আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আসলেই কি টাপোসিরিস ম্যাগনায় ঘুমিয়ে আছেন সুন্দরী ক্লিওপেট্রা??

হাউকাউ পার্টি

সৌন্দর্যের দেবী হিসেবে যে ক্লিওপেট্রার নাম আমরা সবাই জানি তিনি সপ্তম ক্লিওপেট্রা। তার পুরো নাম Cleopatra VII Thea Philopator. তিনিই সর্বশেষ মিশরীয় ফারও শাসক। বাবা দ্বাদশ টলেমির মৃত্যুর এর পর মেয়েদের একক ভাবে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা গ্রহণ করার অধিকার না থাকায়, অষ্টাদশী ক্লিওপেট্রা, তাঁর থেকে ছয় বছরের ছোট ভাই ত্রয়োদশ টলেমিকে বিয়ে করেছিলেন। ক্ষমতার শীর্ষে ওঠের পরে অনুমানিক ৫১ খ্রী: পূর্বে তিনি দাপ্তরিক কাগজ পত্র থেকে টলেমির নাম মুছে দেন, এবং দীর্ঘ দিনের টলেমি বংশের মেয়েদের একক শাসনের অধিকার না থাকার প্রথা মুছে ফেলে সকল ক্ষমতা একক ভাবে গ্রহণ করেণ। এর ফলে একসময়ে তিনি উচ্চ পর্যায়ের পরিষদদের বিরাগ ভাজন হন।

এক পর্যায়ে ক্লিওপেট্রাকে সরিয়ে তারা টলেমীর একক ক্ষমতা নিশ্চিত করেন। ক্লিওপেট্রা পালিয়ে যান। কিন্তু তাই বলে তিনি দমে থাকেন নি। নিজের সেনা গড়তে থাকেন। অবশেষে রোম সম্রাট জুলিয়াস সীজারের প্রেমময় দৃষ্টি আকর্ষন করেণ এবং তার সাহায্যে ক্ষমতা ফিরে পান।

কথিত আছে সীজারে সাথে প্রথম সাক্ষাতের সময় তাকে একটা পার্সীয়ান কার্পেটে মুড়ে পারিচারকগন নিয়ে যায়। এর পর সিজারের সামনে কার্পেটের রোল খুলে তাকে উপস্থাপন করা হয়। (লাস্যময়ি রানীকে দেখে নিশ্চয়ই বুড়ো সিজারের চোখ ট্যারা হয়ে গিয়েছিল, বেচারা ) সীজারের মৃত্যুর পর তিনি মার্ক এন্টনীর সহায়তায় নিজের সাম্রাজ্যকে আবারো কন্টকমুক্ত করেন। তবে তার শেষ জীবনটা খুব সুখের কাটেনি। পরাজয়ের বঞ্চনা থেকে বাচাঁর জন্য তিনি ভাইপার জাতিয় এক সাপের কামরে আত্মহত্যা, মতান্তরে হত্যা করা হয়।

ক্লিওপেট্রার ডেথ মাস্ক। সাম্প্রতিক উৎখননে মিশরের ৩০ মাইল দক্ষিন পশ্চিমে প্রাচীন আলেকজান্দ্রিয়ার কাছে Toposiris Magna তে একটা মন্দির আবিস্কৃত টপোরিসিস ম্যাগনা এর বর্তমান নাম অ্যবসির (Abousir)। নীল উপত্ক্যার পশ্চিম তীরে লেক ম্যারিউটেরর (Lake Mariout ) কাছে এর অবস্থান। এখানে একটি প্রাচীন মন্দিরের ধ্বংসাবশেষ আর আলেজান্দ্রিয়ার লাইট হাউসের একটি রেপ্লিকা রয়েছে। আলেকজান্দ্রিয়ার লাইট হাউসের রেপ্লিকা।

