের প্রথম প্রেম , অনাঘ্রাতা কিশোরী । তারে কোন রকম গুতা গুতি করা যাবে না ।
কড়াইয়ে ১ টেবিল চামচ তেল গরম করে পিয়াজ ভাজুন মিনিট ৫। এবার ১ চামচ লবণ, ১ চামচ হলুদ , ৩-৪টা মরিচ , ১ চা চামচ আদা , আধা চা চামচ করে জিরা আর ধনে বাটা / গুড়া দেন ।
টমেটো , আলু যা দিতে চান দিয়ে ১০ মিনিট ভাজেন । তলায় লেগে আসলে অল্প করে পানি দেন । সবজি দিলে সবজির পানিতেই হয়ে যায় । এখন যতটুকু ঝোল রাখতে চান সেই পরিমাণ পানির চেয়ে দুই কাপ পানি বেশি দেন। এই বার ১ কেজি মাছকে খুব আদর করে , আলতো করে তুলে , মিষ্টি করে পানির ভিতর বসিয়ে দিন যাতে ডুবে যায় ।
এইবার ঢেকে নিয়ে মাঝারি জ্বালে ফুটতে দিন আরো ২০ মিনিট । মাঝে মাঝে ঝোল চেখে দেখুন হয়েছে কিনা ।
খবরদার নাড়বেন না । মাছ ভেঙে যাবে ।
পিয়াজ গলে , আলু টমেটো মিশে যখন ঝোলটা মজাদার হয়ে উঠবে, মাছ গুলো সিদ্ধ হয়ে সাদা সাদা হয়ে যাবে , এক চিমটি ঝিরা ছিটিয়ে নামিয়ে নিন।
পরিবেশনের আগ পর্যন্ত ঢাকনা বন্ধ রাখুন।
চচ্চড়ি ঃ কড়াইয়ে আধা কাপ তেল গরম করুন। কুচি করে কাটা আলু আর মলা ঢেলা মাছ ( ১ কেজি) এর সাথে পিয়াজ , লবণ , হলুদ , মরিচ দিয়ে ক্রমাগত নাড়তে থাকুন। অনেক তেল লাগবে । সাবধানে নাড়তে হবে যাতে মাছ না ভাঙে ।
মিনিট ১০ ভেজে নিয়ে দুই কাপ পানি দিয়ে বসিয়ে দিন, অল্প জ্বালে। পানি শুকিয়ে এলে আবার নাড়তে হবে যেন তলায় না ধরে যায়। নন স্টিক প্যান হলে ভালো।
---------------------------
সবজি ঃ যে কোন শাক পাতা রান্না করতে প্রথম পাঁচটি মসলায় সামান্য নাড়ানাড়ি করে নামিয়ে নিন । শাকের পাতা নিমিষেই কমে গিয়ে এত্তটুকুন হয়ে যাবে ।
তাই বেশি লবণ বা হলুদ দেবেন না ।
বিভিন্ন ধরনের সবজি এক সাথে কুচি করে কেটে ( ১ কেজি মত) ২টা পিয়াজ, ২ চা চামচ তেল , ১ চা চামচ লবণ , ১ চা চামচ হলুদ , ১ চা চামচ জিরা , ফালি করা কাঁচা মরিচ সবজি স্তরে স্তরে সাজিয়ে মাঝে মাঝে মসল্লা ছড়িয়ে দিয়ে ঢাকনা দিয়ে অল্প জ্বালে রেখে দিন। সবজির নিজের পানিতেই রান্না হয়ে বসে থাকবে। মাঝে মাঝে খুলে নেড়ে দেবেন।
সবজির তরকারিতে ১ম ৫টা মসলার সাথে ঝিরা আর ধনে গুড়া ছাড়া আর কোন বাড়তি মসল্লা লাগে না ।
রেসিপির খুটিনাটি ব্লগারদের প্রয়োজন অনুসারে বর্ননা করা হবে । অনেক রেসিপি আছে আমার আগের পোস্ট গুলাতে । পাঠকদের অনুরোধ করা হইলো সে সব পোস্ট পড়তে ।
ব্যাচেলরের রান্নাঘর - ১ম পর্ব
এবার ঈদের প্রকৃত প্রহর (রিয়েল টাইম) ধরে জীবন্ত (লাইভ ) রান্না বান্না
ব্যাচেলর স্যুপ
আষাঢ়ে রান্না
এক খান ফাও ঃ
রসুনের রসনা বিলাস !
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।