কারো কারো মতে ২০০০ বছরের পুরতন এই মন্দিরটি দেবতা ওসিরিসের। আবার ভিন্ন মতানুসারে খ্রিষ্টপূর্ব ৩০০ সালের দিকে মিশরীয় দেবী আইসিসের সম্মানে এ মন্দির নির্মাণ করা হয়েছিল। টপোসিস ম্যাগনাতে প্রাপ্ত মন্দির। উৎখননে এখানে অনান্য প্রত্নবস্তুর সাথে ১০ টি মমি পাওয়া গেছে। এছাড়া ক্লিওপেট্রার যুগীয় মুদ্রার বৈশিষ্ট যুক্ত ২০ টি মুদ্রা এবং একটা মুখোশের ভগ্নাংশ পাওয়া গেছে যা এন্টনি স্টাইলে নির্মিত।

এন্টনি স্টাইলে নির্মিত মুখোশটির ভগ্নাংশ। প্রত্নতাত্বিকদের মতে এখানেই, এই মন্দিরটিতেই থাকতে পারে ক্লিওপেট্রা ও তার প্রেমিক অ্যান্টনির দেহাবশেষ। প্রচলিত ধারণায়, তাঁরা এ্যাক্টিয়াম যুদ্ধে রোমান সম্রাট অক্টাভিয়ানের কাছে পরাজয়ের পর আত্মহত্যা করেছিলেন৷ মিশরের সুপ্রিম কাউন্সিল ফর এ্যান্টিকুইটিজ এর প্রধান জাহি হাওয়াস বলেন, এখানে ক্লিওপেট্রার দেহাবশেষ পাওয়া না গেলেও কমপক্ষে কোন রাজকীয় সমাধি অবশ্যই খুঁজে পাওয়া যাবে, কেননা জায়গাটি অনেক গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তাদের সমাধিতে ভরা৷ আর প্রাচীন মিশরে শীর্ষ কর্মকর্তাদের সাধারণত শাসক ফারাওদের আশেপাশেই সমাহিত করা হতো৷ তিনি বলেন, এই স্থানে ক্লিওপেট্রার সমাধি পাওয়া গেলে, ১৯২২ সালে তরুণ রাজা টুটানখামেন এর সমাধির খুঁজে পাওয়ার পর এটাই হবে সবচেয়ে বড় প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কার৷ সপুত্রক রানী ক্লিওপেট্রা(Temple of Dendera) ডোমিনিকান প্রত্নতাত্ত্বিক ক্যাথলিন মার্টিনেজ মনে করেন, আত্মহত্যার পর এই মন্দিরের যাজক ক্লিওপেট্রার দেহ এখানে এনে রাখতে পারেন৷ তিনি বলেন, তাঁদের মৃতদেহ যেন রোমানরা খুঁজে না পায় সেজন্য এই মন্দিরে লুকিয়ে রাখা হয়েছিল৷ কেননা, সেসময় পরাজিত শাসকের মৃতদেহ হাতে পাওয়াটাকেই প্রকৃত বিজয় হিসেবে গণ্য করা হতো৷ তাঁর বিশ্বাস, ক্লিওপেট্রার মৃত্যু ছিল একটি ধর্মীয় ঘটনা এবং ভাইপার জাতের ক্ষুদ্র বিষধর সাপের কামড়ে তিনি মারা গিয়েছিলেন৷রোমান ঐতিহাসিক প্লুটার্কের লেখাতেও রয়েছে, যে ক্লিওপেট্রাকে অ্যান্টনির সাথেই সমাহিত করা হয়েছিল। যাই হোক সময়ই বলে দেবে সৌন্দর্যের দেবী কি আসলেই এখানে চিরনিদ্রায় শায়িত কিনা। আর যদি তাই হয় তাহলে নির্ঘাত এই টপোরিসিস ম্যাগনা (বর্তমান Abousir) সারাবিশ্বের প্রেমিক-প্রেমিকাদের জন্য সেটি অত্যন্ত আকর্ষণীয় এবং দর্শনীয় স্থানে পরিণত হবে৷


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।